রগরগে একটা কল্পকাহিনী যেটায় একজন মানুষ অদৃশ্য হয়ে যেত- বিচিত্র কারণে যাকে কেউ আর দেখতে পায় না। কে জানত, সেই কল্পকাহিনী বাস্তবে রূপ নেবে তাও আমাদের মত অনুন্নত একটা দেশে!
হুটহাট করে এই দেশ থেকে লোকজনেরা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ইলিয়াস আলী অদৃশ্য হয়ে গেছেন। দিন-মাস-বছর গড়ায় এই মানুষটার আর কোনও হদিস মেলে না। আমার কল্পনাশক্তি দুর্বল নইলে হয়তো বলতে পারতাম ভিনগ্রহের কেউ তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। মাহমুদুর রহমান মান্নাও ১৯ ঘন্টা অদৃশ্য ছিলেন। হয়তো অদৃশ্য হওয়ার কৌশল ভাল রপ্ত করতে পারেননি তাই ১৯ ঘন্টা পর তাঁকে দৃশ্যমান হতে হলো।
এই তালিকা অনেক লম্বা। হালে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি নাম, সালাহউদ্দিন আহমেদ। অবশ্য তাঁর পরিবার-পরিজনের অভিযোগ ডিবির লোকজনেরা তাঁকে রাতের আধারে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু চার দিন পরও কোনও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সালাহউদ্দিনকে আটক করেছে এমনটা স্বীকার করেনি। বেশ, কিন্তু সালাহউদ্দিন এখন কোথায় আছেন এটা নিশ্চিত করার দায়িত্বটাও এদের উপরই বর্তায়।
অবশ্য মাহমুদুর রহমান মান্নার বেলায়ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ১৯ ঘন্টা পর্যন্ত জানত না যে তিনি কোথায় কিন্তু ১৯ ঘন্টা পর ঠিকই তাকে আটকের কথা স্বীকার করা হয়েছিল। এ সত্য, রাষ্ট চাইলে যে কাউকে আটক করতে পারে আইনের আওতায় থেকে। ন্যায়-অন্যায় সে ভিন্ন প্রসঙ্গ সেটা রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা কিন্তু রাষ্ট্র যেটা কখনও করতে পারে না সেটা হচ্ছে তার কোনও নাগরিক অদৃশ্য হয়ে গেলে তার হদিস দিতে ব্যর্থ হওয়া।
একজন মানুষ ভাল-মন্দ সেটাও আলোচনার ভিন্ন ক্ষেত্র। একজন মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেছেন এটা তাঁর পরিবার-পরিজন-স্বজনের জন্য যে কতটা কষ্টের-উদ্বেগের-ভয়ংকর অভিজ্ঞতার তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারেন। এবং এই সময়টা যে কত দুঃসহ তা অন্যরা কেবল খানিকটা অনুমানই করতে পারবেন। সালাউদ্দিনের পরিবার-পরিজন-স্বজনের চেয়ে অসহায় এই মুহূর্তে আর কে হতে পারে? অথচ এই সালাহউদ্দিনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান কর্ণধার শেখ হাসিনা মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে:
”...কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে ৮ বস্তা ময়লা-আবর্জনা বের করা হয়েছে। সবাই জানে, সালাউদ্দিন ওখান থেকেই বিবৃতি দিয়েছেন। আট বস্তা ময়লার সঙ্গে তাকেও কোথাও পাচার করে দিয়েছে কি না, সে জবাব খালেদা জিয়া দিতে পারবেন...। ” (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৫ মার্চ, ২০১৫)
একজন মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাটা অতি অমানবিক, নিষ্ঠুর একটা আচরণ। রাষ্ট্রের প্রধান কর্ণধার যখন এমন বক্তব্য রাখেন তখন একটি রাষ্ট্রের কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ে, সেই সঙ্গে দুলতে থাকে গোটা রাষ্ট্রটাই, ১৬ কোটি মানুষসহ! মাসের-পর-মাস অবরোধ-হরতালের নামে দেশ অচল। চড়চড় করে পুড়ে যাচ্ছে আমাদের চামড়া, আমাদের অতি আস্থার জায়গা আদালতের এজলাস। আমরা উদাসীন চোখে দেখছি। বার্ন-ইউনিট এখন আমাদের শুটিং করার চমৎকার জায়গা।
যে আমরা খানিকক্ষণ ট্রেনের বিলম্ব হলে অসহিষ্ণু হয়ে পড়তাম এখন সকালের ট্রেন রাতে গেলেও নির্বিকার। একের-পর-এক মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এসবই এখন আমাদের গা সওয়া- চলমান একেকজন যন্ত্রমানব। এই দেশে ক্রমশ বাড়ছে যন্ত্রমানবের সংখ্যা।
প্লেটো এমন এক রাষ্ট্রের কাঠামো তুলে ধরেছিলেন..., “... আমাদের ছেলেদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে ...তাদের জীবনে এমন কোনও গল্প থাকবে না যেখানে ভালো মানুষেরা কাঁদে ও হাহাকার করে, এমনকি তাদের বন্ধুদের মৃতুতেও।
...’লিদিয়া’ ও ‘আয়োনিয়ার’ সুরগুলো নিষিদ্ধ করা হবে কারণ লিদিয়ার সুর দুঃখের এবং আয়োনিয়ার সুর প্রশান্তির। কেবল থাকবে ‘ডরিয়ান’ এবং ‘ফ্রিজিয়ান’ সুর যেগুলো সাহসিকতা এবং মিতাচারের সুর।
...বিকলাঙ্গ শিশু বা নিম্নমানের পিতামাতার সন্তানদের সরিয়ে নেওয়া হবে একটি রহস্যময় অজানা স্থানে...।“
এই রহস্যময় স্থান বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না-গেলেও এটা বোঝার জন্য প্লেটো হতে হয় না যে বিকলাঙ্গ শিশু বা নিম্নমানের পিতামাতার সন্তানরা স্রেফ অদৃশ্য হয়ে যাবে। সব নমুনা দেখে মনে হচ্ছে প্লেটোর সেই রাষ্ট্রে থাকবে কেবল যন্ত্রমানব!
প্লেটো আজ বেঁচে থাকলে বড়ই আনন্দিত হতেন এটা দেখে যে বাংলাদেশের মত অনুন্নত একটা রাষ্ট্র কেমন করে তাঁর স্বপ্নের রাষ্ট্র হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রের সব অদ্ভুতুড়ে কর্মকান্ড, রাষ্ট্রের নাগরিকের অদৃশ্য হওয়ার মিছিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যন্ত্রমানবের সংখ্যা। কালে কালে এই রাষ্ট্রে থাকবে কেবল যন্ত্রমানব অন্যরা স্রেফ অদৃশ্য হয়ে যাবে।
হুটহাট করে এই দেশ থেকে লোকজনেরা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ইলিয়াস আলী অদৃশ্য হয়ে গেছেন। দিন-মাস-বছর গড়ায় এই মানুষটার আর কোনও হদিস মেলে না। আমার কল্পনাশক্তি দুর্বল নইলে হয়তো বলতে পারতাম ভিনগ্রহের কেউ তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। মাহমুদুর রহমান মান্নাও ১৯ ঘন্টা অদৃশ্য ছিলেন। হয়তো অদৃশ্য হওয়ার কৌশল ভাল রপ্ত করতে পারেননি তাই ১৯ ঘন্টা পর তাঁকে দৃশ্যমান হতে হলো।
এই তালিকা অনেক লম্বা। হালে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি নাম, সালাহউদ্দিন আহমেদ। অবশ্য তাঁর পরিবার-পরিজনের অভিযোগ ডিবির লোকজনেরা তাঁকে রাতের আধারে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু চার দিন পরও কোনও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সালাহউদ্দিনকে আটক করেছে এমনটা স্বীকার করেনি। বেশ, কিন্তু সালাহউদ্দিন এখন কোথায় আছেন এটা নিশ্চিত করার দায়িত্বটাও এদের উপরই বর্তায়।
অবশ্য মাহমুদুর রহমান মান্নার বেলায়ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ১৯ ঘন্টা পর্যন্ত জানত না যে তিনি কোথায় কিন্তু ১৯ ঘন্টা পর ঠিকই তাকে আটকের কথা স্বীকার করা হয়েছিল। এ সত্য, রাষ্ট চাইলে যে কাউকে আটক করতে পারে আইনের আওতায় থেকে। ন্যায়-অন্যায় সে ভিন্ন প্রসঙ্গ সেটা রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা কিন্তু রাষ্ট্র যেটা কখনও করতে পারে না সেটা হচ্ছে তার কোনও নাগরিক অদৃশ্য হয়ে গেলে তার হদিস দিতে ব্যর্থ হওয়া।
একজন মানুষ ভাল-মন্দ সেটাও আলোচনার ভিন্ন ক্ষেত্র। একজন মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেছেন এটা তাঁর পরিবার-পরিজন-স্বজনের জন্য যে কতটা কষ্টের-উদ্বেগের-ভয়ংকর অভিজ্ঞতার তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারেন। এবং এই সময়টা যে কত দুঃসহ তা অন্যরা কেবল খানিকটা অনুমানই করতে পারবেন। সালাউদ্দিনের পরিবার-পরিজন-স্বজনের চেয়ে অসহায় এই মুহূর্তে আর কে হতে পারে? অথচ এই সালাহউদ্দিনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান কর্ণধার শেখ হাসিনা মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে:
”...কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে ৮ বস্তা ময়লা-আবর্জনা বের করা হয়েছে। সবাই জানে, সালাউদ্দিন ওখান থেকেই বিবৃতি দিয়েছেন। আট বস্তা ময়লার সঙ্গে তাকেও কোথাও পাচার করে দিয়েছে কি না, সে জবাব খালেদা জিয়া দিতে পারবেন...। ” (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৫ মার্চ, ২০১৫)
একজন মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাটা অতি অমানবিক, নিষ্ঠুর একটা আচরণ। রাষ্ট্রের প্রধান কর্ণধার যখন এমন বক্তব্য রাখেন তখন একটি রাষ্ট্রের কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ে, সেই সঙ্গে দুলতে থাকে গোটা রাষ্ট্রটাই, ১৬ কোটি মানুষসহ! মাসের-পর-মাস অবরোধ-হরতালের নামে দেশ অচল। চড়চড় করে পুড়ে যাচ্ছে আমাদের চামড়া, আমাদের অতি আস্থার জায়গা আদালতের এজলাস। আমরা উদাসীন চোখে দেখছি। বার্ন-ইউনিট এখন আমাদের শুটিং করার চমৎকার জায়গা।
যে আমরা খানিকক্ষণ ট্রেনের বিলম্ব হলে অসহিষ্ণু হয়ে পড়তাম এখন সকালের ট্রেন রাতে গেলেও নির্বিকার। একের-পর-এক মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এসবই এখন আমাদের গা সওয়া- চলমান একেকজন যন্ত্রমানব। এই দেশে ক্রমশ বাড়ছে যন্ত্রমানবের সংখ্যা।
প্লেটো এমন এক রাষ্ট্রের কাঠামো তুলে ধরেছিলেন..., “... আমাদের ছেলেদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে ...তাদের জীবনে এমন কোনও গল্প থাকবে না যেখানে ভালো মানুষেরা কাঁদে ও হাহাকার করে, এমনকি তাদের বন্ধুদের মৃতুতেও।
...’লিদিয়া’ ও ‘আয়োনিয়ার’ সুরগুলো নিষিদ্ধ করা হবে কারণ লিদিয়ার সুর দুঃখের এবং আয়োনিয়ার সুর প্রশান্তির। কেবল থাকবে ‘ডরিয়ান’ এবং ‘ফ্রিজিয়ান’ সুর যেগুলো সাহসিকতা এবং মিতাচারের সুর।
...বিকলাঙ্গ শিশু বা নিম্নমানের পিতামাতার সন্তানদের সরিয়ে নেওয়া হবে একটি রহস্যময় অজানা স্থানে...।“
এই রহস্যময় স্থান বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না-গেলেও এটা বোঝার জন্য প্লেটো হতে হয় না যে বিকলাঙ্গ শিশু বা নিম্নমানের পিতামাতার সন্তানরা স্রেফ অদৃশ্য হয়ে যাবে। সব নমুনা দেখে মনে হচ্ছে প্লেটোর সেই রাষ্ট্রে থাকবে কেবল যন্ত্রমানব!
প্লেটো আজ বেঁচে থাকলে বড়ই আনন্দিত হতেন এটা দেখে যে বাংলাদেশের মত অনুন্নত একটা রাষ্ট্র কেমন করে তাঁর স্বপ্নের রাষ্ট্র হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রের সব অদ্ভুতুড়ে কর্মকান্ড, রাষ্ট্রের নাগরিকের অদৃশ্য হওয়ার মিছিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যন্ত্রমানবের সংখ্যা। কালে কালে এই রাষ্ট্রে থাকবে কেবল যন্ত্রমানব অন্যরা স্রেফ অদৃশ্য হয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment