ছবি সূত্র: প্রথম আলো, ২৫ মে ২০১৬ |
অবশ্য ৫২ বছর বয়স্ক খোকন গাজির স্বজনের অভিযোগ মিরপুরের দারোগা আরিফ হোসেন ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবী করেছিলেন। পুলিশকে ২ হাজার টাকাও নাকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এই মানুষটাকে ছাড় দেয়নি। ওই দারোগা আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় আসামি…’, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই মানুষটিকে আদালতে হাজির করার সময় হাতে হাতকড়া পরানো ছিল তাই পত্রিকাটি ফলাও করে খবরটা ছাপিয়েছে। এটা একটা সুপ্রতিবেদন এতে কোনও সন্দেহ নেই। আচরণটা খুবই ন্যাক্কারজনক কিন্তু কনস্টেবল পদমর্যাদার একজন মানুষের কাছ থেকে [*] আমাদের খুব একটা আশা করারও কিছু নেই। অল্পশিক্ষিত এই পুলিশকে বলা হয়েছে আসামিদেরকে এমন করে নেবে সে এমন করেই নেয়। পুলিশ প্রবিধানের ৩৩০ ধারা পড়ার সুযোগ কোথায় তার? আইনের কেতাবগুলো মুখস্ত করবে তার সে যোগ্যতাই বা কোথায়?
যাই হোক, এখানে পুলিশ খুব খারাপ কিন্তু সে ভিন্ন আলোচনার বিষয়। এই মানুষটিকে যখন আদালতে হাজির করা হয় তখন খোকন গাজির আইনজীবী আদালতকে বলেন, “…মাননীয় আদালত, দেখুন, লোকটি পঙ্গু। একা চলাফেরা করতে পারেন না। সন্দেহজনক আসামি হিসাবে তাঁকে ধরা হয়েছে। তাকে জামিন দেওয়া হোক। জামিন না পেলে তিনি কারাগারে চরম সমস্যার সম্মুখীন হবেন…।" (প্রথম আলো, ২৫ মে ২০১৬)
শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা এই মানুষটা জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। সোজা কথা, তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করেন যা কারাগারে নিক্ষেপ করারই সামিল।
আমাদের প্রচলিত আইনে আসামীকে ডকে-কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় সে যেই হোক না কেন। আইন বলে কথা- আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু…ধরা যাক, একজনের কোমর থেকে দু-পা নেই সে দাঁড়াবে কেমন করে? এখানে বিচারকের ‘inherent power’ থাকা লাগে না- এখানে তাঁর প্রজ্ঞা, বিবেচনা বোধই যথেষ্ঠ।
জামিন প্রসঙ্গে ফৌজদারী কার্যবিধিতে কি বলা আছে? "ফৌজদারী কার্যবিধি: ধারা ৪৯৬: যে সকল ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যাইবে: জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তি কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হইলে বা আটক থাকিলে, বা আদালতে হাজির হইলে বা তাহাকে হাজির করা হইলে, সে যদি উক্ত অফিসারের হেফাজতে থাকিবার সময় বা উক্ত আদালতের কার্যক্রমের কোন পর্যায়ে জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তাহা হইলে তাহাকে জামিনে মুক্তি দিতে হইবে: তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অফিসার বা আদালত উপযুক্ত মনে করিলে তাহার নিকট হইতে জামানত গ্রহণের পরিবর্তে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হইবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করিলে তাহাকে মুক্তি দিতে পারিবেন। তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোন বিধান ১০৭ ধারার (৪) উপধারা বা ১১৭ ধারার (৩) উপধারার কোন বিধানকে প্রভাবিত করিবে বলিয়া গণ্য করা হইবে না।"
"তবে আরও শর্ত থাকে যে, …" সেই শর্তের গভীরতা বাদ থাকুক বা বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা হয়েছে এই প্রসঙ্গেও গেলাম না। ধরে নিলাম এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ। সে ক্ষেত্রেও ধারা ৪৯৭-এ বলা হচ্ছে, “ফৌজদারী কার্যবিধি: ধারা ৪৯৭: যখন জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যাইবে : (১) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হইলে বা আটক থাকিলে অথবা আদালতে হাজির হইলে বা তাহাকে হাজির করা হইলে তাহাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যাইেত পারে; কিন্তু সে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী বলিয়া বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকিলে উক্তরূপে দেওয়া যাইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, আদালত এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি ষোল বৎসরের কম বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হইলে তাহাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারিবেন।“
এখানে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই যে খোকন গাজি নামের এই মানুষটা অক্ষম, শারীরিক ভাবে অক্ষম।
* Enamul Haque rabbi নামের কনস্টেবল পদমর্যাদারই একজন মানুষের আইন সম্বন্ধে জ্ঞান দেখে হাঁ হয়ে যাই মানুষটার জন্য টুপি খুলে অভিবাদন। এবং এমন করে লেখার জন্য লজ্জিতও হই, দুঃখপ্রকাশ করি!
সূত্র: http://tinyurl.com/zyxrop4
No comments:
Post a Comment