Search

Thursday, March 5, 2015

মহামতি মোস্তফা জব্বার যদি ভাষা-সৈনিক হইতেন।

...যদি হইতেন, মোস্তফা জব্বার যদি ভাষা-সৈনিক হইতেন? এই একটি বাক্য লিখিতে হৃদকম্প আসিয়া উপস্থিত হয়। ভাষা-সৈনিকের হালনাগাদ তালিকাটা হাতের নাগালে নাই বিধায় সংশয়টুকু প্রকাশ না-করিয়া পারিলাম না!
যদি...? যদি বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করিতে গিয়া আমাদের জব্বার মহোদয় একটি লাঠির গুঁতাও খাইতেন তাহা হইলে সেই লাঠিখানা তিনি 'বক্কিলা'-র ন্যায় সুইসভল্টে সংরক্ষণ করিয়া রাখিতেন। অতঃপর আমাদের শরীর হইতে নিংড়ানো তৈল সংগ্রহ করিয়া সেই তৈল লাঠিখানায় নিয়ম করিয়া মাখাইতেন। 
 
বা যদি! ভাষার জন্য জব্বার মহামতির শরীর হইতে এক ফোঁটা রক্তও ঝরিত তাহা হইলে সেই এক ফোঁটা রক্তের সহিত সাগরের সমস্ত জল মিশাইয়া আমাদের মানে বঙ্গালদের নিকট গ্যালন-গ্যালন সেই রক্তপানি বেচিয়া কুটি-কুটি ট্যাকাটুকা কামাইয়া শীর্ষ ধনী হইতেন। দূর-দূর, ব্যাটা স্টিভ-গেটস কোন ছার! আর আপেলওয়ালা স্টিভ ফিরিঙ্গিটা? ফিরিঙ্গি বলিয়াই আপেল পাইয়াছে তাও 'এঁটো আপেল' নইলে পচা টমেটোও পাইত না।

ভাবুন দিকি কিঞ্চিৎ চোখ মুদিয়া, এই পোড়া দেশে মহামানব জব্বার না-জন্মাইলে...? নইলে যে দেশের কী সবর্নাশটাই না হইত। ধরুন, মা শব্দটা...কষ্ট হইলে পুরুষমানুষ ইচ্ছা করিলেই পা ছড়াইয়া বসিয়া কাঁদিতে পারে না। টাট্টিখানায় ট্যাপ ছাড়িয়া হাউমাউ করিয়া কাঁদিয়া-কাটিয়া মা-মা বলিয়া বুক ভাসাইতে গিয়াও বিকট বিপর্যয়ের মুখে পড়িত। জব্বার স্যার বিস্তর আঁক কষিয়া দেশের নামে ‘মা’ শব্দটা জন্য ট্যাকসো বসাইতেন। ট্যাঁক খুলিয়া জব্বার মহাশয়কে বিস্তর ট্যাকসো-টংকা দিতে হইত। সেই ট্যাকসো-টংকা পরিশোধ করিতে করিতে কখন 'ম্যাংগো-পাবলিক' ওরফে আমজনতার ধুতি-প্যাটলুন খসিয়া পড়িত তাহার হিসাব কে রাখিবে!

ইতোপূর্বে মহাত্মন জব্বার  অভ্রর সহিত খিটিমিটি করিয়া  বিস্তর সুনাম(!) কামাইয়া ছিলেন। ওইখানে ওই লেখাটায় বেকুবের ন্যায় লিখিয়াছিলাম [১]:
...মোস্তফা জব্বার, আপনি কি জানেন না, পানির স্রোতকে যেমন আটকে রাখা যায় না তেমনি স্বপ্নকেও। ভাষা উম্মুক্ত হবেই, পারলে আপনি আটকান।...”
হালে ‘রিদ্মিক’ লইয়া মহান আত্মা আবারও ক্ষেপিয়া গিয়াছেন। ক্ষেপিবেন না কেন রে, বাপু? আজকালকার ইঁচড়েপাকারা কি করিয়া বুঝিবে তাহার মধুমেহ রোগের একেকটা বটিকার কী অট্টালিকাছোঁয়া মূল্য! তিনি সরকার বাহাদুরের নিকট মাত্র পাঁচ কোটি মুদ্রা চাহিয়া কী অন্যায়টা করিয়াছেন তাহা বোধগম্য হয় না।

অথচ দুষ্টরা তাহাকে লইয়া ইউটিউবে সিনেমা ছাড়িয়া দিয়াছে [২]! তাহাদের দাবী বিজয় সফটওয়্যারের মূল কারিগর নাকি মুনিরুল আবেদিন পাপান্না রাম-রাম, একি অনাচার- আমরা 'তেব্র প্রতিবাদ' জানাই! বাস এবং হাওয়াই জাহাজের (ফিরিঙ্গিদের এরোপ্লেন) শপথ, আমাদের 'সপটতার বিজ্ঞানী' গেইটলক বাসে ঝুলিতে-ঝুলিতে হাওয়াই জাহাজের জানালা খুলিয়া কাচাপাকা কেশ মেঘে ভাসাইতে-ভাসাইতে কুলকুন্ডলিনী ভঙ্গিতে কাহারো সহায়তা ব্যতিরকেই দ্য গ্রেট জব্বার 'বিজয়' প্রসব করিয়াছেন, অথচ...!
 
