EmOn SarWar , আজকের অতিথি লেখক, লিখেছেন ভিন্ন এক বিষয় নিয়ে। আমাদের দেশে যাদের পূর্বপুরুষ ইরান-তুরান-ইয়েমেন থেকে মাছের পিঠে করে এসেছেন তাঁদের প্রতি এক প্রকারের হাহাকার উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। মনিটর ভেদ করে এই হাহাকার আমাকেও স্পর্শ করে। আমিও তীব্র হিংসায় জ্বলে-পুড়ে ছাই হই তাদের প্রতি, যারা আরব থেকে বাঘের পিঠে করে এদেশে এসেছিলেন।
EmOn SarWar লিখেছেন:
“আমার পূর্বপূরুষরা নেংটি পড়ে ফেনী নদীর তীর ঘেঁষে ধান চাষ করত! খর্বকায়, শ্যামবর্ণ আর মোটা নাক ছিল তাদের। মেদহীন চকচকে কালো দেহে পাকধরা পেশীগুলো ঘামে ভিজে সূর্যের আলোয় চিকচিক করত! এক সময় ফেনী নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। বহমান তীব্র স্রোত স্থিমিত হয়ে বদ্ধ জলাশয়ের রূপ নেয়।
সে জলাশয় বাঁধ দিয়ে পুকুর হলো, আর পাশে জেগে উঠা বালু চরে বসতবাটি। যে অংশটুকু কেউ দখল করতে পারেনি সেটা হল গিয়ে জল মহাল।
আমার পূর্বপূরুষরা অনেকেই কৈবর্ত্য হল। সারা দিন জাল বুনে, সেলাই করে আর ভোর রাতে শীর্ণ শরীরে শরিষার তেল মেখে নেংটি পড়ে জাল টানে! আমাদের ওখানে চক্রবর্তী সম্রাট না-থাকলেও চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ ছিল, মজুমদার ছিল। এরা জমি জিরাতের মালিকও ছিল। সে অর্থে জমিদার বটে। ওদের ঈশ্বর ছিল, মন্দির ছিল, পুজা-পার্বণ ছিল! আর আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর ধারণা শুধু তাদের দন্ডনায়ক হিসেবেই। তারা ভয়ে-ভয়ে থাকত নিজের ও পূর্বপূরুষের অজানা পাপের জন্য তখনও না -পাওয়া শাস্তি নিয়ে!
তখন অবশ্য পারস্য-আরবের ‘মহীসাওয়াররা’ আসা শুরু করেছে। তাদের পথ ধরে, সাগর আর নদীপথে ইসলাম খান চিশতী, বুজুর্গ উমিদ খান আর ছূট্টি খানরাও আসা শুরু করেছেন। আরক্কানী মগ'দের দৌরাত্ব ততদিনে শেষ! শাহ সুজা দিল্লীর মসনদের দৌড়ে হার মেনে প্রাণ নিয়ে আমার পূর্বপূরুষদের অর্ধনগ্ন দেহ আর কালো চোখের সামনে দিয়েই আরকানে পাড়ি জমিয়েছেন।
যাবার পথে রুগ্ন খাদিম আর আহত পাঠান সেনাদের এখানেই ফেলে গেছেন! তাদের দীর্ঘকায় গড়ন, শ্মশ্রুধারী কন্দর্পকান্তি মুখমন্ডল আর ফার্সী উর্দ্দু বয়ান আমার 'ছোটলোক' পূর্বপূরুষদের মুগ্ধ করেছিল হয়ত। রায়, চক্রবর্তি আর মজুমদারদের চেয়ে এদের ফর্সা চেহারা, বিজাতিয় ভাষা আমার পূর্বপুরুষদের কাছে অনেক বেশি দেবতুল্য আর স্বর্গীয় মনে হয়েছিল। এরপর থেকে আমার পূর্বপুরুষেরাও দীক্ষিত হল ওদের বিশ্বাসে, নেংটি ছেড়ে লুংগি পরা ধরল!
...এরপরও মাটি কচলে ধান চাষ করে আর জাল ফেলে মাছ ধরেই বহু যুগ পার করেছে আমার পূর্বপুরুষরা! আমার বাবা সে জীবন পেছনে ফেলে শহরমুখী হয়েছেন- লুংগি ফেলে পাৎলুন ধরেছেন; আমিও তাই।
কিন্তু আজকাল, মাঝে-মাঝে মনে বড্ড সাধ জাগে- আহা, আমার পূর্বপুরুষরা যদি ইরান-তুরান-ইয়েমেন থেকে মাছের পিঠে চড়ে বাংগাল মুল্লুকে আসতেন! আমার নাম যদি শেখ বা সৈয়দ হতো কিংবা নিদেনপক্ষে উত্তর ভারতের চৌধুরি বা ফ্রন্টিয়ারের খান তাহলে তো আমিও বলতে পারতাম ...!
