(এই ছবিটির সূত্র খুঁজে পাইনি। কারও জানা থাকলে, লিংক দিয়ে জানালে আগাম কৃতজ্ঞতা।)
অভিজিৎ রায়কে কোপানোর পর যেসব ছবি দেখেছি ওগুলোয় কেমন যেন একটা ফাঁক-ফাঁক মনে হচ্ছিল কি যেন থাকার কথা অথচ নেই। এই ছবিটায় সেই অভাব পূরণ হয়েছে। পুলিশকে দেখা যাচ্ছে। অতি ঘৃণার সঙ্গে বলতে হচ্ছে তখনই অভিজিতের খুনিকে আটকাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা দূরের কথা তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টাও পুলিশ করেনি! এখানে কেবল দায়িত্ব না মানবতাও মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছে! কেবল তাই না অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালেও পুলিশ নিয়ে যায়নি। জনসাধারণের মধ্যে থেকে একজন নিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি পুলিশ এই কাজে তাদের গাড়িও ব্যবহার করেনি, স্কুটারে করে অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী বন্যাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ এমন আহত অবস্থায় একজন মানুষের জন্য প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।
আমি জানি না এমন চাপাতি কোপানো মুমূর্ষু একজন মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের প্রতি কোনও প্রকারের ‘উপরের নির্দেশের’ নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? আমাদের দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আসলেই তাদের কাজ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল কিনা এটাও একটা প্রশ্ন। এদের অধিকাংশকেই এমনসব কাজে ব্যস্ত রাখা হয় যেটা আদৌ এদের কাজ না। এর উপর আছে ‘উপরের নির্দেশ’। এই উপরের নির্দেশ জিনিসটা কী এটা উপরওয়ালা ব্যতীত অন্য কেউ বলতে পারবে এমনটা ভরসা করি না।
অভিজিৎ রায়ের উপর গুরুতর হামলাটা এই দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ভাবনার বিষয় কারণ কেবল অতি সুরক্ষিত (এটার আবার গালভরা একটা নাম আছে- তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দিনদুপুরেই না শত-শত মানুষের সামনেই ঘটেছে এই ঘটনাটা। এ অবিশ্বাস্য, এ অভূতপূর্ব!
ড. হুমায়ূন আজাদের বেলায় স্থান এক হলেও খানিকটা নিরিবিলি, আড়াল ছিল। অভিজিতের উপর এই হামলার পেছনে যারা আছে তাদের দূরদর্শিতার তারিফ না-করে উপায় নেই। এরা ঠিক-ঠিক জানে এই দেশের পালস। এরা এটা বিলক্ষণ জানে এই দেশের পুলিশ নীল ল্যাস্পপোস্টের মত দাঁড়িয়ে থাকবে। কিছু নপুংসক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবে। কেবল অভিজিৎকে উদ্ধারকারী ওই মানুষটাই ‘আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ’ এই সহজ চিত্রটা খানিকটা ভন্ডুল করে দিয়েছেন। পুলিশ যে জীবন আহমেদকে খুনি বানিয়ে দেয়নি এটা জীবন আহমেদের অপার সৌভাগ্য।
এই দেশ এরপরও বসবাসের যোগ্য এমনটা কেবল এই দেশের ‘চামচ-শ্রেণীর’ লোক ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে দাবী করা সম্ভব না। এই ঘটনা আরও ভয়াবহ, ছোট্ট উদাহরণ:
ঘটনার সময় বইমেলার গেটে দায়িত্ব পালনকারী নীলক্ষেত ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওয়াহিদুজ্জামান মিডিয়াকে জানান, তাকে নাকি এখনও (১২ মার্চ ২০১৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেউ ডাকেইনি!
