গেছি জেলা শহরে, দায়ে পড়ে। আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নবায়ন করতে
হবে। গেছি ভয়ে-ভয়ে কারণ অফিসের কোনো বিষয় থাকলেই আমার অস্বস্তি বোধ হয়। অফিসের
লাটসাহেবরা এমন আচরণ করবেন যাতে করে নিজেকে পোকা-পোকা মনে হবে। ওখানকার পরিচিত
কয়েকজন রাগী যুবক আমাকে আশ্বস্ত করলেন,
‘ভয় নাই উরে ভয় নাই।
যান, কোনো সমস্যা হবে না’।
জানি না এরা কি কলকাঠি নেড়েছিলেন এডি সাহেবকে
দেখলাম মাখন-মাখন আচরণ করতে। তুরন্ত কাগজপত্র দেখে আনুসাঙ্গিক কাজ সারার জন্য
অন্যত্র পাঠিয়ে দিলেন।
ওখানে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে এবং ছবি তোলা
হবে। পরে আমার ছবির যে প্রিন্টআউট দেখলাম এটা দেখে যে-কেউ বলবে, এটা কোনও
ড্রাগ-ডিলারের ছবি। একে কোনও দেশেই ঢুকতে দেওয়া সমীচীন হবে না। ক্যামেরার বংশ ভাল-
দোষ ক্যামেরার না, আমার। আমারও না আমার চেহারার।
দু-হাতের চার আঙ্গুলের ছাপ রাখার পর আমার
অন্য আঙ্গুলগুলোকে দেখে মায়া হলো বিষয় এটা
না। জায়গাটা গরম তবুও আমি বললাম, ‘বাকী ছয় আঙ্গুলের ছাপ লাগবে না’?
যে ভদ্রলোক এই কাজটা করছিলেন তিনি কঠিন
চোখে তাকালেন। আমি তার কঠিন চোখকে বিশেষ পাত্তা দিলাম না কারণ এই মানুষটাই একটু
পূর্বে অহেতুক বাজে আচরণ করেছেন। বিষয় তেমন কিছুই না। ছবি তোলার সময় হইচই করে বলছিলেন, ‘আহ, চশমাটা খোলেন’।
চশমা খুলে ছবি তুলতে হয়, নিয়ম। এটা সমস্যা
না সমস্যাটা হচ্ছে এর আচরণ। আমি চোয়াল শক্ত করে বললাম, ‘এটা তো বললেই হয়, হাউহাউ করছেন কেন’?
‘করব না! আপনি জানেন
না চশমা খুলে ছবি তুলতে হয়’!
এবার আমি শ্লেষভরা কন্ঠে বললাম, ‘না, জানি না কারণ আমি তো আপনার মত চাকরি করি না। আর আপনি কি
চান আমি আপনার নামে লিখিত অভিযোগ করি...’।
যাক গে, এই হইচইয়ের সুবাদে আমার একটা উপকার
হলো বটে সেটা হচ্ছে মনে পড়ল অনেক দিন ধরেই চশমাটা খুব ভোগাচ্ছে। এই ফাঁকে চোখটা দেখিয়ে
নিলে মন্দ হয় না। আমি বালকবেলা থেকে চশমা পরি এটা কোনও নতুন তথ্য না কিন্তু যেটা আমি এবং ডাক্তার ব্যতীত কেউ জানেন না সেটা হলো চশমা ছাড়া আমি প্রায়
অন্ধ। এটা আমি সযতনে লুকিয়ে রাখি কাউকে জানতে দেই না।
ভার্চুয়াল এই ভুবনটা এখন বড়ো নাজুক। এখানে
কখন কার কোন তথ্য ফাঁস হয়ে যায় এটা নিয়ে আমরা ভয়ে কাঠ হয়ে থাকি। চশমা
ছাড়া আমি যে প্রায় অন্ধ এটা জানাজানি হয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে J ।
যাই হোক, এখানকার কাজ সেরে গেলাম জেলা সদর
হাসপাতালে গোপন ইচ্ছা ফাঁকতালে বিনেপয়সায়...। চক্ষু বিভাগের দায়িত্বে আছেন ইয়ামলী
খান নামের একজন ডাক্তার। ‘পেরাভেটে’ এঁকে দেখালে একটা
৫০০ টাকার পাত্তি লাগে। লাইন এগুতে এগুতে...বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম এই
ভদ্রলোক চলে গেলেন। জিজ্ঞেস করে জানা গেল অন্য ডাক্তার আছেন। মোহাম্মদ আল-আমিন
নামের অন্য যে ডাক্তার এই লোকের পদবীর সঙ্গে দেখছি পিজিটি (চক্ষু) লাগানো। অথচ আমি
যতটুকু জানি পিজিটি লাগানো নিষিদ্ধ।
এবং যথারীতি তিনি যে চিকিৎসা করলেন তা ভুল
চিকিৎসা।
হায় রে, গোলাম হোসেনেরও উপায় নাই-মাহমেদ
হোসেনেরও। যে দেশের যে দস্তুর- নিরুপায় হয়ে সেই পেরাইভেটেই যেতে হলো। গুচ্ছের টাকা
খরচ।
এবার অন্য ডাক্তার- সুখেন্দু বিকাশ
তালুকদার। ইনি এমডি করেছেন রাশিয়া থেকে। রাশিয়ার ডিগ্রি নিয়ে কিযেন ঝামেলা আছে আমাদের দেশে, সে ভিন্ন বিষয়। আমি যখন এই ডাক্তারকে দেখাচ্ছি তখন সিরায়াল
চলছে ত্রিশ। এটা হচ্ছে প্রথম দফা। বিকালে শুরু হবে দ্বিতীয় দফা। রাত পর্যন্ত চলবে।
চারশো টাকা করে ফি হলে রেগি দেখা এবং অপারেশন মিলিয়ে এই ডাক্তার সাহেবের প্রতি দিনের আয় আনুমানিক ত্রিশ হাজার টাকা। মাসে ১০ লাখ টাকা।
ভাল...।
এই ডাক্তার সাহেব আমাকে ব্যবস্থাপত্র যেসব
লিখে দিয়েছেন হাতের লেখা দেখে তো মনে হচ্ছে ওয়ান-টু পড়ুয়া বাচ্চাদের মত। ‘ইকরিমিকরি’। এটা অবশ্য আমি অনেক ডাক্তারদের মধ্যেই দেখেছি।
তো, ব্যবস্থাপত্রে তিনি যে ওষুধটা লিখে
দিয়েছেন এটা কয়েকটা ফার্মেসিতে ঘুরেও সুরাহা হয়নি। দুয়েকজন আমাকে জ্ঞানও দিয়েছেন
ডাক্তার সাহেবদের চেম্বারের কাছাকাছি কোনও ফার্মেসি থেকেই ওষুধ কেনার নিয়ম কারণ
ওরা চট করে ওই ডাক্তারের লেখা ধরতে পারে। মনে মনে বলি, কত অজানা রে...। আমার না-হয়
চোখ গেল চোখ গেল কিন্তু যার প্রাণ যাবে সে
বাঁচবে কেমন করে!
ভাল কথা, আমার বন্ধুতালিকায়-থাকা কোনও
সহৃদয় ডাক্তার যদি ওষুধটার নাম এবং কয়টা করে বাতলে দিতেন তাহলে ভারী কৃতজ্ঞ হতাম।
No comments:
Post a Comment