কিন্তু হায়, হীনজন হয়ে ছিলাম তখনও, এখনও যেমন আছি ...!” EmOn SarWar
EmOn SarWar লিখেছেন:
“আমার পূর্বপূরুষরা নেংটি পড়ে ফেনী নদীর তীর ঘেঁষে ধান চাষ করত! খর্বকায়, শ্যামবর্ণ আর মোটা নাক ছিল তাদের। মেদহীন চকচকে কালো দেহে পাকধরা পেশীগুলো ঘামে ভিজে সূর্যের আলোয় চিকচিক করত! এক সময় ফেনী নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। বহমান তীব্র স্রোত স্থিমিত হয়ে বদ্ধ জলাশয়ের রূপ নেয়।
সে জলাশয় বাঁধ দিয়ে পুকুর হলো, আর পাশে জেগে উঠা বালু চরে বসতবাটি। যে অংশটুকু কেউ দখল করতে পারেনি সেটা হল গিয়ে জল মহাল।
আমার পূর্বপূরুষরা অনেকেই কৈবর্ত্য হল। সারা দিন জাল বুনে, সেলাই করে আর ভোর রাতে শীর্ণ শরীরে শরিষার তেল মেখে নেংটি পড়ে জাল টানে! আমাদের ওখানে চক্রবর্তী সম্রাট না-থাকলেও চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ ছিল, মজুমদার ছিল। এরা জমি জিরাতের মালিকও ছিল। সে অর্থে জমিদার বটে। ওদের ঈশ্বর ছিল, মন্দির ছিল, পুজা-পার্বণ ছিল! আর আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর ধারণা শুধু তাদের দন্ডনায়ক হিসেবেই। তারা ভয়ে-ভয়ে থাকত নিজের ও পূর্বপূরুষের অজানা পাপের জন্য তখনও না -পাওয়া শাস্তি নিয়ে!
তখন অবশ্য পারস্য-আরবের ‘মহীসাওয়াররা’ আসা শুরু করেছে। তাদের পথ ধরে, সাগর আর নদীপথে ইসলাম খান চিশতী, বুজুর্গ উমিদ খান আর ছূট্টি খানরাও আসা শুরু করেছেন। আরক্কানী মগ'দের দৌরাত্ব ততদিনে শেষ! শাহ সুজা দিল্লীর মসনদের দৌড়ে হার মেনে প্রাণ নিয়ে আমার পূর্বপূরুষদের অর্ধনগ্ন দেহ আর কালো চোখের সামনে দিয়েই আরকানে পাড়ি জমিয়েছেন।
যাবার পথে রুগ্ন খাদিম আর আহত পাঠান সেনাদের এখানেই ফেলে গেছেন! তাদের দীর্ঘকায় গড়ন, শ্মশ্রুধারী কন্দর্পকান্তি মুখমন্ডল আর ফার্সী উর্দ্দু বয়ান আমার 'ছোটলোক' পূর্বপূরুষদের মুগ্ধ করেছিল হয়ত। রায়, চক্রবর্তি আর মজুমদারদের চেয়ে এদের ফর্সা চেহারা, বিজাতিয় ভাষা আমার পূর্বপুরুষদের কাছে অনেক বেশি দেবতুল্য আর স্বর্গীয় মনে হয়েছিল। এরপর থেকে আমার পূর্বপুরুষেরাও দীক্ষিত হল ওদের বিশ্বাসে, নেংটি ছেড়ে লুংগি পরা ধরল!
...এরপরও মাটি কচলে ধান চাষ করে আর জাল ফেলে মাছ ধরেই বহু যুগ পার করেছে আমার পূর্বপুরুষরা! আমার বাবা সে জীবন পেছনে ফেলে শহরমুখী হয়েছেন- লুংগি ফেলে পাৎলুন ধরেছেন; আমিও তাই।
কিন্তু আজকাল, মাঝে-মাঝে মনে বড্ড সাধ জাগে- আহা, আমার পূর্বপুরুষরা যদি ইরান-তুরান-ইয়েমেন থেকে মাছের পিঠে চড়ে বাংগাল মুল্লুকে আসতেন! আমার নাম যদি শেখ বা সৈয়দ হতো কিংবা নিদেনপক্ষে উত্তর ভারতের চৌধুরি বা ফ্রন্টিয়ারের খান তাহলে তো আমিও বলতে পারতাম ...!
কিন্তু হায়, হীনজন হয়ে ছিলাম তখনও, এখনও যেমন আছি ...!” EmOn SarWar
2 comments:
লোল, সোনার হাস হয়ে গেল আইক্কাওয়ালা বাশ ;/
কোথাও কি কিছু পুড়ছে? গন্ধ পাচ্ছি
Post a Comment