পত্রিকায় এসেছে এবারের পৌরসভা নির্বাচনে আ.লীগের ভোটের রেকর্ডে বিশ্লেষকেরা বিস্মিত! দলটি অনেক পৌরসভায় ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছে। কোথাও কোথাও যেমন সন্দ্বীপে পেয়েছে ৯৮ শতাংশ, কাজীপুর ৯৭, গফরগাঁও ৯৬...।
বিশ্লেষকেরা অল্পতেই বিস্মিত হন। এতে বিস্মিত হওয়ার কী আছে- কোথাও তো আর ১০০ শতাংশ ভোট পাওয়ার উদাহরণ নাই। অতএব মামলা ডিসমিস।
অবশ্য আমার এখানে ভোট পাওয়ার গড় প্রায় ৮০ শতাংশ দেখে আমি মর্মাহত!
এমনিতে আমার এখানেও চমৎকার(!) ভোট হয়েছে। ভোট দিতে যাওয়ার পূর্বেই আমাকে ‘অভিজ্ঞ হেডমাস্টার’ টাইপের লোকজনেরা বললেন,‘যাইয়েন না’। হুশ-হুশ, বললেই হলো। আমি ‘দায়িত্ববান পুরুষ’(!) না-হতে পারি কিন্তু দায়িত্ববান নাগরিক হতে সমস্যা কোথায়!
গেছি ভোট দিতে। ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘আক্কাড়-পাক্কাড়’-অস্ত্রশস্ত্রের অভাব নাই, অভাব নাই মিডিয়ার লোকজনেরও। সেনাবাহিনী ব্যতীত সব বাহিনীর লোকজনেরাই এখানে আছেন। দেখে আরাম, চোখেরও আরাম। আগের দিন সন্ধ্যায়ও সমস্ত এলাকা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই মিলে বেশ একটা মহড়া দিয়েছেন, যা হোক। আমার মত নিরীহ লোকজনেরা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। হুঁ-হুঁ বাওয়া, আইনের বাইরে কিছু হলেই, ক্যাঁক, ক্যাঁক-ক্যাঁক-ক্যাঁক…।
তার উপর ভোটার তালিকা ছবিযুক্ত- একজনের ভোট অন্যজন দেবে সেই সুযোগ নাই।
তো, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা মানুষটা যখন আমাকে বললেন, ’আপনার ভোট তো দেওয়া হয়ে গেছে’, তখন আমি আকাশ থেকে পড়লাম। খানিকটা ধাতস্থ হয়ে আমি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালাম। এটা তাকে তাচ্ছিল্য করার জন্য না আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি যে নেই সেটা দেখাবার জন্য। ওয়ালেট থেকে আইডিও বের করলাম। মানুষটা যে হৃদয়বান(!) এতে অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নেই। তিনি বললেন,’এক কাজ করেন এই নামটা ফাঁকা আছে এই ভোটটা আপনি দিয়ে দেন’। আমি ওপথ মাড়াবার আগ্রহ বোধ করলাম না। এবং এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে গেলাম না কারণ জায়গাটা গরম। জাল ভোট দিতে এসেছি এটা বললে আটকাচ্ছে কে? ‘জাল ভোট প্রদানকারী’ লিখে গলায় ঝুলিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল আর মিডিয়া এসে ফটাফট ছবি তুলে ছাপিয়ে দিলে তখন আমার পাঠকরাই বলবেন: লোকটাকে তো ভালই জানতুম; ছি-ছি, ব্যাটার এই ছিল মনে! তবুও, তবুও যে-কোনও উপায়ে পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়াটা আমার মত মানুষের জন্য গর্বের কিন্তু কেন যেন আমি উৎসাহ বোধ করলাম না।
ভোট তালিকার ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী আমার মা'র ভোট নম্বরও পাশাপাশি। সেটায়ও দেখি টিক চিহ্ন দেওয়া। আমি ওখানে আঙ্গুল রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হড়বড় করে বললেন,’অ, এইটা, তিনি তো অনেক আগেই ভোট দিয়ে চলে গেছেন’।
আমার মা ভোট দিয়ে চলে গেছেন এতে আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু আমি বিমর্ষ হলাম, দুঃখিত হলাম। কারণ তিনি ভোটও দিলেন চলেও গেলেন অথচ আমাদের কারও সঙ্গে দেখাটিও করলেন না, আমার সঙ্গেও না! আমার চেয়ে ভোট বড় হলো, কী কষ্ট-কী কষ্ট! এই কষ্টের কথা কাকে বলি! হায় মর্ত্যুকাম!
