আমি যখন বিভিন্ন সময়ে যখন নিরন্ন, অসুস্থ মানুষদের খোঁজ পাই তখন বড়ো অসহায় বোধ করি। তখন কেউ যদি আমাকে বলেন, একে হাসপাতালে পাঠান বা ভর্তি করে দেন তখন আমি মেজাজ খারাপ করে বলি, আমাকে এটা না-বলে আপনি নিজেই এই কাজটা করেন না কেন?
অহেতুক ক্ষেপে যাই এমন না কারণ আমি জানি এই সরকারী হাসপাতালে এই সমস্ত নিরন্ন, অসহায় মানুষদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।
এই প্রসঙ্গে অতীতে আমার কোনো অভিজ্ঞতাই সুখকর না, বড়ো তিক্ত! এই মানুষটাকে [১] ৪৮ ঘন্টা হাসপাতাল সেবা দিতে ইচ্ছা পোষণ করেনি! প্রকারান্তরে মানুষটাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। যে ডাক্তার এর জন্য দায়ী- এই ডাক্তারের টিভি আসক্তি এতোটাই প্রবল যে তার নিজস্ব চেম্বারেই না কেবল তিনি হাসপাতালেও টিভি দেখতে দেখতে রোগী দেখেন। আমি অনেকবার এমনও দেখেছি এই ডাক্তারের চোখ টিভির পর্দায় আর খসখস করে প্রেসক্রিপশন লিখছেন।
এই মানুষটার [২] পুরো অধিকার ছিল হাসপাতালের সেবা পাওয়ার কিন্তু তাঁর জন্য কোনো প্রকারের সেবার ব্যবস্থাই করা যায়নি। মানুষটা হারিয়ে গেলেন। মানুষ তো আর না, কেবল একটা সংখ্যা মাত্র।
এঁরা সেবা পাবেন না অথচ এঁদের পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকায় এই সমস্ত হাসপাতাল চলে, ডাক্তার সাহেবদের বেতনের টাকা আসে।
ডাক্তার সাহেবদের অনেকের কাজকামের কিছু নমুনা দেই। ধরা যাক, আমি কাউকে হাসপাতালে যেতে বললাম। তিনি গেলেন। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকজনের ভিড় ঠেলে (এদের ওষুধ লিখে দিলে ডাক্তার সাহেব পাবেন গুচ্ছের টাক। আর ওষুধ কোম্পানির লোকজনেরা [৩] ডাক্তারদের কি দেয় এটা জিজ্ঞেস না-করে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, কি দেয় না?) ডাক্তার সাহেবের কাছে পৌঁছলেন তিনি রোগীর সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন না। খানিক দয়া হলে গৎবাঁধা কিছু বড়ি লিখে দেবেন। সব বড়ি আবার হাসপাতালে পাওয়া যাবে না।
অবশ্য রোগী আলাদা টাকা দিলে খানিকটা ডাক্তারের মনোযোগ পাবেন। আমার জানামতে, কালেভদ্রে এই হাসপাতালের দুয়েকজন ডাক্তার ব্যতীত সবাই অফিস আওয়ারে অবলীলায় রোগীর কাছ থেকে টাকা নেন। একজন মহিলা ডাক্তার আছেন যার আচরণ চামারের মত (এই তুলনা দেওয়ার জন্য আমি চামারদের কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি) টাকার অংক কম হলে রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশন ছিনিয়ে নেন।
তো, ডাক্তার সাহেব রোগীকে একগাদা টেস্ট লিখে দেবেন। এখানে বেসরকারী প্যাথলজির যে সমস্ত দালাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের কেউ-না-কেউ রোগীকে বগলদাবা করে নিয়ে যাবে। ডাক্তার সাহেব অবশ্য এটা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন হবেন না কারণ তিনি এটা বিলক্ষণ জানেন প্রত্যেক প্যাথলজি থেকে তিনি ৪০ পার্সেন্ট কমিশন পাবেন। সোজা হিসাব, ১০০০ টাকার টেস্ট হলে ডাক্তারের ৪০০ টাকা!
বিগত ২০ বছরে আমি এই হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন থেকে কোনো রোগীকে এক্স-রে করতে দেখিনি। কখনও বলা হয় ফিল্ম নাই, কখনও মেশিন ঠিক নাই তো কখনও এক্স-রে করার লোক নাই। (এই এক্স-রে মেশিনের কিছুটা অংশ দেখেছি বারান্দায় ফেলে রাখা হয়েছে।)
৩. ওই আসে সুপারম্যান: http://www.ali-mahmed.com/2011/09/blog-post.html
No comments:
Post a Comment