কেউ ছুঁরি দিয়ে আপেল কেটে খায় কেউ সেই ছুঁরি দিয়েই কারও চোখ উপড়ে ফেলে- তেমনি কেউ দেখে খাবার হিসাবে আপেলকে অন্য কেউ দেখে আপেলের সৌন্দর্য। যার-যার দৃষ্টিভঙ্গি-বিবেচনা।
চাপাতির কোপে পিচের সঙ্গে লেপ্টে ছিল অভিজিতের যে মগজ, আমি দেখি সেই মগজের পরতে পরতে লুকিয়ে ছিল অজস্র জ্ঞান- বিনষ্ট হলো সেই জ্ঞানের উৎস। কী অপচয়, কী নিদারুণ অপচয়!
আমার বই পাওয়ার উৎস রকমারী ডট কমের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার পর বিকট সমস্যায় পড়ে গেলাম। সহৃদয় চিন্ময় ভট্টাচার্য উদ্ধার করলেন। তিনি নিয়ে এলেন অভিজিতের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটি। এই বইটাতেও আমি দেখেছি অসংখ্য তথ্যের সূত্র ব্যবহার করতে। অসম্ভব প্ররিশ্রমী একটা কাজ নিঃসন্দেহে, অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত একটা জায়গায় জড়ো করাটা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। আমি এটাও লক্ষ করেছি রায়হান আবীরের সঙ্গে তিনি যে বইটি লিখেছেন এখানে তাঁর নিজস্ব মত খুবই অল্প। বইটার শুরুতেই যে তথ্য তা চামকে দেয়, অন্তত আমাকে। এখান থেকে মাত্র ২টা তথ্য উল্লেখ করি:
“১. নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম নামে এক ফিতাকৃমি সদৃশ প্যারাসাইট ঘাসফড়িং-এর মস্তিষ্কে সংক্রমিত করে ফেললে ঘাস ফড়িং পানিতে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করে, যার ফলে হেয়ারওয়ার্মের প্রজননে সুবিধা হয়। অর্থাৎ নিজের প্রজনননের সুবিধার পেতে হেয়ারওয়ার্ম বেচারা ঘাস ফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে।...
২. ল্যাংসেট ফ্লুক নামে এক ধরনের প্যারাসাইটের সংক্রমণের ফলে পিঁপড়া কেবল ঘাস বা পাথরের গা বেয়ে উঠানামা করে। কারণ এই প্যারাসাইট বংশবৃদ্ধি করতে পারে শুধুমাত্র তখনই যখন কোনো গরু বা ছাগল একে (পিঁপড়াসহ প্যারাসাইটকে) ঘাসের সঙ্গে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ফলে প্যারাসাইট নিরাপদে সেই গরুর পেটে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।“
এই তথ্যগুলো কিন্তু অভিজিতের মনগড়া না, এটা তিনি নিয়েছেন, Deniel C. Dennett-এর Breaking the Spell…বইটি থেকে। এমন অজস্র তথ্য! এখন আমার মত যারা সাধারণ পাঠক তাদের পক্ষে Deniel C. Dennett লেখকের বই যোগাড় করে এই তথ্যগুলো জানাটা কঠিন হয়ে পড়ে। অভিজিতের মত লোকজনেরা সেই কঠিন কাজটা সহজ করে দেন।
আমি হতবাক হয়েছি এটা দেখে অভিজিৎ রায়কে নৃশংস ভাবে হত্যা করার পর অনেক শিক্ষিত(!) মানুষকে দেখেছি তার এই হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিতে, তিনি ধর্মের প্রতি বিষ উগরে দিতেন এই যুক্তিতে। আজব! অভিজিৎ রায় বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে লিখতেন যেখানে তথ্য-উপাত্ত দেওয়া থাকত । তদুপরি কারও আপত্তি থাকলে লেখার উত্তর লেখা দিয়ে দিলে সমস্যা কোথায় ছিল! আর লেখার শক্তিতে ভরসা না-থাকলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে প্রতিকার চাইলেন না কেন? কলমের উত্তর কী কলম-আইনের মাধ্যমে না-গিয়ে চাপাতির মাধ্যমে!
