Search

Saturday, January 30, 2016

হানিফ সংকেত- অন্ধতমিস্র, আঁধারের শিক্ষক!

হানিফ সংকেত নামের মানুষটা ফজলে লোহানির হাত ধরে এই আলোকিত ভুবনে এসেছিলেন। ফজলে লোহানি অজানার দেশে চলে যাওয়ার পর এই মানুষটাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমশ একলা-একলি এক আলোকচ্ছটায় রূপান্তরিত হয়েছিলেন। এরপর তো ইতিহাস!

কায়দাদুরস্ত হানিফ সংকেত তাঁর ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে বছরের-পর-বছর ধরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, এখনও! কালে-কালে তিনি নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠলেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ অভূতপূর্ব! এই প্রজন্মের একটা স্যালুট তিনি পাওনা হন এতে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু এই করে করে বছরের-পর-বছর কেমন করে পার করে দিলেন এটা দেখে স্যালুটটা ফিরিয়ে নেওয়াটা দোষের হবে বলে মনে করি না।
এমনিতে হেন কোনও অসঙ্গতি নেই যা নিয়ে কটাক্ষ করা তাঁর অনুষ্ঠানে উঠে আসে না। এন্তার অসঙ্গতি নিয়ে তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দেন। ফাঁকে-ফাঁকে নাচ-গান তো আছেই। এটা ফ্রি, ডাল ফ্রি (আগের আমলের)।

কত বছর পূর্বে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ‘হোটেল সালাদিয়া’ নামের এই গানটা শোনা হয়েছিল মনে নেই। বহু বছর পর Download Free24-এর কল্যাণে গানটির খোঁজ পাওয়া গেল, কৃতজ্ঞতা।
যথারীতি হানিফ সংকেত জানাচ্ছেন গানটা লিখেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু এবং গেয়েছেন সান্টু। রিন্টু-সান্টু, সান্টু-রিন্টু, সান্টু-সান্টু-সান্টু, রিন্টু-রিন্টু-রিন্টু 'ইত্যাদি' অনুষ্ঠানে ঘুরেফিরে আমরা রিন্টু এবং সান্টুর নামই শুনে এসেছি। ভাগ্যিস এই ধরায় সান্টু-রিন্টু এসেছিল নইলে সর্বনাশ হয়ে যেত!

এ আরেক একলসেঁড়ে-অসামাজিক ভাবনা! হানিফ সংকেতের অভিধানে এই দেশে রিন্টু এবং সান্টু ব্যতীত গায়ক, গীতিকার নাই! সবাই বানের জলে ভেসে গেছে? বা হিমালয় পর্বতে চলে গেছে বাথরুম করার জন্য। আফসোস, বড়ই আফসোস- এই দেশ কবে পরিবারতন্ত্র-স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসবে কে জানে! যাই হোক, আমরা হোটেল সালাদিয়া গানটা শুনি:
সূত্র: Download Free24 (https://www.youtube.com/watch?v=yzMzyWzIGCo)

বেশ-বেশ, কেটে গেলে মুগ্ধতার রেশ, এখন আমরা তাহলে ইগলসের অসাধারণ অসম্ভব বিখ্যাত ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ গানটার কথা আলোচনায় নিয়ে আসি। যে-গানটি কোটি-কোটি শ্রোতাকে এমনই আলোড়িত করেছিল যে এই গান নিয়ে গুজবের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা এমন ডালই না মেলেছিল যে সেখানে রোদ ঢোকারও উপায় ছিল না। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। তারচেয়ে বরং গানটা শোনা যাক:

হায়, এরা তো ভাল করে চুরি করাও শেখেনি!  বটে রে, এহেন চৌর্যবৃত্তির জন্য আবার সুরকার গায়কেরও প্রয়োজন দেখা দেয়? যে মানুষটা ক্ষণে ক্ষণে নীতিকথা কপচান সেই মানুষটাই যখন ‘দিন দাহাড়ে’, এর বাংলা হবে দিন-দুপুরে চোখ ধাঁধানো আলোয় আয়োজন করে বছরের-পর-বছর ধরে এমনতরো কর্মকান্ড চালিয়ে যান তখন বুকের গভীর থেকে বেদনা পাক খেয়ে উঠে, এই দেশে আমাদের দাঁড়াবার জায়গার বড়ো অভাব...! 

