Search

Saturday, February 28, 2015

রঙিন চশমা!

আজই ড. জাফর ইকবালের একটা লেখা পড়ছিলাম। দৈনিক পত্রিকায় লেখাটি তিনি লিখেছেন ‘এবারের বইমেলা’ শিরোনামে। অংশবিশেষ এখানে তুলে দিচ্ছি:
...আমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে জিজ্ঞেস করি, ‘কী হলো? ৮টা বেজে যাচ্ছে এখনও কিছু ঘটল না’? 
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘ঘটবে! নিশ্চয়ই ঘটবে’। 
এবং সত্যি সত্যি ব্যাপারটি ঘটে, আশপাশে কোনো জায়গায় বিকট শব্দ করে ককটেল ফোটে। আমি মেলার শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী কিংবা মধ্যবয়স্ক মানুষের দিকে তাকাই এবং সবিস্ময়ে লক্ষ করি একটি মানুষেরও একটু ভুরু পর্যন্ত কুঞ্চিত হয় না। দেখে মনে হয় তারা সেই বিকট শব্দটি শুনতেই পায়নি। যে যার মতো মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কথা বলছে, বই দেখছে...।

আমি এটা পড়ে কেবল স্তব্ধ হয়ে ভাবছিলাম, এই মানুষগুলো এমন কেন? এরা কোন ভুবনে বাস করে! নাকি এই মানুষগুলোর চোখে যে রঙিন চশমা ওটা চোখে দিলে সব কিছু অন্যরকম দেখায়? এরা কী সাদাকে কালো দেখেন, কালোকে সাদা?
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন এই দেশে তো এমন ‘অহেতুক ভাবুক’ লোকদের অভাব নেই তা কেবল জাফর ইকবাল কেন? না, অভাব আছে। রাজনীতিবিদ বা অন্য অনেকের কথাই তো আমরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উড়িয়ে দেই। সত্যটা হচ্ছে, ড. জাফর ইকবালকে কেউ পছন্দ করুক বা না করুক কিন্তু এই মানুষটা ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’র মত একজন মানুষ। আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের কাছে এই মানুষটার যাদুকরী ক্ষমতা অকল্পনীয়। কিন্তু ক্রমশ তিনি ওই প্রজন্মটাকে বাস্তবতাবিবর্জিত করে ফেলছেন, ভাবের জগতের ছানাপোনা- বাস্তবের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ খুবই কম।

আসলে এই দেশটা কী আদৌ কোনও বসবাস যোগ্য দেশ? তাহলে মৃত্যুপুরি কাকে বলে? আমাদের দেশকে কেউ ব্যর্থ রাষ্ট্র বললে আমাদের গা জ্বালা করে ,বেশ কিন্তু তাহলে ব্যর্থরাষ্ট্রের সংজ্ঞা কী? আর কতটা ভয়াবহ হলে একটা দেশকে ব্যর্থরাষ্ট্র বলা যাবে? প্রায় দু-মাস হয়ে গেল সব অচল- হরতাল অবরোধের নামে দেশের চাকা থেমে আছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ লক্ষ হাজার কোটি টাকা কি ছুঁয়েছে? দেখো কান্ড, এই ফাঁকে আমরা এক দলের মানুষ অন্য দলের সঙ্গে এই বাকোয়াজে লিপ্ত পূর্বের সময়ে হরতালের পরিমাণ আরও বেশি ছিল, ব্লা-ব্লা-ব্লা।

শতের উপর মানুষ আগুনে পুড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এখনও যারা বেঁচে আছে তাদের চেয়ে যারা মরে গেছে তাঁরাই বেঁচে গেছে। আমরা যন্ত্রমানুষ এই বলে কথার খই ফোটাচ্ছি, এ আর কী, একটা লঞ্চ ডুবে গেলে তো এরচেয়েও বেশি মানুষ মারা যায়। আইনের কথা বলে সাদাপোশাকের লোকজন মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বা কথা নেই বার্তা নেই একজন জলজ্যান্ত মানুষ গুমের নামে নাই হয়ে গেল। রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান পুলিশবাহিনী ক্রসফায়ারের নামে মেরে ফেলছে একের-পর-এক মানুষকে। ওই মানুষটাকে নাশকতাকারী বা শিবিরের ট্যাগ দিয়ে দিলে আর কোনও প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে না এদেরকে। কেবল একটা উদাহরণ দেই।

২৪ ফেব্রুয়ারি পত্রিকা থেকে আমরা জানতে পারছি। রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া এবং টেকনিক্যাল মোড় থেকে ৪ জন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ি এরা ৪জনই অতি বদ-নাশকতাকারী। এদের মধ্যে ১জন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে আর বাকী ৩জন নাশকতার সময় জনগণের হাতে গণপিটুনিতে। অথচ এই ৩জনের শরীরে মোট ৫৫টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। জনগণ গণপিটুনি দিলে এদের ৩ জনের শরীরের এতোগুলো বুলেট আসলো কেমন করে এই প্রশ্ন করা হলে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান বলেন, ‘জনতার মধ্যে কারও কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে, তারা গুলি চালাতে পারে...’।

হুম, উন্নত অনেক দেশে অগা-মগাও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পায় কিন্তু ওইসব দেশের লোকজনও কাউকে মারতে এতো গুলি খরচ করে কিনা সন্দেহ। ছায়াছবিতেও কারও শরীরে এতোগুলো গুলি কেউ করে কিনা অন্তত আমার জানা নেই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে গুলি প্র্যাকটিস করার জন্য বিভিন্ন মহড়া হয়। আহা, সেইসব তো ভার্চুয়াল মহড়া এখন মহড়া হয় বাস্তবে।
টকশোত এক চুতিয়া বুদ্ধিজীবীর কথা শুনছিলাম। চুতিয়াটা বলছে, 'পুলিশ যাদেরকে মারছে তাদের মধ্যে একজনও ভাল মানুষ আছে এমনটা কি শুনেছেন...'?
লুঙ্গি নিয়ে হাইকোর্টে রুল হয়েছিল কিন্তু এই অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও রুল জারি করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

বইমেলাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতির মধ্যেই লেখক অভিজিৎ রায়কে প্রকাশ্যে যে প্রকারে কুপিয়ে হত্য করা হলো তা যেন আমাদেরকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হলো কেবল ‘বেডরুম পাহারা’ (মন্ত্রীবচন) না আমরা কোথাও পাহারা দিতে পারব না। সাগর-রুনির মত অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুরও কোনও কূলকিনারা না-হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আমরা যারা মাথা বাঁচাতে পারব না তাদের উপায় কী- আমরা কোথায় পালাব? এই দেশ ছেড়ে আমাদের আসলে পালাবার কোনও উপায় নেই। আহ, ড. জাফর ইকবালের মত একটা রঙিন চশমার বড়ো প্রয়োজন। যে চশমাটা চোখে দিলেই দিব্যি সব কিছুই ঝাঁ চকচকে, মোহনীয় রঙিন...।

Wednesday, February 25, 2015

নৈতিক-অনৈতিক এবং আমার ব্যাখ্যা।

এই লেখাটার প্রেক্ষিতে [১] কেউ-কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন কেউ আবার আমাকে মাহমুদুর রহমান মান্নার সাগরেদ বানিয়ে দিয়েছেন! বাপুরে, চোর-ডাকাতের সাগরেদ বানিয়ে দিন বুকে কষ্ট চেপে তবুও নাহয় মেনে নেব কিন্তু রাজনীতিবিদদের সাগরেদ হতে যাব কোন দুঃখে! এদের সাগরেদ হওয়ার দুঃস্বপ্নে চোখ বন্ধ করে ফেলি, ভয়ে।

আমি ওই লেখায় বলেছিলাম, “...রাষ্ট্র কখনও-কখনও কিছু কর্মকান্ড করে যেটা বাথরুম সমতুল্য যেটা প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হওয়া অসভ্যতা-অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে।
আরেকটু খোলাসা করে বললে রাষ্ট্র এটা করে তার নাগরিককে রক্ষা করার নামে। রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি প্রতিষ্ঠান পুলিশ যখন কাউকে ধরে নিয়ে যায় তখন জিজ্ঞাসাবাদের সময় কেবল হালুয়া-পুরিই খাওয়ায় না এমন কিছু কায়দা-কানুন করে যেটা অনৈতিক। এখন এই কায়দা-কানুনগুলো যদি কোনও মিডিয়া ইতিবাচকভঙ্গিতে আমাদেরকে জানায় সেটা আমাদের জন্য অবশ্যই সুখের না। এটা তো মিডিয়ার কাজ না। মিডিয়া তো রাষ্ট্রের অন্ধকার দিকগুলো আলোকিত ভঙ্গিতে উম্মোচনের মুখপাত্র না।

রাষ্ট্র মান্নাকে বিপদজনক মনে করলে তাকে নজরদারিতে রাখবে কি রাখবে না বা কতটুকু সীমা লঙ্ঘন করবে সে ভিন্ন তর্কের বিষয়। ধরে নিলাম তাকে নজরদারিতে রাখা হলো, তার সমস্ত আচার-আচরণ তীক্ষ দৃষ্টিতে লক্ষ রাখা হচ্ছে। বেশ তো, প্রমাণাদিসহ রাষ্ট্র তাকে আটক করুক না। প্রয়োজনে আদালতে একটা কেন দশটা কথোপকথনের প্রমাণ দাখিল করুক, তাতে সমস্যা তো নেই।

যেটা আমি পুর্বের লেখায় লিখেছিলাম, “...তখন মনে হচ্ছিল এরা দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানেরই যোগ্য চ্যালা।
আমার দেশের সম্পাদক কি করেছিলেন? তিনি বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ বা থাবাবাবার নামে বিভিন্ন লেখা হুবহু তার পত্রিকায় ছেপে দিচ্ছিলেন, দাঁড়ি-কমাসহ। যেটা তিনি করতে পারেন না বলেই মনে করছিলাম। কিন্তু তিনি ওই অনৈতিক কাজটাই করেছিলেন।

মিডিয়া একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এরা ইচ্ছা করলেই যা খুশি তা করতে পারে না- যথেষ্ঠ ক্ষমতা ভোগ করার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাও আছে। আমি একজনকে ‘চু...ভাই’ বললাম আর মিডিয়া লিখে দিল তিনি ‘...ভাই’ বলেছেন এমনটা হয় না, অসমীচীন। তাই বলে কি মিডিয়া লিখবে না, লিখবে কিন্তু খানিকটা ঘুরিয়ে ‘অশ্রাব্য ভাষা’, ‘লেখার অযোগ্য ভাষা’ ব্যবহার করেছেন। পাঠক এতেই যা বোঝার বুঝে যাবে।
আর মিডিয়া যখন যেটা খুশি সেটা করলেই আমাকে মেনে নিতে হবে কেন? অন্য একটা উদাহরণ দেই। এখন পাবলিক প্লেসে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা যত্রতত্র লাগানো হয় কিন্তু কয়টা জায়গায় এটা চোখে পড়ে যে প্রকাশ্যে এটা লিখে রাখা হয়েছে, ‘ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত’ অথচ এইটাই নিয়ম। কিন্তু তেমন কেউ নিয়মটা মানছে না বলে কি এটা নৈতিক হয়ে যাবে!

রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের জন্য মান্নাকে গ্রেফতার করা হবে এতে কোনও সমস্যা নেই কিন্তু তাকে যে প্রকারে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নৈতিকতার বালাই নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। রাতে কাউকে আটক করার বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যা কি এটা আইনজ্ঞ ভাল বলতে পারবেন। অন্য বিষয় বলি। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল , ‘ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ’ মামলায় বিচারপতি মো. হামিদুল হক ও বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ একটি রায় দিয়েছিলেন। রায়ে এও বলা হয়েছিল, হাইকোর্টের এ নির্দেশনা আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। সেই রায়ে বলা হয়েছিল:
১. আটকাদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না।
২. কাউকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।
৩. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আত্মীয় বা কাছের কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের বিষয়টি অবহিত করতে হবে।

মান্নার গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কি এই নিয়মগুলো পালন করা হয়েছিল? সাদা পোশাকের লোকজনেরা কি তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়েছিলেন? অবিলম্বে কি মান্নার আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করা হয়েছিল?
অবিলম্বে মানে কি ২১ ঘন্টা? আমরা জানি ২১ ঘন্টা পূর্বে এই দেশের কোন সংস্থাই এটা জানাতে পারেনি মান্নাকে কারা উঠিয়ে নিয়ে গেছে? কারও পরিবারের জন্য এ এক অবর্ণনীয়, ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা। আজ মান্নার বেলায় এটা হয়েছে বলে এতে উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নাই।