মানুষের মধ্যে যেমন ভাল-মন্দ আছে তেমনি লেখায়ও। ভাল লেখা-মন্দ লেখা। আমরা মন্দ মানুষকে যেমন এড়িয়ে চলি তেমনি মন্দ লেখাও পরিত্যাজ্য। পাতার-পর-পাতা পড়ে ফেললেই যেমন একজন সাহিত্যিক হওয়া যায় না তেমনি সব লেখাও লেখা হয়ে উঠে না। মানুষের কল্যাণের জন্য যে লেখা না তা কখনও ভাল লেখা হতে পারে না। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ সাহিত্যের অধ্যাপক মোরদেচাই কেদার। ডিজঅর্ডারে ভোগা এই মানুষটা একটা উম্মাদ। উম্মাদের কথার গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নাই।
"যুদ্ধ অনেক হয়েছে, এবার ধর্ষণ যুদ্ধ শরু করতে হবে। গাজার ঘরে-ঘরে ঢুকে এদের নারীদের ধর্ষণ করতে হবে। মা-বোন-স্ত্রী-কন্যা কেউ যেন বাদ না যায়।"
-জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের অধ্যাপক মোরদেচাই কেদার।
মানুষের মৃত্যুর পর তার কি হবে এই ভয়-ই ধর্মগুলোর প্রধান হাতিয়ার। অনেকের জন্য তখন এর বাইরে যাওয়ার ধর্মীয় নির্দেশ-সুযোগ-ইচ্ছা থাকে না। আমি এক লেখায় লিখেছিলাম,
“প্রধান ধর্মগুলোর জোর দাবি তাঁর ধর্মই সেরা! তাঁর ধর্মেই মুক্তি...। অন্য ধর্মে নরকবাস! বেচারা মানবের হয়েছে নাভিশ্বাস...” [১]।চাপাতির কোপে পিচের সঙ্গে লেপ্টে ছিল অভিজিতের যে মগজ, আমি দেখি সেই মগজের পরতে পরতে লুকিয়ে ছিল অজস্র জ্ঞান- বিনষ্ট হলো সেই জ্ঞানের উৎস। কী অপচয়, কী নিদারুণ অপচয়!
আমার বই পাওয়ার উৎস রকমারী ডট কমের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার পর বিকট সমস্যায় পড়ে গেলাম। সহৃদয় চিন্ময় ভট্টাচার্য উদ্ধার করলেন। তিনি নিয়ে এলেন অভিজিতের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটি। এই বইটাতেও আমি দেখেছি অসংখ্য তথ্যের সূত্র ব্যবহার করতে। অসম্ভব প্ররিশ্রমী একটা কাজ নিঃসন্দেহে, অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত একটা জায়গায় জড়ো করাটা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। আমি এটাও লক্ষ করেছি রায়হান আবীরের সঙ্গে তিনি যে বইটি লিখেছেন এখানে তাঁর নিজস্ব মত খুবই অল্প। বইটার শুরুতেই যে তথ্য তা চামকে দেয়, অন্তত আমাকে। এখান থেকে মাত্র ২টা তথ্য উল্লেখ করি:
“১. নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম নামে এক ফিতাকৃমি সদৃশ প্যারাসাইট ঘাসফড়িং-এর মস্তিষ্কে সংক্রমিত করে ফেললে ঘাস ফড়িং পানিতে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করে, যার ফলে হেয়ারওয়ার্মের প্রজননে সুবিধা হয়। অর্থাৎ নিজের প্রজনননের সুবিধার পেতে হেয়ারওয়ার্ম বেচারা ঘাস ফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে।...
