মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে প্রথম লিখেছিলাম, সালটা সম্ভবত ২০০৬ হবে। তখন অমি রহমান পিয়াল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখির সহযোদ্ধা। পিয়াল আমাকে সতর্ক করেছিলেন, ‘শুভ, এই পাবলিক কিন্তু খতরনাক। তাকে নিয়ে যারা লেখালেখি করেছেন তারাই ভয়াবহ বিপদে পড়েছেন’।
প্রমাণিত না কিন্তু ফরিদপুরের যুদ্ধাপরাধিদের নিয়ে লেখালেখি করার কারণে প্রবীর শিকদার [১] বিপদে পড়েছিলেন। আমাদের মুসাও ফরিদপুরের! প্রবীর শিকদার এখনও বেঁচে আছেন কিন্তু বোমায় তার এক পা, চাপাতির আঘাতে এক হাত উড়ে গেছে।
তো, মুসা আবারও সামনে চলে এসেছেন দুদকে হাজিরা দিতে গিয়ে। দুদক অফিসে তিনি হাজিরা দিয়েছেন রাজা-বাদশার মত। একপাল দেহরক্ষী এবং চেলা-চামুন্ডা নিয়ে। এরমধ্যে অধিকাংশ মিডিয়া আবার খুব মজা পেয়েছে নারী দেহরক্ষী নিয়ে। কোথাও ছাপা হয়েছে, “মহিলা বডিগার্ড নিয়ে দুদকে সেই মুসা বিন শমসের”। বা কোথাও “সুন্দরী দেহরক্ষী নিয়ে...।”
বিশদ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে মুসা কোন রঙের ব্লেজার পরেছেন, কোন ঘড়ি, কোন ব্রান্ডের গাড়ি ইত্যাদি। ভাগ্যিস, গাড়ির কয়টা চাকা বা মুসার কোন ব্রান্ডের আন্ডারওয়্যার পরেছেন ওই দিকে আর মিডিয়া দৃষ্টিপাত করেনি।
এখনকার মিডিয়া পারে না এইসবও দিয়ে দিতে। যেমন আজকের ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ ছাপা হয়েছে, শোবিজের হ্যাপী এবং ক্রিকেট খোলোয়াড় রুবেলের ফোনালাপ। আমারা ছোট্ট একটা অনুসন্ধান ছিল। ফোনের এই কথোপকথনের উৎস কি? এই দুইজনের কেউ একজন কি কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছিল নাকি ফোন কোম্পানি এই অডিও ট্র্যাক সরবরাহ করেছে। নাকি কোনও গোয়েন্দা সংস্থা? একজন পাঠক এটা জানার অধিকার ফলাতেই পারে। আর সরবরাহ করলেই মিডিয়া ছেপে দেবে? “একদম ঠোঁট কামড়াইয়া ধরব কিন্তু...” এটা ছাপিয়ে পাঠকের কাছে চুতিয়া মিডিয়ার এটাই কী দায়? আবার ঢং করে লিখেছে, “[প্রকাশ অযোগ্য শব্দ।]”
এদের “[প্রকাশ অযোগ্য শব্দ।]”, এটা পড়ে দুষ্ট ছেলেদের কথাটাই মনে হলো, ‘মুহাহা, যেন সানি লিওন বলছে, আমি ভার্জিন’।
আচ্ছা, মিডিয়া কি এখন টাট্টিখানা হালের ওয়শরুমেও ক্যামেরা তাক করে ‘বুম’ ধরে রাখবে? ভাল, তাহলে এই পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজামকে দিয়েই শুরু হোক। পরে পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবিটা ছেপে দিয়ে মোহনীয় একটা ক্যাপশন দেওয়া যেতে পারে, একদলা হলুদ ফুল বা এক টাল হলুদ ফুলের মাঝখানে নঈম ভাইয়া।
যাই হোক, মুসাকে নিয়ে আমার বেশ কিছু লেখার মধ্যে একটা ছিল যাত্রার প্রিন্স [২]। ওখান থেকে কিছু অংশ শেয়ার করা যাক:
"ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মেয়ে কমলা ঘোষ। সবে বিয়ে হয়েছে তার। বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকা পড়ে যান কমলা! একদিন পাকিস্তানি মেজর কোরায়শী ও তিন জন সৈন্যসহ কমলাদের বাড়িতে আসে নুলা মুসা। এরপর যা হওয়ার তাই হয়, পাকিস্তানি সৈন্যরা চরম শারিরীক নির্যাতন করে কমলাকে। ...পরে কমলার স্বামী কমলাকে আর কখনই ঘরে ফিরিয়ে নেয়নি।
...ফরিদপুর শহরের মহিম স্কুলের সঙ্গে এক ধর্মশালা দেখাশোনা করতেন কেষ্টমন্ডল। কেষ্টমন্ডলের চার মেয়ে: ননী, বেলী, সোহাগী ও লতা। নুলা মুসার তত্ত্বাবধানে এই বেলী ও ননী মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোরঞ্জনে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে এই চার বোন এবং তাদের মা-র ঠাঁই হয়েছিল ফরিদপুরের পতিতাপল্লীতে।
...কেবল ননী, বেলীই নয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে অর্ধশতাধিক বাঙালি মা-বোনের সন্ভ্রম লুটের প্রধান নায়ক এই নুলা মুসা।
এখন তার নাম ড. মুসা বিন শমশের হলেও সার্টিফিকেটের নাম এডিএম মুসা। কিন্তু একটা হাত খানিকটা বিকলাঙ্গ থাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল, 'নুলা মুসা' হিসাবেই। নিজেকে ডক্টর বলে দাবী করলেও, ১৯৬৮ সালে ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে ডক্টর যুক্ত হলেও উচ্চ-মাধ্যমিক পাসের কোনো প্রমাণ মেলেনি কোথাও!