আমার স্পষ্ট কথা, অপরাধ করে কোনও অপরাধি পার পেয়ে যাবে এটা আমার বক্তব্য না। মান্না নিরাসক্ত ভঙ্গিতে যে প্রকারে বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত করা এবং এই অশান্ত করতে গিয়ে খুন-খারাপির কথা বলেছেন সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিনা এর এখতিয়ার আদালতের কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য এটা গভীর উদ্বেগের, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে শ্বাস আটকে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। 
এবং এমনটায় রাষ্ট্র তাকে আটকাবার প্রয়োজন বোধ করলে আটকে রাখবে এতে অন্তত আমার কোনও কাতরতা নেই কিন্তু স্বচ্ছতা থাকুক এবং যার যার দায়িত্ব সেই পালন করুক সেটাই সবার জন্য মঙ্গল।

সহায়ক সূত্র:
১. নৈতিকতার বাবা মৃত, মা মৃতপ্রায়: http://www.ali-mahmed.com/2015/02/blog-post_24.html

Tuesday, February 24, 2015

নৈতিকতার বাবা মৃত, মা মৃতপ্রায়!

এর বাপ মরেছে সেই কবে, মা-টাও যায়-যায় অবস্থা। মাটা মরে গেলে বেচারা 'ইয়াতিম' হয়ে যাবে। বেচারা...!

এখন কী শ্লা নৈতিকতার কোনও বালাই-ই নেই, নাকি! মিডিয়া কী মানুষের বেডরুমেও ক্যামেরা তাক করে রাখবে? হ্যাপি-রুবেলের কথাবার্তা [১] একটি জাতীয় দৈনিকে যখন হুবহু ছেপে দিচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল এরা দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানেরই যোগ্য চ্যালা।
এই অসভ্যতাটা শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে। তখন ইন্টারোগেশনের সময় শেখ সেলিম, আবদুল জলিল এবং অন্যান্যদের কথাবার্তার অডিও ক্লিপ হাতে হাতে ঘুরছিল। অবশ্য কোনও দৈনিক সেটা ছাপাবার মত অসভ্যতা করেছিল বলে আমার জানা নেই।

রাষ্ট্র কখনও-কখনও কিছু কর্মকান্ড করে যেটা বাথরুম সমতুল্য যেটা প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হওয়া অসভ্যতা-অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু আমরা সেসময় বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম সেই গোপন বিষয়গুলো রাষ্ট্র জনে জনে বলে বেড়াতে লাগল!
এখন আবার নতুন করে এই সব শুরু হয়েছে। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম কেবল এই তথ্যটা দিয়েই দায় সারেনি হুবহু ছাপিয়ে দিয়েছে দাঁড়ি-কমাসহ! কেবল তাই না ইউটিউবেও আপলোড করে দিয়েছে। এদিকে এরা আবার ঘটা করে লিখেছে, 'কথোপকথন ফাঁস...'। ওরে ব্যাটা, ফাঁস কীরে আবার- কে ফাঁস করে দিল? সাদেক হোসেন খোকা না মাহমুদুর রহমান মান্না?
এই প্রশ্নটা সপাটে করতে চাই কে তৌফিক ইমরোজ খালেদী হাতে এই অডিও ক্লিপ তুলে দিল, 'ভাইবার'? ‘ভাইবার’-এর মালিক কি খালেদীর পরমআত্মীয় লাগে? নাকি মান্নাকে শুইয়ে দেওয়ার জন্য এটাও নাটকের একটা অংশবিশেষ?

ওয়েবে আমরা এমন অনেক কিছু্ই পাই যা অনৈতিক ভাবে দিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু প্রিয় ডট কম যখন নির্বিকার ভঙ্গিতে দিনের-পর-দিন চুরি চালিয়ে যায় [২] বা বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম এহেন কর্মকান্ড করে তখন কেবল এটাই মনে হয় নৈতিকতার মার অক্সিজেন চলছে। আমি শিউরে উঠি সেই অক্সিজেনের পাইপে খালেদী এবং জাকারিয়া স্বপনের রোমশ পা দেখে, যে পাগুলো চাপা দিয়ে রেখেছে অক্সিজেনের পাইপটা।
লেখার শুরুতে যেটা বলেছিলাম, রাষ্ট্র কখনও-কখনও এমন কিছু কর্মকান্ড করে...। সম্ভবত এটা আবারও দেখতে হচ্ছে আমাদেরকে...।
*পরবর্তী লেখা: নৈতিক-অনৈতিক এবং আমার ব্যাখ্যা: http://www.ali-mahmed.com/2015/02/blog-post_25.html 

সহায়ক সূত্র:
১. ...আমাদের মিডিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2014/12/blog-post_19.html
২. প্রিয় ডট কম, তোমাকে কি ডাকাত....http://www.ali-mahmed.com/2015/02/priyocom.html

Saturday, February 21, 2015

আস্পর্ধা!

এই বছর সবচেয়ে ব্যবসাসফল ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। এরা ব্যবসা বোঝে না এটা আর বলার উপায় নেই, সব বোঝে। ঝানু -ঝানু ব্যাংকারদেরকে এরা অনায়াসে পেছনে ফেলে দিয়েছে। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকও খুব একটা পিছিয়ে আছে এমনটা মনে হয় না। কৃষি ব্যাংকে চাকুরি করেন এমন একজন আমাকে বলছিলেন কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে ইসলামী শব্দটা লাগিয়ে দিলে এটাও চমৎকার ব্যবসাসফল ব্যাংক হতো।

যাই হোক, সেটা তার বক্তব্য, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ঝাঁ-চকচকে সেন্ট্রাল এসি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকটি আজ (২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) যে পতাকাটা লাগিয়েছে এটা মাপে এতই ছোট যে ছবি উঠাবার সময় আমাকে জুম ব্যবহার করতে হয়েছে। এতো ছোটমাপের পতাকা পানদোকারদারও লাগায় কিনা এতে আমার সন্দেহ আছে।