২. ল্যাংসেট ফ্লুক নামে এক ধরনের প্যারাসাইটের সংক্রমণের ফলে পিঁপড়া কেবল ঘাস বা পাথরের গা বেয়ে উঠানামা করে। কারণ এই প্যারাসাইট বংশবৃদ্ধি করতে পারে শুধুমাত্র তখনই যখন কোনো গরু বা ছাগল একে (পিঁপড়াসহ প্যারাসাইটকে) ঘাসের সঙ্গে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ফলে প্যারাসাইট নিরাপদে সেই গরুর পেটে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।“
এই তথ্যগুলো কিন্তু অভিজিতের মনগড়া না, এটা তিনি নিয়েছেন, Deniel C. Dennett-এর Breaking the Spell…বইটি থেকে। এমন অজস্র তথ্য! এখন আমার মত যারা সাধারণ পাঠক তাদের পক্ষে Deniel C. Dennett লেখকের বই যোগাড় করে এই তথ্যগুলো জানাটা কঠিন হয়ে পড়ে। অভিজিতের মত লোকজনেরা সেই কঠিন কাজটা সহজ করে দেন।
আমি হতবাক হয়েছি এটা দেখে অভিজিৎ রায়কে নৃশংস ভাবে হত্যা করার পর অনেক শিক্ষিত(!) মানুষকে দেখেছি তার এই হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিতে, তিনি ধর্মের প্রতি বিষ উগরে দিতেন এই যুক্তিতে। আজব! অভিজিৎ রায় বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে লিখতেন যেখানে তথ্য-উপাত্ত দেওয়া থাকত । তদুপরি কারও আপত্তি থাকলে লেখার উত্তর লেখা দিয়ে দিলে সমস্যা কোথায় ছিল! আর লেখার শক্তিতে ভরসা না-থাকলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে প্রতিকার চাইলেন না কেন? কলমের উত্তর কী কলম-আইনের মাধ্যমে না-গিয়ে চাপাতির মাধ্যমে!
মানুষের মধ্যে যেমন ভাল-মন্দ আছে তেমনি লেখায়ও। ভাল লেখা-মন্দ লেখা। আমরা মন্দ মানুষকে যেমন এড়িয়ে চলি তেমনি মন্দ লেখাও পরিত্যাজ্য। পাতার-পর-পাতা পড়ে ফেললেই যেমন একজন সাহিত্যিক হওয়া যায় না তেমনি সব লেখাও লেখা হয়ে উঠে না। মানুষের কল্যাণের জন্য যে লেখা না তা কখনও ভাল লেখা হতে পারে না। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ সাহিত্যের অধ্যাপক মোরদেচাই কেদার। ডিজঅর্ডারে ভোগা এই মানুষটা একটা উম্মাদ। উম্মাদের কথার গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নাই।
"যুদ্ধ অনেক হয়েছে, এবার ধর্ষণ যুদ্ধ শরু করতে হবে। গাজার ঘরে-ঘরে ঢুকে এদের নারীদের ধর্ষণ করতে হবে। মা-বোন-স্ত্রী-কন্যা কেউ যেন বাদ না যায়।"
-জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের অধ্যাপক মোরদেচাই কেদার।
মানুষের মৃত্যুর পর তার কি হবে এই ভয়-ই ধর্মগুলোর প্রধান হাতিয়ার। অনেকের জন্য তখন এর বাইরে যাওয়ার ধর্মীয় নির্দেশ-সুযোগ-ইচ্ছা থাকে না। আমি এক লেখায় লিখেছিলাম,
কেবল এটুকুই না, ভয়ংকর ব্যাপারটা হচ্ছে, কিছু-কিছু ধর্মে নিজ ধর্ম ত্যাগ করলে হত্যা করার নির্দেশও দেওয়া আছে!
বিভিন্ন ধর্মে এমন অনেক ঘটনার অলৌকিক বর্ণনা আছে যার আদৌ কোনও ব্যাখ্যা নেই। তখন সেই ধর্মের অনুসারীগণ অসহায় বোধ করেন। তার এই অসহায়ত্ব নিয়ে সবিরাম খোঁচাখুঁচি করাটা অর্থহীন। এ থেকেও উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় স্বয়ং ধর্ম। চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রাখার উপরই জোর দেওয়া হয় যে সবই তার ইচ্ছা- প্রশ্ন করার অবকাশ নেই।
এই বৃত্তের বাইরে একদল মানুষ আছেন যারা কোনও ধর্মেই বিশ্বাস রাখেন না, সৃষ্টিকর্তার প্রতিও অবিশ্বাসী। যাদেরকে প্রচলিত অর্থে আমরা নাস্তিক বলি। এখন কে আস্তিক হবেন বা কে নাস্তিক এটা তো তার নিজের সিদ্ধান্ত। এখানে অন্যদের কী কাজ! ভয় দেখিয়ে আস্তিক বানাবার অপচেষ্টা কেন! এটা তো ভয়ংকর- যে মানুষটার সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস নেই , ভয় নেই সেই মানুষটা ভয় পাচ্ছে তারই মত তুচ্ছ মানুষকে। ওই তুচ্ছ মানুষটা কী সৃষ্টিকর্তার চেয়েও বড়ো!
কেউ-কেউ তো এখনও সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে বাস করেন। দৈনিক পত্রিকা-খবর-খেলার সঙ্গে কোনও যোগ নাই। এরা অবলীলায় ইসরাইলের দূতাবাস ঘেরাও করার কর্মসূচীও দিয়ে ফেলেন। এটা জানার প্রয়োজন বোধ করেন না ইসরাইলের সঙ্গে আমাদের দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক নাই তাই তাদের দূতাবাস থাকার প্রশ্নই উঠে না। ঘেরাও করাটা হাস্যকর, অতি হাস্যকর।
এমনসব বই পড়বেন [২] যার সূত্রের কোনও বালাই নেই। এক লেখায় আমি লিখেছিলাম এদেরকে পরিপূর্ণ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষদের বঞ্চিত, দূরে রেখে...,
“...ওখানে কেবল ধর্মই শেখানো হবে না। কম্পিউটারও থাকবে। এরা ইন্টারনেট ব্যবহার করবে- এরা নিজেরাই জানবে ধর্ম নিয়ে যেমন কুৎসিত কথা বলা হয় তেমনি চমৎকার কথাও লেখা হয়। এরা চোখ বড় বড় করে মাল্টিমিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ সব বীরত্বের প্রামাণ্যচিত্র দেখবে। লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক বই থাকবে...।”[৩]
কিন্তু এখন, কেবল এদের কথা বলেই দায় সারার উপায় নেই। এখন অতি শিক্ষিত ছেলেপেলেরাও চলে আসছে। আমার এক আত্মীয়, বুয়েটে পড়াশোনা করে এমন একজনের ফেসবুকের লেখা দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। সে লিখেছিল, ‘এই দেশে কোনও নাস্তিক থাকতে পারবে না’।
কেন একজন নাস্তিক এই দেশে থাকতে পারবে না! যুক্তি কি? আমি অন্য একটি লেখায় লিখেছিলাম: “...কথাটা রবিদাদার,
‘I love my God because he gives me the freedom to deny him.’ বাপুরে, এই ক্ষমতাটাও তো তাঁরই দেওয়া নইলে তো এই গ্রহে অবিশ্বাসী বা অন্য ধর্মের কেউ থাকত না [৪]! ...” তাহলে তুমি কে হে, সলিমুল্লা?
এখন সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায় এই ভয়াবহ খবরগুলো। আইএস-এর (ইসলামি স্টেট) মত খুনি-দানবদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা ওখানে উড়ে যাচ্ছে। হালে যোগ দিতে গেল ইউকে থেকে মেডিকেলের ছাত্ররাও! গা হিম করে দেওয়ার মত এই ঘটনাগুলো।
একটা সময় তো পরিস্থিতি এমন উদ্ভট ভয়ংকর ছিল- ব্লগার মানেই নাস্তিক [৫]। আজও নাস্তিক এবং ধর্মের কটাক্ষকারীর মধ্যে ফারাকটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার না। পূর্বেই বলেছি কে নাস্তিক হবেন, কে হবেন না এটা তার এখতিয়ার। এখানে অন্যদের কোনও বক্তব্য থাকার কথা না।
তবে কোনও ধর্ম নিয়ে অশালীন, কুৎসিত কথা বলার আমি ঘোর বিরোধী। আরজ আলী মাতুব্বর কেবল ঘোর নাস্তিকই ছিলেন না এই বিষয়ে প্রচুর লেখাও লিখে গেছেন, ধর্মের বিপক্ষে অসংখ্য যুক্তি দিয়েছেন কিন্তু কোথাও তিনি কোনও ধর্ম নিয়ে কুৎসিত কথা বলেছেন এমনটা অন্তত আমার জানা নাই। যেমনটা অভিজিতের বেলায়ও খাটে।
একদল আছেন যারা ধর্ম নিয়ে অতি নোংরা, অতি কুৎসিত কথা বলেন। এমন অনেকেই আছেন যাদের ১০০টা লেখার মধ্যে দেখা যাবে ৯৯টাই ধর্মসংক্রান্ত অতি জঘন্য কথা লেখা। এরা এই কাজটা করেন ইচ্ছাকৃত। এই শিক্ষিত মানুষগুলো কেন এমনটা করেন? কারও কাছে একটা নিরেট পাথর ঈশ্বরতুল্য- অন্য একজনের কি কাজ এটায় লাথি দিতে। এই গ্রহে কী লাথি মারার পাথরের অভাব পড়েছে! এরা নাস্তিক কিনা সেটা জরুরি না কিন্তু এরা নাস্তিক নামের আড়ালে একেকজন চলমান মুক্তমনা(!)। অন্যের মত-বিশ্বাস-আবেগকে পদদলিত করে কেমন করে মুক্তমনা হওয়া যায় এটা আমার বোধগম্য হয় না! এমন ধর্মীয় আচারও আছে সৎকারের নামে মৃতদেহ টুকরো-টুকরো করে শকুনকে দিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়। এখন কি ওই ধর্মের অনুসারীর মৃতদেহে লাথি মারতে হবে?
আমার দৃষ্টিতে এরা একেকটা ইতরবিশেষ।
আহ, ধর্মের অবমাননা! আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, 'ইসলাম ধর্মের অবমাননা সহ্য করা হবে না...'। অথচ ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর এটা বলাটাই সমীচীন ছিল যে কোনও ধর্মেরই অবমাননা সহ্য করা হবে না [৬] ।
অনেক ধর্মীয় শিক্ষক ওয়াজের নামে গভীর রাত পর্যন্ত ৮/১০টা চোঙ্গা লাগিয়ে অন্য ধর্মগুলোকে উদ্দেশ্য করে যে সমস্ত উগ্র বক্তব্য দেন তাতে কী ধর্মের অবমানননা হয় না? এই ভিডিওটা দেখলে খানিকটা অনুমান করা যাবে অন্যের ধর্মের প্রতি কেমন অবজ্ঞা-তাচ্ছিল্য-হুমকি প্রদর্শন করা হয়। এই মানুষটা কি অন্য ধর্মের অবমাননার নামে অন্যায় করছেন না? কেন এই মানুষটাকে আইনের আওতায় আনা হবে না?
লেখার শুরুতে বলেছিলাম, আস্তিক আস্তিকের মত, নাস্তিক নাস্তিকের মত থাকলে কোনও সমস্যা ছিল না কিন্তু একদল ধর্মের ঢাল ব্যবহার করে ঝাঁপিয়ে পড়েন নাস্তিকের উপর। নিজের মতের সঙ্গে না-মিললে ইচ্ছা হলেই যে-কাউকে ট্যাগ লাগিয়ে দেন নাস্তিকের [৮]। কখনওবা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বিনষ্ট করেন প্রাণ, যে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাটুকুও তার নাই।
নাগাল্যান্ডে ধর্ষণের অভিযোগে ফরিদ নামের যে যুবককে কারগার ভেঙ্গে নগ্ন করে সমস্ত শহর প্রদক্ষিণ করিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল জনতা অথচ পরে জানা গেল ফরিদ নামের ওই মানুষটা নির্দোষ। এখন ওই খুনিরা কী করবে- ফরিদের প্রাণ ফিরিয়ে দেবে? অভিজিতের খুনিদের যদি কখনও এমনটা মনে হয় মানুষটাকে মেরে ফেলাটা ভুল ছিল তখন এরা কী করবেন অভিজিৎকে ফিরিয়ে দেবেন?