অভিযোগ আছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র এবং পথনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করেছে এই মুসা। মেজর আকরাম কোরায়শীর সঙ্গে মুসার গভীর ঘনিষ্ঠতা ছিল! ফরিদপুরে পাকিস্তানি সৈন্য ঢোকার পরদিনই (একাত্তরের ২২ এপ্রিল) ফরিদপুর সার্কিট হাউজে মুসা এবং মেজর কোরায়শীকে খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধা একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী।
একাত্তরে মুসা ছিল ফরিদপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্ক। তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা, নারী নির্যাতন একং লুটতরাজ করেছে। ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ শহরের সমস্ত শহীদ মিনার মুসা পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় ভেঙ্গে ফেলে! মেজর কোরায়শীসহ অনেক পাকিস্তানি সেনা-সদস্যের অবাধ যাতায়াত ছিল মুসার বাড়িতে।
মুসার পিতা তথাকথিত পীর শমসের মোল্লা পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল বাড়াতে তাদের গায়ে ফুঁ দিত আর বলত, 'ইন্ডিয়া পাকিস্তান বন যায়েগা'।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডিসেম্বরেই মুসা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে চলে যায় পাবনায়। সেখানে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে ছুটাছুটি করে। ঢাকার এক অবাঙ্গালিকে পাকিস্তানে পাঠাবার নাম করে তাঁর সহায়সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে একপর্যায়ে ঢাকায় 'শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল' নামে আদম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে। এরপর বিদেশে লোক পাঠাবার নাম করে উত্তরবঙ্গের কয়েকশ' লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে উধাও হয়ে যায়। বছর তিনেক পর ঢাকায় ফিরে 'ড্যাটকো' নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে আবারও শুরু করে আদম ব্যবসা! এরশাদ আমলে শুরু হয় তার উত্থান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মুসাকে...।"
সেই মুসা আজ দম্ভের সঙ্গে বলেন, “...আমার বিষয়ে যা বলা হয়, আমি সাত বিলিয়ন ডলার বা ৫১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছি। কেউ কোনো দিন এতো টাকা দেশে আয় করতে পারেনি, পারবেও না। আমি এই টাকা বিদেশে উপার্জন করেছি...। ...সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ওই টাকা উদ্ধার করা গেলে পদ্মা সেতু, দুস্থ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, শিক্ষকসহ সামাজিক গঠনমূলক কর্মকান্ডে অবদান রাখব।...“
ডিয়ার স্যার, বলেন কী! 'ভূতের মুখে রাম নাম'- পূর্বে কখনও এই দেশের জন্য একটি আধুলিও খরচ করেছেন এমনটা তো জানি না! নুলা মুসা মহোদয়ের কাছে আরও জিজ্ঞাসা বিদেশে উপার্জন করেছেন, বেশ; তা কোন ব্যবসায় এই টাকা উপার্জন করেছেন? আর আপনি এই দেশে অবদান রাখবেন জেনে ভাল লাগছে। সবই তো বললেন কিন্তু আপনি ১৯৭১ সালে যে পাপগুলো করেছেন সেই পাপের বিষয়ে মুখ খোলেননি কিন্তু!
