আজই ড. জাফর ইকবালের একটা লেখা পড়ছিলাম। দৈনিক পত্রিকায় লেখাটি তিনি লিখেছেন ‘এবারের বইমেলা’ শিরোনামে। অংশবিশেষ এখানে তুলে দিচ্ছি:
“...আমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে জিজ্ঞেস করি, ‘কী হলো? ৮টা বেজে যাচ্ছে এখনও কিছু ঘটল না’?
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘ঘটবে! নিশ্চয়ই ঘটবে’।
এবং সত্যি সত্যি ব্যাপারটি ঘটে, আশপাশে কোনো জায়গায় বিকট শব্দ করে ককটেল ফোটে। আমি মেলার শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী কিংবা মধ্যবয়স্ক মানুষের দিকে তাকাই এবং সবিস্ময়ে লক্ষ করি একটি মানুষেরও একটু ভুরু পর্যন্ত কুঞ্চিত হয় না। দেখে মনে হয় তারা সেই বিকট শব্দটি শুনতেই পায়নি। যে যার মতো মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কথা বলছে, বই দেখছে...।“
আমি এটা পড়ে কেবল স্তব্ধ হয়ে ভাবছিলাম, এই মানুষগুলো এমন কেন? এরা কোন ভুবনে বাস করে! নাকি এই মানুষগুলোর চোখে যে রঙিন চশমা ওটা চোখে দিলে সব কিছু অন্যরকম দেখায়? এরা কী সাদাকে কালো দেখেন, কালোকে সাদা?
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন এই দেশে তো এমন ‘অহেতুক ভাবুক’ লোকদের অভাব নেই তা কেবল জাফর ইকবাল কেন? না, অভাব আছে। রাজনীতিবিদ বা অন্য অনেকের কথাই তো আমরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উড়িয়ে দেই। সত্যটা হচ্ছে, ড. জাফর ইকবালকে কেউ পছন্দ করুক বা না করুক কিন্তু এই মানুষটা ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’র মত একজন মানুষ। আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের কাছে এই মানুষটার যাদুকরী ক্ষমতা অকল্পনীয়। কিন্তু ক্রমশ তিনি ওই প্রজন্মটাকে বাস্তবতাবিবর্জিত করে ফেলছেন, ভাবের জগতের ছানাপোনা- বাস্তবের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ খুবই কম।
আসলে এই দেশটা কী আদৌ কোনও বসবাস যোগ্য দেশ? তাহলে মৃত্যুপুরি কাকে বলে? আমাদের দেশকে কেউ ব্যর্থ রাষ্ট্র বললে আমাদের গা জ্বালা করে ,বেশ কিন্তু তাহলে ব্যর্থরাষ্ট্রের সংজ্ঞা কী? আর কতটা ভয়াবহ হলে একটা দেশকে ব্যর্থরাষ্ট্র বলা যাবে? প্রায় দু-মাস হয়ে গেল সব অচল- হরতাল অবরোধের নামে দেশের চাকা থেমে আছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ লক্ষ হাজার কোটি টাকা কি ছুঁয়েছে? দেখো কান্ড, এই ফাঁকে আমরা এক দলের মানুষ অন্য দলের সঙ্গে এই বাকোয়াজে লিপ্ত পূর্বের সময়ে হরতালের পরিমাণ আরও বেশি ছিল, ব্লা-ব্লা-ব্লা।
শতের উপর মানুষ আগুনে পুড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এখনও যারা বেঁচে আছে তাদের চেয়ে যারা মরে গেছে তাঁরাই বেঁচে গেছে। আমরা যন্ত্রমানুষ এই বলে কথার খই ফোটাচ্ছি, এ আর কী, একটা লঞ্চ ডুবে গেলে তো এরচেয়েও বেশি মানুষ মারা যায়। আইনের কথা বলে সাদাপোশাকের লোকজন মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বা কথা নেই বার্তা নেই একজন জলজ্যান্ত মানুষ গুমের নামে নাই হয়ে গেল। রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান পুলিশবাহিনী ক্রসফায়ারের নামে মেরে ফেলছে একের-পর-এক মানুষকে। ওই মানুষটাকে নাশকতাকারী বা শিবিরের ট্যাগ দিয়ে দিলে আর কোনও প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে না এদেরকে। কেবল একটা উদাহরণ দেই।
২৪ ফেব্রুয়ারি পত্রিকা থেকে আমরা জানতে পারছি। রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া এবং টেকনিক্যাল মোড় থেকে ৪ জন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ি এরা ৪জনই অতি বদ-নাশকতাকারী। এদের মধ্যে ১জন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে আর বাকী ৩জন নাশকতার সময় জনগণের হাতে গণপিটুনিতে। অথচ এই ৩জনের শরীরে মোট ৫৫টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। জনগণ গণপিটুনি দিলে এদের ৩ জনের শরীরের এতোগুলো বুলেট আসলো কেমন করে এই প্রশ্ন করা হলে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান বলেন, ‘জনতার মধ্যে কারও কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে, তারা গুলি চালাতে পারে...’।
হুম, উন্নত অনেক দেশে অগা-মগাও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পায় কিন্তু ওইসব দেশের লোকজনও কাউকে মারতে এতো গুলি খরচ করে কিনা সন্দেহ। ছায়াছবিতেও কারও শরীরে এতোগুলো গুলি কেউ করে কিনা অন্তত আমার জানা নেই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে গুলি প্র্যাকটিস করার জন্য বিভিন্ন মহড়া হয়। আহা, সেইসব তো ভার্চুয়াল মহড়া এখন মহড়া হয় বাস্তবে।
টকশোত এক চুতিয়া বুদ্ধিজীবীর কথা শুনছিলাম। চুতিয়াটা বলছে, 'পুলিশ যাদেরকে মারছে তাদের মধ্যে একজনও ভাল মানুষ আছে এমনটা কি শুনেছেন...'?
লুঙ্গি নিয়ে হাইকোর্টে রুল হয়েছিল কিন্তু এই অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও রুল জারি করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
বইমেলাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতির মধ্যেই লেখক অভিজিৎ রায়কে প্রকাশ্যে যে প্রকারে কুপিয়ে হত্য করা হলো তা যেন আমাদেরকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হলো কেবল ‘বেডরুম পাহারা’ (মন্ত্রীবচন) না আমরা কোথাও পাহারা দিতে পারব না। সাগর-রুনির মত অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুরও কোনও কূলকিনারা না-হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আমরা যারা মাথা বাঁচাতে পারব না তাদের উপায় কী- আমরা কোথায় পালাব? এই দেশ ছেড়ে আমাদের আসলে পালাবার কোনও উপায় নেই। আহ, ড. জাফর ইকবালের মত একটা রঙিন চশমার বড়ো প্রয়োজন। যে চশমাটা চোখে দিলেই দিব্যি সব কিছুই ঝাঁ চকচকে, মোহনীয় রঙিন...।
“...আমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে জিজ্ঞেস করি, ‘কী হলো? ৮টা বেজে যাচ্ছে এখনও কিছু ঘটল না’?
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘ঘটবে! নিশ্চয়ই ঘটবে’।
এবং সত্যি সত্যি ব্যাপারটি ঘটে, আশপাশে কোনো জায়গায় বিকট শব্দ করে ককটেল ফোটে। আমি মেলার শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী কিংবা মধ্যবয়স্ক মানুষের দিকে তাকাই এবং সবিস্ময়ে লক্ষ করি একটি মানুষেরও একটু ভুরু পর্যন্ত কুঞ্চিত হয় না। দেখে মনে হয় তারা সেই বিকট শব্দটি শুনতেই পায়নি। যে যার মতো মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কথা বলছে, বই দেখছে...।“
আমি এটা পড়ে কেবল স্তব্ধ হয়ে ভাবছিলাম, এই মানুষগুলো এমন কেন? এরা কোন ভুবনে বাস করে! নাকি এই মানুষগুলোর চোখে যে রঙিন চশমা ওটা চোখে দিলে সব কিছু অন্যরকম দেখায়? এরা কী সাদাকে কালো দেখেন, কালোকে সাদা?
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন এই দেশে তো এমন ‘অহেতুক ভাবুক’ লোকদের অভাব নেই তা কেবল জাফর ইকবাল কেন? না, অভাব আছে। রাজনীতিবিদ বা অন্য অনেকের কথাই তো আমরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উড়িয়ে দেই। সত্যটা হচ্ছে, ড. জাফর ইকবালকে কেউ পছন্দ করুক বা না করুক কিন্তু এই মানুষটা ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’র মত একজন মানুষ। আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের কাছে এই মানুষটার যাদুকরী ক্ষমতা অকল্পনীয়। কিন্তু ক্রমশ তিনি ওই প্রজন্মটাকে বাস্তবতাবিবর্জিত করে ফেলছেন, ভাবের জগতের ছানাপোনা- বাস্তবের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ খুবই কম।
আসলে এই দেশটা কী আদৌ কোনও বসবাস যোগ্য দেশ? তাহলে মৃত্যুপুরি কাকে বলে? আমাদের দেশকে কেউ ব্যর্থ রাষ্ট্র বললে আমাদের গা জ্বালা করে ,বেশ কিন্তু তাহলে ব্যর্থরাষ্ট্রের সংজ্ঞা কী? আর কতটা ভয়াবহ হলে একটা দেশকে ব্যর্থরাষ্ট্র বলা যাবে? প্রায় দু-মাস হয়ে গেল সব অচল- হরতাল অবরোধের নামে দেশের চাকা থেমে আছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ লক্ষ হাজার কোটি টাকা কি ছুঁয়েছে? দেখো কান্ড, এই ফাঁকে আমরা এক দলের মানুষ অন্য দলের সঙ্গে এই বাকোয়াজে লিপ্ত পূর্বের সময়ে হরতালের পরিমাণ আরও বেশি ছিল, ব্লা-ব্লা-ব্লা।
শতের উপর মানুষ আগুনে পুড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এখনও যারা বেঁচে আছে তাদের চেয়ে যারা মরে গেছে তাঁরাই বেঁচে গেছে। আমরা যন্ত্রমানুষ এই বলে কথার খই ফোটাচ্ছি, এ আর কী, একটা লঞ্চ ডুবে গেলে তো এরচেয়েও বেশি মানুষ মারা যায়। আইনের কথা বলে সাদাপোশাকের লোকজন মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বা কথা নেই বার্তা নেই একজন জলজ্যান্ত মানুষ গুমের নামে নাই হয়ে গেল। রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান পুলিশবাহিনী ক্রসফায়ারের নামে মেরে ফেলছে একের-পর-এক মানুষকে। ওই মানুষটাকে নাশকতাকারী বা শিবিরের ট্যাগ দিয়ে দিলে আর কোনও প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে না এদেরকে। কেবল একটা উদাহরণ দেই।
২৪ ফেব্রুয়ারি পত্রিকা থেকে আমরা জানতে পারছি। রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া এবং টেকনিক্যাল মোড় থেকে ৪ জন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ি এরা ৪জনই অতি বদ-নাশকতাকারী। এদের মধ্যে ১জন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে আর বাকী ৩জন নাশকতার সময় জনগণের হাতে গণপিটুনিতে। অথচ এই ৩জনের শরীরে মোট ৫৫টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। জনগণ গণপিটুনি দিলে এদের ৩ জনের শরীরের এতোগুলো বুলেট আসলো কেমন করে এই প্রশ্ন করা হলে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান বলেন, ‘জনতার মধ্যে কারও কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে, তারা গুলি চালাতে পারে...’।
হুম, উন্নত অনেক দেশে অগা-মগাও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পায় কিন্তু ওইসব দেশের লোকজনও কাউকে মারতে এতো গুলি খরচ করে কিনা সন্দেহ। ছায়াছবিতেও কারও শরীরে এতোগুলো গুলি কেউ করে কিনা অন্তত আমার জানা নেই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে গুলি প্র্যাকটিস করার জন্য বিভিন্ন মহড়া হয়। আহা, সেইসব তো ভার্চুয়াল মহড়া এখন মহড়া হয় বাস্তবে।
টকশোত এক চুতিয়া বুদ্ধিজীবীর কথা শুনছিলাম। চুতিয়াটা বলছে, 'পুলিশ যাদেরকে মারছে তাদের মধ্যে একজনও ভাল মানুষ আছে এমনটা কি শুনেছেন...'?
লুঙ্গি নিয়ে হাইকোর্টে রুল হয়েছিল কিন্তু এই অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও রুল জারি করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
বইমেলাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতির মধ্যেই লেখক অভিজিৎ রায়কে প্রকাশ্যে যে প্রকারে কুপিয়ে হত্য করা হলো তা যেন আমাদেরকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হলো কেবল ‘বেডরুম পাহারা’ (মন্ত্রীবচন) না আমরা কোথাও পাহারা দিতে পারব না। সাগর-রুনির মত অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুরও কোনও কূলকিনারা না-হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আমরা যারা মাথা বাঁচাতে পারব না তাদের উপায় কী- আমরা কোথায় পালাব? এই দেশ ছেড়ে আমাদের আসলে পালাবার কোনও উপায় নেই। আহ, ড. জাফর ইকবালের মত একটা রঙিন চশমার বড়ো প্রয়োজন। যে চশমাটা চোখে দিলেই দিব্যি সব কিছুই ঝাঁ চকচকে, মোহনীয় রঙিন...।
No comments:
Post a Comment