Search

Saturday, December 13, 2014

‘যৌবনযাত্রা’ নামের কারখানা!

একদা ‘যৌবনযাত্রা’ নামের অতি চালু একটা সাইট, হুড়মুড়, হঠাৎ করেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হইচই করা শুরু করল।
এমনিতে এই ধরনের একটা সাইট ‘এডাল্ট সাইট’ হিসাবে চালু থাকবে কি থাকবে না সেটা ভিন্ন তর্কের বিষয়! কিন্তু হিডেন ক্যামেরায় ধারণকৃত বা অনুমতি ব্যতীত কারও ভিডিও কোনও সাইটে আপলোড করে দেয়াটা যে চরম অনৈতিক কাজ এটা এই সমস্ত ইতরদের কে বোঝাবে। এতে করে একজন মানুষের জীবনে কেমন বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এটা বোঝার ক্ষমতা ডায়াপারপরা এই ইতরদের নাই। তাদের অনৈতিক আচরণের কারণে কেউ যদি তার প্রাণ নষ্ট করে ফেলে তাহলে আমি এদের বিরুদ্ধে পরোক্ষ খুনের অভিযোগ আনতে চাই।

মজার ছলে কত প্রকারের যে চরম অন্যায় হয় তার ছোট্ট একটা নমুনা দেই: একজন ডাক্তার, একজন ভদ্রমহিলা আমাকে বেদনার সঙ্গে বলছিলেন, ‘দেখেন, বিভিন্ন নাম্বার থেকে আমার কাছে এন্তার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, আমার রেট কত’?
পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা সাইট পওয়া গেল যেখানে একটা মেয়ের নামে এই নাম্বারটা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমি কলগার্ল, আমাকে কল করুন’। এখন একজন ডাক্তারের ফোন নাম্বার পাওয়া তো জটিল কিছু না। প্রেসক্রিপশনে, চেম্বারে, সাইনবোর্ডে থাকে। যে এই নাম্বারটা এমন করে ছড়িয়ে দিল সেই কাপুরুষটা নিজেকে বড়ো বীরপুরুষ ভাবল!

যাই হোক, ‘যৌবনযাত্রায় ‘বাণী’ লিখে-টিখে কেউ-কেউ আবার মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ গবেষকও বনে গেলেন! মুক্তিযুদ্ধের গবেষক হওযার মত যোগ্যতা আমার ছিল না কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখির কারণেই কিনা জানি না অন্য উপায়ে ‘যৌবনযাত্রা’ আমাকেও তাদের সাইটে লেখার সুযোগ করে দিল। সুযোগ করে দিল মানে আমার লেখা ছাপিয়ে দিল। আমার লেখা ছাপিয়ে দিল, আমার অনুমতি না-নিয়ে! এই বিরল সৌভাগ্যে আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু নিরানন্দ আমি আমার সাইটে একটা লেখা লিখলাম, ‘অন-লাইনে লেখালেখি হচ্ছে গণিমতের মাল।‘ [১]
বিনা অনুমতিতে আমার লেখাটা যৌবনযাত্রায় ছাপা হওয়ার করণে ‘বাঘমামা’ নামের একজন এসে আমার ওই পোস্টে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। বাঘমামা সম্ভবত যৌবনযাত্রার কর্তাগোছের কেউ হবেন। কারণ যৌবন যাত্রায় যে আমার লেখাটা পোস্ট করেছিল তাকে আচ্ছা করে বকা দিয়েছিলেন এবং এর একটা সদুত্তর চেয়েছিলেন। পোস্টদাতা বেচারা একটা টুঁশব্দও করেনি। করার কথা না। এই দেশে দুঃখপ্রকাশের চল নাই বিধায় আমি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম।

বিনা অনুতিতে লেখাটা প্রকাশ করা ব্যতীত এখানে অন্য একটি বিষয় আমাকে প্রচন্ড ক্রদ্ধ করেছিল। সেটা হচ্ছে, ‘খোদাজার অংশবিশেষ‘, লেখাটি আমার একটা উপন্যাস ‘খোদেজা’ থেকে নেওয়া। মূল ঘটনা সত্য। খোদেজা নামের একটা শিশুর প্রতি চরম শারীরিক অন্যায় করা হয়েছিল। যে দু-জন যুবক এর জন্য দায়ী তারা যে কেবল খোদেজাকে চরম শারীরিক অত্যাচার করেছিল এই না; খোদেজা যখন চিৎকার করছিল তখন তার মুখে মুঠো মুঠো বালি গুঁজে দিয়েছিল। খোদেজার মৃত্যুর পর এই দু-জন আবার খোদেজার জানাজায়ও অংশগ্রহণ করেছিল। জানাজায় অংশগ্রহণের বিষয়টি আমাকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিল কারণ এমনটা আমি পূর্বে কখনও শুনিনি! ‘খোদেজা’ উপন্যাসটা লেখার পেছনের কথা এটাই।

ওই ইতরামির পর সেটা নিয়ে আরেকটি লেখা লিখেছিলাম, ‘হাজামের হাতে সার্জনের ছুঁরি [২]। ওই লেখায় যেটা লিখেছিলাম:
...যৌবনযাত্রায় ওই লেখাটা পড়তে গিয়ে মজার এই বিষয়টা লক্ষ করলাম। আমার লেখাটার সবটুকুই হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়েছে কিন্তু এই প্যারায় এসে গালিগুলো সেন্সর করা হয়েছে।...
‘খোদেজা’ উপন্যাসে কেন গালির প্রসঙ্গ এসেছিল সেটা আমি পূর্বের লেখায় ব্যাখ্যা করেছি আবারও চর্বিতচর্বণ করি না।

তো, ‘যৌবনযাত্রা’ লেখাটা পাবলিশ হয়ে যে অন্যায়টা হয়েছে সেটা হচ্ছে খোদেজা উপন্যাসের অতি কষ্টের দিকটাকে রগরগে করে পাঠকের কাছে তুলে দেওয়া। এরা এবং এখানে পাঠকও যুক্ত, একটা শিশুর জান্তব চিৎকারকে উপভোগ করার চেষ্টা করেছে! খোদেজার উপর ঝাঁপিয়েপড়া ওই দুজন যুবকের সঙ্গে এদের খুব একটা তফাত নেই। কেবল সুযোগের অপেক্ষা।

এই সমস্ত ঘটনা ২০০৯ সালের। সব চুকেবুকে যাওয়ার পর এই প্রসঙ্গ নিয়ে আবারও কেন লিখছি? হালে একজন পাঠক আমাকে মেইল করলেন। ইনি আমার খুব পছন্দের মানুষ কিন্তু ভারী দুষ্ট। মেইলে লিখলেন, “...আপনাকে যৌবনযাত্রায় দেখা গেছে...”। সঙ্গে আবার ফিচেল হাসির ইমো। আমি আতংকিত হলাম, কী সর্বনাশ! এরা কী আমার কোনও ভিডিও আপলোড করে দিল না তো আবার!
যাই হোক, যৌবনযাত্রার কোনও অদলবদল হয়েছে কিনা আমি জানি না কিন্তু আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম আমার ওই লেখাটা আবারও পোস্ট করা হয়েছে, হুবহু [৩]। কেবল পোস্টদাতা অন্য একজন। আবার ঘটা করে লিখেছে, “অরিজিনালি পোস্টেট বাই অমুক”। এবারের কাজটা আরও গর্হিত কারণ এই পোস্টদাতা যৌবনযাত্রার যেখান থেকে এটা কপি পোস্ট করেছে সেখানে আমার আপত্তির প্রেক্ষিতে বাঘমামার বিরক্তিভরা উক্তি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছে। তারপরও লেখাটা রি-পোস্ট করেছে।
এই মানুষটা যে একটা অমায়িক চুতিয়া এতে অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নাই।

সহায়ক সূত্র:
১. অন-লাইনে লেখালেখি হচ্ছে গণিমতের মাল: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_9376.html
২. হাজামের হাতে সার্জনের ছুরি: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_9089.html
৩. যৌবনযাত্রার লেখাটা:

2 comments:

Anonymous said...

একটু সংশোধন করা দরকার। যৌবনযাত্রা কখনওই হিডেন ক্যাম সাপোর্ট করে নাই। বরঞ্চ কোন হিডেন ক্যাম দেখলেই মেম্বারকে ব্যান করা সহ পোস্ট ট্রাস করা হয়েছে। আর গাংচিলের কথা বলছেন, সেতো নেই অনেক আগে থেকেই। তাওতো ৬-৭ বছর হবে। এখনতো যৌবনযাত্রা কোন এ্যাডাল্ট কন্টেন্ট প্রমোট করে না।

হটাৎ করে লিখলেন, নিশ্চয় কোন কারণ আছে। কি সেটা?

ও, বাঘ মামা ওই সাইটের এ্যাডমিন।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

সচরাচর Anonymous টাইপের কারও প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে আমি আগ্রহ বোধ করি না।‘নামহীন’ কারও সঙ্গে কথা বলে আমি আরাম পাই না। কারণ Anonymous দেখলেই আমার মুখোশধারী একজনের ছবি ভেসে উঠে।

যাই হোক, আপনি লিখেছেন:
“...যৌবনযাত্রা কখনওই হিডেন ক্যাম সাপোর্ট করে নাই। বরঞ্চ কোন হিডেন ক্যাম দেখলেই মেম্বারকে ব্যান করা সহ পোস্ট ট্রাস করা হয়েছে।...”
তাই নাকি! বিষাদের সঙ্গে বলি, ‘এই তথ্যটা জেনে ভাল লাগছে’, এটা বলতে পারছি না কারণ বাস্তবতা ভিন্ন। আপনার কী ধারণা প্রস্তুতি ব্যতীত আমি এই লেখাটা লিখেছি! বিশদ বলতে গেলে অনেক কুৎসিত বিষয় চলে আসবে। লেখালেখিতে আমি কিছু নিয়ম মেনে চলি বিধায় ওপথ মাড়ালাম না।
অন্য একটা উদাহরণ দেই। গাংচিলের লেখা শেয়ারে সমস্যা আছে জেনেও ওই সাইটে কিন্তু আমার লেখাটা লম্বা সময় ধরে ছিল। মুছে ফেলার কোনও উদ্যোগ কিন্তু নেওয়া হয়নি! এখানে সদিচ্ছার কোনও নমুনা কিন্তু আমি দেখতে পাই না...।

“হটাৎ করে লিখলেন, নিশ্চয় কোন কারণ আছে। কি সেটা?...”
এটার উত্তরও লেখায় দেওয়া আছে তবু বলি, আবার নতুন একটা আইডি এই লেখাটাই হুবহু ছাপিয়ে দিয়েছে। হালে এটা একজন আমাকে জানাবার পর জানা হলো। গাংচিলের পর আবারও একজন এই কাজটাই করবে, কেন- কারণ কি? আমার লেখা কী গণিমতের মাল যে যখন যার ইচ্ছা হবে আমার অনুমতি ব্যতীত যেখানে খুশি ছাপিয়ে দেবে! এই অনৈতিক কাজের জন্য আমার প্রতিবাদ করাটা কি জরুরি না?

আপনি যে প্রশ্নগুলো করেছেন তার সমস্ত উত্তরই লেখায় দেওয়া হয়েছে। আপনি যে লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়েননি এটা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না।

ধন্যবাদ জানিয়ে আপনার সঙ্গে আলাপচারিতার এখানেই সমাপ্তি টানছি। @Anonymous