এদিকে আবার অন্যদল নাস্তিকের ঢাল ব্যবহার করে অতি কুৎসিত কথার ঝাঁপি খুলে ঝাঁপ দেন আস্তিকের উপর। এই সব 'নাস্তিক মিলিট্যান্ট'রা যদি ভেবে থাকেন আমরা তাদেরকে 'শাবাসি' দেব তাহলে ভুল ভাবছেন।
হাহ, মিলিয়ন-মিলিয়ন নক্ষত্রের মধ্যে (যাদের মধ্যে সূর্য একটা সাধারণ হলুদ নক্ষত্রমাত্র) সেই সূর্যের চেয়েও ১৩ লক্ষ গুণ ছোট এই পৃথিবীর ক্ষুদ্র একটা দেশের অতি ক্ষুদ্র একটা শহরে বসে আমরা কী অবলীলায়ই না জ্ঞান কপচাই। এই গ্রহটার সঙ্গে ৭০০ কোটি মানুষ লেপ্টে আছে অথচ একজন মানুষের শরীরেই ১০০ ট্রিলিয়ন ব্যকটেরিয়ার বাস! এই মহাবিশ্বের পাশে মানুষ নামের ৭০০কোটি সংখ্যাটা কী তুচ্ছ, কী হাস্যকরই না! ধর্ম ঘুরপাক খায় কেবল এই গ্রহের মানুষকেই ঘিরে।
মহাবিশ্বের সমস্ত রহস্য যখন সবাই জেনে বসে আছে আমি কেবল সলাজে বলি, আমি জানি না, কিচ্ছু জানি না [৯]...।
২৫.০৩.২০১৫
*একজনের প্রতি মুগ্ধতা, ভাল লাগার কারণে তার সব কিছুতেই একমত হতে হবে
এমনটা আমি মনে করি না বিধায় এই লেখাটায় এটা যোগ করার প্রয়োজন বোধ করছি।
অভিজিৎ রায় তাঁর ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটার (পৃষ্ঠা ৩০৯) শেষ অংশে বলছেন, “...’ধর্মকারী’ নামে একটা সাইট আছে অন্তর্জালে। সাইটটির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
’...এই ব্লগে ধর্মের যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করা হবে,
ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে, অপদস্ত করা হবে, ব্যঙ্গ করা হবে...।“
যদিও এখানে অভিজিৎ রায় অন্য একটি সাইটের বক্তব্যের অংশবিশেষ তুলে
দিয়েছেন কিন্তু এতে যে তাঁর প্রচ্ছন্ন সম্মতি আছে এটা পরিষ্কার হয়। তাঁর এই মতের
সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি।
‘ধর্মের যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করা হবে’, ‘ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে’ এই নিয়ে আমার কোনও দ্বিমত নাই কিন্তু অপদস্ত করা হবে, ব্যঙ্গ করা
হবে এই বিষয়ে আমার ঘোর আপত্তি আছে। কারণ একেকটা ধর্ম তার অনুসারীদের কাছে তার ধর্ম
বিশ্বাস-আবেগের স্থান এটা নিয়ে আর যাই হোক ব্যঙ্গ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা চলে না।
মোটা দাগে আবেগকে আমি ব্যাখ্যা করি এভাবে। কার মা কালো-কালো, চামড়া
কোঁচকানো, গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না-কথার খেই হারিয়ে ফেলেন...তাতে সেই মার
সন্তানের কী আসে যায়। অন্যের কি অধিকার আছে কারও আলাভোলা মাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার? এমনটা
হয়ে থাকলে এও এক অন্যায়।
**একটি খুন, অতঃপর: এক: http://www.ali-mahmed.com/2015/03/blog-post_20.html
সহায়ক সূত্র:
১. তাঁদের সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_06.html
২. কল্পনাকেও ছাড়িয়ে: http://www.ali-mahmed.com/2014/06/blog-post_5.html
৩. চাবুক মেরে দুধে পানি মেশানো বন্ধ করা যায় না: http://www.ali-mahmed.com/2013/05/blog-post_7.html
৪. ...ফারাবী গং: http://www.ali-mahmed.com/2015/03/rokomaricom.html
৫. ব্লগিং-বোল্গিং, আস্তিক-নাস্তিক: http://www.ali-mahmed.com/2013/03/blog-post_15.html
৬. প্রধানমন্ত্রী: http://www.ali-mahmed.com/2013/04/blog-post_4.html
৭. মাওলানা রুহী...: http://www.ali-mahmed.com/2013/04/blog-post_4554.html
৮. নাস্তিক এবং...: http://www.ali-mahmed.com/2013/04/blog-post_9.html
৯. আমি কেউ না, আমি কিছু না: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_07.html
No comments:
Post a Comment