গতকাল গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছে। অনেকের মধ্যে এক ধরনের হাহাকার কাজ করেছিল, কেন তার মৃত্যুদন্ড হয়নি। আদালত বয়সের কারণে তাকে মৃত্যুদন্ড না-দিয়ে ৯০ বছরের কারাদন্ড দেন। এই রায় নিয়ে আমার নিজেরও অমত আছে। যদি এমন হত তার কৃত অপরাধগুলো মৃত্যুদন্ড পাওয়ার উপযুক্ত না তাহলে বিষয়টা ভিন্ন ছিল। কিন্তু এখানে তার বয়সটা বিবেচ্য হয়েছে। এমনিতে আমাদের দেশে একজন বয়স্ক মানুষ মৃত্যুদন্ড পাওয়ার মত জঘণ্য অপরাধ করলেও তিনি কী পার পেয়ে যাবেন? এটাই যদি আইনের কথা হয় তাহলে তো আর কথা চলে না।
গোলাম আযম অপরাধী হিসাবে দন্ডিত হওয়ার পর ১১০০ দিন কারাগারের পরিবর্তে হাসপাতালে কাটিয়েছেন। তিনি এমন কী অসুখে ভুগছিলেন যে তাকে ১১০০ দিনই হাসপাতালে রাখতে হলো? অন্য কয়েদির বেলায়ও কী এমনটাই ঘটে বা ঘটবে? উত্তরটা না-হয়ে থাকলে এখানে আইনের প্রয়োগে তারতম্য হয়েছে এমনটাই প্রতীয়মান হয়। এও এক ধরনের অন্যায়। আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা! এমন ব্যবস্থা একটা জাতির জন্য বাজে একটা উদাহরণ হিসাবে রয়ে গেল।
অবশ্য গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন একজন অপরাধী হিসাবে এটাও কিন্তু কম না। আমি যেটা বারবার বলি, রক্তের দাগ মুছে ফেলা যায় না। এটাও একটা স্বস্তির কারণ মৃত্যুর পূর্বেই গোলাম আজম নিরপরাধ রূপে পার পেয়ে যাননি। এটাও কিন্তু কম পাওয়া না। আমি এটাকে একটা বিজয় হিসাবেই দেখি।
আজ ২০১৪ সালে এসে যেটা অতি সহজ মনে হয়, পূর্বে এতোটা সহজ কিন্তু ছিল না। ২০০৫-৬ সালের কথা বলি। তখন আমরা যারা ওয়েব সাইটে লেখালেখি করতাম তাদের কাছে বিষয়টা অতি দুরূহ ছিল। এক সময় তো দেখতে দেখতে কৃষিমন্ত্রী পরে শিল্পমন্ত্রী মতিউর নিজামীর গাড়িতে পতপত করে উড়তে শুরু করে আমাদের জাতীয় পতাকা! এদিকে তখন ওয়েবে এই সংক্রান্ত তেমন কোনও তথ্যই নেই। বিশেষ করে বাংলায়। হাতের নাগালে উল্লেখযোগ্য বই-পুস্তকও নেই। যাও আছে আগুনদাম, থাকলেও এর-ওর কাছে ছাড়া-ছাড়া ভাবে। যার কাছে যেটা আছে সেটা নিয়েই অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে লেখা শুরু করলেন।
তখন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দলিল আমার মত সাধারণ মানুষদের কাছে সহজলভ্য ছিল না। একটা লাইব্রেরিতে পাওয়া গেল জরাজীর্ণ অবস্থায়, পাতাগুলো ঝুরঝুরে! আমার মনে আছে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দলিল তখন ১৫০০০ হাজার পৃষ্ঠা ফটোকপি করেছিলাম। যেটা আমার কাছে এখনও আছে। তো, শুরু হলো ওখান থেকে এবং বিভিন্ন পেপার কাটিং স্ক্যান করে কপি-পেস্ট। লেখার-পর-লেখা।