*কেবল হানিফ সংকেতই না এমনতরো চুরি-চামারি চলেই আসছে এমন না। যেমন আরেকজন জাকারিয়া স্বপন []। 
হানিফ সংকেত, জাকারিয়া স্বপন এরা যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেন যথারীতি সেই গাছে ফল ধরে পেকে টসটস করে। এরাই তৈরি করছেন নষ্ট এক প্রজন্ম। তখন আর চুরির বালাই থাকে না জন্ম নেয় একেকটা আস্ত ডাকাত। কচু গাছ কাটতে-কাটতে ডাকাত!

অন্যদের কাছে কালো-কালো, দুবলাপাতলা-লিকলিকে হলেও আমার লেখা আমার কাছে সন্তানসম। আমার নিজের সন্তানদের পরিচয় দিতে হবে এই চোর-ডাকাতদের কাছে []? মরণ!

সহায়ক সূত্র:
১. ডিয়ার, তোমাকে কী ডাকাত বলতে পারি: https://www.ali-mahmed.com/2015/02/priyocom.html
২. ডাকাতচুঞ্চু http://www.ali-mahmed.com/2015/10/blog-post_29.html

... ... ...
আমি কেবল একটা চুরির প্রমাণ দিলাম। এই মানুষটার বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য চুরির অভিযোগ আনা যাবে। কালে-কালে এই মানুষটার মাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্র একটা আইডির ফলোয়ারের সংখ্যা ৫০ লক্ষ প্লাস!
 
 

Monday, January 25, 2016

স্মৃতি, কেবল স্মৃতিই বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে।

অতিথি লেখক Fakruddin Shahriar  লিখেছেন:
"চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিকথা বলা হবে আর ইউনিভার্সিটির সেই বিখ্যাত ট্রেনের কথা আসবে না তা কী করে হয়! তো, ইউনি'র সেই বিখ্যাত ট্রেন নিয়ে কিছু হালকা স্মৃতিচারণ করা যেতেই পারে। বিখ্যাত সেই ট্রেনের নান্দনিক কোনও বর্ণনা দেয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। চবি'র প্রতিটা ছেলে-মেয়ের হৃদয়েই আঁকা আছে বিখ্যাত এই ট্রেনের ছবি।

একবার আমাদের বন্ধুর এক কাজিন, যে কিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে একটু নাক উঁচা ভাব নিয়েই সকালবেলা আমাদের সঙ্গেই ট্রেনে রওনা হয়েছিল চবি দেখবে বলে…। বিকেলবেলা শহরে আসার পর এই মানুষটারই আফসোসের সীমা ছিল না কেন সে চবি'তে ভর্তি হয়নি!
তখন আমি সেকেন্ড ইয়ারে, ট্রেনের মজা কিছুটা থিতিয়ে এসেছে। আমার ছোট ভাই সবেমাত্র চবি তে ভর্তি হয়েছে। ওর কাছে ট্রেনের মজা তখনও নতুন। সেই সময়ে আমার বাবা প্রথমবারের মতো জাপান সফরে যান এবং সফর শেষে সবে ফিরে এসেছেন। তো, বাসার সবাই, মামা-চাচারা সহ আব্বার জাপান সফরের গল্প শুনছি। বিশেষ করে জাপানের বিখ্যাত বুলেট ট্রেনে আব্বার ভ্রমণের গল্প। জাপানের বুলেট ট্রেন সেই সময়ে সবেমাত্র সার্ভিসে এসেছে এবং যখারীতি বিশ্বের দ্রুততম ট্রেন।

আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে আব্বার বুলেট ট্রেনে চড়ার গল্প শুনছি, গল্পের মাঝেখানেই দুম করে ছোট ভাই আব্বার কাছে জানতে চাইল তিনি কখনো চবি'র ট্রেনে চড়েছেন কিনা? আব্বা বললেন, উনি চবি'তে বেশ অনেকবারই গিয়েছেন তবে গাড়িতে করে, ট্রেনে করে যাওয়া হয়নি। ছোটভাইয়ের সোজা জবাব, ‘তাহলে তো তোমার ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতাই পূর্ণ হয় নাই’!

যাই হোক, আমাদের সময়ে চবি ট্রেনের অনেকগুলো গ্রুপ এর মাঝে সবচেয়ে নামকরা গ্রুপটা ছিল 'খাইট্টা খা' গ্রুপ। ট্রেনে যাওয়া-আসার পথে এদের দেয়া বিনোদন তুলনাহীন, সত্যি বলতে কি প্রতিভা একেকটা! এই গ্রুপের বিখ্যাত গান, কবিতার নমুনা এমন:
'আমার সুখ নাই রে সুখ পরানের পাখি,
আঠারোটা বিয়া করলাম জেলায় জেলায় ঘুরি।
পরথমেতে বিয়া করলাম জেলা নোয়াখালি,
বউ আমার ভাল লাগেনা ভাল লাগে শালী।
তারপরেতে বিয়া করলাম জেলা চিটাগাং,
বউ আমার কথা শোনে না করে চটাং চটাং।
তারপরেতে বিয়া করলাম...।'
যাই হোক, সে এক লম্বা লিস্ট। আর বেশ কিছু বিখ্যাত (!) কবিতা কাম ছড়ার একটা ছিল: 
'ওগো প্রিয়তমা,
তুমি দাড়ি আমি কমা।
তুমি মশা আমি মশারী
তুমি ডাইল আমি খেশারি।
তুমি খাতা আমি কলম
তুমি ব্যথা আমি মলম।
তুমি সাগর আমি মাছ
তুমি পাহাড় আমি গাছ।
তুমি চা আমি কাপ
তুমি মা আমি ...!'
দিস লিস্ট গোওজ অন, প্রতিভা বটে একেকটা! এই স্মৃতির তালিকা্ আরো অনেক লম্বা। এবেলা বিলেতে এসে থিতু হয়েছি ট্রেনের জবে এবং বিশ্বের অনেক ধরনের ট্রেনেই চড়ার সৌভাগ্য হয়েছে তবুও মাঝে -মাঝে খুব মিস করি প্রিয় চবি'র অতি প্রিয় লক্কর-ঝক্কর সেই ট্রেনটিকে। স্মৃতি, আহ স্মৃতি…। "

‘এক গেলাসের ইয়ার’!

এই সরকারের অর্জন বলে কিছু নেই এটা বলাটা অতিশয়োক্তি হয়ে যায়! কিন্তু এরা মাঝে-মাঝে এমন কিছু কর্মকান্ড করে বসবে যার কারণে অর্জনের কফিনে পেরেক ঠোকাই সার। পুলিশ ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বীকে পিটিয়ে মাদকব্যবসায়ি বলে ক্রসফায়ারের আতংকেও রেখেছিল। নাটের গুরু পুলিশ কর্মকর্তা এস আই মাসুদ শিকদারকে প্রচলিত আইনে শাস্তি দিলেই হয় তা না ঘটা করে আবার আইজিপি সাহেব বক্তব্যও রাখেন,‘রাব্বী ফৌজদারি অপরাধ করেছেন’। এই সমস্ত কর্মকান্ড দেখার কেউ নেই!
এক পা লিমনের বিরুদ্ধে আমরা গোটা রাষ্টযন্ত্রের কামান তাক করে থাকতে দেখেছি অথচ এর কোনও প্রয়োজন ছিল না আদৌ! ভুলের খেসারত দিলেই হতো…। বা হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে সন্তান-স্বামীর সামনে ফের যৌন নির্যাতন করা হয় যে গৃহবধুটিকে,তাঁর চোখ চোখ রাখার ধৃষ্টতা কার আছে এই দেশে?
এটা সবাই বিলক্ষণ জানে আইনের শাসনের বালাই নেই। ২৮ বছর চলে গেছে চট্টগ্রাম গণহত্যার এখনও বিচার হয়নি, ভাবা যায়? এখন এই বিচার হলেই কি না-হলেই কী!

হালে যে ঘটনাটা ঘটে গেল এমনধারা ঘটনায় ভেসে যায় পদ্মা সেতু! আসাদগেট নিউ কলোনির বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর রেখেই ভবনগুলো ভাঙ্গা শুরু হয়। একেক করে ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অসভ্য কান্ড ঘটতে পারে এটা আমার কল্পনাতেও আসে না। আমি চোখ বন্ধ করে কেবল খানিকটা ভাবার চেষ্টা করতেই গা হিম হয়ে আসে। কারও বাচ্চা স্কুলে গেছে, পরিবারের কর্তা যথারীতি চলে গেছেন অফিসে বয়স্করা রয়ে গেছেন বাসায়; এমতাবস্থায় তাঁরা দেখলেন তাঁদের বসতবাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! শপথ আমার লেখালেখির, সমস্ত ভাবনা গুলিয়ে আমার মস্তিষ্ক স্রেফ জমে যায়। গুছিয়ে লেখার অভ্যস্ত হাত খেই হারিয়ে ফেলে…।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৬
দৈনিক প্রথম আলো অসাধারণ একটা প্রতিবেদন ছাপিয়েছে, ‘ভেতরে মানুষ, বাইরে হাতুড়ির ঘা’ (বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৬)। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে: ”বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভবন ভাঙ্গা হয়েছে…বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, নিউ কলেনি সোসাইটি ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে ১৮ জানুয়ারি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেই শুনানি পিছিয়ে ২১ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করে ভেঙ্গেছে…।“

“বাসিন্দারা অভিযোগ করেন”, “বাসিন্দারা অভিযোগ করেন”, “বাসিন্দারা অভিযোগ করেন”, বেশ-বেশ, বাসিন্দাদের অভিযোগ থেকে আমরা জানলাম ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ছিল। যে-কোনও অভিযোগ যে-কেউ করতেই পারেন কিন্তু পাঠকের এটা জানার উপায় নেই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে। এটা সত্য, কোনও সংবাদমাধ্যম কোনও প্রতিবেদনে নিজের মত প্রকাশ করতে পারে না কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটির কারণে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ এখানে স্ক্যান করে দিয়ে দেওয়াটাই সমীচীন ছিল।
স্পষ্টত এটা আদালত অবমাননা। এবম্প্রকার এহেন আদালত অবমাননা শাস্তিযোগ্য অপরাধ কি না সেটা আদালতের বিবেচ্য বিষয়।

অবশ্য এই সমস্ত পত্রিকার সংবাদের গুরুত্ব বোঝার আদৌ ক্ষমতা আছে কি না এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নও বটে। এবং এটা বোঝার জন্য নাসায় সিভি পাঠাবার প্রয়োজন পড়ে না। দৈনিক প্রথম আলো এই দিন এই সংবাদটি ছাপিয়েছে ভেতরে ৯ পৃষ্ঠায় এবং এই দিনই প্রথম পৃষ্ঠায় ঢাউস ছবি দিয়ে ছাপিয়েছে ‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো’।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৬
এটা হচ্ছে এদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন! এই হচ্ছে দেশের অগ্রসর একটা দৈনিকের নমুনা যারা ঘটা করে আমাদের শপথ করায়, দেশের আপামর জনতাকে বদলে দেওয়ার জন্য ‘গুছলেংটি’ খুলে -মুক্তকচ্ছ-কাছা খুলে নগ্ন হয়ে পড়ে। পত্রিকাটির ভেতরের ১৬ পৃষ্ঠার 'বিনোদন পাতায়' এটা ছাপালে এই পত্রিকার সর্দারদের কী পাঠক আহাম্মক বলত?
অথচ এদিনই ‘অধুনা’ নামে বাড়তি চার পাতায় মাহিয়া মাহির সুন্দর জীবন থেকে শুরু করে হাবিজাবি জিনিষে ঠাসা। ওখানে আমরা জানতে পারছি মাহিয়া মাহির প্রিয় খাবার ‘গরুর কালা ভুনা’। মাহিয়া মাহি গরুর কালা ভুনা, না কালা গরুর ভুনা খাবে নাকি তিমি মাছের ঝোল বা বাঘের দুধের পায়েস সেটা মতি ভাই বিশদ আকারে ছাপাবেন তাতে তো কোনও সমস্যা নেই। এখানেও কী ছাপাবার জায়গার আকাল হলো?

পত্রিকা চালনেো কম হ্যাপা না, খরচের বিষয়টা যে একেবারে বোধের বাইরে এমনও না কিন্তু তাই বলে...বাপু রে, আপনারা সবাই ‘এক গেলাসের ইয়ার’ সে নাহয় বুঝলুম তা শরীরে না সইলে এক পাত্র কম খেলে হয় না?

Saturday, January 9, 2016

ভোট-ম্যাজিক!

পত্রিকায় এসেছে এবারের পৌরসভা নির্বাচনে আ.লীগের ভোটের রেকর্ডে বিশ্লেষকেরা বিস্মিত! দলটি অনেক পৌরসভায় ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছে। কোথাও কোথাও যেমন সন্দ্বীপে পেয়েছে ৯৮ শতাংশ, কাজীপুর ৯৭, গফরগাঁও ৯৬...। বিশ্লেষকেরা অল্পতেই বিস্মিত হন। এতে বিস্মিত হওয়ার কী আছে- কোথাও তো আর ১০০ শতাংশ ভোট পাওয়ার উদাহরণ নাই। অতএব মামলা ডিসমিস।
অবশ্য আমার এখানে ভোট পাওয়ার গড় প্রায় ৮০ শতাংশ দেখে আমি মর্মাহত!

এমনিতে আমার এখানেও চমৎকার(!) ভোট হয়েছে। ভোট দিতে যাওয়ার পূর্বেই আমাকে ‘অভিজ্ঞ হেডমাস্টার’ টাইপের লোকজনেরা বললেন,‘যাইয়েন না’। হুশ-হুশ, বললেই হলো। আমি ‘দায়িত্ববান পুরুষ’(!) না-হতে পারি কিন্তু দায়িত্ববান নাগরিক হতে সমস্যা কোথায়!
গেছি ভোট দিতে। ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘আক্কাড়-পাক্কাড়’-অস্ত্রশস্ত্রের অভাব নাই, অভাব নাই মিডিয়ার লোকজনেরও। সেনাবাহিনী ব্যতীত সব বাহিনীর লোকজনেরাই এখানে আছেন। দেখে আরাম, চোখেরও আরাম। আগের দিন সন্ধ্যায়ও সমস্ত এলাকা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই মিলে বেশ একটা মহড়া দিয়েছেন, যা হোক। আমার মত নিরীহ লোকজনেরা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। হুঁ-হুঁ বাওয়া, আইনের বাইরে কিছু হলেই, ক্যাঁক, ক্যাঁক-ক্যাঁক-ক্যাঁক…।
তার উপর ভোটার তালিকা ছবিযুক্ত- একজনের ভোট অন্যজন দেবে সেই সুযোগ নাই।

তো, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা মানুষটা যখন আমাকে বললেন, ’আপনার ভোট তো দেওয়া হয়ে গেছে’, তখন আমি আকাশ থেকে পড়লাম। খানিকটা ধাতস্থ হয়ে আমি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালাম। এটা তাকে তাচ্ছিল্য করার জন্য না আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি যে নেই সেটা দেখাবার জন্য। ওয়ালেট থেকে আইডিও বের করলাম। মানুষটা যে হৃদয়বান(!) এতে অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নেই। তিনি বললেন,’এক কাজ করেন এই নামটা ফাঁকা আছে এই ভোটটা আপনি দিয়ে দেন’। আমি ওপথ মাড়াবার আগ্রহ বোধ করলাম না। এবং এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে গেলাম না কারণ জায়গাটা গরম। জাল ভোট দিতে এসেছি এটা বললে আটকাচ্ছে কে? ‘জাল ভোট প্রদানকারী’ লিখে গলায় ঝুলিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল আর মিডিয়া এসে ফটাফট ছবি তুলে ছাপিয়ে দিলে তখন আমার পাঠকরাই বলবেন: লোকটাকে তো ভালই জানতুম; ছি-ছি, ব্যাটার এই ছিল মনে! তবুও, তবুও যে-কোনও উপায়ে পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়াটা আমার মত মানুষের জন্য গর্বের কিন্তু কেন যেন আমি উৎসাহ বোধ করলাম না।

ভোট তালিকার ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী আমার মা'র ভোট নম্বরও পাশাপাশি। সেটায়ও দেখি টিক চিহ্ন দেওয়া। আমি ওখানে আঙ্গুল রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হড়বড় করে বললেন,’অ, এইটা, তিনি তো অনেক আগেই ভোট দিয়ে চলে গেছেন’।
আমার মা ভোট দিয়ে চলে গেছেন এতে আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু আমি বিমর্ষ হলাম, দুঃখিত হলাম। কারণ তিনি ভোটও দিলেন চলেও গেলেন অথচ আমাদের কারও সঙ্গে দেখাটিও করলেন না, আমার সঙ্গেও না! আমার চেয়ে ভোট বড় হলো, কী কষ্ট-কী কষ্ট! এই কষ্টের কথা কাকে বলি! হায় মর্ত্যুকাম!

পাদটীকা: বিখ্যাত কোনও লেখক লেখাটা এখানেই শেষ করতেন। পাঠকও নিমিষেই লেখার মরতবা বুঝে ফেলতেন। কারণ বিখ্যাত মানুষদের বানিয়ান-চাড্ডির খবর সবার জানা বা পরিবারের লোকজনের খবরাখবর মায় পোষা বেড়াল কুত্তাটার খবরও।
তাই আমার মত অতি অখ্যাত মানুষের এটা জানানোটা জরুরি হয়ে পড়ে যে আমার মা মারা গেছেন বছর তিনেক পূর্বে…।