এখানকার সবচেয়ে চালু এলাকায় সবচেয়ে দামী জায়গায় ভাড়াথাকা এই ব্যাংটিতে টনকে টন এসি, স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর, উর্দিপরা দারোয়ান থেকে শুরু করে, কী নেই! সবই আছে, কেবল নেই একটা মাপমতো পতাকা!
২১ ফেব্রয়ারির পতাকা আনন্দের পতাকা না, অতি বিষাদের পতাকা। এটা একটা বাচ্চাও জানে এই দিনে পতাকা অর্ধনমিত থাকে। কেবল জানে না আল আরাফাত ইসলামী ব্যাংক!
এটা তো সাধারণ কোনও প্রতিষ্ঠান না, বানিজ্যিক ব্যাংক। সবাই ছুটিতে চলে যাবে এটা অবিশ্বাস্য! বিশ্বাস না হলে এই ব্যাংকে অনুমতি ব্যতীত একটা মাছি গলে দেখুক না। যান না, কেউ ভল্ট ভেঙ্গে ‘জিনিস’ নিয়ে আসেন না গিয়ে। দেখেন না, কেমন ঝাঁকে-ঝাঁকে এদের লোকজন এসে হাজির হয়। যতই আপনি চেঁচান, ‘ক্যাচ মি ইফ য়্যু ক্যান’- এরা আপনাকে ক্যাঁক করে ধরে ফেলবেই- ‘ত্র্যম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল’ হলেও বাঁচোয়া নেঁই।

তাহলে, সমস্যটা কোথায়? সীমাহীন আস্পর্ধা এই কারণে কারণ এদেরকে এটাই শেখানো হয়েছে রক্তাক্ত পতাকা একটা কাপড় বৈ অন্য কিছু না। দেশের প্রতি নিবেদিত থাকাটাও বিশেষ জরুরি না তেমনি নিজের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করাও দোষের কিছু না।

Thursday, February 19, 2015

‘হর্স-মাউথ’।

প্রফেসর ডা. একেএম ফজলুল হক। একজন কলোরেকটাল সার্জন। এই ভদ্রলোকের দাবী তিনি বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের প্রথম কলোরেকটাল সার্জন। এটা ঘটা করে লিখে বিভিন্ন দৈনিকে নিজের বিজ্ঞাপন নিজেই দেন যে তিনি জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল থেকে এখন তিনি বসছেন নতুন চেম্বার ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে।

কেউ ধানমন্ডিতে ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে গেলে সবিস্ময়ে লক্ষ করবেন কেবিন নামের খুপরির প্রতিটি দরোজায় এই ডাক্তার সাহেবের নাম লেখা, প্রফেসর ডা. একেএম ফজলুল হক। আমি এর মরতবা বুঝতে পারিনি! ঘটনা কী! এই ডাক্তার সাহেবের কী ধারণা রোগি যাওয়ার সময় কেবিনের দরোজা খুলে নিয়ে যাবে?
রিসেপশনের মনিটরে অনবরত চলছে এই ডাক্তার সাহেবের দেওয়া বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার। একটু ভাল করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে এই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপিংগুলো পূর্বেই রেকর্ড করা।

আমাদের দেশের আইনে এমনটা বলা নেই যে কেউ তার সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে আগত লোকজনকে হরদম দেখাতে পারবেন না যেমনটা এমন আইনও নেই যে কেউ গুরুত্বপূর্ণ কোনও আলোচনায় টেবিলে উঠে ‘ধুম মাচা দে’ গানটা গাইতে পারবে না। কিন্তু, একটা কিন্তু থেকে যায়।
চারপাশে কিছু লোকজন আছে যাদের দেখাবার ভঙ্গি বড়ো স্থুল। এদের মধ্যে আমাদের এই ডাক্তার সাহেব যে একজন এতে অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নেই। আমি এমন চালবাজ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও পেয়েছি যিনি চেম্বারে ভিনাইলে ইয়া বড়ো করে ঝুলিয়ে দিয়েছেন এই তারিখ থেকে ওই তারিখ পর্যন্ত তিনি ওমুক-ওমুক দেশে বিভিন্ন কনফারেন্সে বক্তৃতা দেবেন। বাস্তবে তিনি তখন পরিবার-পরিজনসহ কক্সবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পত্র-পত্রিকায় যে বিজ্ঞাপনগুলো দেওয়া হচ্ছে এগুলো যে এই ডাক্তারের ঠিক করে দেওয়া এটা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়া লাগে না। বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের প্রথম কলোরেকটাল সাজর্ন এটা বিজ্ঞাপনে দেওয়াটা স্থূল কিনা সেই প্রসঙ্গ থাকুক। আমি এই বক্তব্যের সপক্ষে তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম ঘুরেফিরে চলে আসছে এই ডাক্তারেরই চালুকরা ওয়েবসাইটগুলো।
এমনকি উইকিতে [১] আমরা তার যে তথ্য পাচ্ছি যে তিনি বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের প্রথম কলোরেকটাল সাজর্ন তাও উইকি নিয়েছে ডা. ফজলুল হকের ওয়েবসাইট থেকেই [২]। এই ডাক্তার সাহেব আরও কিছু ওয়েবসাইট চালু করেছেন যেমন, পাইলস ডট কম বা পাইলসট্রিটমেন্টবিডি ডট কম- সর্বত্র একই কাহিনী! তার মানে অন্য কেউ বলছে না তিনি নিজেই নিজেরটা বলছেন। লাইক আ ‘হর্স-মাউথ’। চিঁহিঁহিঁহিঁ-চিঁহিঁহিঁ!

এটা ডাক্তার ফজলুল হকের বক্তব্য কিন্তু অন্যদের বক্তব্য কি? প্রফেসর ডা: মো: সহিদুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা [৩]:
"…বর্তমানে বাংলাদেশে একজন নিজেকে এই বিষয়ের পাকভারত উপমহাদেশের একমাত্র সার্জন বলে দাবী করছে বিভিন্ন লেখা লেখিতে যা আদৌ সত্য নয়।তিনি কোথাও কোন প্রোগ্রামে অংশ নেননি। তার এই দাবীর কোন তথ্য তার হাতে নেই। বাংলাদেশে আমিই প্রথম, পাকভারত উপমহাদেশে আমিই প্রথম।...

