রাধানগর স্কুলের হেড-টিচার জাকির হোসেন যখন বললেন, ‘একটা হুইল-চেয়ার যে দেওয়া লাগে’, তখন বিরক্তিতে মনটা ছেয়ে গেল। কারণ বলার পরও এরা বুঝতে চান না যে হুইল চেয়ারের কারখানা আমার কাছে নাই। কিছু সদাশয় মানুষ আমার অশক্ত হাত শক্ত করে মমতায় ধরেন, নইলে আমি কোত্থেকে দেব!
এই মানুষটার কাছে স্কুল বিষয়ে আমি কৃতজ্ঞ বিধায় মুখের উপর না বলতে সংকোচ হয়। নিরুপায় আমি, আজ-কাল করে জাকির হোসেন নামের মানুষটাকে লাটিমের মত ঘুরাই। মনে মনে বলি, আরে, এই লোক হলো মাস্টার মানুষ, কেউ একজন বলল এইটা দরকার আর তিনিও মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুট লাগালেন। কিন্তু সদা হাস্যময় মাস্টার মানুষটা যে কচ্ছপমানব এটা আমার জানা ছিল না। তিনি ঠিকই কামড় দিয়ে পড়ে রইলেন।
আজ মানুষটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে রওয়ানা হলাম। হা ইশ্বর! আমার এই অহেতুক বিলম্বের জন্য কার কাছে ক্ষমা চাইব? হুড়মুড় করে পড়ে যাবে এমন একটা বাড়ির সামনে দরোজায় পা ঝুলিয়ে রিমা মেয়েটিকে দেখলাম।
এর বয়স আনুমানিক ১০ বছর হবে কিন্তু ভারী শরীরের কারণে এর মা-বাবার পক্ষে একে এখানে-ওখানে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ওর মার কাছে শুনেছি ঘুম ব্যতীত সময়টুকু ওর সমস্ত ভুবনটা এই দরোজার চৌকাঠ পর্যন্ত। মেয়েটকে যখন দেখি গায়ে এর বোতামবিহীন একটা অতি জীর্ণ শার্ট সম্ভবত এটা ওর বাবার, যেটা ওর হাঁটু পর্যন্ত। পরে অবশ্য এর মা ভারী লজ্জিত হয় নিজের একটা ওড়না টাইপের কিছু একটা দিয়ে একে ঢেকে দিয়েছিলেন।
হাবিজাবি কাজ, অকাজে আমার অভিজ্ঞতার শেষ নেই কিন্তু আজ যে ঘটনার সম্মুখীন হলাম এ অভূতপূর্ব- আমার সঙ্গে আগে কখনও এমনটা ঘটেনি! চলে আসার সময় আমি রিমার মাকে বললাম, ‘আচ্ছা, আমি দেখি চেষ্টা করে এর জন্য একটা হুইল-চেয়ারের ব্যবস্থা করা যায় কিনা। তিনি যে উত্তর দিলেন আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি তোতাপাখির মত অনর্গল বকে গেলেন, ‘না-না-না, আমি অনেক আশা নিয়া বইসা আছি। আপনে একটা ব্যবস্তা কইরা দিবেন-দিবেন-দিবেন। দিতেই হইব’।
এমন পর্যায়ে আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এমন কঠিন দাবী নিয়ে এতো জোর দিয়ে বলেনি। কী তীব্র দাবী- কী স্থির বিশ্বাস! হায়, হায় বোকা মহিলা, এ কেমন করে জানবে যে মানুষটার কাছে তাঁর এমন মমতার দাবী সেই মনুষটার ক্ষমতার দৌড় যে বড়ো সীমিত...।
এই মানুষটার কাছে স্কুল বিষয়ে আমি কৃতজ্ঞ বিধায় মুখের উপর না বলতে সংকোচ হয়। নিরুপায় আমি, আজ-কাল করে জাকির হোসেন নামের মানুষটাকে লাটিমের মত ঘুরাই। মনে মনে বলি, আরে, এই লোক হলো মাস্টার মানুষ, কেউ একজন বলল এইটা দরকার আর তিনিও মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুট লাগালেন। কিন্তু সদা হাস্যময় মাস্টার মানুষটা যে কচ্ছপমানব এটা আমার জানা ছিল না। তিনি ঠিকই কামড় দিয়ে পড়ে রইলেন।
আজ মানুষটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে রওয়ানা হলাম। হা ইশ্বর! আমার এই অহেতুক বিলম্বের জন্য কার কাছে ক্ষমা চাইব? হুড়মুড় করে পড়ে যাবে এমন একটা বাড়ির সামনে দরোজায় পা ঝুলিয়ে রিমা মেয়েটিকে দেখলাম।
এর বয়স আনুমানিক ১০ বছর হবে কিন্তু ভারী শরীরের কারণে এর মা-বাবার পক্ষে একে এখানে-ওখানে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ওর মার কাছে শুনেছি ঘুম ব্যতীত সময়টুকু ওর সমস্ত ভুবনটা এই দরোজার চৌকাঠ পর্যন্ত। মেয়েটকে যখন দেখি গায়ে এর বোতামবিহীন একটা অতি জীর্ণ শার্ট সম্ভবত এটা ওর বাবার, যেটা ওর হাঁটু পর্যন্ত। পরে অবশ্য এর মা ভারী লজ্জিত হয় নিজের একটা ওড়না টাইপের কিছু একটা দিয়ে একে ঢেকে দিয়েছিলেন।
হাবিজাবি কাজ, অকাজে আমার অভিজ্ঞতার শেষ নেই কিন্তু আজ যে ঘটনার সম্মুখীন হলাম এ অভূতপূর্ব- আমার সঙ্গে আগে কখনও এমনটা ঘটেনি! চলে আসার সময় আমি রিমার মাকে বললাম, ‘আচ্ছা, আমি দেখি চেষ্টা করে এর জন্য একটা হুইল-চেয়ারের ব্যবস্থা করা যায় কিনা। তিনি যে উত্তর দিলেন আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি তোতাপাখির মত অনর্গল বকে গেলেন, ‘না-না-না, আমি অনেক আশা নিয়া বইসা আছি। আপনে একটা ব্যবস্তা কইরা দিবেন-দিবেন-দিবেন। দিতেই হইব’।
এমন পর্যায়ে আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এমন কঠিন দাবী নিয়ে এতো জোর দিয়ে বলেনি। কী তীব্র দাবী- কী স্থির বিশ্বাস! হায়, হায় বোকা মহিলা, এ কেমন করে জানবে যে মানুষটার কাছে তাঁর এমন মমতার দাবী সেই মনুষটার ক্ষমতার দৌড় যে বড়ো সীমিত...।
No comments:
Post a Comment