আমার পুরনো একটা লেখা ছিল এমন:
“মাদাম যান।
ফোর-হুইল, থ্রি-হুইল, টু-হুইল, নো-হুইল (পায়ে হেঁটে) যেটা ভাল লাগে সেটা দিয়েই
যান। তবুও যান, মাদাম।“
বাংলাদেশে যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব
এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে খালেদা জিয়া যাননি। লেখাটা ছিল এই প্রেক্ষিতে। কেন
তিনি যাননি? আমাদের দেশে তখন হরতাল চলছিল। কে ডেকেছিল হরতাল? জামাতে ইসলামি। এটা
এই দেশের একটা শিশুও জানে মাদাম হরতাল না-চাইলে জামাতের বুকের পাটা মসলা বাটার
পাটা হয়ে যাবে। স্বল্পভাষী মাদামের মুখনিঃসৃত স্বল্প বাণীতেই হরতাল আকাশলোকে চলে
যেত। কিন্তু মাদাম ওপথ মাড়াননি।
ভারতের লোকজনেরা যে এটাকে সহজ ভঙ্গিতে নেবে
এটা পাগলও বিশ্বাস করবে না। তাই ফলটা মাদাম হাতে-হাতেই পেয়েছিলেন এটা আর বলার
অপেক্ষা রাখে না।
তখন খালেদা জিয়া যে অকাট্য যুক্তি
দিয়েছিলেন সেটা হচ্ছে হরতালে আমি কোথাও যাই না। অতি উত্তম। কিন্তু এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়া লাগে না যে ভারতের রাষ্ট্রপতির
আমাদের মত ‘ছদুরুদ্দিন-মদুরুদ্দিন’ না যে ‘উঠলো বাই চলো বিদেশ যাই’। বিস্তর সময় নিয়ে এমন একটা কর্মসূচী নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এটা বিএনপির
লোকজনেরাও বিশ্বাস করবে না যে হরতাল দেওয়ার সময় এটা জানা ছিল না যে ভারতের
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে আসবেন। অথচ এটা খালেদা জিয়ার জন্য মোক্ষম একটা সুযোগ ছিল।
তিনি অনায়াসেই তা হাতছাড়া করলেন।
যাই হোক, ওদিকে গঙ্গার জল অনেক গড়ালো এদিকে
বুড়িগঙ্গার পানিও বিস্তর ঘোলা হলো।
এবছর বাংলাদেশে এলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সুষমা স্বরাজ। সুষমা স্বরাজের
কর্মসূচির মধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করাটা ছিল না। কিন্তু খালেদা জিয়া সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করতে অমায়িক
আগ্রহ প্রকাশ করলেন। ভারতীয় হাইকমিশন থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো: সুষমা যাবেন না।
দেখা করতে হলে খালেদা হোটেলে আসতে পারেন। কথাবার্তা হবে লবিতে বসে।
খালেদা জিয়া আর মান-সম্মানের দিকে তাকাননি,
প্রটোকল ভুলে হোটেলে গিয়ে সুষমার সঙ্গে দেখা করলেন।
খালেদা জিয়া উভয় ক্ষেত্রেই দেশের আপামর
লোকজনকে খাটো করলেন। এ অবশ্য নতুন কিছু না।
"সপ্তম জাতীয় সংসদ
নির্বাচনের সময় বিদেশী পর্যবেক্ষকরা
বলছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিন্তু খালেদা জিয়ার অনড় বক্তব্য ১০০ আসনে
কারচুপি হয়েছে।
তিনি
সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছিলেন।
এতে
বড় ধরনের গলযোগ সৃষ্টি হতে পারে, এটা জানতে পেরে,
ব্রিটিশ
হাই কমিশনারের দপ্তর থেকে অনুরোধ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,
যুক্তরাজ্য,
ফ্রান্স,
কানাডা,
জাপানের
রাষ্ট্রদূত, হাই কমিশনাররা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলার জন্য
অনুমতি চান।
কিন্তু খালেদা
জিয়া ব্যস্ত আছেন এটা বলে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।
উপায়ন্তর
না দেখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অতি জরুরি
বার্তা বেগম জিয়ার কাছে এখনই পৌঁছে দিতে
চান বলে জানান এবং তার সঙ্গে আরও ২জন রাষ্ট্রদূত এবং ২জন হাই কমিশনার
থাকবেন এটাও উল্লেখ করেন। বেগম জিয়া বাধ্য হয়ে সময় দেন।
নির্ধারিত
সময়ে এঁরা ৫জন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। শুরুতেই বেগম
জিয়া বাংলায় বলেন, 'এরা কেন এসেছে, মাতব্বরি করার আর জায়গা পায় না'।
বেগম জিয়ার দোভাষী
ইংরাজিতে বললেন,
'আপনারা
আসায় ম্যাডাম অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তিনি আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছেন'।
এরা কেউই
জানতেন না যে, জাপানি রাষ্ট্রদূত ভালই বাংলা জানতেন আর ফরাসি রাষ্ট্রদূত
জানতেন জাপানি ভাষা। সঙ্গে সঙ্গে জাপানি রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার বলা কথাগুলো
জাপানি ভাষায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তর্জমা করে শোনান...।”
No comments:
Post a Comment