কিছু দৃশ্য আছে যে দৃশ্য না-দেখে মরে যাওয়াটা কোনও কাজের কাজ না। আমার স্পষ্ট মনে আছে, মানুষটা এসেছিলেন হামাগুড়ি দিয়ে কিন্তু যাওয়ার সময় ঠক-ঠক করে হেঁটে গিয়েছিলেন দুর্বার গতিতে। সেটা তখনকার কথা যখন সাদিক মোহাম্মদ আলম বেশ অনেকগুলো ক্রাচ এনে দিয়েছিলেন আমাকে। সেখান থেকেই এই মানুষটাকে ক্রাচ দেওয়া হয়েছিল।
শপথ আমার লেখালেখির, ওই মানুষটার চলে যাওয়ার দৃশ্যটা আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলতে পারব না। চোখের নিমিষে যেন তার পা গজালো- শ্লা, এই পাগুলোর নামই তাহলে ক্রাচ!
সাদিকের দেওয়া সেই ক্রাচগুলো শেষ হওয়ার পর ক্রাচ যোগাড় করাটা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ল। টাকার না-হয় একটা ব্যবস্থা হলো কিন্তু কিনে দেবে কে? কারণ ঢাকা ব্যতীত এই জিনিস পাওয়া যায় না। আর আমার ঢাকা যাওয়া হয় কালেভদ্রে। বিপদ!
এরপর ঢাকাবাসী একে-ওকে ধরাধরি করে লাভ হলো না। কারণ এরা সবাই ব্যস্ত মানুষ, কাজের মানুষ। এই তুচ্ছ কাজের সময় কোথায় এদের। আমিও বা জোর করি কোন মুখে।
কেমন-কেমন করে যেন এখানে ক্রাচ প্রাপ্তির বিষয়টা ছড়িয়ে গেল। সম্ভবত পূর্বে যারা ক্রাচ পেয়েছিলেন তারাই মুখ বড়ো করে বলেছিলেন। এরপর এরা দূর-দূরান্ত থেকে বড়ো আশা নিয়ে চলে আসেন। আমি বড়ো বিব্রত হই, ব্যথিত হই। কি করি, কাকে বলি?
হাত বাড়িয়ে দিলেন একজন, এ যে একেবারেই অপ্রত্যাশিত! এখানকার হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালান যে মানুষটি তিনি হঠাৎ করে একদিন বললেন, ‘আরে, আপনি আমারে কন না ক্যান'!
সেই শুরু। এরপর আর আমাকে কোনও প্রকারের ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কয়টা লাগবে এই মানুষটাকে বলে দিলেই হয়, ‘তাজু ভাই, এতোডা লাগব’।
মানুষটার নাম তাজুল ইসলাম- আমি বলি তাজু ভাই। ঠিক-ঠিক তিনি ঢাকা থেকে নিয়ে ক্রাচ আসেন। মাসে বেশ কয়েকবারই অ্যাম্বুলেন্সে রোগি আনা-নেওয়ার কাজে তাঁর ঢাকা যাওয়া পড়েই। গুরুতর এক সমস্যার এমন সহজ সমাধানে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কখনও-কখনও দিব্যি লাশের পাশে চুপচাপ শুয়ে চলে আসে ক্রাচ।
ভাল লাগার পাশাপাশি বিষয়টা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। কাল হাজির হলো কাউসার, আজ বাবু। হঠাৎ করে এদের সংখ্যা বেড়ে গেল কেন এটা আমাকে ভাবাচ্ছে। এবং এদের বয়স খুই অল্প। বাবুকে দেখে আমি বুঝে উঠতে পারি না এই ছেলেটি কেমন করে একা-একা এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে! অথচ সব থাকার পরও কতো সহজেই না আমরা হাল ছেড়ে দেই।
ক্রাচ নামের এই পাগুলো পেয়ে এদের উচ্ছ্বাস দেখে নিজের জাগতিক বেদনা বড়ো তুচ্ছ মনে হয়। কেবল একটাই, একটাই আফসোস পাক খেয়ে উঠে। কালো-কালো, দুবলা-পাতলা, রুক্ষ চেহারার তাজু ভাই এদের কাছে অচেনা, অজানাই থেকে যান। তবে হাসলে মানুষটাকে মন্দ দেখায় না...।
শপথ আমার লেখালেখির, ওই মানুষটার চলে যাওয়ার দৃশ্যটা আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলতে পারব না। চোখের নিমিষে যেন তার পা গজালো- শ্লা, এই পাগুলোর নামই তাহলে ক্রাচ!