অথচ দেকো দিকি কান্ড, 'বিজয়' এবাউটের ফাঁক গলিয়া ইস্টার এগ টাইপের ন্যায় মুনিরুল আবেদিন পাপান্নার একটা ফটো লাগাইয়া দিলেই বুঝি হয়? ছ্যা, এরূপ একখানা না চারখানা ফটো কোনও ফটোগ্রাফারের নিকট গেলে ত্রিশ টাকা পারিশ্রমিকে যে কাহাকেও হস্তগত করাইয়া দিবে। কিংবা ইহা যে ফটোশপের কাজকারবার নহে তাহাই বা কে বলিবে?
 
আরও শোনো কথা, দুর্মুখেরা রটাইল তিনি নাকি বিজয়ের মূল কারিগর মুনিরুল আবেদিন পাপান্নার ঘামের মূল্য পরিশোধ করেন নাই। এ্যাহ, এইটা কী একটা 'বিজয় কি-বোর্ডে'র আবদার! বলিলেই হইল, ঘামের মূল্য কী হে আবার! তিনি যে অন্যের ঘাম ঝরাইয়া শরীরের মস্তো উপকার করাইয়াছেন ইহা বুঝি কাহারও চোখে আটকায় না। মরণ!

এই ‘বঙ্গাল’ জাতিটাই নচ্ছার। আপসোস, ইহারা তাহার ন্যায় রতন চিনিল না। দেশের জন্য উৎসর্গিত তাহার অমেয় জ্ঞান, প্রেমভক্তিতে ইহারা অমেধ্যের যোগ ঘটায়। হা 'বিজয় কি-বোর্ড', এই মনস্তাপে আর প্রাণ রাখিতে ইচ্ছা জাগে না!

সহায়ক সূত্র:
১. আমাদের এই বিজয় মিছিলের পুরোধা, অভ্র: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_29.html
২. ইউটিউব: মোস্তফা জব্বারের প্রতারণা: https://www.youtube.com/watch?v=UrMVnOotPO8
 
 
...
আপডেট ২৬.০৫.২০২৪
স্যার জব্বার এখন সোশ্যাল মিডিয়া এফবিতে আছেন। স্যারের স্ট্যাটাস ওরফে লেখাগুলো দেখলে মনে হয় স্যারের চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক-ভাষাবিদ, বাংলা ভাষার প্রতি অগাধ মমতা এই দেশে আর কারও নাই। হাজার বছরেও তার মত এমন কেউ আসবে এমনটা অন্তত আমি বিশ্বাস করি না! নমুনা:
ভাবা যায়, স্যার মোস্তফা জব্বার কী পরিমাণ বাংলা ভাষার প্রতি নিবেদিত প্রাণ! তিনি বাংলা ব্যতীত অন্য কোন নাম বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেন না। স্বয়ং জাকারবার্গ হলেও কুছ পারোয়া নেহি! হতভাগা জাকার, রে পাজি নচ্ছার, চাইনিজ মেয়ে বিবাহ না-করে বাংলা মেয়ে বিবাহ করলে না কেন! তাহলে তো ছারের নেক নজরে থাকতে পারতে হে।
জব্বার ছার ক্ষণে-ক্ষণে বিভিন্ন জনকে বন্ধু তালিকা থেকে বহিষ্কার করার হুমকিও প্রদান করে থাকেন। এবং বিভিন্ন প্রকারে অন্য ভাষাকে বিশেষ করে এংরাজিকে বাংলা করার চেষ্টাও অব্যহত রাখেন। সাধু-সাধু! আমি নিশ্চিত, স্যারের চোখ এড়িয়ে গেছে নইলে এতদিনে সফটওয়্যারের বাংলা 'নরোমতার' করে ফেলতেন। সেই তার দিয়ে ইয়ে বাঁধা সহজ হতো। বিজয় জব্বারের বাবা বলে কথা!
 এদিকে এ আরেক কান্ড!


ওয়াল্লা, বিজয় জব্বারের মা ওরফে স্যারের ইস্তারি সাহেবা বকুল মোস্তাফা আমাদের জব্বার স্যারকে পাশে বসিয়ে যে কেক কাটলেন সেটা আবার বাংলা ভাষায় না, অন্য ভাষায় লেখা, এংরাজি! এটা দেখে সঙ্গে-সঙ্গে আমার এক চোখে জল এক চোখে পানি চলে এলো! এদিকে আবার ভয়ে-ভয়েও আছি জব্বার স্যার না-আবার বহিষ্কার করে দেন, ইয়েকে, ইয়ে তালিকা থেকে...!
 
* ঋণ: এই স্ক্রিণশট জনাব, মোস্তাফা জব্বারের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া। তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

No comments: