আজকের অতিথি লেখক, Jannatul Nayem
"বছর কয়েক আগের কথা। সেজ খালা আমাকে এবং মেরিকে খুব বকা দিলেন। আমরা দুজনেই চিন্তা করে দেখলাম, আসলেই তো, এই জীবনের কোনই দাম নেই। দুজন মিলে ঠিক করলাম: চল, আমরা 'খুদখুশি' করি। শুরু হলো চিন্তা-ভাবনা। কেমন করে ‘খুদখুশি’ করা যায়?
আমি আইডিয়া দিলে মেরি বাতিল করে, মেরি দিলে আমি। হারপিকও ছিল আইডিয়াতে, কিন্তু হারপিক বাথরুমে ব্যবহার হয়, ছি! ভাবতেই বমি আসছিল। একটা আইডিয়া ছিল এমন, বিষ খেয়ে...। মেরি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দিল কারণ যদি না-মরি, বেঁচে যাই? বেঁচে গেলে তো বিশাল ঝামেলা।
এরপর মেরি আইডিয়া দিল ছাদ থেকে সোজা লাফ। যথারীতি আমি বাতিল করে বললাম, ‘চার তলার উপর থেকে লাফ দিলে মরব এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। তবে লাশের অবস্থা কি হবে জান? নিচেই বস্তি, টিনের চালের উপর পড়ে কেটে-কুটে ক্ষত-বিক্ষত লাশ... সব বাদ দিলেও আমার এই সুন্দর চেহারার কি হবে’?
মেরি বলল, ‘আপু তা ঠিক বলছ, একেবারে আলুভর্তা। না-না, মাংসের ভর্তা’!
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, ‘মেরি তোমারটা ঠিক থাকবে মনে হয়! দু-জনের ইচ্ছায় ঠিক হলো ঘুমের ওষুধ। ঘুমের ওষুধ নিরাপদ আর শান্তিতে মরতে পারব ঘুমের মধ্যে, শান্তি- শান্তি। অপেক্ষা শুধু আর একটা দিনের। ওষুধ কিনে আনা পর্যন্ত, তবে একটাই কাজ বাকী...। আমাদের শেষ কিছু ইচ্ছা ছিল। মরার পূর্বে এই সব লিখে যাওয়া মানে শেষ চিঠি।
এবার শুরু হলো ইচ্ছাগুলো লেখা। ইসস, কত যে ইচ্ছা! মেরির একটা ইচ্ছা তার পছন্দের গানগুলোর লিস্ট করা আর সেগুলি লিখে রাখা। বললাম, গান লিখে রেখে কী হবে, শুনবে কে’! মেরির দ্রুত উত্তর, ‘যখন থাকব না তখন আমার কথা মনে করে আমার মা গানগুলো শুনবে’। হুম, কথায় যুক্তি আছে বটে। এবার খানাপিনার লিস্ট। মেরিকে বললাম, ‘আমার মা আমার কথা মনে করে ফকির খাওয়াবে তবে কোনও ফকির আইসক্রিম, চকলেট, বাদাম, এইসব পেয়ে কতটুকু খুশি হবে তা নিশ্চিত ছিলাম না।
যাই হোক, মনটা খারাপ করে মেরিকে বললাম, ‘মেরি তোমার তো বয়স হয় নাই কিন্তু আমার তো আঠারো, বিবাহ ফরয হয়েছে। বিবাহ না-করেই মরব? আচ্ছা, কাউকে কি রিকোয়েস্ট করা যায়? প্লিজ একটা দিনের জন্য আমাকে বিবাহ করেন। টাকা-পয়সা থাকলে অবশ্য ব্যাপার ছিল না’।
মেরি ভেবে বলল, ‘কিন্তু সাক্ষী কই পাবে’? মনটা তখন উদাস হয়ে গিয়েছিল। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমার হাত ধরার মত এমন তো কেউ নেই যার জন্য বেঁচে থাকা! খুব একটা মন খারাপ করলাম না, থাক মরতে তো হবেই এখন এইসব চিন্তা করে লাভ কি। আবার শুরু চিঠি লেখা। সমস্ত বন্ধুর নাম, ফোন নাম্বার, কাকে কি দিতে হবে। কোথায় আমাদের কবর হবে। আহা, মরার পর তো আর উঠে এসে বলতে পারব না, দেন-দেন এখানে আমাদের কবর দেন। তাই মনে করে করে লিখলাম।
কিন্তু হঠাৎ মনে হল ওয়াল্লা, লিখতে লিখতে চিঠিটা চার পৃষ্ঠা হয়ে গেছে! কিন্তু এত বড় চিঠি কে পড়ব? মেরিকে নরোম সুরে বললাম, ‘তুমি কিছুটা কমাও, যেহেতু আমি বড় তাই চিঠিতে আমার ইচ্ছাই বেশী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যাই হোক,শুরু হল এডিটিং। আমাদের যৌথ ইচ্ছা মিলিয়ে চিঠি লেখা যখন শেষ হলো তাও গিয়ে দাঁড়ালো দুই পৃষ্ঠা!
কিছুক্ষণ পরই খালু চিৎকার করে বললেন, 'এই-এই, সেহেরির সময় যে শেষ তার কোনও খবর আছে'...। দুই বান্দর সারারাত জাইগা আছো, অথচ কোনও খবর নাই। সাধে কি বকা খাও’। আযান দিতে দিতেই খাওয়া শেষ করলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি...।
সকালে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখি চারপাশ, পৃথিবীটা কত সুন্দর! গাছের খসখসে পাতাটাও মনে হয় কী চকচকে- যা দেখি তাই ভাল লাগে। আহা, এখনও যে কত কিছুই দেখা হয়নি। কখন যে মরার ইচ্ছাটা চলে গেছে নিজেও জানি না মেরিকে ঘুম থেকে তুলে বললাম, ‘ডিসিশন চেঞ্জ, জীবনে অনেক কিছুই করা হয় নাই, দেখা হয় নাই। করে দেখেনি তারপর না-হয় মরার চিন্তা করা যাবে। এটাই শেষ কথা, ফাইনাল’।
এখন এই সব কথা মনে পড়লে হাসি পায় কিন্তু সে রাতে আমরা দুইজনই মরার জন্য খুব সিরিয়াস ছিলাম। সেই রাত! ভাগ্যিস, সেই রাতটা শেষ রাত হয়ে উঠেনি...।"
"বছর কয়েক আগের কথা। সেজ খালা আমাকে এবং মেরিকে খুব বকা দিলেন। আমরা দুজনেই চিন্তা করে দেখলাম, আসলেই তো, এই জীবনের কোনই দাম নেই। দুজন মিলে ঠিক করলাম: চল, আমরা 'খুদখুশি' করি। শুরু হলো চিন্তা-ভাবনা। কেমন করে ‘খুদখুশি’ করা যায়?
আমি আইডিয়া দিলে মেরি বাতিল করে, মেরি দিলে আমি। হারপিকও ছিল আইডিয়াতে, কিন্তু হারপিক বাথরুমে ব্যবহার হয়, ছি! ভাবতেই বমি আসছিল। একটা আইডিয়া ছিল এমন, বিষ খেয়ে...। মেরি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দিল কারণ যদি না-মরি, বেঁচে যাই? বেঁচে গেলে তো বিশাল ঝামেলা।
এরপর মেরি আইডিয়া দিল ছাদ থেকে সোজা লাফ। যথারীতি আমি বাতিল করে বললাম, ‘চার তলার উপর থেকে লাফ দিলে মরব এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। তবে লাশের অবস্থা কি হবে জান? নিচেই বস্তি, টিনের চালের উপর পড়ে কেটে-কুটে ক্ষত-বিক্ষত লাশ... সব বাদ দিলেও আমার এই সুন্দর চেহারার কি হবে’?
মেরি বলল, ‘আপু তা ঠিক বলছ, একেবারে আলুভর্তা। না-না, মাংসের ভর্তা’!
