গতকাল, সকাল-সকাল ঘুম ভাঙ্গে টেলিফোনের কর্কশ শব্দে। একটানা বেজেই যাচ্ছে। টেলিফোন যে বানিয়েছে তাকে হাতের নাগালে পেলে জাস্ট ‘মার্ডার’ হয়ে যেত। ভাগ্যিস, ব্যাটা মাটির নীচে লুকিয়ে আমাকে খুনি হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল।
এখন আমি এটা বুঝতে পারি টেলিফোন কেন শক্ত জিনিস দিয়ে বানানো হয়। নইলে আমার মত লোকজনেরা এটা কচকচ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলত। ঘুম-ঘুম চোখে আমি যে বিকট আওয়াজ করলাম এটাকে হ্যালো বলা চলে আবার না-বললেও কারও কোনও দোষ ধরা চলে না।
ওপাশ থেকে জরুরি তাগাদা, ‘আমি পলাশ, আপনি যে বলছিলেন...।‘
আমি পুরোটা শোনার চেষ্টা করলাম না কারণ আমার ব্রেনের ‘তার-তুর’ প্যাচ খেয়ে গেছে। কোন পলাশ, কীসের পলাশ, কোথাকার পলাশ? ব্রেনের তার-তুরের উত্তাপ কমে এলে আমি জানতে চাইলাম, ‘ইয়ে, কি বিষয়?’
পলাশ হড়বড় করে বলে, ‘আপনি না বলছিলেন কাউকে পাইলে...। একজন রে পাইছি।‘
বিষয়টা এতক্ষণে আঁচ করতে পারছি। আমার মনে পড়ে রেলের নিরাপত্তাকর্মীদেরকে বলে এসেছিলাম বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দেওয়া হয়েছে এমন কারও খোঁজ পেলে বা এদের নিয়ে কোনও সমস্যা মনে করলে আমাকে যেন জানায়।
ওরে, ঝোঁকের মাথায় মানুষ কত কিছু বলে সব ধরে বসে থাকতে হবে কেন, বাপু! আহা, কথা শেষ হলে মাথাটা কচ্ছপের মত লেপের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলার যে সুখ তা পলাশকে কে বোঝাবে! আমি বলি, ‘হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। আমি পরে হাসপাতালে যোগাযোগ করব।'
পলাশ বলে, 'আমার তো ডিইটি শেষ। এরে কার কাছে রাইখা যাব। দেইখা মনে হইতাছে ভদ্রলোক।'
আমি বিস্ময় চেপে বলি, ‘কেমনে বুঝলেন ভদ্ররলোক?’
পলাশ বলে, ‘দুইটা মোবাইল পাওয়া গেছে এর সাথে আর টাকাও আছে।‘
আমি বিস্ময় গোপন করে বললাম, ‘আচ্ছা, একটু থাকেন। আমি আসছি।‘
যেতে যেতে আমি হাসি চাপছিলাম। দুইটা মোবাইল থাকাটা এখন তাহলে ভদ্রলোকের লক্ষণ! আচ্ছা, বেশ, যা হোক। তবে এটা খুবই উদ্বেগজনক যে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দিয়ে সঙ্গের সব কিছু হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা এখন খুব বেড়ে যাচ্ছে। মাত্র ক-দিন পূর্বেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছিল [১]।
মনে মনে যথেষ্ঠ কুন্ঠিতও হচ্ছিলাম। এই সব কী হচ্ছে? রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মী পলাশের ডিউটি শেষ, সে এই লোকটাকে না-দেখার ভান করে চলে গেলে কারও কিচ্ছু বলার ছিল না। বা এর সঙ্গে থাকা দুইটা মোবাইল, টাকা-পয়সা হাপিস করে দিলে কে এর খোঁজ রাখত। হাসপাতালের লোকজনদেরও দেখেছি, এখন এরা আমাকে খুব সহযোগীতাও করে। অথচ সেই আমারই কিনা পলায়নস্পৃহা! আমি ব্যাটাকে কষে চাবুক মারাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
যাই হোক, এরপর আর ভাবাভাবির সময় কোথায়। ‘মাহদি’ নামের এই মানুষটাকে নিয়ে শুরু হয় বিস্তর দৌড়-ঝাঁপ।
আমি বিকট ঝামেলায় পড়ে যাই কারণ এর দুইটা ফোনই পাসওয়ার্ড দেওয়া। ওখান থেকে কোনও নাম্বার উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। একটা সময় এসে ভাগ্য সহায়তা করে মাহদির বউ ফোন করেন। মাহদির বউকে তার অবস্থা জানাবার পর এই ভদ্রমহিল ফোনের ওপাশ থেকে হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করলেন। আমি দিশামিশা না-পেয়ে ফোনটা মাহদির কানে ধরে রাখি। মাহদি ঘোরের মধ্যে কীসব বিজবিজ করে বলতে থাকে। ভদ্রমহিলা খানিকটা আশ্বস্ত হন। এবং জানান মাহদির ভাই এখনই রওয়ানা হচ্ছেন।
একটা সময় মাহদির ভাই চলে এলে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি।
অবশেষে আজ মজিবর রহমান নামের মানুষটা তার ভাইকে নিয়ে ফিরে গেলেন। বাড়িতে ফিরে গিয়ে আমাকে ফোন করে জানাবার পর, আপাতত আমিও, আমি ব্যাটাকে চাবুক মারা থেকে বিরত রইলাম।
১. http://www.ali-mahmed.com/2015/01/blog-post_22.html
এখন আমি এটা বুঝতে পারি টেলিফোন কেন শক্ত জিনিস দিয়ে বানানো হয়। নইলে আমার মত লোকজনেরা এটা কচকচ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলত। ঘুম-ঘুম চোখে আমি যে বিকট আওয়াজ করলাম এটাকে হ্যালো বলা চলে আবার না-বললেও কারও কোনও দোষ ধরা চলে না।
ওপাশ থেকে জরুরি তাগাদা, ‘আমি পলাশ, আপনি যে বলছিলেন...।‘
আমি পুরোটা শোনার চেষ্টা করলাম না কারণ আমার ব্রেনের ‘তার-তুর’ প্যাচ খেয়ে গেছে। কোন পলাশ, কীসের পলাশ, কোথাকার পলাশ? ব্রেনের তার-তুরের উত্তাপ কমে এলে আমি জানতে চাইলাম, ‘ইয়ে, কি বিষয়?’
