সায়েরা বেগমকে নিয়ে গিয়েছিলাম জেলার সদর হাসপাতালে। একগাদা টেস্ট করার পর দুইটা টেস্ট দেওয়া হয়েছে ক্যান্সারের উপাদান আছে কি না এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। এটা এখানে হয় না বাইরের একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিরাম নিয়ে ঢাকা থেকে করে আনিয়ে দেবে। অন্তত তিন দিন সময় লাগবে। এটা নিয়ে পরে লিখব।
এই সূত্রে আমার ‘চিনপরিচয়’ হয় একজন
ডাক্তারের সঙ্গে। ডাক্তার সাহেবের নাম ডা. রানা নুরুস শামস। তিনি জেলা সদর সরকারি
হাসপাতালের আরএমও- আবাসিক ডাক্তার। সকাল ১০টায়
সরকারি হাসপাতালে এই ভদ্রলোককে খোঁজ করার পর জানা গেল তিনি হাসপাতালে নেই। কোথায়? খোঁজ করে জানা গেল, বেসরকারি ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আছেন।
এই সরকারি হাসপাতালের ঠিক উল্টো পাশে ২০/২৫ ফিটের মধ্যেই এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের
অবস্থান। আমি
যতটুকু জানি, এতো নিকটে কোনো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক বা হাসপাতাল করার জন্য অনুমতি
দেওয়ার কথা না।
যাই হোক, গেলাম সেই
বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এই ডাক্তার সাহেব ওখানে চেম্বারে অম্লান বদনে রোগি
দেখছেন। প্র্যাকটিস বলে কথা- আহা, নইলে হাত পাকাবেন কেমন করে! রোগি ঠেলেঠুলে কথা বলার
চেষ্টা। ভদ্রলোকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না কারণ অতীতে
ডাক্তারদের নিয়ে প্রচুর লেখালেখির কারণে কোনো ডাক্তার আমার চিকিৎসা না-করলে অবাক
হওয়ার কিছু থাকবে না। এই ভয়ে আমি আতংকিত হয়ে একটা তেলেছমাতি সোলেয়মানি তাবিজের কিতাব কিনেছি। মনোযোগ সহকারে পড়ছি। কুকুর কামড়ালে কি করতে হবে? সোজা! “...আয়াতটি কাসার থালায় পড়ে সাপ, কুকুর বা শিং মাছের দংশিত রোগির পিঠে
লাগালে বিষ থাকাকালীন তা পড়বে না। বিষ নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে থালা নীচে পড়ে যাবে
(এটি পরীক্ষিত আমল)”। খুজলি রোগের
ওষুধও যেমন আছে তেমনি প্রেমিকাকে বশীকরণের
আশ্চর্য তদবীরও আছে। যাক, সেফ সাইডে আছি ভেবে
আরাম-আরাম লাগছে।
তো, তিনি একজন গাইনির সঙ্গে
দেখা করার কথা বলে এটাও বললেন, ‘বলবেন রানা
স্যার পাঠিয়েছেন’। ভাল, নিজেই নিজেকে স্যার উপাধি দিচ্ছেন। কিছু
টেস্ট করিয়ে ১১টায় ফিরলাম। স্যার দেদারসে
রোগি দেখছেন, ১২ টায়ও স্যার রোগি দেখেই যাচ্ছেন। তেরোটা, আ মিন, ১টার সময় যখন কাজ শেষ করে ফিরে আসছি তখনও স্যার রোগি নিয়ে কস্তাকস্তি
করছেন।
কিছু বিষয় আমার বোধগম্য
হচ্ছে না সেটা হচ্ছে, রানা স্যার বেতনভুক্ত কর্মচারি হয়ে অফিস আওয়ারে যে প্রকারে ‘খুল্লামখুল্লা’ বেসরকরি ডায়াগনস্টিক
সেন্টারের রোগি দেখে যাচ্ছেন তাতে করে কোনো প্রকার ভয়, জড়তা তো স্যারের মধ্যে কাজ
করতে দেখিনি! এই ছবিটা ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যাবে ডা. রানা পিজিটি করেছেন তিনটা
বিষয়ে। আমি যতদূর জানতাম সিভিল সার্জন কর্তৃক ‘পিজিটি’ বা এফসিপিএস
প্রথম পর্ব, শেষ পর্ব লেখার বিষয়ে
নিষেধাজ্ঞা ছিল, এখন কী এটা নেই? এই
ছবিটাটায় আরেকটু ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যাবে ওখানে লেখা আছে ডা. রানা রোগি দেখেন
প্রতিদিন, সময়-টময়ের কোনো বালাই নেই!
পরের যে ছবিটা সেটায় দেখা যাচ্ছে, এই বেসরকারি ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঠিক উপরেই ‘প্রেস ক্লাব’- এখানে জেলার
তা’বড় তা’বড় সাংবাদিদের নিয়মিত আনাগোনা। যাক বাবা, বাঁচা গেল! চিন্তার কিছু
নেই- বিবেক জেগে আছে, আমি তাহলে আরাম করে ঘুমাই...।
1 comment:
ভুতের জমিতে সরষের চাষ,
শুইয়ের ভেতরে বরাক বাশ।
Post a Comment