Search

Monday, May 26, 2014

অব্যবস্থিতচিত্ত!



খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত যে তিন জন RAB কর্মকর্তা এদেরকে গ্রেফতার করার জন্য হাইকোর্ট সুষ্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার পরও এই নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। কষ্টার্জিত অনুমানের প্রয়োজন পড়ে না যে তিতাসের জল মেঘনায়, মেঘনার জল তিতাসে গড়িয়েছে।
হাইকোর্টের এই নির্দেশনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ...কথায়-কথায় রিট করা ঠিক না...। তিনি আরও বলেন, ...সরকার ঠিকমতোই এগোচ্ছিল। রিট করে বরং সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।...যার যার কাজ তারাই করবে। ...নির্বাহী বিভাগের কাজ নির্বাহী বিভাগ করবে...। (দৈনিক আমাদের সময়, ১৫.০৫.১৪)
এটা আমার নিজস্ব মত, হাইকোর্ট এখানে শক্ত ভূমিকা না-নিলে এদেরকে আইনের আওয়ায় আনাটা দুষ্কর ছিল। এই দেশের সমস্ত মানুষ আমার মতের সঙ্গে একমত না-হলেও আমি আমার মতে অটল থাকব। ক্ষমতাশীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রীর জামাতাকে কাঠগড়ায় তোলা, একী ছেলের হাতের মোয়া! যে দেশে ক্ষমতাশীন দলের অতি প্রভাবশালী মানুষ বলেন, ...৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছি। আন্দোলনের নামে নাশকতা করলে হাত-পা কেটে দেওয়া হবে...

এই হচ্ছে আমাদের দেশের একজন আইনপ্রণেতার ভাষা! এই রাষ্ট্র কী আইনের আওতায় থেকে কাউকে কারও হাত-পা কাটার ক্ষমতা দেয়? মৃত্যুদন্ড দেওয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি আছে আমি সে পথ এখন মাড়াব না। রাষ্ট্র চাইলে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রাণে মেরে ফেলতে পারে কিন্তু রাষ্ট্র কী কারও হাত-পা কেটে ফেলার ক্ষমতা রাখে? রাখে না কিন্তু ক্ষমতাশীন দলের লোকজনেরা রাখেন। এই কারণে কী কোনও শাস্তি হয়েছে।? এর উত্তরটা যে না এটা একটা শিশুও জানে।  

আদালতের প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে উষ্মা দেখিয়েছেন সেই আদালত্ই যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন তখন আংশিক বক্তব্যই বেদবাক্য হয়ে যায়।
আর এই নির্বচনের পরে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের নেতার প্রতি কটাক্ষ করে বলেছিলেন, গোলাপি ট্রেন মিস করলি...। আরও পরে, গোলাপি এখন উপজেলা ট্রেনে...। (দৈনিক আমাদের সময়, ০৯.০২.১৪)
এই নিষ্ঠুর রসিকতাটা করার পূর্বে তিনি এটা ভাবার প্রয়োজন বোধ করেননি যে এই কটাক্ষ এই দেশের অধিকাংশ মানুষকে আহত করে যারা তাঁদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, আমি নিজেই প্রতিদিন সকালে এক ঘন্টা এবং বিকালে এক ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। যাতে মানুষ ভুলে না যায় তারা কী কষ্টে ছিল...। (দৈনিক প্রথম আলো, ০৬.০৯.১২)
অর্থাৎ ২৪ ঘন্টার বিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে কিন্তু তাঁর খুশি তিনি দুই ঘন্টা দেবেন না।

যে RAB কর্মকর্তারা খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত এরা যে গাড়ি, অস্ত্র, চেতনানাশক স্প্রে, ইট, রশি, যে ছুঁরি দিয়ে পেট ফেঁড়ে দিয়েছেন সবই আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় কেনা অথচ আমরা এদেরকে কাঠগড়ায় তুলতে পারব না। বাহ!  
তো, হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ না-করলে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎবিষয়ক বক্তব্যের মত যদি এটা বলে বসতেন, এই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার ক্ষমতা আমার আছে কিন্তু আমি বিচার করব না কারণ মানুষ যেন ভুলে না-যায় খুন হলে কত কষ্ট লাগে..।
তাহলে তো সেটা হতো ভারী মুশকিলের কথা।

No comments: