Search

Saturday, April 18, 2015

আবার আসিব ফিরে...।

এই অপারেশনে কারও মৃত্যু হয়েছে এমনটা শুনিনি। আমার বেলায় এটা ঘটলে সেটা হবে বিরল ঘটনা! অখ্যাত পত্রিকার ভেতরের পাতায় ‘বিরল ঘটনা’ হিসাবে খবরটা দু-চার লাইনে চলে আসাটা একেবারেই অলীক-অসাড় বলাটা সঠিক হবে না।

তবে এই অপারেশনে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাটাও তোপ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। অবশ্য এও সত্য, একজন লেখকের জন্য অন্ধ হয়ে যাওয়াটা মৃত্যুসম। তখন বাঁচা না-বাঁচা সমান...।

ছেঁড়া চাদর এবং ‘মনোনীত সদস্য’।

এ বছর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘন্টার-পর-ঘন্টা ধরে যে ঘটনা ঘটল এটা নিয়ে গুছিয়ে লেখার ক্ষমতা আমার নাই। কেবল অল্প কথায় বলি, আমাদের দাঁড়াবার আর জায়গা রইল না।
হালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটা হচ্ছে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। এখানে দিনদুপুরে চরম অশ্লীলতা করা যায়, সন্তানের সামনে মাকেও অপদস্ত করা যায় । চাপাতি দিয়ে কাউকে কুপিয়ে ফালা ফালা করা তো কোনও বিষয়ই না।

কালে কালে গালকাটা রমজান, পেটকাটা আবুল হবে এখানকার আসল কারিগর। এরা এদের চেলাচামুন্ডাদেরকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে নিয়ে আসবে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। লাউয়ের উপর ব্লেড চালিয়ে পকেটকাটা বিভাগের প্রধান পকেটমারের সর্দার বাইট্টা ছগিরও পিছিয়ে থাকবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সব এলাকাগুলো নাকি এমনিতেই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে।সিসিটিভি নামের যে চোঙ্গাগুলো লাগানো থাকে এগুলো দিয়ে নাকি কাক-পক্ষীর গতিবিধি ধারণ করা হয়। বিশেষ-বিশেষ দিনে তো এই চাদর নাকি কয়েক স্তরের হয়ে যায়। 'এই চাদর দিয়ে মাথা ঢাকতে গিয়ে পেছনটা উদোম হয়ে যায়', এটা লিখতে পারলে আরাম পাওয়া যেত কিন্তু মাথা-পেছনটার (পাছা শব্দটা আমি এখানে লিখতে চাচ্ছি না) দোষ দেওয়াটা সমীচীন হবে না। দোষ বেচারা চাদরের। আহা, বেচারা চাদর- ছেঁড়া চাদর।

অনেকে আবার দোষ চাপাবার চেষ্টা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার-হাজার শিক্ষার্থীর যিনি পিতা, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের প্রতি। এই পুরো নামটা ‘আ আ ম স’ এটা ভুলে গেছি তবে দুষ্ট ছেলেরা যেটা বলে সেটা বিচিত্র কারণে মনে আছে। এখানে এটা উল্লেখ করাটা অসমীচীন মনে করছি।)।
জনাব, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সাহেবের প্রতি কারও অঙ্গুলি নির্দেশ করার প্রতি আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই, নিন্দা জ্ঞাপন করি। কারণ জনাব আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাহেবের দোষ দেওয়াটাও দোষ হবে। ওরে অবুঝ, প্রক্টর সাহেব দাবা খেলায় ব্যস্ত থাকেন কিন্তু আরেফিন সাহেব কী অবসর? বেচারা আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাহেবের কতো-কতো কাজ! যেমনটা আমরা দেখেছি তেলের খনি [১] থেকে তৈল উত্তোলনে তাঁর ব্যস্ততা। এটা তো ছোট্ট একটা উদাহরণ, এমন কত্তো কত্তো কাজ তাঁর...।

১. তেলের খনি: http://www.ali-mahmed.com/2012/04/blog-post.html

Friday, April 17, 2015

মিডিয়া...!

কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলো। এই বিষয়ে পুর্বের বলা অল্প কথাটাই আবারও বলি, "৪৪ বছর গেল নাকি ৪৪০ বছর তাতে কী আসে যায়- রক্তের দাগ মুছে ফেলা যায় না"। 
প্রায়শ এমনটা দেখি বা শুনি, অনেকের কাছে এর (যুদ্ধের অপরাধের জন্য বিচার) প্রয়োজনীয়তা তুচ্ছ কারণ এরা তাদের পরিবারের কাউকে হারাননি। কিন্তু এটা জিজ্ঞেস করুন ১৯৭১ সালে যারা তাঁদের স্বজন-প্রিয়মানুষকে হারিয়েছেন। সাদী মহাম্মদকে [১], প্রবীর শিকদারকে [২] যারা ১৯৭১ সালে তাদের স্বজনের প্রায় সবাইকে হারিয়েছিলেন। এরা কী করে ভুলে যাবেন তাদের দগদগে ক্ষত?

কিন্তু এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পূর্বে মিডিয়াগুলো কারাগারের সামনের রাস্তা দখল করে যেটা করেছে সেটা দেখে মনে হচ্ছিল...একেকটা কাঁপা-কাঁপা গলায় এমনসব ভঙ্গিতে বলছিল মনে হচ্ছিল এখুনি এ নির্ঘাত মুর্চ্ছা যাবে। আবার থেমে থেমে ঘটা করে বলছিল, আমরা চার দিন ধরে অপেক্ষায় আছি...। ওরে, তোকে বলেছে কে চার দিন ধরে অপেক্ষা করতে? কেউ-কেউ আবার লাইভ অনুষ্ঠানও প্রচার করছিল। পারলে এরা ফাঁসির দৃশ্যটাই লাইভ দেখিয়ে দিত। একজন তো আবার একটা শিশুকে দেখিয়ে বলছে এই ফাঁসি দেখার জন্য এ-ও চলে এসেছে।

আমাদের দেশে এখন অবৈধ টাকা হলেই একটা চ্যানেলের মালিক হয়ে বসে থাকে। চ্যাংড়া-চ্যাংড়া ছেলে-মেয়েরা ‘বুম’ হাতে অধিকাংশ সময় যেটা করে এটাকে এক কথায় বলা চলে অসভ্যতা। কতশত যে এখন মিডিয়াকর্মী আল্লা জানে। এদের অনেক আচরণ অসভ্যতাকেও ছাড়িয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন ঘটনায় এটা প্রত্যক্ষ করেছি, রানা প্লাজা, জিহাদের মৃত্যু এমন উদাহরণের শেষ নেই। তখন উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর কাজ করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। চার দিন ধরে রাস্তা আটকে এখানে বসে থাকার আদৌ এর প্রয়োজনটা কী! এরা লাশবাহী গাড়ির পেছনে পেছনেও দৌড় লাগায়। এবার নাকি ১ কিলোমিটার পূর্বে এদের আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জল কম ঘোলা হয়নি।

আহ, মিডিয়া! এখন অনলাইনেও মিডিয়া গিজগিজ করে। নমুনা! আরেক মিডিয়া 'প্রিয় ডট কম' [৩] একটা শিরোনাম করেছে, 'সর্বস্ব হারিয়ে লায়লা নাঈম কাঁদছেন'। ঘটনা পড়ে পাঠক ভাববে অন্য কিছু কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে লায়লা নঈম নামের এই বিকারগ্রস্ত মহিলার ল্যাপটপ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে- এই মহিলা আবার ল্যাপটপটা পাঠককে দেখাচ্ছেন যেন ভাইরাস গিজগিজ করছে। এই মিডিয়া-এই মহিলা দুই বিকারগ্রস্ত।