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, ‘মেরি তোমারটা ঠিক থাকবে মনে হয়! দু-জনের ইচ্ছায় ঠিক হলো ঘুমের ওষুধ। ঘুমের ওষুধ নিরাপদ আর শান্তিতে মরতে পারব ঘুমের মধ্যে, শান্তি- শান্তি। অপেক্ষা শুধু আর একটা দিনের। ওষুধ কিনে আনা পর্যন্ত, তবে একটাই কাজ বাকী...। আমাদের শেষ কিছু ইচ্ছা ছিল। মরার পূর্বে এই সব লিখে যাওয়া মানে শেষ চিঠি।
এবার শুরু হলো ইচ্ছাগুলো লেখা। ইসস, কত যে ইচ্ছা! মেরির একটা ইচ্ছা তার পছন্দের গানগুলোর লিস্ট করা আর সেগুলি লিখে রাখা। বললাম, গান লিখে রেখে কী হবে, শুনবে কে’! মেরির দ্রুত উত্তর, ‘যখন থাকব না তখন আমার কথা মনে করে আমার মা গানগুলো শুনবে’। হুম, কথায় যুক্তি আছে বটে। এবার খানাপিনার লিস্ট। মেরিকে বললাম, ‘আমার মা আমার কথা মনে করে ফকির খাওয়াবে তবে কোনও ফকির আইসক্রিম, চকলেট, বাদাম, এইসব পেয়ে কতটুকু খুশি হবে তা নিশ্চিত ছিলাম না।
যাই হোক, মনটা খারাপ করে মেরিকে বললাম, ‘মেরি তোমার তো বয়স হয় নাই কিন্তু আমার তো আঠারো, বিবাহ ফরয হয়েছে। বিবাহ না-করেই মরব? আচ্ছা, কাউকে কি রিকোয়েস্ট করা যায়? প্লিজ একটা দিনের জন্য আমাকে বিবাহ করেন। টাকা-পয়সা থাকলে অবশ্য ব্যাপার ছিল না’।
মেরি ভেবে বলল, ‘কিন্তু সাক্ষী কই পাবে’? মনটা তখন উদাস হয়ে গিয়েছিল। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমার হাত ধরার মত এমন তো কেউ নেই যার জন্য বেঁচে থাকা! খুব একটা মন খারাপ করলাম না, থাক মরতে তো হবেই এখন এইসব চিন্তা করে লাভ কি। আবার শুরু চিঠি লেখা। সমস্ত বন্ধুর নাম, ফোন নাম্বার, কাকে কি দিতে হবে। কোথায় আমাদের কবর হবে। আহা, মরার পর তো আর উঠে এসে বলতে পারব না, দেন-দেন এখানে আমাদের কবর দেন। তাই মনে করে করে লিখলাম।
কিন্তু হঠাৎ মনে হল ওয়াল্লা, লিখতে লিখতে চিঠিটা চার পৃষ্ঠা হয়ে গেছে! কিন্তু এত বড় চিঠি কে পড়ব? মেরিকে নরোম সুরে বললাম, ‘তুমি কিছুটা কমাও, যেহেতু আমি বড় তাই চিঠিতে আমার ইচ্ছাই বেশী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যাই হোক,শুরু হল এডিটিং। আমাদের যৌথ ইচ্ছা মিলিয়ে চিঠি লেখা যখন শেষ হলো তাও গিয়ে দাঁড়ালো দুই পৃষ্ঠা!
কিছুক্ষণ পরই খালু চিৎকার করে বললেন, 'এই-এই, সেহেরির সময় যে শেষ তার কোনও খবর আছে'...। দুই বান্দর সারারাত জাইগা আছো, অথচ কোনও খবর নাই। সাধে কি বকা খাও’। আযান দিতে দিতেই খাওয়া শেষ করলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি...।
সকালে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখি চারপাশ, পৃথিবীটা কত সুন্দর! গাছের খসখসে পাতাটাও মনে হয় কী চকচকে- যা দেখি তাই ভাল লাগে। আহা, এখনও যে কত কিছুই দেখা হয়নি। কখন যে মরার ইচ্ছাটা চলে গেছে নিজেও জানি না মেরিকে ঘুম থেকে তুলে বললাম, ‘ডিসিশন চেঞ্জ, জীবনে অনেক কিছুই করা হয় নাই, দেখা হয় নাই। করে দেখেনি তারপর না-হয় মরার চিন্তা করা যাবে। এটাই শেষ কথা, ফাইনাল’।
এখন এই সব কথা মনে পড়লে হাসি পায় কিন্তু সে রাতে আমরা দুইজনই মরার জন্য খুব সিরিয়াস ছিলাম। সেই রাত! ভাগ্যিস, সেই রাতটা শেষ রাত হয়ে উঠেনি...।"
8 comments:
শুভ ভা্ই, লেখা ভাল লেগেছে ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার বন্ধু খুব ভাল লিখে,আপনাকে পাঠালে এখানে লিখা দেবেন?
ধুর মিয়া, এটা তো আমার লেখা না। আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন কেন!
এই ধন্যবাদ তো লেখকের প্রাপ্য :) @মাহিন
বিনয়ের সঙ্গে বলি, ভাল লেখা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। যেটা আমার ভাল লাগে সেটাই পাবলিশ করি। ধন্যবাদ আপনাকে @রুমান
আমি ডেটল খেয়েছিলাম :(
যাক, ডেটল খেয়ে যে লোকজন মরে না এটা নিশ্চিত হলাম- আপনি মন্তব্য করার জন্য এখনও বেঁচে আছেন দেখে :D @নিম্মি
বেচে থাকার কথাটা কে বলছে? শুভ না আলী মাহমেদ?
শুভ ভাই,শব্দটা কি খুদখুশি হবে নাকি খুদকুশি হবে?
আমার ধারণা, 'খুদকুশি'। কারণ 'খুদখুশি' শব্দটা উচ্চারণ করার সময় শব্দটা ভেঙ্গে যাচ্ছে... @জামি
Post a Comment