আহা, ডাকবে কেন? জবাবদিহিতা বলতে কোনও বিষয়ের চল তো আমাদের দেশে নাই। আছে কেবল গালভরা নাম- তিনস্তর, সাড়ে তিন স্তর...।
ওরে, তিনস্তর নিরাপত্তাই বটে! শোনো কথা! সম্ভবত চার স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ছিল না বলে এসআই ওয়াহিদুজ্জামান ডাকা হয়নি! আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই চার স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা চালু হবে। তখন তিনস্তর নিরাপত্তার চাদরের বদলে চারস্তরের মোটা কাঁথায় ঢেকে দেওয়া হবে এবং অসংখ্য ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরাগুলো টোকাইদের মাঝে বিলি করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আমাদের চৌকশ গোয়েন্দা মহোদয়গণ বাঘের দুধের পায়েশ জনগণকে খাইয়ে দিতে পারেন এই তারাই এখন হাঁ করে আছেন ভিনদেশি গোয়েন্দাদের মুখ চেয়ে।
অভিজিতের প্রকৃত হত্যাকারী কে এটা যেহেতু আমরা এখনও জানি না তাই বলা মুশকিল কে এর পেছনে? এমনিতে তো আমরা বিভিন্ন নাটক দেখে অভ্যস্ত। ‘জজ মিয়া নাটক’ সগৌরবে মঞ্চস্থ হতে পারলে ‘আসামী মিয়া’ নামে আরেকটা নাটক মঞ্চস্ত হতে সমস্যা কোথায়! পূর্বেই বলেছি অভিজিৎ রায় যুক্তি-সূত্র দিয়ে যে সমস্ত লেখা লিখে গেছেন... (অভিধানকেও কী চাপাতি দিয়ে কোপানো হবে) [১] সে তো নস্যি তারচেয়েও অনেক অনেক কুৎসিত, জঘন্য ভাষায় অহেতুক ধর্মকে আক্রমণ করার লোকের অভাব এই ব্লগস্ফিয়ারে নেই, তাহলে অভিজিৎই কেন? নাকি কেউ এই সুযোগের পুরো ফায়দাটা নিয়ে নিল? এর উত্তর সময়ের হাতেই নাহয় ছেড়ে দিলাম।
পুলিশের বিরুদ্ধে পরোক্ষ মৃত্যুর অভিযোগ কেন আনা হবে না এই নিয়ে কেবল হইচইই করা চলে- ফলাফল ‘আ বিগ জিরো’। দায়িত্ব অবহেলার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও পুলিশ মহোদয়ের কেশাগ্রও এদিক-ওদিক হয়নি এদিকে আমাদের আইনমন্ত্রী মহোদয় যথারীতি হুংকার দিয়েছেন, “কোনো অন্যায়কারী বিচার ব্যতীত যেতে পারে না। বাংলাদেশের কেউ মনে করতে পারবে না যে, সে আইনের উর্ধ্বে। সেই বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।” (http://m.bdnews24.com/bn/detail/bangladesh/940113)
ল ইজ কামিং- আইনমন্ত্রী ‘সেই বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে থাকুন আমরা অন্য প্রসঙ্গে যাই...।
*একটি খুন, অতঃপর, দুই: http://www.ali-mahmed.com/2015/03/blog-post_23.html
সূত্র: ১. ...ফারাবী গং: http://www.ali-mahmed.com/2015/03/rokomaricom.html
অভিজিৎ রায়কে কোপানোর পর যেসব ছবি দেখেছি ওগুলোয় কেমন যেন একটা ফাঁক-ফাঁক মনে হচ্ছিল কি যেন থাকার কথা অথচ নেই। এই ছবিটায় সেই অভাব পূরণ হয়েছে। পুলিশকে দেখা যাচ্ছে। অতি ঘৃণার সঙ্গে বলতে হচ্ছে তখনই অভিজিতের খুনিকে আটকাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা দূরের কথা তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টাও পুলিশ করেনি! এখানে কেবল দায়িত্ব না মানবতাও মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছে! কেবল তাই না অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালেও পুলিশ নিয়ে যায়নি। জনসাধারণের মধ্যে থেকে একজন নিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি পুলিশ এই কাজে তাদের গাড়িও ব্যবহার করেনি, স্কুটারে করে অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী বন্যাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ এমন আহত অবস্থায় একজন মানুষের জন্য প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।
আমি জানি না এমন চাপাতি কোপানো মুমূর্ষু একজন মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের প্রতি কোনও প্রকারের ‘উপরের নির্দেশের’ নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? আমাদের দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আসলেই তাদের কাজ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল কিনা এটাও একটা প্রশ্ন। এদের অধিকাংশকেই এমনসব কাজে ব্যস্ত রাখা হয় যেটা আদৌ এদের কাজ না। এর উপর আছে ‘উপরের নির্দেশ’। এই উপরের নির্দেশ জিনিসটা কী এটা উপরওয়ালা ব্যতীত অন্য কেউ বলতে পারবে এমনটা ভরসা করি না।
অভিজিৎ রায়ের উপর গুরুতর হামলাটা এই দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ভাবনার বিষয় কারণ কেবল অতি সুরক্ষিত (এটার আবার গালভরা একটা নাম আছে- তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দিনদুপুরেই না শত-শত মানুষের সামনেই ঘটেছে এই ঘটনাটা। এ অবিশ্বাস্য, এ অভূতপূর্ব!
ড. হুমায়ূন আজাদের বেলায় স্থান এক হলেও খানিকটা নিরিবিলি, আড়াল ছিল। অভিজিতের উপর এই হামলার পেছনে যারা আছে তাদের দূরদর্শিতার তারিফ না-করে উপায় নেই। এরা ঠিক-ঠিক জানে এই দেশের পালস। এরা এটা বিলক্ষণ জানে এই দেশের পুলিশ নীল ল্যাস্পপোস্টের মত দাঁড়িয়ে থাকবে। কিছু নপুংসক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবে। কেবল অভিজিৎকে উদ্ধারকারী ওই মানুষটাই ‘আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ’ এই সহজ চিত্রটা খানিকটা ভন্ডুল করে দিয়েছেন। পুলিশ যে জীবন আহমেদকে খুনি বানিয়ে দেয়নি এটা জীবন আহমেদের অপার সৌভাগ্য।
এই দেশ এরপরও বসবাসের যোগ্য এমনটা কেবল এই দেশের ‘চামচ-শ্রেণীর’ লোক ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে দাবী করা সম্ভব না। এই ঘটনা আরও ভয়াবহ, ছোট্ট উদাহরণ:
ঘটনার সময় বইমেলার গেটে দায়িত্ব পালনকারী নীলক্ষেত ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওয়াহিদুজ্জামান মিডিয়াকে জানান, তাকে নাকি এখনও (১২ মার্চ ২০১৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেউ ডাকেইনি!
আহা, ডাকবে কেন? জবাবদিহিতা বলতে কোনও বিষয়ের চল তো আমাদের দেশে নাই। আছে কেবল গালভরা নাম- তিনস্তর, সাড়ে তিন স্তর...।
ওরে, তিনস্তর নিরাপত্তাই বটে! শোনো কথা! সম্ভবত চার স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ছিল না বলে এসআই ওয়াহিদুজ্জামান ডাকা হয়নি! আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই চার স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা চালু হবে। তখন তিনস্তর নিরাপত্তার চাদরের বদলে চারস্তরের মোটা কাঁথায় ঢেকে দেওয়া হবে এবং অসংখ্য ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরাগুলো টোকাইদের মাঝে বিলি করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আমাদের চৌকশ গোয়েন্দা মহোদয়গণ বাঘের দুধের পায়েশ জনগণকে খাইয়ে দিতে পারেন এই তারাই এখন হাঁ করে আছেন ভিনদেশি গোয়েন্দাদের মুখ চেয়ে।
অভিজিতের প্রকৃত হত্যাকারী কে এটা যেহেতু আমরা এখনও জানি না তাই বলা মুশকিল কে এর পেছনে? এমনিতে তো আমরা বিভিন্ন নাটক দেখে অভ্যস্ত। ‘জজ মিয়া নাটক’ সগৌরবে মঞ্চস্থ হতে পারলে ‘আসামী মিয়া’ নামে আরেকটা নাটক মঞ্চস্ত হতে সমস্যা কোথায়! পূর্বেই বলেছি অভিজিৎ রায় যুক্তি-সূত্র দিয়ে যে সমস্ত লেখা লিখে গেছেন... (অভিধানকেও কী চাপাতি দিয়ে কোপানো হবে) [১] সে তো নস্যি তারচেয়েও অনেক অনেক কুৎসিত, জঘন্য ভাষায় অহেতুক ধর্মকে আক্রমণ করার লোকের অভাব এই ব্লগস্ফিয়ারে নেই, তাহলে অভিজিৎই কেন? নাকি কেউ এই সুযোগের পুরো ফায়দাটা নিয়ে নিল? এর উত্তর সময়ের হাতেই নাহয় ছেড়ে দিলাম।
পুলিশের বিরুদ্ধে পরোক্ষ মৃত্যুর অভিযোগ কেন আনা হবে না এই নিয়ে কেবল হইচইই করা চলে- ফলাফল ‘আ বিগ জিরো’। দায়িত্ব অবহেলার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও পুলিশ মহোদয়ের কেশাগ্রও এদিক-ওদিক হয়নি এদিকে আমাদের আইনমন্ত্রী মহোদয় যথারীতি হুংকার দিয়েছেন, “কোনো অন্যায়কারী বিচার ব্যতীত যেতে পারে না। বাংলাদেশের কেউ মনে করতে পারবে না যে, সে আইনের উর্ধ্বে। সেই বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।” (http://m.bdnews24.com/bn/detail/bangladesh/940113)
ল ইজ কামিং- আইনমন্ত্রী ‘সেই বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে থাকুন আমরা অন্য প্রসঙ্গে যাই...।
*একটি খুন, অতঃপর, দুই: http://www.ali-mahmed.com/2015/03/blog-post_23.html
সূত্র: ১. ...ফারাবী গং: http://www.ali-mahmed.com/2015/03/rokomaricom.html
2 comments:
ফটোগ্রাফারটির নাম জীবন আহমেদ, তিনি 'বাংলার চোখ' এ কর্মরত আছেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনাকে @Anonymous
Post a Comment