পলাশ হড়বড় করে বলে, ‘আপনি না বলছিলেন কাউকে পাইলে...। একজন রে পাইছি।‘
বিষয়টা এতক্ষণে আঁচ করতে পারছি। আমার মনে পড়ে রেলের নিরাপত্তাকর্মীদেরকে বলে এসেছিলাম বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দেওয়া হয়েছে এমন কারও খোঁজ পেলে বা এদের নিয়ে কোনও সমস্যা মনে করলে আমাকে যেন জানায়।
ওরে, ঝোঁকের মাথায় মানুষ কত কিছু বলে সব ধরে বসে থাকতে হবে কেন, বাপু! আহা, কথা শেষ হলে মাথাটা কচ্ছপের মত লেপের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলার যে সুখ তা পলাশকে কে বোঝাবে! আমি বলি, ‘হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। আমি পরে হাসপাতালে যোগাযোগ করব।'
পলাশ বলে, 'আমার তো ডিইটি শেষ। এরে কার কাছে রাইখা যাব। দেইখা মনে হইতাছে ভদ্রলোক।'
আমি বিস্ময় চেপে বলি, ‘কেমনে বুঝলেন ভদ্ররলোক?’
পলাশ বলে, ‘দুইটা মোবাইল পাওয়া গেছে এর সাথে আর টাকাও আছে।‘
আমি বিস্ময় গোপন করে বললাম, ‘আচ্ছা, একটু থাকেন। আমি আসছি।‘
যেতে যেতে আমি হাসি চাপছিলাম। দুইটা মোবাইল থাকাটা এখন তাহলে ভদ্রলোকের লক্ষণ! আচ্ছা, বেশ, যা হোক। তবে এটা খুবই উদ্বেগজনক যে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দিয়ে সঙ্গের সব কিছু হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা এখন খুব বেড়ে যাচ্ছে। মাত্র ক-দিন পূর্বেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছিল [১]।
মনে মনে যথেষ্ঠ কুন্ঠিতও হচ্ছিলাম। এই সব কী হচ্ছে? রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মী পলাশের ডিউটি শেষ, সে এই লোকটাকে না-দেখার ভান করে চলে গেলে কারও কিচ্ছু বলার ছিল না। বা এর সঙ্গে থাকা দুইটা মোবাইল, টাকা-পয়সা হাপিস করে দিলে কে এর খোঁজ রাখত। হাসপাতালের লোকজনদেরও দেখেছি, এখন এরা আমাকে খুব সহযোগীতাও করে। অথচ সেই আমারই কিনা পলায়নস্পৃহা! আমি ব্যাটাকে কষে চাবুক মারাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
যাই হোক, এরপর আর ভাবাভাবির সময় কোথায়। ‘মাহদি’ নামের এই মানুষটাকে নিয়ে শুরু হয় বিস্তর দৌড়-ঝাঁপ।
আমি বিকট ঝামেলায় পড়ে যাই কারণ এর দুইটা ফোনই পাসওয়ার্ড দেওয়া। ওখান থেকে কোনও নাম্বার উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। একটা সময় এসে ভাগ্য সহায়তা করে মাহদির বউ ফোন করেন। মাহদির বউকে তার অবস্থা জানাবার পর এই ভদ্রমহিল ফোনের ওপাশ থেকে হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করলেন। আমি দিশামিশা না-পেয়ে ফোনটা মাহদির কানে ধরে রাখি। মাহদি ঘোরের মধ্যে কীসব বিজবিজ করে বলতে থাকে। ভদ্রমহিলা খানিকটা আশ্বস্ত হন। এবং জানান মাহদির ভাই এখনই রওয়ানা হচ্ছেন।
একটা সময় মাহদির ভাই চলে এলে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি।
অবশেষে আজ মজিবর রহমান নামের মানুষটা তার ভাইকে নিয়ে ফিরে গেলেন। বাড়িতে ফিরে গিয়ে আমাকে ফোন করে জানাবার পর, আপাতত আমিও, আমি ব্যাটাকে চাবুক মারা থেকে বিরত রইলাম।
১. http://www.ali-mahmed.com/2015/01/blog-post_22.html
No comments:
Post a Comment