যদিও তিনি নাম বলেননি, সম্ভবত ভদ্রতা করে কিন্তু এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে ‘ওই একজন’ মানুষটা প্রফেসর ডা. একেএম ফজলুল হক। কারণ এমন দাবী যেটা তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বকে যাচ্ছেন এমনটা অন্তত আমার জানা নাই। যাই হোক, এই সব তো গেল ফজলুল হকের বিভিন্ন বিশেষ কায়দা-কানুনের কথা। এবার আসা যাক অন্য প্রসঙ্গে। তার কাছে ম্যালিগন্যান্ট আক্রান্ত টিউমার অপারেশন করতে অপারেশনের টাকা কেমন কেমন করে যেন সব মিলিয়ে তিন লক্ষ ছাড়িয়ে চার লক্ষের ঘর ছুঁই ছুঁই করে। কলোনস্কপি, ইকো বা অন্য টেস্টগুলোর খরচ কিন্তু এর বাইরে।

আমার বন্ধু, এক সার্জনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ঠিক এমন একটা অপারেশন করতে কেমন টাকা খরচ হতে পারে? তিনি আমাকে যে হিসেব দিলেন তা বিস্ময়কর! সার্জনের টাকা, ওটির খরচ, ওষুধের দাম এবং হাসপাতালে থাকা বাবত বড়জোর ষাট হাজার টাকা লাগতে পারে।
এই দেশে কারও কোনও জবাবদিহিতা নেই! তাই আমাদের জানার কোনও উপায় নেই ফজলুল হকের মত ডাক্তাররা কেন গলাকাটা টাকা নিচ্ছেন- ‘ইট লাইক আ হর্স’! মাসে আনুমানিক চল্লিশ-পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আয় করে কত টাকা ট্যাক্স দিচ্ছেন? বছরে পাঁচ-ছয় কোটি টাকার বিপরীতে তার দেওয়া ট্যাক্স যথার্থ কি না?

সহায়ক সূত্র:
১. প্রফেসর ডা: মো: সহিদুর রহমান, পায়ুপথ ও পাইলস ... : http://www.medicalinfobd.com/index.php/new-book/278-dr-shahidurpg 
২. উইকি: http://en.wikipedia.org/wiki/Professor_Doctor._AKM_Fazlul_Haque 
৩. ডা. ফজলুল হকের ওযেবসাইট: http://www.profdrakmfazlulhaque.com/about.html

Monday, February 16, 2015

priyo.com: ডিয়ার, তোমাকে কি ডাকাত বলতে পারি?

আমি দিব্যচক্ষুতে দেখতে পাচ্ছি, জনাব, জাকারিয়া স্বপন বিভিন্ন মঞ্চ আলো করে বসে আছেন। সেই আলোয় চকচক করছে তার পরনের পোশাক-আশাক। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হাঁ করে আছে এই প্রজন্ম। এরা অতি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করছে জাকারিয়া স্বপনের মধুবাক্য! তিনি জলদগম্ভীর কন্ঠে বলে যাচ্ছেন বিভিন্ন নীতিবাক্যের কথা। তিনি আউড়ে যাচ্ছেন ওয়েবসংক্রান্ত বিভিন্ন ইথিকস নিয়ে।
এই প্রজন্ম, সমীহের সঙ্গে তাকে আঙ্গুল দেখিয়ে নীচুস্বরে একজন অন্যজনকে বলছে, মামু জিনিস একটা, এক্কেবারে বস পাবলিক।

অল্প ক-দিন পূর্বেই আমি একটা লেখা লিখেছিলাম, ‘ডয়চে ভেলে বনাম প্রিয় ডট কম- ‘কৌন হে উয়ো মারদুদ’?’ [১] যেহেতু প্রিয় ডট কমের কর্ণধার জাকারিয়া স্বপন তাই আমার ক্ষীণ একটা আশা ছিল নাহ, এই মানুষটা এমনটা করতে পারেন না। অথচ এমন কর্মকান্ড করায় পূর্বে এই আমিই অনেককেই চোর বললেও এখানে এটা বলতে মন সায় দেয়নি। ওই যে বললাম সাইটটির কর্ণধার...।

কিন্তু আজ দেখছি আবারও! “প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ!” ডয়চে ভেলের অসাধারণ এই প্রতিবেদনটি [২] হুবহু ছাপিয়েছে প্রিয় ডট কম, দাঁড়িকমাসহ [৩]! এবং ভঙ্গিটা চোরের না স্রেফ ডাকাতের!
ডয়চে ভেলে এই প্রতিবেদনটি ছাপিয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ আর প্রিয় ডট কম ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। প্রতিবেদনের সঙ্গের ছবিগুলো জাকারিয়া স্বপন হয়তো চিনেবাদামের বিনিময়ে রয়টার থেকে কিনেছেন। হায়রে অর্বাচীন! রয়টারের ছবিগুলো ক্রপ করার কুবুদ্ধি জাকারিয়া স্বপনের মাথায় আসেনি।
যাই হোক, গত লেখায় এই সব নিয়ে বিশদ লিখেছি এখানে আর চর্বিতচর্বণ করি না। কেবল, একেক করে জাকারিয়া স্বপনের গায়ের চকচকে কাপড়গুলো খসেপড়া দেখি...।

সহায়ক সূত্র:
১. ডয়চে ভেলে বনাম প্রিয় ডট কম- ‘কৌন হে উয়ো মারদুদ’? : http://www.ali-mahmed.com/2015/02/blog-post_5.html
২. প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ (ডয়চে ভেলে): http://tinyurl.com/kgnbxqm
৩. প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ (priyo.com): http://www.priyo.com/2015/02/13/133229.html

Wednesday, February 11, 2015

দামাল!


এর নাম শিপন। বয়স কত হবে, আট-দশ। ৪০/ ৫০ ফিট উঁচু নারিকেলগাছে এর উঠার নমুনা দেখে আমি পুরাই হাঁ!
এর নারিকেল পাড়ার ভঙ্গিও বিচিত্র। দা-টা না, পায়ে লাথি মেরে মেরে এ অবলীলায় নারিকেল ফেলে। দেখে মনে হচ্ছিল এর কাছে এটা ছেলেখেলা! এ অবিশ্বাস্য!

আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেউ কারও কাছ থেকে পিছেয়ে নাই। এর গাছে উঠার মত তরতর করে দেশটা এগিয়ে যেত যদি কেবল দেশে রাজনীতিবিদদের খানিকটা অভাব থাকত ।
ভিডিও দেখে খানিকটা আঁচ করা যাবে এর অনায়াস ভঙ্গি...


Saturday, February 7, 2015

চুতিয়া।

কেউ-কেউ কখনও-কখনও যে এটা বলেননি এমন না আমার লেখায় ‘চুতিয়া’ শব্দটার রিপিটেশন হচ্ছে। এটা নাকি আমার লেখার মান কমিয়ে দিচ্ছে। বাপু রে, যার লেখার কোনও মানই নেই তার মান কমে যায় কেমন করে আবার!
একবার জমাটি এক আড্ডায় বেমাক্কা এক প্রশ্ন ছিল এমন, 'আচ্ছা, চুতিয়া দেখতে কেমন হয়'?
আমি দিশামিশা না-পেয়ে বলেছিলাম, ‘চুতিয়া তো চুতিয়াই এ আবার দেখতে কেমন হবে? অন্য গ্রহের লোকজনেরা দেখতে কেমন হয় এর কোনও উত্তর হয় নাকি আবার’! এটা আসলে পাশ কাটানো উত্তর। আসলেই তো চুতিয়ার কোনও ছবি থাকলে বড়ো সুবিধে হত। ছবি দেখিয়ে বলা যেত দেখো, চুতিয়া দেখতে এমন হয়।

পত্রিকায় একটা খবর পড়ে পুরনো প্রসঙ্গটা আবারও সামনে চলে এলো। একটি দৈনিক পেছনের পাতায় সিঙ্গেল কলামে ছাপিয়েছে ‘চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে বার্ন ইউনিটে শুটিং’। পত্রিকা থেকে হুবহু তুলে দেই এখানে:
...মডেল বেশে ঢুকলেন এক নারী। সঙ্গে আরও দুজন। একজনের হাতে বড়ো ভিডিও ক্যামেরা। আরেকজন ডিরেকশন দিচ্ছেন। মডেলকে বললেন, ‘চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে নাও’।... (এদের মধ্যে একজন, রফিকুল ইসলাম বুলবুল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের নিয়ে গান তৈরি করতে চান’...।” (দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)

আমার মধ্যে একটা হাহাকার পাক খেয়ে উঠে। আফসোস, এই বুলবুল এবং তার সঙ্গের লোকজনের ছবি ছাপা হলো না। কেন-কেন-কেন? তাহলে তো আমার কাজ কমে যেত। ওই ছবি দেখিয়ে বিমল আনন্দে বলতে পারতাম, এই, এই-ই তো চুতিয়া।

রাজনীতিবিদসহ আমাদের অনেকের কাছে পুড়ে যাওয়া মানুষগুলো খেলার একটা উপাদান মনে হচ্ছে। অনেক পূর্বে এক লেখায় আমি বলেছিলাম, হরতাল মানি তবে যিনি হরতাল ডাকবেন তার শরীরে কেবল একটা, একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে ধরে রাখব। আহা, একটাই তো, কতক্ষণের আর মামলা, দেখতে দেখতেই তো সময়টা কেটে যাবে। যারা আগুনে পুড়ছেন তাদের কারও-কারও শরীরের পঁচিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, ষাট শতাংশ পুড়ে যাচ্ছে। ওই তুলনায় একটা ম্যাচের কাঠি কিসসু না, বুঝলেন। এতে করে শরীরের এক শতাংশও পুড়বে না। লাগবেন বাজি? আই বেট, জিরো পয়েন্ট সামথিং হতে পারে।

আমরা কেবল মৃতের সংখ্যা হিসেব করছি। আগুনে পুড়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা মরে বেঁচে যাচ্ছেন। আর যারা বেঁচে আছেন...। বার্ন ইউনিটে কাজ করেন এমন একজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি থেতে থেমে বলছিলেন, ‘জানেন, জানেন আমার কি ইচ্ছা করে? বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দিয়ে এদেরকে মেরে ফেলি। এ সহ্য হয় না, চোখে দেখা যায় না’।

বারবার যেটা আমি বলে আসছি, হরতাল-অবরোধ হলে এর পেছনে পেছনে এই সব নৃশংসতাও চলে আসবে। কারণ সাধারণ লোকজন হরতাল করবে কোন দুঃখে। এক মাসে হরতাল-অবরোধে ক্ষতি মাত্র ৭১ হাজার কোটি টাকা। তো, সেই হরতাল-অবরোধকে মিডিয়া লিখবে, ঢিলেঢালা হরতাল বা নিরতাপ অবরোধ [১]
আচ্ছা, আপনারাই বলুন, এমনটা মিডিয়ায় আসলে যিনি হরতাল-অবরোধ ডেকেছেন তার ইজ্জত বা চামড়ার চকচকে ভাব থাকে কেমন করে? তখন নিরুপায় হয়েই আমাদের মত সাধারণ মানুষের শরীরের চামড়া খসিয়ে তৈরি হয় তাদের ইজ্জতের চাদর।

এখন আর এটা আলোচনার বিষয় না কোন দল কতদিন হরতাল করেছে। বা এক দল হরতাল ডেকে হাসিমুখে টা-টা দিয়ে বিদেশ চলে গেছে তো অন্য দল ১৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষা বন্ধ করে নিজের দুই নাতনিকে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছে। সরকার আবার জাঁক করে বলছে, জরুরি অবস্থা জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। শোনো কথা! আর কতটা শরীর পুড়লে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হবে?
ছবি সূত্র: দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সাংবাদিকরা এমন ছবি অবলীলায় তুলতে পারছেন একজন পেট্রোল বোমা ছুড়ে দিচ্ছে অথচ একে ধরা যাচ্ছে না। এ মনস্টার-দানব, একে থামাতে হবে যে-কোনও মূল্যে। প্রয়োজনে পায়ে গুলি করে। এ কোন দল করে, এর বয়স কত এই সব একপাশে সরিয়ে। যে-কোনও মূল্যে এদেরকে থামাতে হবে। আইন করে থামাতে হবে হরতাল-অবরোধ। যিনি বা যে দল হরতাল ডাকবেন তাকে গ্রেফতার করতে হবে সঙ্গে সঙ্গে।

অনেক পূর্বে লিখেছিলাম এটা। আমার সাফ কথা, আমি হরতাল-অবরোধ চাই না। এই দেশের ১৬ কোটি মানুষের এতে সায় থাকলেও। এর সঙ্গে যোগ করি, আমি হরতাল-অবরোধ চাই না, স্বয়ং ঈশ্বরের মৃত্যুতেও না...।

সহায়ক সূত্র:
১. ঢিলেঢালা হরতাল+নিরাতপ অবরোধ=বোমার উত্তা: http://www.ali-mahmed.com/2015/01/blog-post_30.html 

Thursday, February 5, 2015

ডয়চে ভেলে বনাম প্রিয় ডট কম- ‘কৌন হে উয়ো মারদুদ’?

কখনও-কখনও আমরা যমজ মানুষ দেখে চমকে উঠি- আহা, প্রকৃতির এ কেমন খেলা! তেমনি কখনও-কখনও আমরা যমজ লেখা দেখেও চমকে উঠি- আহা, মানুষের এ কোন খেলা!

যেমনটা ডয়চে ভেলে [১] এবং প্রিয় ডট কমের [২] একটা লেখা দেখছি, “খালেদার ফোনালাপ: শিরোনামে ‘নাশকতা’ থাকলেও অডিওতে নেই।“ হুবহু, দাঁড়ি-কমাসহ। একটা বিন্দুরও কমতি নেই। মনে হচ্ছে ফটোকপিয়ার মেশিন আর কী! এটা অবশ্য অভূতপূর্ব না। এলেবেলে সাইটে কখনও-সখনও যে চোখে পড়ে না এমনটা না। কিন্তু এখানকার বিষয়টা ভিন্ন। কারণ ডয়চে ভেলে একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া। এদিকে হালে প্রিয় ডট কমও জাতে উঠে গেছে।

সম্প্রতি সিলিকন ভ্যালির ‘ফেনক্স ভেঞ্চার ক্যাপিটাল‘ নামের দুঁদে এক প্রতিষ্ঠান প্রিয় ডট কমে বিনিয়োগ করেছে। সোজা বাংলায় এরা ঝুলাঝুলি খেলা খেলছে। শুনতে পাই ফেনক্সের সঙ্গে প্রিয় ডট কমের চোখ ছানাবড়া হওয়ার মত নাকি ‘ট্যাকাটুকা’ দরদস্তুর হয়েছে। বেশ তো-ভাল তো, দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে এরা।

প্রিয় ডট কম থেকে আমরা আরও জানতে পারছি: [৩]
 ... অনুষ্ঠানে শুধু এই বিনিয়োগের ঘোষণাই দেওয়া হয়নি, সেই সাথে ‘প্রিয়.কম’-এর একটি নতুন সেবার উদ্বোধনও করা হয়। এই সেবাকে নাম দেওয়া হয়েছে প্রিয় আনসার। এই সেবায় যেকোনো মানুষের যেকোনো ধরণের প্রশ্নের উত্তর করা হবে।
... এ বিষয়ে প্রিয় ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘আমরা শুধু মানুষকে সংবাদই জানাতে চাই না। মানুষের জীবনের প্রতিটা অংশ নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই। আর এরই অংশ হিসেবে আমাদের এই নতুন সেবা’। 

এদের সেবার নমুনা এমন, ‘ফেনক্স’ প্রিয় ডট কমের মাথায় ‘ছেনেহের’ হাত রাখার কারণে কিনা কে জানে প্রিয় ডট কম এখন আমাদেরকে জ্ঞান দিচ্ছে, ‘ডগি স্টাইল সেক্স কীভাবে করে?’ (৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)

এ বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, যৌনতা নিয়ে জানার প্রয়োজন বোধ করলে আমি এই সংক্রান্ত বইপত্র বা এই সংক্রান্ত ওয়েব ঘাঁটাঘাঁটি করব, প্রিয় ডট কম না। যেমনটা যৌনতা সম্বন্ধে জানতে চাইলে ইমদাদুল হক মিলন বা তসলিমার লেখা পড়ে জানতে চাইব না। দ্যাটস ইট।

ওয়েল, যমজ মানুষ ওরফে যমজ লেখা প্রসঙ্গে ফিরে যাই। এখানে কেউ একজন ‘উদাসীন সাধু’ অন্যজন কপট চোর। কে সে? ডয়চে ভেলে প্রিয় ডট কম থেকে লেখা হুবহু ছাপিয়ে দিয়েছে এমনটা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া চলে না। কিন্তু ওই প্রতিবেদনের একটা বাক্য এমন, “বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, চার বছর আগে ঢাকায় বিএনপির একটি সমাবেশের...”।
এইখানে এসে ধোঁয়াশা অনেকখানি কেটে যায় যে মূল প্রতিবেদনটা ডয়চে ভেলের। কারণ প্রিয় ডট কম কোন দুঃখে ডয়চে ভেলে এবং ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনারের নাম অন্তত এই লেখায় আনবে।
ঘটনাটা মাছি মারা কেরানির বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। প্রিয় ডট কমের দুর্ধর্ষ লোকজনেরা কপি-পেস্ট করতে গিয়ে এটাও ছাপিয়ে দিয়েছে। আমি এটাও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, যে প্রিয় ডট কম এই প্রতিবেদনের কোথাও এই লেখাটা যে ডয়চে ভেলের এর উল্লেখ করেনি।

যাই হোক, প্রিয় ডট কমকে ডয়চে ভেলে লেখাটা হুবহু প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছে কিনা এটা আমার জানা নাই বিধায় আমি নিশ্চিত মন্তব্য করা থেকে বিরত রইলাম। কিন্তু একজন পাঠক হিসাবে আমার কিছু বক্তব্য আছে। কে অনুমতি দিল, কি দিল না এতে আমার বয়েই গেছে। একজন পাঠক হিসাবে আমি কোনও প্রকারেই চাইব না হুবহু, দাঁড়ি-কমাসহ কোনও লেখা আলাদা আলাদা মিডিয়ায় পড়তে।

এটা সত্য মিডিয়ারা তাদের প্রয়োজনে ‘টংকা’ খরচ করে অনুমতি সাপেক্ষে নিজেদের মধ্যে ‘কনটেন্ট’ চালাচালি করে। তারপর নিজেদের মত করে লেখাটা সাজায় কিন্তু দাঁড়ি-কমাসহ ছাপিয়ে দেয় এমনটা অন্ততত আমার জানা নেই। তারপরও কথা থেকে যায়, উদ্বৃতির প্রয়োজনে অনুমতি না-নিয়ে হুবহু খানিক অংশ ছাপানো যাবে না এমনটা না। কিন্তু যেখান থেকে লেখাটা নেওয়া হয়েছে তা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং হাইপার-লিংক দিতে হবে।
যেমনটা আমি করেছি কেবল যথাযথ কারণে ডগি-স্টাইলের লিংকটা আমি এড়িয়ে গেছি।

এই ভুবনে কার সঙ্গে কার কেমন যোগসূত্র বা পূর্বে যেটা বলেছি অনুমতির বিষয়টা যেহেতু আমার জানা নেই তাই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, ডয়চে ভেলে এবং প্রিয় ডট কমের মধ্যে কোনও একটি প্রতিষ্ঠান অনৈতিক কাজটা করেছে। অনৈতিক কাজটা যে করেছে তাকে সোজা বাংলায় আমরা বলি, চোর, লেখা চোর। ‘কৌন হে উয়ো মারদুদ, না ফাতেহা না দরুদ’?

