Search

Tuesday, August 30, 2016

ঠান্ডা মাথার খুনি!

স্কুলছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিসাকে মেরে ফেলা হয়েছে। ওবায়দুল নামের এক দরজি ব্যাটার ছুরিকাঘাতে রিসার মৃত্যু হয়। ঘটনাটা সবার জানা। দরজি ব্যাটা রিসার ফোন নাম্বার পাওয়ার পর রিসাকে উত্ত্যক্ত করত। এই করে-করে রিসাকে এক সময় ছুরিই মেরে বসে।
এই খুনের জন্য আইনে তার যে শাস্তি পাওনা তা নিয়ে কোনও প্রকার দ্বিমত নাই। রাষ্ট্রকে কখনও কখনও নিষ্ঠুর হতে হয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাউকে-কাউকে মেরে ফেলা ব্যতীত উপায় থাকে না।
এই দরজি ব্যাটার লেখাপড়ার দৌড় খুব একটা নাই এমনটাই প্রতীয়মান হয়। সিনেমায় যখন শিক্ষিত নায়িকাকে অশিক্ষিত নায়ক বা নায়িকাকে নায়ক উত্ত্যক্ত করে গায়ের জোরে উঠিয়ে নিয়ে আসে তখন আমরা যে বেদম হাততালি দিতে গিয়ে এমনই মশগুল থাকি যে পেছনে দাঁড়ানো ওবায়দুলকে লক্ষ করি না! বা ‘টিনের চালে ঢিল মারবেন কেন মিসকল দিন', বলে ফোন কোম্পানিগুলো ঘটা করে বিজ্ঞাপন দেয় তখন আমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিমল আনন্দে আনন্দিত হই। ভ্যালুজের তো আর এখন কোনও বালাই-ই নেই…।

এমনিতে যখন কেউ এখানে-সেখানে রাস্তায় কোনও মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে তখন আমরা না-দেখার ভান করে সরে পড়ি। বাই এনি চান্স,কেউ অভিযোগ করলেও আইনের লোকজনেরা খুব সূক্ষ ভাবে খেয়াল রাখেন সেই বীরপুঙ্গব ক্ষমতাশীন দলের পোলাপানরা কি না? ফল যা হওয়ার তাই হয় যে-কোনও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রাজপথ বেছে নেই। রাজপথে না-গিয়ে আমরা খুব একটা আরাম পাই না। সেটা খুনের বিচার হউক বা হলের দাবী অথবা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন খুনের বিচার!

চিকিৎসাবিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত লোকজনেরা জানেন রক্তক্ষরণে সময় কতটা মূল্যবান। সেখানে রিসার বেলায় আমি কেবল চোখ বন্ধ করে ভাবছি এখানে কত,কতটা অমূল্য সময়েরই না-অপচয় হয়েছে! বাংলা ট্রিবিউন নামের নিউজ পোর্টাল জানাচ্ছে:
…সেখানে উপস্থিত ছিলেন রিশার বাবা মো. রমজান হোসেন, মা তানিয়া হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। রিশার অভিভাবকরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিশা ছুরিকাহত হয় স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে। সেখান থেকে সে রক্তাক্ত অবস্থায় এসে দাঁড়ায় স্কুলের ভেতরে, তখন তার পেটের বাম দিক থেকে রক্ত পড়ছিল। কিন্তু তখন স্কুলের গাড়িটা পাশেই ছিল, কর্তৃপক্ষ তাকে গাড়িটা দেয়নি। কোনও শিক্ষক এগিয়ে আসেননি।
…স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বলেছেন, মামলা হবে, ধরা যাবে না।’ রিশার মা বিলাপ করে বলেন, ‘আমার বাচ্চার রক্ত পড়তেছিল, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালসহ কেউ এগিয়ে আসেননি। শিক্ষার্থীরা কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, পেটের ভেতর থেকে নাড়ি বের হয়ে গিয়েছিল।’ এ সময় তিনি স্কুল কম্পাউন্ডে থাকা গাড়ি দেখিয়ে বলেন, ‘ওই যে কতগুলো গাড়ি, কিন্তু আমার বাচ্চাকে কেউ একটা গাড়ি দেননি। দিলে আমার বাচ্চা বাঁচতো, ওরে তাড়াতাড়ি নেওয়া যেত হাসপাতালে।’…” (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন: http://tinyurl.com/z9p3bfq)

বাবারা যখন মাঠে-ঘাটে-আপিসে থাকেন তখন তার সন্তান থাকে স্কুল নামের এমন-এক প্রতিষ্ঠানে যেখানে শিক্ষক নামের অন্য এক পিতা। যিনি হাত ধরে-ধরে শেখান…। নামকরা স্কুল যেহেতু তাই অনুমান করছি আমাদের এই ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মহোদয়ের অফিসরুম ঠান্ডা-ঠান্ডা কুল-কুল। যথারীতি তার মাথাও ঠান্ডা থাকার কথা ওবায়দুলের মত গরম হওয়ার কথা না। রিসার পরিবারের অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে তিনি যে কাজটা করলেন এটাকে কেন ঠান্ডা মাথার খুন বলা হবে না?

No comments: