এই লেখাটা (https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151410352537335) লেখার পর আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছিলাম, বন্ধুতালিকায়
থাকা অনেক বুদ্ধিমান মানুষ আমার লেখালেখি নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। কারণ এরা মনে
মনে ঠিক করলেন এই ‘লুকটার’ লেখা পড়ার আর কোনও অর্থ হয় না! হুশ, সাদা পাতা আবার পড়ার কী আছে? কেউ-কেউ তালিকা থেকে ছাঁটাইও করে ফেললেন। এদের দাবী ছিল বুদ্ধিমানদের হ্যাঁ বলুন। এদের সুরে সুর মিলিয়ে হ্যাঁ বলতে না-পারার কারণে বড়ো
ক্ষতি হয়ে গেল গো।
অবশ্য এই নিয়ে আমার খুব একটা উদ্বিগ্নতা নাই কারণ এদেরকে কেমন করে
বোঝাই জনপ্রিয় ফেসবুকার, জনপ্রিয় লেখক হওয়ার গোপন কোনও ইচ্ছা আমার নাই। জনপ্রিয়
মানুষদের অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে, এর-ওর মন যুগিয়ে চলতে হয়, ফরমাইশ টাইপের লেখা লিখতে হয়।
স্যারদের বিনয়ের সঙ্গে বলি, যেটা ঠিক মনে হবে সেটাই লিখব বিকলাঙ্গ
লেখা লিখব কোন দুঃখে!
যা্ হোক, ওই লেখার এক জায়গায় আমি বলেছিলাম, “...মাদ্রাসার ছাত্ররা
কখনও জামায়েতে ইসলামীর পক্ষে, কখনও হেফাজতি
ইসলামের ঢাল হিসাবে বা আগামীতে
'ইসলাম বাঁচাও' এমন কোনো সংগঠনের নামে ব্যবহৃত হবে, হতেই থাকবে...”।
হেফাজতের নামে অনেক শিশু কেমনতরো
ব্যবহৃত হয়েছে তার নমুনা আমরা গত বছর শাপলা চত্বরের সমাবেশে দেখেছি। অসংখ্য শিশুর বাবা-মা জানতেনই না যে তার সন্তান ঢাকার এই সমাবেশে গেছে!
হুজুর বলেছেন, যেতে হবেই, ধর্ম বিপন্ন ব্যস এরপর আর কোনও কথা চলে
না। ওখানে আরেক ভুবন- হুজুরদেরর কথার উপর কোনও কথা বলার যো নেই।
দূর-দূরান্ত থেকে ওই সমস্ত মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া শিশুগুলোর অসহায়ত্ব কাছ থেকে
না-দেখলে আসলে বোঝা যাবে না।
ওই লেখায় মাদ্রাসা বিষয়ে অনেক কিছুই
লেখা হয়েছে তারপরও কিছুটা বলি, এই শিশুগুলোর নিজ
ইচ্ছায় এখানে ভর্তি হওয়ার উদাহরণ খুবই কম। এখানে পরিবার, বাবা-মার ইচ্ছাই প্রবল।
আমি এমন অনেক উদাহরণ জানি বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীনই বাবা-মা মানত প্রতিজ্ঞা করেন
ছেলে-মেয়েকে মাদ্রাসায় দেবেন। নিজের সন্তানকে আল্লার রাস্তায়
উৎসর্গ করে দিলেন অথচ নিজেরা কিন্তু উৎসর্গ হওয়া দূরের কথা এই
বিষয়ে দিনে আধ-ঘন্টা সময়ও দেবেন না। মাদ্রাসায় পড়ুয়া এমন অনেক বাবা-মার সঙ্গে আমি
কথা বলে দেখেছি ধর্ম পড়া নিয়ে এদের নিজেদের বিশেষ আগ্রহ নাই। অনেকে আমাকে বলেছেন,
ছেলেই তো বেহেশতে নিয়েই যাবে...।
এমতাবস্থায়, এমন দেশে কেউ যদি বলেন
মাদ্রাসা তুলে দিতে হবে তাহলে তিনি অলীক স্বপ্ন দেখেন।
আমি এমন মাদ্রাসা পড়ুয়ার কথাও জানি যে
ছেলেটি অসম্ভব প্রতিভাবান। এই ছেলেটির কম্পিউটারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। সুযোগ পেলে
এ যে কম্পিউটারে তাক লাগিয়ে দেবে এতে
অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নাই।
তাহলে এ কেন মাদ্রাসায় পড়ছে? বাবা-মা চাচ্ছেন তাই। এই অবস্থা দেশের সর্বত্র।
এমনিতে একজন হযতো তার সন্তানকে কদাপি
মাদ্রাসায় দেবেন না কিন্তু তার ভাগিনা, ভাতিজা দূর সম্পর্কে আত্মীয়কে কিন্তু তিনি আটকে
রাখতে পারছেন না। বিষয়টা অতি স্পর্শকাতর হওয়ায় স্বজনকে থামাবার যৎসামন্য ক্ষমতাও কিন্তু
তার নাই।
শাপলা চত্বরে শিশুদের মধ্যে আমাদের কারও
কোনও স্বজন থাকবেই না এ যে প্রশ্নাতীত। বিভিন্ন সময়ে আমরা গণহারে এদেরকে গালি
দিচ্ছি, রসিকতা করছি, তিন-উল্লাস করছি অথচ মাদ্রাসার রক্তাক্ত ছোট-ছোট বাচ্চাদেরকে
এই অজানা শহরে ফেলে সেদিন
হেফাজতের নেতারা কাপুরুষের মত পালিয়ে গিয়েছিলেন! অন্য নেতাদের মতই এই সমস্ত হেফাজতের নেতাদের
কারণে রোষ থেকে বাঁচতে পারছে না এই
বাচ্চাগুলোও।
এ সত্য, হেফাজতের একজন রুহির মত দায়িত্বশীল
মানুষ যখন রানা প্লাজায় হাজার মানুষের মৃত্যু নিয়ে অবলীলায় বলেন, “রানা প্লাজার ৫ম তলায় বুধবার হেফাজত বিরোধী ২৭ এপ্রিল নারী সম্মেলন এবং
আমাদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী
বানচাল করতে ভবনের মালিক, যুবলীগ নেতা সোহেল
রানা ‘বাছাইকৃত’
সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিটিং করছিল। এর কিছুক্ষণ পরে ‘আল্লাহর গজবে’ ভবনটি ধসে পড়ে’।" “
তখন মনে হয় এ স্রেফ একটা চলমান
দানব!
শাপলা চত্বরের সমাবেশের নামে যে বিস্ময়কর
উত্থান ওদিন এটা আমাকে খুব একটা বিস্মিত করেনি- আসলে বাস্তবতাই এমন। এটা ঢাকা বা
বৈদেশে বসে উপলব্ধি করা কঠিন বৈকি।
এমনিতে শফী সাহেব কেন সেদিনই সমাবেশটা
সমাপ্ত করলেন না এই নির্বোধ উত্তরটা সম্ভবত তিনি নিজেও দিতে
পারবেন না। করলে... যেটা হতো- আগামীতে আর কখনও এর মহড়া
না-দিয়েও এই অকল্পনীয় শক্তির লেশটা থেকেই যেত।
এদিকে বিভিন্ন সুবিধাবাদী দলগুলো তো
মাথা ঢুকিয়েই ছিল এরা গোটা শরীর ঢোকাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পাগলাপানিতে ডুবে
থাকা (ক্ষমতা ছাড়ার পর এই লোকটার বাসা থেকে মাত্র ৪০
লিটার মদ উদ্ধার করা হয়ছিল) এরশাদের মত মানুষও পানি খাওয়াতে
ঝাঁপিয়ে পড়লেন!
আর এখন যখন এটা পড়ি, “...প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও
ছাত্রলীগকে বন্ধু বললেন হেফাজতে ইসলামের
সর্বোচ্চ নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফি।...“ তখন এটাই মনে হয় অশ্লীলতার সংজ্ঞা কেবল মানুষের নগ্ন গাত্র না।
অন্য দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা না-দিলে চলবে কেন!
এটা আমার নিজস্ব মত, হেফাজতের সমাবেশের
নামে ঢাকায় যে তান্ডব শুরু হয়েছিল এটা দ্রুত না-থামিয়ে কোনও উপায় ছিল না। ঢাকার
দেড় কোটি মানুষ তখন ছিলেন অরক্ষিত, আতংকিত।
থামাতে গিয়ে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে
দ্বিমত থাকতে পারে, থাকতে পারে অনেক অযৌক্তিক আচরণ
নিয়ে বক্তব্য কিন্তু রাতের বেলা ব্যতীত এই কাজটা না-করে কোনও গত্যান্তর ছিল বলে
আমি মনে করি না।
রাতে তো ঘোষণা দেওয়াই ছিল ভোর হতেই
বিএনপির লোকজনেরা পিলপিল করে এখানে যোগ দিত। তখন হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ত এমনটাই
আমি মনে করি।
আমার সেই সমস্ত বুদ্ধিমান বন্ধুদেরকে এই
বলে লেখাটা শেষ করছি আপনারা নিজেদের মত সবাইকে বুদ্ধিমান ভাববেন না, অন্তত আমাকে
তো অবশ্যই না...।
No comments:
Post a Comment