Search

Wednesday, April 23, 2014

‘ডাগদর’ সাহেব


ভাবী ডাগদর সাহেবদের নিয়ে দেশ উত্তাল। এবার মিডিয়া জড়িয়ে গেছে যে তাই প্রথম পাতায় রক্তারক্তি ছবি না-এসে উপায়  আছে। অথচ গর্ভবতী মা যখন উঁচু পেট নিয়ে এই হাসপাতাল ওই হাসপাতালে একটু চিকিৎসার জন্য আধ-জবাই পশুর মত দৌড়ে দৌড়ে ওভারব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পেট ফেটে মরে গেল তখন সেটা আসে ছোট্ট করে ভেতরের পাতায়। কারণ ওই হতভাগা মানুষটা মিডিয়ার কেউ না।
             
হালের এদের এই রক্তারক্তি কান্ড নিয়ে এতোটা উতলা হওয়ার কিছু নেই। এটাও মাথায় থাকা আবশ্যক এরা এই সমাজেরই অংশ। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী গুন্ডামি করে, নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে খুনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, এরাও তাই করেছে। এ বিচিত্র কিছু না।
শিক্ষার্থীদের এই সব করতে হয়, নিয়ম। না-করলে শিক্ষা-জীবনটা অপূর্ণ থেকে যায়। ওখানেও মন্দ লোক এখানেও মন্দ লোক।

কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, মোটা দাগে বললে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পিতা- যিনি দলবাজি করে করেই এ পর্যন্ত এসেছেন। সন্তানরা দেখে পিতা কেমন করে মিনিটে মিনিটে লেজ নাড়াতে নাড়াতে লেজ সরু করে ফেলেছেন। এরা অপার বিস্ময়ে এও তাকিয়ে শেখে, ওযাল্লা, লেজ নাড়ালে দেখি সব সমস্যার সমাধান।

এরা দেখে ঝুলেপড়া সাদা গোঁফের পরফেসর সাহেব চকচকে জুতার নাক ঠেকিয়ে মৃতের হাড়গোড় পরীক্ষা করেন। কোনও-না-কোনও সন্তানের বাবা নামের এই হাড়গোড়গুলো এদের কাছে কেবল একটা সাবজেক্ট। পরফেসর সাহেব যখন কোনও রোগির কোলনোস্কপি করার সময় মনিটরে তাকিয়ে হইচই করে বলেন, 'এর পেটে গু ভরা'। তখন ওই রোগি লজ্জায় কুঁকড়ে যান। মা নামের সেই রোগির সামনে তার সন্তান নপুংসক হয়ে কেবল তাকিয়ে থাকে। এতে পরফেসর সাহেবের কিছুই যায় আসে না কারণ এই রোগি তার কাছে কেবলই একটা সাবজেক্ট।
কখনও পরফেসর সাহেব একপাল ভাবী শিক্ষার্থী ছেড়ে দেন রোগিতে গিজগিজ করতে থাকা ওয়ার্ডে। হাহা-হিহি-হোহো, ওখানে ওরা একজন অন্যজনের গায়ে ঢলে পড়ে। যেন পিকনিক করতে এসেছে। রোগি নামের সাবজেক্টের বিরক্তি, যন্ত্রণা দেখার সময় কোথায়।

কেউ কিসসু বলবে না। চরম অন্যায় করলেও সমস্যা নেই কারণ পেছনে দল আছে না। এর সঙ্গে বাড়তি পালক যোগ হয়- ডাকো ধর্মঘট। রাজনীতিবিদরা হরতাল ডেকে সব অচল করে দিতে পারলে ডাগদর সাহেবদের ধর্মঘট ডাকতে সমস্যা কোথায়! হরতালে কি লোক মারা যায় না? যায়। তাহলে ভাবী ডাগদর সাহেবদের ধর্মঘটেও লোক মারা গেলে অসুবিধা কোথায়!
এটাই বাস্তবতা এদের কাছে একটা প্রাণের আলাদা কোনও মূল্য নেই। একটা প্রাণ মানে একটা সাবজেক্ট, একটি সংখ্যা মাত্র।
...
ফেসবুকে এই লেখাটাই দেওয়ার পর Mohammad Safiullah Miah মন্তব্যে লিখেছেন, "...কিছু লোকের অন্যায় আচরণ দিয়ে পুরো একটা খাতকে দেখতে যাওয়াটা কি ন্যায্য হবে?!"
এই মন্তব্যে উত্তরে আমার বক্তব্য:
…কিছু লোকের অন্যায় আচরণ দিয়ে পুরো একটা খাতকে দেখতে যাওয়াটা কি ন্যায্য হবে?!...”

না, অবশ্যই এটা সমীচীন হবে না। এমনটা ভাবাটাও অন্যায়। এই লেখাটার বেলায় এমন ভাবনা আমার মধ্যে কাজ করেনি। তারপরও আমার লেখায় এমনটা মনে হয়ে থাকলে আগেভাগেই আমি ক্ষমা প্রার্থনা কর
ে রাখছি। সে ক্ষেত্রে সেটা আমার লেখার দুর্বলতা।

কোনও খাত বা পেশা বলতে...পেশা মানেই তো এর পেছনে কোনও-না কোনও মানুষ...। মানুষের মধ্যে যেমন ভাল-মন্দ তেমনি যে কোনও পেশায়ও ভাল-মন্দ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেই পেশার পেছনের মানুষটা ডাক্তার নাকি লেখক এটা বিবেচ্য না।
সবিনয়ে বলি, বিভিন্ন সময়ে ডাক্তারদের অন্ধকার দিক নিয়ে যেমন লিখেছি তেমনই আলোকিত দিক নিয়েও। কেমন করে একজন ডাক্তার তার কষ্টার্জিত টাকা বিলিয়ে দেন বা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান।

দেখুন, লেখার সমস্ত অর্থ আক্ষরিক অর্থে নেওয়ার আবশ্যকতা কী! যখন এটা লেখা হয়, দেশটা চোর-চোট্টায় ভরে গেছে তখন এই লেখাটার অর্থ যদি দাঁড়ায় এমন যে এই দেশের ১৬ কোটি মানুষই চোর তাহলে তো মুশকিল। যে এটা লিখবে সে নিজেও চোর!

যখন পরিমল নামের একজন শিক্ষক পশুর ন্যায় আচরণ করে তখন আমি লিখেছি, ‘নষ্ট শিক্ষক’। এর অর্থ কিন্তু এটা না যে সমস্ত শিক্ষকই নষ্ট- পরিমলের মত মানুষেরাই নষ্ট। আবার শিক্ষকের এই পশুত্ব নিয়ে ইমদাদুল হক মিলনের মত একজন লেখক যখন অন্য রকম পশুত্ব দেখান তখন সেই মিলনকেও নিয়েও আমি লিখেছি, ‘নষ্ট লেখক’। এর অর্থও কিন্তু সব লেখক মন্দ এটা কিন্তু না।
অনেক হৃদয়বান শিক্ষক যেমন আছেন তেমনই হৃদয়বান লেখকও।

‘...আর কিছু লোক...’ এটা বলে এই অন্যায়কে উদাসীন দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নাই। ভাবী ডাক্তারদের ধর্মঘটে কিন্তু সিনিয়র ডাক্তাররাও সায় দিয়েছেন। ডাক্তারদের ধর্মঘট কিন্তু আট-দশটা ধর্মঘটের মত মামুলি না। আমি যতটুকু জানি এরিমধ্যে মারা গেছেন বেশ ক-জন রোগি। এটা স্রেফ খুন। যারা এই ধর্মঘটের সঙ্গে জড়িত এদেরকে আমি খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে চাই- প্রত্যক্ষ না পরোক্ষ এটা আমার কাছে জরুরি বিষয় না। http://www.ali-mahmed.com/2011/07/blog-post_09.html
 

No comments: