এ দৃশ্যটা কোন দেশের এটা আমার কাছে জরুরি না। হতে পারে এটা ফিলিস্তিন, সিরিয়া, বার্মা
বা ইরাকের- কী আসে যায় তাতে। আমার কাছে যেটা জরুরি, এটা মানবসন্তানের বুক
ভেঙ্গেআসা হাহাকারকরা এক দৃশ্য!
এই দৃশ্যটা অসংখ্য রক্তে ভেসে যাওয়া দৃশ্যের চেয়ে আমার কাছে আলাদা কেন? এর ভাল কোনও সদুত্তর আমার কাছ নাই। সব উত্তর কী আমি জেনে বসে আছি
ছাই!
কেবল এটাই মনে হয় কী হাহাকারকরা একটা
দৃশ্য! শ্বাস আটকে আসে বুকটা কেমন ধক করে উঠে! বাবাটা মরে পড়ে আছে সঙ্গে হয়তো
ভাইটাও। শিশুটি প্রাণপনে আঁকড়ে আছে বাবার চশমাটা, তুচ্ছ একটা বস্তু। শিশুটির কাছে এই হিংস্র পৃথিবীতে আঁকড়ে ধরার মত আর কিছুই অবশিষ্ট নাই, কিচ্ছু
না। কেবল বাবার চশমা ব্যতীত। এটাই ওর কাছে শেষ আশ্রয়স্থল-ভরসাস্থল।
আসলে এই সব কেবল অনুমানমাত্র। শিশুটির
ভাবনা বোঝার ক্ষমতা আমাদের কই! তাহলে বোঝার ক্ষমতা কি আকাশলোকের বাসিন্দার? উহু, আকাশলোকের বাসিন্দা... এটাও জোর দিয়ে বলা চলে না- ঘুমকাতুরে বেচারা যে
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন!
জুকারবার্গ একদা ফেসবুক নামের টিকটিকির ডিম
প্রসব করেছিল যেটা বিচিত্র কারণে কালে-কালে হয়ে গেছে পৃথুল ডায়নোসরের ডিম! চ্যাংড়া
ছেলেটা আমাদের মস্ত এক উপকার করেছে বটে। অনায়াসে বাংলাদেশে ১৭ কোটি লেখক পয়দা করে দিয়েছে-
আহা, ডায়নোসরের ডিম বল কথা! হবে না কেন, বাপু? এখানে যার যত লাইক সে তত বড় লেখক।
নিপট নির্বোধ এখানে ত্রিকালদর্শী!
এক #চুতিয়ার কথা বলি। শাহাদুজ্জামানকে নিয়ে এর ক্ষুব্ধ একটা লেখা পড়েছিলাম (সম্ভবত
শাহাদুজ্জামান ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেননি)) লেখার একটা লাইন হচ্ছে এমন: ‘...শাহাদুজ্জামানের লেখায় কয়টা লাইক পড়ে? লুকটা তুষার ভাইয়ের জুতা
সাফ করারও যোগ্যও না...’।
তুষার ভাই মানে আমাদের আবদুন নুর তুষার। অনুমান
করি এই তুষারের বিশাল এক লাইকবাহিনী আছে যে কারণে এই #চুতিয়াটা শাহাদুজ্জামানের মত লেখকের সঙ্গে তুষারকে এক পাল্লায়
মাপামাপি করতে বসেছে।
এ সত্য শাহাদুজ্জান তো আর উপস্থাপনায়
তুষারকে ছাড়াতে পারবেন না। যেমনটা তুষারকে আমি চিনি চৌকশ একজন উপস্থাপক হিসাবে।
ভুলি কেমন করে! আমার স্মৃতিতে যে এখনও অম্লান তার উপস্থাপনার কেরামতি।
তুষারের ‘শুভেচ্ছা’ অনুষ্ঠানে তুষার কাঁদছে পথশিশুদের কষ্টে। আমি এমন হতবাক
জীবনে কমই হয়েছিলাম কারণ অনুষ্ঠানটা লাইভ ছিল না। তাহলে ঘটনাটা কী দাঁড়াল? রেডি
ওয়ান টু থ্রি ক্যামেরা এ্যাকশন, ভেউ-ভেউ-ভেউ। কাট। রেডি ওয়ান টু থ্রি...টেন,
ভেউ-ভেউ-ভেউ-ভেউ। কাট...। রেডি...কাট...।
ভ্যাঁ...। তুষার ভাইয়া কাঁদছে
অঝোরে!
