নেই, নেই কোনও স্মৃতি...।
স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে নইলে সেই কবেই
মানুষ মরে ভুত হয়ে যেত। আর শেষ স্মৃতি- একে জাপটে ধরে বেঁচে থাকে মানুষ
বছেরর-পর-বছর, যুগের-পর-যুগ ধরে। বিকৃত-গলিত তবুও লাশ চাই, প্রিয়মানুষের লাশ। বুকের অটল পাথরটা যদি খানিকটা নড়ে...।
আহ লাশ! তরতাজা একটা মানুষ নিমিষেই আমূল বদলে যায়।
মুছে যায় নামের পূর্বে আ আ ম স ঞ বা নামের পর এ বি সি ডি! তখন কেবল এই লাশ উঠাও, লাশ নামাও। কী আশ্চর্য, এখনও বড়ি পাতা জ্বাল দেওয়া হয়নি। মা
গড়াগড়ি করে কাঁদেন। বোকা মাটার অতশত খেয়াল করার সুযোগ কোথায়- চারপাশে যে অত্যাধুনিক
ক্যামেরা তাক করা। সবই পণ্য, চোখের জলও। মাটার চোখের জলও বিক্রি হবে তার অজান্তেই।
উপোষী ক্যামেরা শ্বাস আটকে থাকে- আহা, এমন দৃশ্য তো হররোজ মেলে না।
বাবাটা কেমন শান্ত হয়ে যান। কেবল তার
সন্তানের লাশ কবরে নামাবার সময় অজান্তেই বিড়বিড় করেন, আরে আস্তে নামাও না, মাইয়াডা
দুক্কু পায় না বুঝি।
প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ডুবে গেছে পিনাক-৬। ২
দিন পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও এর হদিশ মেলেনি। এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে ১৭০ জন নিখোঁজ!
৩৬ কিলোমিটারের মধ্যে যখন পিনাক-৬ পাওয়া যায়নি ধারণা করা হচ্ছে স্রোতের টানে এটা
দ্রুত সরে গেছে। এটাকে পাওয়ার সম্ভাবনা দুরূহ কারণ ক্রমশ পলির পরতে ঢেকে যাবে এটা।
তবুও আমরা আশায় বুক বাঁধি কোনও-না-কোনও প্রকারে এটাকে খুঁজে পাওয়া
যাবে।
অনেকে চোয়াল উঁচু করে বলেন, সব দোষ লোকজনের
এরা ঠাসাঠাসি করে যায় কেন? উপায় থাকে নারে, পাপিষ্ঠ। আমরা যে সবাই আধুনিক দাস
ফিরতে হবে কাজে, চাকুরিতে। ট্রেন-বাস-লঞ্চ সব জায়গায় একই অবস্থা।
আজ আমি স্টেশনে ট্রেনে যে দৃশ্য দেখেছি এটা এখনও শিহরিত করে। স্টেশনে মাহনগর প্রভাতী আন্তঃনগর ট্রেনটা কেবল এসে দাঁড়াল। মাত্র দুমিনিট এর যাত্রা
বিরতি । একজনকে দেখলাম ট্রেনের চাকার মধ্যেখান দিয়ে উবু হয়ে পার হচ্ছে, অসম্ভব
ভিড়ের কারণে উল্টো দিক থেকে উঠবে বলে। আমার কেবল মনে হচ্ছিল মৃত্যু যেন এর চুল ছুঁয়ে গেল। এসব
ভাবাভাবির সময় কোথায় এই মানুষটার! যেতে হবে, যেতে হবে ফিরে।।
এ সত্য আমাদের দেশটা বড়ো গরীব- ছোট্ট এই
জায়গায় উপচেপড়া মানুষ আমরা। তবুও আমরা সামলে নিতাম কিন্তু আমাদের অনেকের লোভের
লকলকে জিব এবং নষ্ট রাজনীতিবিদদের যন্ত্রণায় সে ভরসাটুকুও থাকে না।
আমরা ঈদের পূর্বে পত্রিকায় পড়েই গেলাম ভাঙ্গাচোরা লঞ্চ-জাহাজের জোড়াতালির
কাজ চলছে। যাদের হাতে নাটাইয়ের
সুতো এদের এই সব পড়া-দেখাদেখির সময় কোথয়? ছোট্ট একটা আইন করলেই ল্যাঠা চুকে যায়।
লঞ্চ ডুবে গেলে ক্ষতিপূরণ সরকার দেবে কেন? মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ দেবে লঞ্চ মালিক। এবং যথারীতি সরকারের মেহমান হিসাবে বিনেপয়সায় খাওয়া-দাওয়া। সেটা যে জেলের ভাত এটাও আমাকে
বলে দিতে হবে বুঝি!
হায় প্রকৃতি, প্রকৃতির মত বদমাশ আর নাই- এ
ঠিকই তার শোধ তুলে নেয়।
যাই হোক, অন্যান্য বারের চেয়ে এবার সবচেয়ে
ভাল লাগছে এটা দেখে প্রশাসন সব দিক থেকেই অতি তৎপর। এমনটাই তো হওয়া উচিত। সমস্ত ধরনের শক্তি নিয়োজিত করতে হবে প্রয়োজনে সমস্ত হেলিকপ্টার যা যা
প্রয়োজন সব কিছু।
এখন জানা গেল, নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর ৩ ভাগনিও
আছেন এদের মধ্যে। এর মধ্যে একজনের লাশও উদ্ধার করা হয়েছে।
আমরা আশায় বুক বাঁধতে পারি যে পূর্বের মত সহসাই
উদ্ধারকাজ বাতিল হবে না...।
*ভিডিও ক্লিপটি সংগৃহিত। মানুষটার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
**একটা জরুরি সহায়তা চাচ্ছিলাম। পিনাক-৬
ডুবে যাওয়ার পূর্বে আমজনতার কেউ একজন সেলফোনে সেই দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। কেউ কি
তাঁর নাম জানেন?
***
১৫ মে ২০১৪। গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে যে
লঞ্চটি ডুবে যায় এতে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ৫০ হাজার
টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার
কথা ঘোষণা করেছিলেন।
সেই টাকা আজও পাওয়া যায়নি!
No comments:
Post a Comment