একটা সরকারী প্রাইমারি স্কুলের যেসমস্ত বাচ্চাদের স্কুলের
পোশাক বানাবার সামর্থ্য নেই ওই সমস্ত বাচ্চাদের নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম [১]।
ওখানে আমি বেদনার সঙ্গে এও লিখেছিলাম, টাকার জন্য সমস্ত বাচ্চাদেরকে স্কুলের পোশাক
দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় তখন কেবল
মেয়েদেরটাই দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
ওই লেখাটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন আমাকে লিখলেন, ‘বাকী
বাচ্চাদের জন্য আমি আপনাকে ৩০০ ডলার পাঠাতে চাই’। আমার বিস্ময়ের শেষ
নেই কারণ এই মানুষটা আমার বন্ধুতালিকায় নেই এবং তাঁর সঙ্গে কখনই আমার কথা হয়নি,
ন্যুনতম মন্তব্যও চালাচালি হয়নি!
আমি বিস্ময় চেপে লিখলাম, ‘আপনি আমাকে চেনেন না জানেন না
অথচ দুম করে একগাদা টাকা পাঠাতে চাচ্ছেন, কেন’?
তিনি যে সদাশয় কথাগুলো বললেন তা এই ভরা মজলিশে বলতে বিব্রত বোধ
করছি বলে এই প্রসঙ্গ থাকুক।
তিনি অতি দ্রুতই আমাকে ৩০০ ডলার পাঠিয়ে দিলেন কিন্তু
আমি তখন যথারীতি আমার বিভিন্ন অকাজ নিয়ে ভারী ব্যস্ত। তার উপর
সেলাইমাস্টার একা মানুষ তিনি কাজ করে কুলাতে পারছিলেন না বলে দিন যায়।
অবশেষে আজ বাচ্চাদের স্কুলের পোশাক দেওয়ার কাজটা শেষ হলো। আমি
আরামের শ্বাস ফেললাম। স্কুলের পোশাক দেওয়ার পরও বেশ কিছু টাকা বেঁচে
গিয়েছিল। এই স্কুলে খেলার কোনও সামগ্রী ছিল না- বেশ অনেকগুলো লাফাবার দড়ি, লুডু,
ক্রিকেটের ব্যট, দাবার ঘরের ব্যবস্থাও হয়ে গেল। লাইব্রেরির
জন্য বেশ কিছু বইও কেনা হলো। কেবল কিনে দিলেই তো হলো না বাচ্চাদেরকে কেমন করে
এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়? প্রধান শিক্ষককে বললাম, ‘একটা
প্রতিয়োগীতা লাগিয়ে দিলে কেমন হয়? এর মধ্যে বই পড়ার একটা ইভেন্টও থাকবে।
স্বল্পভাষী মানুষটার কিছুতেই না নেই। ছোট্ট উত্তর, ‘ভালই
হয়’।
এই টাকায় পাঁচটা বিভাগের জন্য তিনটা করে পনেরোটা গিফটের ব্যবস্থাও দিব্যি হয়ে গেল।
মুশকিল, হাতে দেখি আরও টাকা রয়ে গেল। আমি একটা
বিষয় লক্ষ করে আতংকিত হয়েছিলাম। প্রায় হাজার খানেক বাচ্চা এই স্কুলে পড়ে কিন্তু
স্কুলের সামনে কোনো স্পিড ব্রেকার নেই! আজকালকার বখা ছেলেপেলেরা
হালের দামী মটর সাইকেল যে গতিতে উড়িয়ে নিয়ে যায় মনে হয় রাস্তা এদের অসৎ বাবার।
একটা স্পিড ব্রেকারের ব্যবস্থা করাটা অতি
জরুরি। সরকারের কাছে আবেদন করলে এটা হতে হতে আমার জীবন প্রদীপ যে নিভে যাবে এতে
অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নেই।
যা হওয়ার তাই হলো! সরকারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এমন এক ব্যক্তি
যথা নিয়মে বাগড়া দিলেন। তার আচরণ দেখে আমি সযতনে শ্বাস চাপলাম। কাঁঠালপাতা শব্দটা
সম্ভবত এদের জন্যই চালু হয়েছে। আফসোস, আমি কাঁঠালগাছ বিক্রি করে দিয়েছি, এখন
কাঁঠালপাতা পাই কোথায়!
যাই হোক, অবশেষে স্পিড ব্রেকারেরও একটা গতি হয়।
যে মানুষটার কল্যাণে এতো কিছু সেই মানুষটার সঙ্গে আমার পূর্ব
পরিচয় নেই বিধায় অনুমতি না-চাওয়াট অসমীচীন হয়। অনুমতি
চাওয়ার পর তিনি আমাকে সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন কোনো
প্রকারেই তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। অনেক অনুরোধেও তাঁকে টলানো গেল না। কী আর
করা, আসলে প্রদীপ আলো ছড়িয়েই যায় সেটা মাটির না কাঁচের তাতে তার কী আসে যায়...!
*ছবি ঋণ: দুলাল ঘোষ
সহায়ক সূত্র:
No comments:
Post a Comment