সাদিকের দেওয়া সেই ক্রাচগুলো শেষ হওয়ার পর ক্রাচ যোগাড় করাটা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ল। টাকার না-হয় একটা ব্যবস্থা হলো কিন্তু কিনে দেবে কে? কারণ ঢাকা ব্যতীত এই জিনিস পাওয়া যায় না। আর আমার ঢাকা যাওয়া হয় কালেভদ্রে। বিপদ!
এরপর ঢাকাবাসী একে-ওকে ধরাধরি করে লাভ হলো না। কারণ এরা সবাই ব্যস্ত মানুষ, কাজের মানুষ। এই তুচ্ছ কাজের সময় কোথায় এদের। আমিও বা জোর করি কোন মুখে।
কেমন-কেমন করে যেন এখানে ক্রাচ প্রাপ্তির বিষয়টা ছড়িয়ে গেল। সম্ভবত পূর্বে যারা ক্রাচ পেয়েছিলেন তারাই মুখ বড়ো করে বলেছিলেন। এরপর এরা দূর-দূরান্ত থেকে বড়ো আশা নিয়ে চলে আসেন। আমি বড়ো বিব্রত হই, ব্যথিত হই। কি করি, কাকে বলি?
হাত বাড়িয়ে দিলেন একজন, এ যে একেবারেই অপ্রত্যাশিত! এখানকার হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালান যে মানুষটি তিনি হঠাৎ করে একদিন বললেন, ‘আরে, আপনি আমারে কন না ক্যান'!
সেই শুরু। এরপর আর আমাকে কোনও প্রকারের ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কয়টা লাগবে এই মানুষটাকে বলে দিলেই হয়, ‘তাজু ভাই, এতোডা লাগব’।
মানুষটার নাম তাজুল ইসলাম- আমি বলি তাজু ভাই। ঠিক-ঠিক তিনি ঢাকা থেকে নিয়ে ক্রাচ আসেন। মাসে বেশ কয়েকবারই অ্যাম্বুলেন্সে রোগি আনা-নেওয়ার কাজে তাঁর ঢাকা যাওয়া পড়েই। গুরুতর এক সমস্যার এমন সহজ সমাধানে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কখনও-কখনও দিব্যি লাশের পাশে চুপচাপ শুয়ে চলে আসে ক্রাচ।
ভাল লাগার পাশাপাশি বিষয়টা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। কাল হাজির হলো কাউসার, আজ বাবু। হঠাৎ করে এদের সংখ্যা বেড়ে গেল কেন এটা আমাকে ভাবাচ্ছে। এবং এদের বয়স খুই অল্প। বাবুকে দেখে আমি বুঝে উঠতে পারি না এই ছেলেটি কেমন করে একা-একা এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে! অথচ সব থাকার পরও কতো সহজেই না আমরা হাল ছেড়ে দেই।
ক্রাচ নামের এই পাগুলো পেয়ে এদের উচ্ছ্বাস দেখে নিজের জাগতিক বেদনা বড়ো তুচ্ছ মনে হয়। কেবল একটাই, একটাই আফসোস পাক খেয়ে উঠে। কালো-কালো, দুবলা-পাতলা, রুক্ষ চেহারার তাজু ভাই এদের কাছে অচেনা, অজানাই থেকে যান। তবে হাসলে মানুষটাকে মন্দ দেখায় না...।
No comments:
Post a Comment