এখানে এসে পর্যবেক্ষণে আরেকটা পালক যোগ করি। ডয়চে ভেলে লেখাটা ছাপিয়েছে, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ আর প্রিয় ডট কম ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। অন্তত এখানে এসে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে ডয়চে ভেলের লেখাই প্রিয় ডট কম ছাপিয়েছে।
এটা আমার একটা পর্যবেক্ষণ মাত্র বাকীটা আমি বুদ্ধিমান পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।

সহায়ক সূত্র:
১. ডয়চে ভেলে, খালেদার ফোনালাপ...: http://tinyurl.com/pgrpjhl
২. প্রিয় ডট কম, খালেদার ফোনালাপ...: http://www.priyo.com/2015/02/03/131530.html
৩. প্রিয়.কমে বিনিয়োগ করছে সিলিকন ভ্যালির...: http://www.priyo.com/2014/11/24/1203102.html

Wednesday, February 4, 2015

ভদ্রলোক বনাম দুই ফোন...।

গতকাল, সকাল-সকাল ঘুম ভাঙ্গে টেলিফোনের কর্কশ শব্দে। একটানা বেজেই যাচ্ছে। টেলিফোন যে বানিয়েছে তাকে হাতের নাগালে পেলে জাস্ট ‘মার্ডার’ হয়ে যেত। ভাগ্যিস, ব্যাটা মাটির নীচে লুকিয়ে আমাকে খুনি হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল।
এখন আমি এটা বুঝতে পারি টেলিফোন কেন শক্ত জিনিস দিয়ে বানানো হয়। নইলে আমার মত লোকজনেরা এটা কচকচ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলত। ঘুম-ঘুম চোখে আমি যে বিকট আওয়াজ করলাম এটাকে হ্যালো বলা চলে আবার না-বললেও কারও কোনও দোষ ধরা চলে না।

ওপাশ থেকে জরুরি তাগাদা, ‘আমি পলাশ, আপনি যে বলছিলেন...।‘
আমি পুরোটা শোনার চেষ্টা করলাম না কারণ আমার ব্রেনের ‘তার-তুর’ প্যাচ খেয়ে গেছে। কোন পলাশ, কীসের পলাশ, কোথাকার পলাশ? ব্রেনের তার-তুরের উত্তাপ কমে এলে আমি জানতে চাইলাম, ‘ইয়ে, কি বিষয়?’
পলাশ হড়বড় করে বলে, ‘আপনি না বলছিলেন কাউকে পাইলে...। একজন রে পাইছি।‘

বিষয়টা এতক্ষণে আঁচ করতে পারছি। আমার মনে পড়ে রেলের নিরাপত্তাকর্মীদেরকে বলে এসেছিলাম বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দেওয়া হয়েছে এমন কারও খোঁজ পেলে বা এদের নিয়ে কোনও সমস্যা মনে করলে আমাকে যেন জানায়।
ওরে, ঝোঁকের মাথায় মানুষ কত কিছু বলে সব ধরে বসে থাকতে হবে কেন, বাপু! আহা, কথা শেষ হলে মাথাটা কচ্ছপের মত লেপের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলার যে সুখ তা পলাশকে কে বোঝাবে! আমি বলি, ‘হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। আমি পরে হাসপাতালে যোগাযোগ করব।'
পলাশ বলে, 'আমার তো ডিইটি শেষ। এরে কার কাছে রাইখা যাব। দেইখা মনে হইতাছে ভদ্রলোক।'
আমি বিস্ময় চেপে বলি, ‘কেমনে বুঝলেন ভদ্ররলোক?’
পলাশ বলে, ‘দুইটা মোবাইল পাওয়া গেছে এর সাথে আর টাকাও আছে।‘
আমি বিস্ময় গোপন করে বললাম, ‘আচ্ছা, একটু থাকেন। আমি আসছি।‘

যেতে যেতে আমি হাসি চাপছিলাম। দুইটা মোবাইল থাকাটা এখন তাহলে ভদ্রলোকের লক্ষণ! আচ্ছা, বেশ, যা হোক। তবে এটা খুবই উদ্বেগজনক যে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দিয়ে সঙ্গের সব কিছু হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা এখন খুব বেড়ে যাচ্ছে। মাত্র ক-দিন পূর্বেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছিল [১]
মনে মনে যথেষ্ঠ কুন্ঠিতও হচ্ছিলাম। এই সব কী হচ্ছে? রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মী পলাশের ডিউটি শেষ, সে এই লোকটাকে না-দেখার ভান করে চলে গেলে কারও কিচ্ছু বলার ছিল না। বা এর সঙ্গে থাকা দুইটা মোবাইল, টাকা-পয়সা হাপিস করে দিলে কে এর খোঁজ রাখত। হাসপাতালের লোকজনদেরও দেখেছি, এখন এরা আমাকে খুব সহযোগীতাও করে। অথচ সেই আমারই কিনা পলায়নস্পৃহা! আমি ব্যাটাকে কষে চাবুক মারাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
যাই হোক, এরপর আর ভাবাভাবির সময় কোথায়। ‘মাহদি’ নামের এই মানুষটাকে নিয়ে শুরু হয় বিস্তর দৌড়-ঝাঁপ।

আমি বিকট ঝামেলায় পড়ে যাই কারণ এর দুইটা ফোনই পাসওয়ার্ড দেওয়া। ওখান থেকে কোনও নাম্বার উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। একটা সময় এসে ভাগ্য সহায়তা করে মাহদির বউ ফোন করেন। মাহদির বউকে তার অবস্থা জানাবার পর এই ভদ্রমহিল ফোনের ওপাশ থেকে হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করলেন। আমি দিশামিশা না-পেয়ে ফোনটা মাহদির কানে ধরে রাখি। মাহদি ঘোরের মধ্যে কীসব বিজবিজ করে বলতে থাকে। ভদ্রমহিলা খানিকটা আশ্বস্ত হন। এবং জানান মাহদির ভাই এখনই রওয়ানা হচ্ছেন।
একটা সময় মাহদির ভাই চলে এলে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি।
অবশেষে আজ মজিবর রহমান নামের মানুষটা তার ভাইকে নিয়ে ফিরে গেলেন। বাড়িতে ফিরে গিয়ে আমাকে ফোন করে জানাবার পর, আপাতত আমিও, আমি ব্যাটাকে চাবুক মারা থেকে বিরত রইলাম।

১. http://www.ali-mahmed.com/2015/01/blog-post_22.html