পাদটীকা: বিখ্যাত কোনও লেখক লেখাটা এখানেই শেষ করতেন। পাঠকও নিমিষেই লেখার মরতবা বুঝে ফেলতেন। কারণ বিখ্যাত মানুষদের বানিয়ান-চাড্ডির খবর সবার জানা বা পরিবারের লোকজনের খবরাখবর মায় পোষা বেড়াল কুত্তাটার খবরও।
তাই আমার মত অতি অখ্যাত মানুষের এটা জানানোটা জরুরি হয়ে পড়ে যে আমার মা মারা গেছেন বছর তিনেক পূর্বে…।
অবশ্য আমার এখানে ভোট পাওয়ার গড় প্রায় ৮০ শতাংশ দেখে আমি মর্মাহত!
এমনিতে আমার এখানেও চমৎকার(!) ভোট হয়েছে। ভোট দিতে যাওয়ার পূর্বেই আমাকে ‘অভিজ্ঞ হেডমাস্টার’ টাইপের লোকজনেরা বললেন,‘যাইয়েন না’। হুশ-হুশ, বললেই হলো। আমি ‘দায়িত্ববান পুরুষ’(!) না-হতে পারি কিন্তু দায়িত্ববান নাগরিক হতে সমস্যা কোথায়!
গেছি ভোট দিতে। ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘আক্কাড়-পাক্কাড়’-অস্ত্রশস্ত্রের অভাব নাই, অভাব নাই মিডিয়ার লোকজনেরও। সেনাবাহিনী ব্যতীত সব বাহিনীর লোকজনেরাই এখানে আছেন। দেখে আরাম, চোখেরও আরাম। আগের দিন সন্ধ্যায়ও সমস্ত এলাকা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই মিলে বেশ একটা মহড়া দিয়েছেন, যা হোক। আমার মত নিরীহ লোকজনেরা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। হুঁ-হুঁ বাওয়া, আইনের বাইরে কিছু হলেই, ক্যাঁক, ক্যাঁক-ক্যাঁক-ক্যাঁক…।
তার উপর ভোটার তালিকা ছবিযুক্ত- একজনের ভোট অন্যজন দেবে সেই সুযোগ নাই।
তো, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা মানুষটা যখন আমাকে বললেন, ’আপনার ভোট তো দেওয়া হয়ে গেছে’, তখন আমি আকাশ থেকে পড়লাম। খানিকটা ধাতস্থ হয়ে আমি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালাম। এটা তাকে তাচ্ছিল্য করার জন্য না আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি যে নেই সেটা দেখাবার জন্য। ওয়ালেট থেকে আইডিও বের করলাম। মানুষটা যে হৃদয়বান(!) এতে অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নেই। তিনি বললেন,’এক কাজ করেন এই নামটা ফাঁকা আছে এই ভোটটা আপনি দিয়ে দেন’। আমি ওপথ মাড়াবার আগ্রহ বোধ করলাম না। এবং এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে গেলাম না কারণ জায়গাটা গরম। জাল ভোট দিতে এসেছি এটা বললে আটকাচ্ছে কে? ‘জাল ভোট প্রদানকারী’ লিখে গলায় ঝুলিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল আর মিডিয়া এসে ফটাফট ছবি তুলে ছাপিয়ে দিলে তখন আমার পাঠকরাই বলবেন: লোকটাকে তো ভালই জানতুম; ছি-ছি, ব্যাটার এই ছিল মনে! তবুও, তবুও যে-কোনও উপায়ে পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়াটা আমার মত মানুষের জন্য গর্বের কিন্তু কেন যেন আমি উৎসাহ বোধ করলাম না।
ভোট তালিকার ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী আমার মা'র ভোট নম্বরও পাশাপাশি। সেটায়ও দেখি টিক চিহ্ন দেওয়া। আমি ওখানে আঙ্গুল রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হড়বড় করে বললেন,’অ, এইটা, তিনি তো অনেক আগেই ভোট দিয়ে চলে গেছেন’।
আমার মা ভোট দিয়ে চলে গেছেন এতে আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু আমি বিমর্ষ হলাম, দুঃখিত হলাম। কারণ তিনি ভোটও দিলেন চলেও গেলেন অথচ আমাদের কারও সঙ্গে দেখাটিও করলেন না, আমার সঙ্গেও না! আমার চেয়ে ভোট বড় হলো, কী কষ্ট-কী কষ্ট! এই কষ্টের কথা কাকে বলি! হায় মর্ত্যুকাম!
পাদটীকা: বিখ্যাত কোনও লেখক লেখাটা এখানেই শেষ করতেন। পাঠকও নিমিষেই লেখার মরতবা বুঝে ফেলতেন। কারণ বিখ্যাত মানুষদের বানিয়ান-চাড্ডির খবর সবার জানা বা পরিবারের লোকজনের খবরাখবর মায় পোষা বেড়াল কুত্তাটার খবরও।
তাই আমার মত অতি অখ্যাত মানুষের এটা জানানোটা জরুরি হয়ে পড়ে যে আমার মা মারা গেছেন বছর তিনেক পূর্বে…।
No comments:
Post a Comment