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার পাপের শাস্তি না-হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই দেশের ঝুলেপড়া কাঁধের পাপমোচন হবে না।
সহায়ক সূত্র:
১. প্রবীর শিকদার: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_4.html
২. যাত্রার প্রিন্স: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_2395.html
প্রমাণিত না কিন্তু ফরিদপুরের যুদ্ধাপরাধিদের নিয়ে লেখালেখি করার কারণে প্রবীর শিকদার [১] বিপদে পড়েছিলেন। আমাদের মুসাও ফরিদপুরের! প্রবীর শিকদার এখনও বেঁচে আছেন কিন্তু বোমায় তার এক পা, চাপাতির আঘাতে এক হাত উড়ে গেছে।
তো, মুসা আবারও সামনে চলে এসেছেন দুদকে হাজিরা দিতে গিয়ে। দুদক অফিসে তিনি হাজিরা দিয়েছেন রাজা-বাদশার মত। একপাল দেহরক্ষী এবং চেলা-চামুন্ডা নিয়ে। এরমধ্যে অধিকাংশ মিডিয়া আবার খুব মজা পেয়েছে নারী দেহরক্ষী নিয়ে। কোথাও ছাপা হয়েছে, “মহিলা বডিগার্ড নিয়ে দুদকে সেই মুসা বিন শমসের”। বা কোথাও “সুন্দরী দেহরক্ষী নিয়ে...।”
বিশদ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে মুসা কোন রঙের ব্লেজার পরেছেন, কোন ঘড়ি, কোন ব্রান্ডের গাড়ি ইত্যাদি। ভাগ্যিস, গাড়ির কয়টা চাকা বা মুসার কোন ব্রান্ডের আন্ডারওয়্যার পরেছেন ওই দিকে আর মিডিয়া দৃষ্টিপাত করেনি।
এখনকার মিডিয়া পারে না এইসবও দিয়ে দিতে। যেমন আজকের ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ ছাপা হয়েছে, শোবিজের হ্যাপী এবং ক্রিকেট খোলোয়াড় রুবেলের ফোনালাপ। আমারা ছোট্ট একটা অনুসন্ধান ছিল। ফোনের এই কথোপকথনের উৎস কি? এই দুইজনের কেউ একজন কি কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছিল নাকি ফোন কোম্পানি এই অডিও ট্র্যাক সরবরাহ করেছে। নাকি কোনও গোয়েন্দা সংস্থা? একজন পাঠক এটা জানার অধিকার ফলাতেই পারে। আর সরবরাহ করলেই মিডিয়া ছেপে দেবে? “একদম ঠোঁট কামড়াইয়া ধরব কিন্তু...” এটা ছাপিয়ে পাঠকের কাছে চুতিয়া মিডিয়ার এটাই কী দায়? আবার ঢং করে লিখেছে, “[প্রকাশ অযোগ্য শব্দ।]”
এদের “[প্রকাশ অযোগ্য শব্দ।]”, এটা পড়ে দুষ্ট ছেলেদের কথাটাই মনে হলো, ‘মুহাহা, যেন সানি লিওন বলছে, আমি ভার্জিন’।
আচ্ছা, মিডিয়া কি এখন টাট্টিখানা হালের ওয়শরুমেও ক্যামেরা তাক করে ‘বুম’ ধরে রাখবে? ভাল, তাহলে এই পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজামকে দিয়েই শুরু হোক। পরে পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবিটা ছেপে দিয়ে মোহনীয় একটা ক্যাপশন দেওয়া যেতে পারে, একদলা হলুদ ফুল বা এক টাল হলুদ ফুলের মাঝখানে নঈম ভাইয়া।
যাই হোক, মুসাকে নিয়ে আমার বেশ কিছু লেখার মধ্যে একটা ছিল যাত্রার প্রিন্স [২]। ওখান থেকে কিছু অংশ শেয়ার করা যাক:
"ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মেয়ে কমলা ঘোষ। সবে বিয়ে হয়েছে তার। বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকা পড়ে যান কমলা! একদিন পাকিস্তানি মেজর কোরায়শী ও তিন জন সৈন্যসহ কমলাদের বাড়িতে আসে নুলা মুসা। এরপর যা হওয়ার তাই হয়, পাকিস্তানি সৈন্যরা চরম শারিরীক নির্যাতন করে কমলাকে। ...পরে কমলার স্বামী কমলাকে আর কখনই ঘরে ফিরিয়ে নেয়নি।
...ফরিদপুর শহরের মহিম স্কুলের সঙ্গে এক ধর্মশালা দেখাশোনা করতেন কেষ্টমন্ডল। কেষ্টমন্ডলের চার মেয়ে: ননী, বেলী, সোহাগী ও লতা। নুলা মুসার তত্ত্বাবধানে এই বেলী ও ননী মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোরঞ্জনে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে এই চার বোন এবং তাদের মা-র ঠাঁই হয়েছিল ফরিদপুরের পতিতাপল্লীতে।
...কেবল ননী, বেলীই নয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে অর্ধশতাধিক বাঙালি মা-বোনের সন্ভ্রম লুটের প্রধান নায়ক এই নুলা মুসা।
এখন তার নাম ড. মুসা বিন শমশের হলেও সার্টিফিকেটের নাম এডিএম মুসা। কিন্তু একটা হাত খানিকটা বিকলাঙ্গ থাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল, 'নুলা মুসা' হিসাবেই। নিজেকে ডক্টর বলে দাবী করলেও, ১৯৬৮ সালে ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে ডক্টর যুক্ত হলেও উচ্চ-মাধ্যমিক পাসের কোনো প্রমাণ মেলেনি কোথাও!
অভিযোগ আছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র এবং পথনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করেছে এই মুসা। মেজর আকরাম কোরায়শীর সঙ্গে মুসার গভীর ঘনিষ্ঠতা ছিল! ফরিদপুরে পাকিস্তানি সৈন্য ঢোকার পরদিনই (একাত্তরের ২২ এপ্রিল) ফরিদপুর সার্কিট হাউজে মুসা এবং মেজর কোরায়শীকে খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধা একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী।
একাত্তরে মুসা ছিল ফরিদপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্ক। তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা, নারী নির্যাতন একং লুটতরাজ করেছে। ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ শহরের সমস্ত শহীদ মিনার মুসা পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় ভেঙ্গে ফেলে! মেজর কোরায়শীসহ অনেক পাকিস্তানি সেনা-সদস্যের অবাধ যাতায়াত ছিল মুসার বাড়িতে।
মুসার পিতা তথাকথিত পীর শমসের মোল্লা পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল বাড়াতে তাদের গায়ে ফুঁ দিত আর বলত, 'ইন্ডিয়া পাকিস্তান বন যায়েগা'।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডিসেম্বরেই মুসা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে চলে যায় পাবনায়। সেখানে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে ছুটাছুটি করে। ঢাকার এক অবাঙ্গালিকে পাকিস্তানে পাঠাবার নাম করে তাঁর সহায়সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে একপর্যায়ে ঢাকায় 'শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল' নামে আদম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে। এরপর বিদেশে লোক পাঠাবার নাম করে উত্তরবঙ্গের কয়েকশ' লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে উধাও হয়ে যায়। বছর তিনেক পর ঢাকায় ফিরে 'ড্যাটকো' নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে আবারও শুরু করে আদম ব্যবসা! এরশাদ আমলে শুরু হয় তার উত্থান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মুসাকে...।"
সেই মুসা আজ দম্ভের সঙ্গে বলেন, “...আমার বিষয়ে যা বলা হয়, আমি সাত বিলিয়ন ডলার বা ৫১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছি। কেউ কোনো দিন এতো টাকা দেশে আয় করতে পারেনি, পারবেও না। আমি এই টাকা বিদেশে উপার্জন করেছি...। ...সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ওই টাকা উদ্ধার করা গেলে পদ্মা সেতু, দুস্থ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, শিক্ষকসহ সামাজিক গঠনমূলক কর্মকান্ডে অবদান রাখব।...“
ডিয়ার স্যার, বলেন কী! 'ভূতের মুখে রাম নাম'- পূর্বে কখনও এই দেশের জন্য একটি আধুলিও খরচ করেছেন এমনটা তো জানি না! নুলা মুসা মহোদয়ের কাছে আরও জিজ্ঞাসা বিদেশে উপার্জন করেছেন, বেশ; তা কোন ব্যবসায় এই টাকা উপার্জন করেছেন? আর আপনি এই দেশে অবদান রাখবেন জেনে ভাল লাগছে। সবই তো বললেন কিন্তু আপনি ১৯৭১ সালে যে পাপগুলো করেছেন সেই পাপের বিষয়ে মুখ খোলেননি কিন্তু!
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার পাপের শাস্তি না-হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই দেশের ঝুলেপড়া কাঁধের পাপমোচন হবে না।
সহায়ক সূত্র:
১. প্রবীর শিকদার: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_4.html
২. যাত্রার প্রিন্স: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_2395.html
3 comments:
তখন অমি রহমান পিয়াল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখির সহযোদ্ধা.এখন কি শত্রু? ;)
"...এখন কি শত্রু?"
শত্রু-মিত্র জানি না। তার মতের সঙ্গে আমার মতের বিশেষ মিল নাই! তিনি দলের জন্য পুরোপুরি অনুগত আর আমি খানিকটা দেশের জন্য...। @sourav
Post a Comment