ওই #চুতিয়ার মত লোকদের এখন আর খুব একটা দোষ
দেই না কারণ প্রথম আলোর মত পত্রিকাকেও যখন লাইক নিয়ে লাফিয়ে ছাদে মাথা ঠুকে ফেলতে
হয় [১] তখন অজান্তেই মুখ ফসকে বের হয়েই যায়, প্রথম আলো শেষ পর্যন্ত তুমিও, #চুতিয়া!
প্রসঙ্গটা আসল এই কারণে অনেকের ফিলিস্তিন
নিয়ে লেখা দেওয়ার পর এমনসব মন্তব্য করা হযেছে যা অতি হৃদয়বিদারক। এই যুক্তিতে এরা
কেন ইরাক বা সিরিয়া নিয়ে বলছেন না। শোনো কথা, একেকজনের কাজ করার ভঙ্গি, একেকজনের
ভাবনা-অনুভূতি-স্পর্শ একেক রকম। তাই বলে
তো কাউকে শূলে চড়ানো চলে না।
এই যেমন অসংখ্য রক্তাক্ত দৃশ্য থেকে
শিশুটির চশমা আঁকড়ে ধরার দৃশ্যটা আমাকে তীব্র বেদনায় আচ্ছন্ন করেছে তাই বলে কী
পাঠককেও এটা স্পর্শ করবেই? এমনটা আশা করাটা নির্বুদ্ধিতা। এখন আমাকে এটা স্পর্শ
করেছে তো কী করা যাবে ইলেকট্রিক পোলে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে!
আর ফিলিস্তিন নিয়ে লিখলেই কী, না-লিখলেই
কী! ইসরাইল তার বাপ আমেরিকারা যা চাইবে তাই হবে। নইলে সমস্ত গাজা ফিলিস্তিনিদের
রক্তে ভেসে যায় আর কেবলমাত্র একজন ইসরাইলি সেনা অপহৃত হলে তার জন্য উদ্বেগে #চুতিয়া ওবামার ...পাত হয়ে যায়। এটাই বাস্তবতা!
তবুও এই কাতরতা, কেন? ২০১২ সালে বাংলাদেশ গাজার জন্য এক কনটেইনার ওষুধ পাঠায়। কিন্তু ওই ওষুধ গাজায় ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। মিসরের বন্দরে পড়ে
পড়ে ওষুধগুলো নষ্ট হয়ে যায়। হোক নষ্ট তবুও বাংলাদেশ অন্তত ভাল লাগায় মাখামাখি হয়ে
থাকতে পারবে যে সে অন্তত সামান্য চেষ্টাটুকু তো করেছিল। বাংলাদেশের তো আর সেই শক্তি নাই যে হাঁক দিলেই ইসরাইলের প্যান্ট ‘গিলা’ হয়ে যাবে।
কেউ যদি ‘সেভ গাজা’ হ্যাশট্যাগ লিখে সামান্য চেষ্টাটুকু করে সমস্যা কোথায়! কারও ভাল লাগলে সেও
অন্যদের জন্য কিছু করুক না, আটকাচ্ছে কে।
তবে, একটা কিন্তু, একটা কিন্তু থেকেই যায়। কেউ
যদি কেবল স্বগোত্র হওয়ার কারণে বিশেষ কোনও গোত্রের জন্য কেবল কাতরতা দেখায় তাহলে আমি
বলব, এই-ই সেই মানুষটা যে অন্যের উপাসনালয় রক্তে ভেসে গেলে উল্লাস করে।
এদের কারও কষ্টে কাতরতা দেখাবার চেয়ে মানুষ
হওয়াটা জরুরি, খুব জরুরি...।
* www.ali-mahmed.com/2014/07/blog-post_22.html
No comments:
Post a Comment