সবাই যখন ঘুমুতে যায় আমি তখন বগলে করে একগাদা ফটোকপি নিয়ে আমার অফিসের কম্পিউটারের সামনে বসি। আহ, আমার সেই ‘জুতাখাওয়া’ কম্পিউটার (সেই কম্পিউটারকে কতবার চটি দিয়ে পিটিয়েছি তার ইয়াত্তা নাই, তবুও লাভ হয়নি!)! অথচ তখন লেখালেখির জন্য ৩৮৬ মেশিনকে ৪৮৬ মেশিনে আপগ্রেড করেছি কারণ ৩৮৬ মেশিনটা কেমন দুর্ধর্ষ ছিল খানিকটা বলি, ওটার হার্ড ডিস্ক ছিল ১০০ মেগাবাইটের! তাছাড়া ইন্টারনেট কানেকশনও অফিসে। টিএনটির ডায়াল-আপ লাইন। ধীর গতি কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি! কখনও কম্পিউটার ঘুমিয়ে পড়ে কখনও-বা আমি।
কখন যে ভোর হয় তার হিসাব কে রাখে! কালে কালে হয়ে গেলাম ‘নিশাচর ড্রাকুলা’। প্রায়শ আমার মা ক্ষেপে গিয়ে বলতেন, ‘তুই আমার বাড়ি থিক্যা বাইর হ’। ভদ্রমহিলার হাজবেন্ডের বাড়ি বের করে দিলে তাঁকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। তাই আমি সুবোধ বালকের মত মাথা নেড়ে বলতাম, আচ্ছা, আর রাত হবে না। কীসের কী, তিনি ঘুমিয়ে পড়ামাত্র আমি যথারীতি যেই কে সেই! ‘নিশাচর ড্রাকুলা’!
সেই সময় খুব চালু একটা প্রতিরোধ ছিল। গোলাম আজমকে যে আপনারা অপরাধী বলছেন প্রমাণ কি, কেউ কি দেখেছে? তখন ২০০৬ সালে আমার অনেক লেখার একটা ছিল, ‘গোলাম আযমের চোখে, মুক্তিযুদ্ধ’ [১]।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল গোলাম আযম ১৯৭১ সালে বলেছিলেন, “...বাংলাদেশ নামের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করবো...”।
নিয়তির এ এক চরম পরিহাস, সেই গোলাম আযমকে মৃত্যুবরণ করতে হলো বংলাদেশে! এবং তিনি কখনই তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেননি বা এই দেশের কাছে ক্ষমা চাননি। তাতে কিছুই যায় আসে না। রক্তের দাগ শুকিয়ে যায় কিন্তু মুছে যায় না। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এটা সত্য কিন্তু তিনি যে একজন অপরাধী ছিলেন এটা রাবার দিয়ে ঘসে মুছে ফেলা যাবে না।
১. http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_29.html
গোলাম আযম অপরাধী হিসাবে দন্ডিত হওয়ার পর ১১০০ দিন কারাগারের পরিবর্তে হাসপাতালে কাটিয়েছেন। তিনি এমন কী অসুখে ভুগছিলেন যে তাকে ১১০০ দিনই হাসপাতালে রাখতে হলো? অন্য কয়েদির বেলায়ও কী এমনটাই ঘটে বা ঘটবে? উত্তরটা না-হয়ে থাকলে এখানে আইনের প্রয়োগে তারতম্য হয়েছে এমনটাই প্রতীয়মান হয়। এও এক ধরনের অন্যায়। আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা! এমন ব্যবস্থা একটা জাতির জন্য বাজে একটা উদাহরণ হিসাবে রয়ে গেল।
অবশ্য গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন একজন অপরাধী হিসাবে এটাও কিন্তু কম না। আমি যেটা বারবার বলি, রক্তের দাগ মুছে ফেলা যায় না। এটাও একটা স্বস্তির কারণ মৃত্যুর পূর্বেই গোলাম আজম নিরপরাধ রূপে পার পেয়ে যাননি। এটাও কিন্তু কম পাওয়া না। আমি এটাকে একটা বিজয় হিসাবেই দেখি।
আজ ২০১৪ সালে এসে যেটা অতি সহজ মনে হয়, পূর্বে এতোটা সহজ কিন্তু ছিল না। ২০০৫-৬ সালের কথা বলি। তখন আমরা যারা ওয়েব সাইটে লেখালেখি করতাম তাদের কাছে বিষয়টা অতি দুরূহ ছিল। এক সময় তো দেখতে দেখতে কৃষিমন্ত্রী পরে শিল্পমন্ত্রী মতিউর নিজামীর গাড়িতে পতপত করে উড়তে শুরু করে আমাদের জাতীয় পতাকা! এদিকে তখন ওয়েবে এই সংক্রান্ত তেমন কোনও তথ্যই নেই। বিশেষ করে বাংলায়। হাতের নাগালে উল্লেখযোগ্য বই-পুস্তকও নেই। যাও আছে আগুনদাম, থাকলেও এর-ওর কাছে ছাড়া-ছাড়া ভাবে। যার কাছে যেটা আছে সেটা নিয়েই অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে লেখা শুরু করলেন।
তখন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দলিল আমার মত সাধারণ মানুষদের কাছে সহজলভ্য ছিল না। একটা লাইব্রেরিতে পাওয়া গেল জরাজীর্ণ অবস্থায়, পাতাগুলো ঝুরঝুরে! আমার মনে আছে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দলিল তখন ১৫০০০ হাজার পৃষ্ঠা ফটোকপি করেছিলাম। যেটা আমার কাছে এখনও আছে। তো, শুরু হলো ওখান থেকে এবং বিভিন্ন পেপার কাটিং স্ক্যান করে কপি-পেস্ট। লেখার-পর-লেখা।
সবাই যখন ঘুমুতে যায় আমি তখন বগলে করে একগাদা ফটোকপি নিয়ে আমার অফিসের কম্পিউটারের সামনে বসি। আহ, আমার সেই ‘জুতাখাওয়া’ কম্পিউটার (সেই কম্পিউটারকে কতবার চটি দিয়ে পিটিয়েছি তার ইয়াত্তা নাই, তবুও লাভ হয়নি!)! অথচ তখন লেখালেখির জন্য ৩৮৬ মেশিনকে ৪৮৬ মেশিনে আপগ্রেড করেছি কারণ ৩৮৬ মেশিনটা কেমন দুর্ধর্ষ ছিল খানিকটা বলি, ওটার হার্ড ডিস্ক ছিল ১০০ মেগাবাইটের! তাছাড়া ইন্টারনেট কানেকশনও অফিসে। টিএনটির ডায়াল-আপ লাইন। ধীর গতি কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি! কখনও কম্পিউটার ঘুমিয়ে পড়ে কখনও-বা আমি।
কখন যে ভোর হয় তার হিসাব কে রাখে! কালে কালে হয়ে গেলাম ‘নিশাচর ড্রাকুলা’। প্রায়শ আমার মা ক্ষেপে গিয়ে বলতেন, ‘তুই আমার বাড়ি থিক্যা বাইর হ’। ভদ্রমহিলার হাজবেন্ডের বাড়ি বের করে দিলে তাঁকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। তাই আমি সুবোধ বালকের মত মাথা নেড়ে বলতাম, আচ্ছা, আর রাত হবে না। কীসের কী, তিনি ঘুমিয়ে পড়ামাত্র আমি যথারীতি যেই কে সেই! ‘নিশাচর ড্রাকুলা’!
সেই সময় খুব চালু একটা প্রতিরোধ ছিল। গোলাম আজমকে যে আপনারা অপরাধী বলছেন প্রমাণ কি, কেউ কি দেখেছে? তখন ২০০৬ সালে আমার অনেক লেখার একটা ছিল, ‘গোলাম আযমের চোখে, মুক্তিযুদ্ধ’ [১]।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল গোলাম আযম ১৯৭১ সালে বলেছিলেন, “...বাংলাদেশ নামের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করবো...”।
নিয়তির এ এক চরম পরিহাস, সেই গোলাম আযমকে মৃত্যুবরণ করতে হলো বংলাদেশে! এবং তিনি কখনই তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেননি বা এই দেশের কাছে ক্ষমা চাননি। তাতে কিছুই যায় আসে না। রক্তের দাগ শুকিয়ে যায় কিন্তু মুছে যায় না। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এটা সত্য কিন্তু তিনি যে একজন অপরাধী ছিলেন এটা রাবার দিয়ে ঘসে মুছে ফেলা যাবে না।
১. http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_29.html
No comments:
Post a Comment