'কোর্ট মার্শাল' [১]
নামের লেখাটায় লিখেছিলাম, “...২০১২, বছরের শুরু। জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখের
পত্র-পত্রিকায় ছেয়ে গেল। ...সরকার উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ। ...সেনাবাহিনী থেকে
অবসরপ্রাপ্ত যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এরা এখন কোথায়? কোন আদালতে তাঁদের বিচার চলছে- সামরিক, নাকি
বেসামরিক? কতটুকু অপরাধের সঙ্গে এরা
জড়িত ছিলেন?...”
যাক, শেষ পর্যন্ত জানা
গেল! প্রথম আলো একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে ১৬ জুন, ২০১৪ সালে [২] ,
“সাজাপ্রাপ্ত দুই সেনা কর্মকর্তা আটকের
২৮ মাস পর জেলে। ... দুই সাবেক
কর্মকর্তার পরিবারের অভিযোগ, দুজনকেই এক বছর আটক রাখার পর বিচার শুরু হয়৷ আবার
বিচারের রায় ঘোষণার এক বছর পর তাঁদের বেসামরিক কারাগারে পাঠানো হয়।...”
তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে যে কঠিন অভিযোগটা করা হয়েছে, বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁরা এক বছর আটক ছিলেন। এই অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে দেখা যাচ্ছে এদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে শত-শত দিন, ৩৬৫ দিন!
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যাচ্ছে, “সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির কয়েকজন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত। এঁদের সংখ্যা ১৪ থেকে ১৬ জনের বেশি নয়। এঁদের মধ্যে তিনজনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে সেনাবাহিনী। ... আদালতের সুপারিশের পর ১৫ কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এঁদের মধ্যে একজন মেজর জেনারেল ও একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলও ছিলেন। ১৫ কর্মকর্তার মধ্যে আটজন বিভিন্ন সময় ফৌজদারি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি না, জানা যায়নি।”
তাহলে এই প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, কেবল ৩ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। আবার বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন আরও ১৫ কর্মকর্তা তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। ভবিষ্যতে জানা যাবে এমনটাই আমরা আশা করতে পারি।
এমনিতে এই ঘটনার মূল হোতা ইশরাক আহমেদ (শেষ যেটা আমরা জেনেছিলাম তিনি থাইল্যান্ডে আছেন) তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার কোনও উদ্যোগের কথাও আমরা জানি না।
আজকের (২৩ জুন, ২০১৪)
প্রথম আলোতে মিজানুর রহমান খান চমৎকার একটি লেখা লিখেছেন, “কোর্ট মার্শালের রায় প্রকাশ করুন।“ [৩]
এর মানে কী! রায় কী
অপ্রকাশিত? কেন? কী আশ্চর্য, একজন ভুক্তভোগী এটাও জানতে পারবেন না যে কোন প্রক্রিয়ায় তার বিচার
সম্পন্ন হলো?
এই লেখা থেকে আমরা আরও জানতে পারি, “...বেলুচিস্তানের চাঞ্চল্যকর গুমের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আমির হানি মুসলিম বলেছেন, সামরিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত
আপিল সুপ্রিম কোর্ট শুনবেন৷” (ডন, ২৭ মার্চ ২০১৪)
“২০০৭ সালে ভারত সব ধরনের সামরিক রায় ও
আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনতে আর্মড ফোর্সেস ট্রাইব্যুনাল (এএফটি) চালু করে৷ ...গত সপ্তাহে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে দেখি, ভারত এএফটিতে থেমে নেই৷ আপিলের আরও একটি নতুন ফোরাম
খুলেছে৷ এএফটির রায়ের বিরুদ্ধে
হাইকোর্টের দ্বারও খোলা হয়েছে৷ হিন্দু লিখেছে, দেখা যাচ্ছে,
হাইকোর্টে ৯০
শতাংশ রায় উল্টে যাচ্ছে৷”
আমাদের দেশে সেনা আইনে বিচারের কোনও
আপিলের সুযোগ নেই, কেন? সেনা আইনে বিচার কী আসমানি বিচার যে এটার ভুল হওয়ার
বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নাই।
যাই হোক, উল্লেখিত প্রতিবেদন থেকে জানা
যাচ্ছে, পাশের দেশের উদাহরণ থেকে আমরা স্পষ্টত জানতে পারছি, কোর্ট মার্শালের রায়
আসমানি কোনও রায় না, এখানেও ভুলভাল হয়। বিচারে তো ভুল হওয়ার কোনও অবকাশ নাই।
কারণ...। দু-চার বছরের জেলটাই তো শেষ কথা না। যাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এরা এখন
অপরাধী। এখন এদের স্বজনদেরকে যখন কেউ বলবে, ‘দেখ-দেখ, ওই
যায় ক্রিমিনালের পোলা’, ‘ওই যায়
ক্রিমিনালের বউ’,
তখন তাঁদের স্বজনদের উপর পানে তাকিয়ে রক্ত মেশানো চোখের জল ফেলা ব্যতীত তার আর কী-ই
বা করার থাকে কারণ
এরাও যে এখন এটাই জানে, তার পাপা, তার
স্বামী একজন অপরাধী, ঘৃণ্য মানুষ...।
১. কোর্ট মার্শাল: http://www.ali-mahmed.com/2012/12/blog-post.html
২. সাজাপ্রাপ্ত দুই সেনা কর্মকর্তা আটকের২৮ মাস পর জেলে: http://m.prothom-alo.com/bangladesh/article/242662/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4_%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%87_%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BE_%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE_%E0%A6%86%E0%A6%9F%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A7%A8%E0%A7%AE_%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8_%E0%A6%AA%E0%A6%B0
No comments:
Post a Comment