কারও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। কারাকর্তৃপক্ষ ব্রিফিং দেবে আজ এতোটা সময়ে ওমুকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে, ব্যস। অনেকে বলবেন, এটা সাধারণ কোনও ঘটনা না, জনগণের এই নিয়ে বিপুল আগ্রহ ছিল বিধায় ইত্যাদি ইত্যাদি। যে দেশের জনগণ মাইক্রোফোন টেস্টিং ওয়ান-টু-থ্রি বললেই শতেক লোক জমে যায় সেই দেশে অবশ্য এটা বলা যেতেই পারে।

অবশ্য মিডিয়ার এতো কিছুর পরও অনেকের মধ্যে সংশয় কাজ করেছে কেন কামারুজ্জামানের মৃতদেহের মুখমন্ডল কোথাও দেখানো হলো না। এরা এটা বুঝতে চাইছেন নােএটা সত্য রাষ্ট্র নিরুপায় হয়ে কখনও-কখনও প্রাণহরণের মত অতি নিষ্ঠুর কাজটা করতে বাধ্য হয়- যে প্রাণ সৃষ্টি করার ক্ষমতা কারও নাই সেই প্রাণটা ছিনিয়ে নেয়। আইনের শাসনের কারণে কখনও-কখনও রাষ্ট্রের এই কাজটা না-করে উপায় থাকে না। কিন্তু এটাও মাথায় রাখাটা প্রয়োজন রাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই মৃতদেহ নিয়ে যা-খুশি তা করতে পারে না। কিন্তু কেন, কেন এই সংশয়টা জনসাধারণের মধ্যে কাজ করে!

কারণ দেশটা বাংলাদেশ। এই দেশে আমরা প্রচুর নাটক দেখি- জজ মিয়ার নাটক, ছলিমুল্লার নাটক...। জনসাধারণের মধ্যে যেন সংশয় ঘুরপাক না-খায় এটা দেখার দায়িত্বও কিন্তু সরকারের উপর বর্তায়। তাই বিতর্ক এড়াবার জন্য যা-যা করণীয় যেমন প্রয়োজনে সরকারী মহফেজখানায় তথ্য-উপাত্তগুলো সংরক্ষণ করা ভবিষ্যতের জন্য। প্রয়োজনে ডিএনএ-এর নমুনাও রাখা যেতে পারে। তথ্য অধিকার আইনে কেউ জানতে চাইলে বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

যেমনটা যুদ্ধঅপরাধ-যুদ্ধাপরাধী নিয়ে সরকারের এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও এই দেশের একটা অংশের মধ্যে সংশয় কাজ করে। এটার জন্যও সরকারের দায়টা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরা যদি জানতে চাই রাজাকার নুলা মুসার [৪] বিচারের কি হলো? সরকার এই উত্তর দেবে না। দেবে না বলেই আমাদের মধ্যে সংশয়টা ঘুরপাক খায়।

১. আমার বাবার কবরস্থান: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_4.html
২. ১৯৭১: খুন, সাদি মহাম্মদের ২৫ স্বজন: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/1971.html
৩. প্রিয় ডট কম: http://www.ali-mahmed.com/2015/02/priyocom.html 
৪. নুলা মুসা: http://www.ali-mahmed.com/2014/12/blog-post_19.html

Thursday, April 9, 2015

পাজি-অসভ্য-ইতর-দানব-খুনি!

অনেকের কাছে ধর্মটা হচ্ছে কাঁচের বাসন। হাত থেকে ফসকে গেল তো ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। লেখার উত্তর লেখা দিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা এদের নাই তাই এরা ঝাঁপিয়ে পড়েন চাপাতি নিয়ে। যারা ধর্মের নামে আইন নিজ হাতে তুলে নিচ্ছেন, প্রকাশ্যে রাস্তায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মানবদেহ ফালা ফালা করছেন তাদেরকে দ্রুত আদালতে বিচার করাটা আবশ্যক। এরা খুনি- খুনির প্রতি প্রচলিত আইন যে আচরণ করে থাকে সেই আইনই এদের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে। রাষ্ট্র কখনও নিজ হাতে কাউকে আইন তুলে নিতে দিতে পারে না। প্রচলিত আইন যদি তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে তাও অতি দ্রুত কার্যকর করাটাও জরুরি। এই নিয়ে কোনও প্রকারের দ্বিমত নাই। একটি বিষবৃক্ষ নির্মূল হলো। সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

এখান পর্যন্ত লেখাটা বড়ই সরল এবার খানিকটা গরল কথা বলি। কখনও বিষবৃক্ষ গাছ আপনাআপনি হয় কখনও বা কেউ সযতনে পরিচর্যা করে লাগায়। সুদীপ্ত সুজয়-এর বদৌলতে আমার এটা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে। কতিপয় ইতরবিশেষ একটা ইভেন্ট চালু করেছে। ইভেন্টটির নাম, ‘নবীজির উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি সপ্তাহ’। শিরোনাম দেখে অনেকে আপ্লুত হবেন, বাহ, নবীজীর প্রতি কী তমিজ! কিন্তু আসল ঘটনা তা না। এই ইভেন্ট খুলে অতি কুৎসিতসব কথাবার্তা, ততোধিক কুৎসিত গালাগালি করা হচ্ছে। কোনও তথ্য-উপাত্তের বালাই নাই, কোনও যুক্তি নাই!

এই তাহলে জ্ঞানের চর্চা, মুক্তমনের চর্চা? মুক্ত মানে অবাধ, স্বাধীন যা-খুশি বলার অধিকার? কারও মৃত্যুশয্যায় তাকে নিয়ে রঙ্গ করার অধিকার- কোনও ভাবগম্ভীর পরিবেশে, জরুরি আলোচনায় ‘ধুমমাচা দে’ গান গাওয়ার অধিকার? তাহলে এই সমস্ত অসভ্যদের জন্য সভ্যতার সংজ্ঞা নতুন করে লিখতে হবে। এদেরকে কারা-কারা মুক্তমনা বললেন এ নিয়ে আমার কাতরতা নাই কারণ আমার কাছে এরা স্রেফ ‘ইতরবিশেষ তথাকথিত মুক্তমনা’।
বেচারা ভলতেয়ার, "I do not agree with what you have to say, but I'll defend to the death your right to say it." এটা বলেও তিনি এদের কাছে মুক্তমনা হতে পারলেন না।

তো, এরা যদি ভেবে থাকে আমরা এই সব ইতরবিশেষ মুক্তমনাদের এই সমস্ত কর্মকান্ডের জন্য ‘শাবাসি’ দেব তাহলে ভুল করবেন। আমরা চাইব এই সব ইতরদেরকেও যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় নিয়ে আসতে। কারণ এরা দানব বানাবার মেশিন! এরা ঠান্ডা মাথায় একটা খেলা খেলছে। ভযংকর এক খেলা। কোটি-কোটি মানুষের বিশ্বাস-আবেগকে পদদলিত করার খেলা! এরাই তারা, যারা রামুতে বৌদ্ধমূর্তি গুঁড়িয়ে লুঙ্গির কাছা মেরে নাচের মুদ্রায় দাঁড়িয়ে ছিল।

