ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
রাষ্ট্রের কিছু পাপ থাকে । যেমন লিমন। লিমনকে অপরাধী প্রমাণ করতে গিয়ে রাষ্ট্র তার অধিকাংশ শক্তি প্রয়োগ করেছিল। আবার দলেরও কিছু পাপ থাকে, বিশেষ করে ক্ষমতাশীন দলের। প্রত্যক্ষ না-হলেও পরোক্ষ এই দায় এড়াবার উপায় নেই। কারণ আমাদের মাঝে প্রবল আকারে এই বিশ্বাসটা জন্মায় যে দল করলে সাত খুন মাফ। ফাঁসির আসামীও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে যায়।
যেমন, সম্প্রতি যে নৃশংস ঘটনাটা ঘটে গেল ঝিনাইদহে। শাহানুর বিশ্বাসের মেয়েকে উত্যক্ত করা হচ্ছিল। তিনি এর প্রতিবাদ করায় তাকে এমন নৃশংস ভঙ্গিতে নির্যাতন করা হয়েছে যে তাঁর হাঁটুর উপর থেকে দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। যথারীতি পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। অনেক ঝামেলা করে শাহানুর মামলা করতে পেরেছেন বটে কিন্তু এক নাম্বার আসামীসহ অধিকাংশ আসামীকেই পুলিশ ধরতে পারেনি। কেন? কেন আবার! আহা, এক নাম্বার আসামী মো.কামাল হোসেন যে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গো। আজব একটা দেশ এটা এই দেশে পুলিশ-ডাক্তার-শিক্ষক সবারই দল আছে। লাল দল-নীল দল! [১] ’ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোম’ নামের একটা রোগ আছে ওই রোগে লোকজনেরা বিচিত্র কারণে বিজাতীয় ভাষায় কথা বলে যেমনটা আমাদের দেশের প্রতিভাবান মানুষরাও নিজ-নিজ দলের পক্ষে বিচিত্র ভাষায় কথা বলে!
তো, ওখানকার ওসি মহোদয় মিডিয়ার কাছে বলেছেন, “…শাহানূর, কামাল দুজনের বিরুদ্ধেই অনেকগুলো মামলা আছে”।
ব্যস, আর কী! শাহানূরের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে এটা জানিয়ে প্রকারান্তরে তিনি বুঝিয়ে দিলেন ‘এই লুক অতিশয় খ্রাপ’ তাই এর দু-চারটা ঠ্যাং কেটে ফেললে কিচ্ছু যায় আসে না।
আচ্ছা, এই ওসিদের সমস্যা কী! এরা ‘বাইট্টারা’ টাইপের কথা কেন বলে? যেমন এক প্রসঙ্গে দাউদকান্দি থানার ওসি বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশের জানা ছিল না। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। [২]
অন্য আরেক প্রসঙ্গে ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাদী মামলা করতে দেরী করায় আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে”। [৩]
আবার হালের যে ঘটনাটা সাঁওতালদের সেখানকার ওসি সুব্রত সরকারও বলেন, ”ঘরে আগুন লুটপাটের ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। কারা আগুন দিয়েছে আমরা জানি না”। [৪]
বেশ-বেশ, নদীতীরে বসে কবিতা লেখার কারণে পুলিশের চারপাশের সবই অজানা থেকে যায় এবং কেউ অভিযোগ না-করলে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘লেগস আপ’ দূরের কথা ‘হ্যান্ডস আপ’ বলারও সুযোগ থাকে না। আচ্ছা, ধরুন আমি কোনো এতিমের কল্লা উড়িয়ে দিলাম। অবাক হবেন না এই খুনের জন্য পুলিশ আমাকে ধরবে না কারণ অভিযোগ করার জন্য কেউ তো আর বেঁচে নাই। কেবল জবাবদিহিতা করতে হবে নাপিতের কাছে কারণ কল্লার সঙ্গে এতিমের চুলও উড়ে গেছে বলে, বেচারা একটা খদ্দের হারালো কেবল এই কারণে।
আমি নিশ্চিত কামাল গংদের টিকির খোঁজও পুলিশ করত না যদি-না হাইকোর্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে এদেরকে আটক করার নির্দেশ দিতেন। কী আশ্চর্য, তাও পুলিশ আটক করতে পারেনি। কামাল হোসেন গংদের দয়ার শরীর, এরা মোট ১৩জন নিজেরাই আত্মসমর্পণ করেছে।
আফসোস, একটা রাষ্ট্রের স্তম্ভ কতটা নড়বড়ে হলে, কী পরিমাণ ফরমালিনে চুবানো থাকলে ক্ষণে ক্ষণে হাইকোর্টকে রুল জারি করতে হয়!
*এখানে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি বাল্যবিবাহ নিয়ে আমাদের অর্থমন্ত্রীর মহোদয়ের চুল যায়-যায় অবস্থা। জাতীয় দৈনিকের ফলাও করে একটা লেখা লিখেছেন যার শিরোনাম, "বাল্যবিবাহ নিয়ে খুবই চিন্তিত"।
অথচ আমরা শাহানূরের মেয়েদের কাতরতা জানছি যে এরা স্কুলে যেতে পারছে না। এমন পরিবারগুলোর সিদ্ধান্তের শেষ পরিণাম যে 'অকাল বিবাহ' এটা জানার জন্য মাথার চুল 'বিকল' করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে বলে তো আমার মনে হয় না।
সহায়ক সূত্র:
১. হরেক রকম জামা: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_09.html
২. তালেবানদের কী দোষ: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_24.html
যেমন, সম্প্রতি যে নৃশংস ঘটনাটা ঘটে গেল ঝিনাইদহে। শাহানুর বিশ্বাসের মেয়েকে উত্যক্ত করা হচ্ছিল। তিনি এর প্রতিবাদ করায় তাকে এমন নৃশংস ভঙ্গিতে নির্যাতন করা হয়েছে যে তাঁর হাঁটুর উপর থেকে দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। যথারীতি পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। অনেক ঝামেলা করে শাহানুর মামলা করতে পেরেছেন বটে কিন্তু এক নাম্বার আসামীসহ অধিকাংশ আসামীকেই পুলিশ ধরতে পারেনি। কেন? কেন আবার! আহা, এক নাম্বার আসামী মো.কামাল হোসেন যে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গো। আজব একটা দেশ এটা এই দেশে পুলিশ-ডাক্তার-শিক্ষক সবারই দল আছে। লাল দল-নীল দল! [১] ’ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোম’ নামের একটা রোগ আছে ওই রোগে লোকজনেরা বিচিত্র কারণে বিজাতীয় ভাষায় কথা বলে যেমনটা আমাদের দেশের প্রতিভাবান মানুষরাও নিজ-নিজ দলের পক্ষে বিচিত্র ভাষায় কথা বলে!
তো, ওখানকার ওসি মহোদয় মিডিয়ার কাছে বলেছেন, “…শাহানূর, কামাল দুজনের বিরুদ্ধেই অনেকগুলো মামলা আছে”।
ব্যস, আর কী! শাহানূরের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে এটা জানিয়ে প্রকারান্তরে তিনি বুঝিয়ে দিলেন ‘এই লুক অতিশয় খ্রাপ’ তাই এর দু-চারটা ঠ্যাং কেটে ফেললে কিচ্ছু যায় আসে না।
আচ্ছা, এই ওসিদের সমস্যা কী! এরা ‘বাইট্টারা’ টাইপের কথা কেন বলে? যেমন এক প্রসঙ্গে দাউদকান্দি থানার ওসি বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশের জানা ছিল না। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। [২]
অন্য আরেক প্রসঙ্গে ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাদী মামলা করতে দেরী করায় আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে”। [৩]
আবার হালের যে ঘটনাটা সাঁওতালদের সেখানকার ওসি সুব্রত সরকারও বলেন, ”ঘরে আগুন লুটপাটের ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। কারা আগুন দিয়েছে আমরা জানি না”। [৪]
বেশ-বেশ, নদীতীরে বসে কবিতা লেখার কারণে পুলিশের চারপাশের সবই অজানা থেকে যায় এবং কেউ অভিযোগ না-করলে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘লেগস আপ’ দূরের কথা ‘হ্যান্ডস আপ’ বলারও সুযোগ থাকে না। আচ্ছা, ধরুন আমি কোনো এতিমের কল্লা উড়িয়ে দিলাম। অবাক হবেন না এই খুনের জন্য পুলিশ আমাকে ধরবে না কারণ অভিযোগ করার জন্য কেউ তো আর বেঁচে নাই। কেবল জবাবদিহিতা করতে হবে নাপিতের কাছে কারণ কল্লার সঙ্গে এতিমের চুলও উড়ে গেছে বলে, বেচারা একটা খদ্দের হারালো কেবল এই কারণে।
আমি নিশ্চিত কামাল গংদের টিকির খোঁজও পুলিশ করত না যদি-না হাইকোর্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে এদেরকে আটক করার নির্দেশ দিতেন। কী আশ্চর্য, তাও পুলিশ আটক করতে পারেনি। কামাল হোসেন গংদের দয়ার শরীর, এরা মোট ১৩জন নিজেরাই আত্মসমর্পণ করেছে।
আফসোস, একটা রাষ্ট্রের স্তম্ভ কতটা নড়বড়ে হলে, কী পরিমাণ ফরমালিনে চুবানো থাকলে ক্ষণে ক্ষণে হাইকোর্টকে রুল জারি করতে হয়!
*এখানে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি বাল্যবিবাহ নিয়ে আমাদের অর্থমন্ত্রীর মহোদয়ের চুল যায়-যায় অবস্থা। জাতীয় দৈনিকের ফলাও করে একটা লেখা লিখেছেন যার শিরোনাম, "বাল্যবিবাহ নিয়ে খুবই চিন্তিত"।
অথচ আমরা শাহানূরের মেয়েদের কাতরতা জানছি যে এরা স্কুলে যেতে পারছে না। এমন পরিবারগুলোর সিদ্ধান্তের শেষ পরিণাম যে 'অকাল বিবাহ' এটা জানার জন্য মাথার চুল 'বিকল' করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে বলে তো আমার মনে হয় না।
সহায়ক সূত্র:
১. হরেক রকম জামা: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_09.html
২. তালেবানদের কী দোষ: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_24.html
৩. বেচারা এতিমদের উপায় কি: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_11.html