আচ্ছা, এবার অন্য প্রসঙ্গ। কারও প্রিয়মানুষকে, কারও মাকে নিয়ে কেউ কুৎসিত কথা বললে তার প্রতিক্রিয়াটা কেমন হবে? এখানে যে জেনেভা কনেভনশন কপচানো পন্ডশ্রম এটা ওই মার সন্তানটাকে কে বোঝাবে! এটা জেনেও যে আইন কিন্তু তাকে, তার আবেগকে ক্ষমা করবে না এবং ঠিকই তার প্রাণটাকেও নষ্ট করে ফেলবে, তারপরও। তখন সে একটা খুনি! কিন্তু তার মত ছাপোষা একজন মানুষ, মানুষ থেকে খুনিতে রূপান্তর; ফ্রানজ কাফকার ‘মেটামরফোসিস’- গ্রেগর সামসার আরশোলায় রূপান্তরকেও হার মানায়।
এ যেন অকল্পনীয় রূপান্তর! কিন্তু এই রূপান্তরের পেছনে যুক্তি কী! কেন সে তার মৃত মার জন্য হিংস্র কুকুরের ন্যায় লড়বে? পুরনো ক-খানা হাড়ে এমন কী আছে যা তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে বাধ্য করবে! হয় মরবে নয়তো মেরে ফেলবে। কেন? আসলে এর কোনও উত্তর হয় না। কিন্তু তাকে খুনি বানাবার এই দুঃসাধ্য কর্মকান্ডটা করল কারা?

ওরাই, যারা ভয়ংকর দানব- খুনি বানাবার একেকটা চলমান মেশিন। এই দানবরা নাস্তিক কি আস্তিক, এটা মূখ্য বিষয় না, বিষয়টা হচ্ছে এরা অপরাধি। নাস্তিক হওয়াটা কোনও শাস্তিযোগ্য অপরাধ না এবং কে নাস্তিক হবেন এটা তার নিজস্ব বিবেচনা। কিন্ত এই সব ইতরামি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ । অতি শীঘ্রই এই ইতরদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা আবশ্যক। সেটা কোনও ধর্মের ব্যক্তিত্বকে নিয়ে করুক বা অন্য কাউকে। ‘রামজীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি সপ্তাহ’ নিয়ে ইভেন্ট চালু করলেও আমার বক্তব্য হুবহু একই থাকবে। “তপস্যা করার অপরাধে রামচন্দ্র খড়গ দিয়ে ‘শম্বুক’ নামক এক শূদ্র তাপসের শিরোচ্ছেদ করেন” (শম্বুক শূদ্র হওয়ার অপরাধে) -বাল্মীকির রামায়ন। এটা বললে আমি ধৈর্য ধরে শুনব কারণ এর পেছনে তথ্য আছে কিন্তু রামকে নিয়ে ইতরতা করলে আমি ধৈর্যহারা হবো।

মুক্তমনার আভিধানিক অর্থ কি এটা নিয়ে অভিধানে-অভিধানে চালাচালি-খোজাখুঁজি-খোলাখুলি চলতে থাকুক। আমি আমার সাধারণ জ্ঞানে বুঝি, জ্ঞান হচ্ছে সরলরেখা আর জ্ঞানহীনতা হচ্ছে বৃত্ত। মুক্তমনের লোকজনেরা কোনও বৃত্তে আটকে থাকবেন না- কেবল এগিয়ে যাবেন। তাঁর হাঁটার রাস্তায় কাকের কর্কশ রব যেমন থাকবে তেমনি সুকন্ঠী পাখির সুরেলা বোলও। হাস যেমন ঘোলা জল থেকে তার খাবার পানিটা বের করে নেয় তেমনি তিনিও সমস্ত অন্ধকার থেকে আলোকে বের করে নিয়ে আসবেন।

আমি পূর্বেও বিভিন্ন লেখায় স্পষ্ট করে বলেছি, আমি কোনও বিশেষ ধর্মের অবমাননা বুঝি না আমি বুঝি সমস্ত ধর্মের অবমাননা। মধ্যরাতে ওয়াজের নামে আট-দশটা চোঙ্গা লাগিয়ে যখন হিন্দু ধর্মের ব্যক্তিত্বদের মুন্ডুপাত করা হয় তখন সেটাও ধর্মের অবমাননা। আরজ আলী মাতুব্বর ঘোর নাস্তিক ছিলেন। বিভিন্ন ধর্মের বিপক্ষে প্রচুর লেখা রেখে গেছেন কিন্তু তাঁর লেখাগুলোর মধ্যে কেউ এটা দেখাতে পারবেন না যে তিনি কোনও ধর্ম নিয়ে কুৎসিত কথা বলেছেন বা গালাগালি করেছেন অথবা অযথা ছোট করার চেষ্টা করেছেন। যেটাই বলেছেন তার যুক্তি দিয়ে বলেছেন কারও আপত্তি থাকলে যুক্তি খন্ডন করুক তাতে কোনও সমস্যা নাই।

গোল্ডা মায়ারের চমৎকার একটা কথা আছে, ‘নিজ হাতে হত্যা করা এবং হত্যা করার নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নাই’। আমি এর সঙ্গে যোগ করি, হত্যা করা বা হত্যা করার জন্য প্ররোচিত করার মধ্যেও খুব একটা তফাত নাই।

Thursday, April 2, 2015

রাজার মুরগি, বুশ এবং নাড়িছেঁড়া এক গল্প!

রাজার মুরগির বিষয়টা আগে বলি। রাজামশাই যখন ভ্রমণে মুরগি খাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তখন তার পেয়াদা বাহাদুররা সাত গ্রাম তছনছ করে মুরগির ব্যবস্থা করে।
আমাদের জুনিয়ার বুশ আরেক কামেল মানুষ। তাকে মেঝে উঁচু করার কথা বললে সে অল্প সময়েই এটা করে দেবে। সব মেরে সাফ করে কবর বানিয়ে।
এই মানুষটার চোখের জল শুকিয়ে গেছে কারণ আজ সাত দিন তার একমাত্র সন্তানের খোঁজ নেই। যেদেশে নামকরা লোকজনেরা উধাও হয়ে যায় সেদেশে স্টেশনে যার বাসস্থান এমন একজন মানুষের সন্তান উধাও হয়ে যাওয়াটা বিচিত্র কিছু না। এই মানুষটার নাম আমি জানি না। সবাই বলে জান্নাতের মা, আমিও বলি জান্নাতের মা।
বাঁদিকের মেয়েটা জান্নাত। গতবছর পহেলা বৌশাখে তোলা। দানে পাওয়া ঢলঢলে এই পোশাকেই তার আনন্দের শেষ নেই।
তার মেয়ে জান্নাত ‘আমাদের ইশকুল’ নামের স্কুলটায় বছরখানেক ধরে পড়ে। স্টেশনের কাছটায় এই স্কুলটায় প্রতিদিন নিয়ম করে আসে ছেলেপেলেরা আসে এই সংখ্যা খুবই কম। জান্নাতও মাঝেমধ্যে আসত না কারণ ও একটা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করত। ওখান খেকে যে খাবার পাওয়া যেত এতে মা-মেয়ের হওয়ার কথা না কিন্তু হয়ে যেত নিশ্চয়ই। এদের পেটপুরে খেতে হবে এই দিব্যি কে দিয়েছে।
তো এই কারণে জান্নাতের কখনও-কখনও স্কুলে আসা হতো না। কিন্তু ঝাড়া ছয় দিন অনুপস্থিত থাকার পর আমি স্কুলের মাস্টারকে জিজ্ঞেস করলে সে জান্নাত বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারল না।

আজ জান্নাতের মার কাছে যেটা শুনলাম তাতে কিছুই স্পষ্ট হলো না। পুলিশ নাকি জান্নাতকে ধরে নিয়ে গেছে। কোথায়? জান্নাতের মা জানে না! আশেপাশের অন্যরাও তেমন সদুত্তর দিতে পারল না। ১০/১২ বছরের ফুটফুটে একটা মেয়েকে পুলিশ কেন ধরে নিয়ে যাবে? রেলওয়ে পুলিশের এক এস,আই আমাকে যেটা বলল এটা শুনে আমি জীবনে এতো হতবাক কমই হয়েছি। সরকারী একটা সংস্থার (সামাজিক প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র) লোকজনেরা ভাসমান কিছু পতিতাতে ধরে নিয়ে গেছে। এদের মধ্যে জান্নাতও ছিল। একপ্রসঙ্গে এ আমাকে জোর দিয়ে এটাও বলেছে, জান্নাত...। হা ঈশ্বর! এই অপদার্থ এই সব কী বলছে!
অবশ্য জিআরপি ওসি যথেষ্ঠ সহায়তা করলেন। এখানে কাজের তথ্যগুলো পাওয়া গেল।

সহৃদয় @Shahadat Hossain যখন এই কেন্দ্রে (সামাজিক প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র) যান তখন এরা পতিতাদের ধরে এনেছেন এটা অস্বীকার করেন। চমৎকার-চমৎকারসব কথা বলেন। সাহাদাতের কাছে শুনে আমি নিজেও মুগ্ধ (!)।
অথচ আমি দেখছি এখানে এরা লিখেছে: “...পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক মূল্যবোধ থেকে নানাহ কারণে বঞ্চিত হয়ে অসামাজিক তথা দেহ ব্যবসার মত ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত রয়েছে।...
আচ্ছা, সেই তো দেখছি ঘুরেফিরে দেহ ব্যবসা! আরও লেখা আছে, "...এখানে আসন সংখ্যা ১০০ জন হলেও বর্তমান নিবাসীর সংখ্যা ১৬ জন। বাকী ৮৪টি আসন শূন্য থাকায়..."
ওরে, এই তাহলে ঘটনা! শূন্য স্থান পূরণ করো, শূন্য আসন...। আর পারিবারিক বন্ধনের কথা যে বলা হচ্ছে এই জান্নাত মেয়েটির পারিবারিক বন্ধন আছে কী নেই এই বিতর্কে নাহয় গেলাম না কিন্তু একজন মার কাছ থেকে তার সন্তানকে পাইক-পেয়াদা দিয়ে জোর করে ধরে নিয়ে আটকে রেখে কী দেশ উদ্ধার করবেন আপনারা? এই ছয় দিন ধরে মা জানত না তার সন্তান কোথায় -সন্তান জানত না তার মার খোঁজ! এই ক-দিনে মা-মেয়ের চোখ গড়িয়ে কত জল ভেসে গেছে তার খোঁজ রাখার আদৌ প্রয়োজন কী আমাদের!
এখন এরা বলছে, বেশ, জান্নাতকে ধরে এনে নিবন্ধন করে ফেলা হয়েছে তাই একে এখন এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইলে তার অভিভাবকের এই-এই কাগজ লাগবে। এই-এই কাগজ যেমন জন্মনিবন্ধন পৌর মেয়রের সনদ ইত্যাদি ইত্যাদি লাগবে। এই ইত্যাদি এবং ইত্যাদি কাগজপত্র জান্নাতের বা জান্নাতের মার কখনও ছিল না ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনাও অতি ক্ষীণ। অতএব...। জান্নাতের এখন কেবল জান্নাতে(!) যাওয়ার অপেক্ষা। তা কেন রে বাপু, ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় মা-র খোঁজের, কাগজের প্রয়োজন হয় না, এখন কেন?

রাজার মুরগি খাওয়ার গল্পটা শুরুতে বলেছিলাম এই কারণেই বা বুশ...। সরকারের সদিচ্ছা অতি উত্তম কিন্তু তার বাহিনী সেই মুরগিখাওয়া লাঠিয়াল বাহিনীর মতই...। বিস্তর সহায়তা করেছেন, Shahadat Hossain এবং Masuk Hridoy । তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
...
আপডেট: ৫ এপ্রিল, ২০১৫

সরকারের উদ্যোগটা কিন্তু চমৎকার কিন্তু লোকজনের কাজ করার ভঙ্গিটায় ঝামেলা আছে! জান্নাতকে নিয়ে আসতে সময় লাগবে। জান্নাতকে ওখানেই রেখে দেওয়া যায় কিনা এটাও ভাবা হচ্ছে...
আপাতত যে কাজটা করা গেছে- আজ জান্নাতের সঙ্গে জান্নাতের মার দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।  




গত বছর জান্নাতকে নিয়ে লেখাটা: