Search

Thursday, November 24, 2016

পাপ!

ছবি ঋণ: প্রথম আলো
রাষ্ট্রের কিছু পাপ থাকে । যেমন লিমন। লিমনকে অপরাধী প্রমাণ করতে গিয়ে রাষ্ট্র তার অধিকাংশ শক্তি প্রয়োগ করেছিল। আবার দলেরও কিছু পাপ থাকে, বিশেষ করে ক্ষমতাশীন দলের। প্রত্যক্ষ না-হলেও পরোক্ষ এই দায় এড়াবার উপায় নেই। কারণ আমাদের মাঝে প্রবল আকারে এই বিশ্বাসটা জন্মায় যে দল করলে সাত খুন মাফ। ফাঁসির আসামীও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে যায়।

যেমন, সম্প্রতি যে নৃশংস ঘটনাটা ঘটে গেল ঝিনাইদহে। শাহানুর বিশ্বাসের মেয়েকে উত্যক্ত করা হচ্ছিল। তিনি এর প্রতিবাদ করায় তাকে এমন নৃশংস ভঙ্গিতে নির্যাতন করা হয়েছে যে তাঁর হাঁটুর উপর থেকে দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। যথারীতি পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। অনেক ঝামেলা করে শাহানুর মামলা করতে পেরেছেন বটে কিন্তু এক নাম্বার আসামীসহ অধিকাংশ আসামীকেই পুলিশ ধরতে পারেনি। কেন? কেন আবার! আহা, এক নাম্বার আসামী মো.কামাল হোসেন যে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গো। আজব একটা দেশ এটা এই দেশে পুলিশ-ডাক্তার-শিক্ষক সবারই দল আছে। লাল দল-নীল দল! [১]ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোম’ নামের একটা রোগ আছে ওই রোগে লোকজনেরা বিচিত্র কারণে বিজাতীয় ভাষায় কথা বলে যেমনটা আমাদের দেশের প্রতিভাবান মানুষরাও নিজ-নিজ দলের পক্ষে বিচিত্র ভাষায় কথা বলে!

তো, ওখানকার ওসি মহোদয় মিডিয়ার কাছে বলেছেন, “…শাহানূর, কামাল দুজনের বিরুদ্ধেই অনেকগুলো মামলা আছে”। 
ব্যস, আর কী! শাহানূরের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে এটা জানিয়ে প্রকারান্তরে তিনি বুঝিয়ে দিলেন ‘এই লুক অতিশয় খ্রাপ’ তাই এর দু-চারটা ঠ্যাং কেটে ফেললে কিচ্ছু যায় আসে না।
আচ্ছা, এই ওসিদের সমস্যা কী! এরা ‘বাইট্টারা’ টাইপের কথা কেন বলে? যেমন এক প্রসঙ্গে দাউদকান্দি থানার ওসি বলেন,বিষয়টি পুলিশের জানা ছিল না। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। [২]

অন্য আরেক প্রসঙ্গে ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাদী মামলা করতে দেরী করায় আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে”[৩]

আবার হালের যে ঘটনাটা সাঁওতালদের সেখানকার ওসি সুব্রত সরকারও বলেন, ঘরে আগুন লুটপাটের ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। কারা আগুন দিয়েছে আমরা জানি না”। [৪] 

বেশ-বেশ, নদীতীরে বসে কবিতা লেখার কারণে পুলিশের চারপাশের সবই অজানা থেকে যায় এবং কেউ অভিযোগ না-করলে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘লেগস আপ’ দূরের কথা ‘হ্যান্ডস আপ’ বলারও সুযোগ থাকে না। আচ্ছা, ধরুন আমি কোনো এতিমের কল্লা উড়িয়ে দিলাম। অবাক হবেন না এই খুনের জন্য পুলিশ আমাকে ধরবে না কারণ অভিযোগ করার জন্য কেউ তো আর বেঁচে নাই। কেবল জবাবদিহিতা করতে হবে নাপিতের কাছে কারণ কল্লার সঙ্গে এতিমের চুলও উড়ে গেছে বলে, বেচারা একটা খদ্দের হারালো কেবল এই কারণে।
আমি নিশ্চিত কামাল গংদের টিকির খোঁজও পুলিশ করত না যদি-না হাইকোর্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে এদেরকে আটক করার নির্দেশ দিতেন। কী আশ্চর্য, তাও পুলিশ আটক করতে পারেনি। কামাল হোসেন গংদের দয়ার শরীর, এরা মোট ১৩জন নিজেরাই আত্মসমর্পণ করেছে।

আফসোস, একটা রাষ্ট্রের স্তম্ভ কতটা নড়বড়ে হলে, কী পরিমাণ ফরমালিনে চুবানো থাকলে ক্ষণে ক্ষণে হাইকোর্টকে রুল জারি করতে হয়!

*এখানে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি বাল্যবিবাহ নিয়ে আমাদের অর্থমন্ত্রীর মহোদয়ের চুল যায়-যায় অবস্থা। জাতীয় দৈনিকের ফলাও করে একটা লেখা লিখেছেন যার শিরোনাম, "বাল্যবিবাহ নিয়ে খুবই চিন্তিত"।
অথচ আমরা শাহানূরের মেয়েদের কাতরতা জানছি যে এরা স্কুলে যেতে পারছে না। এমন পরিবারগুলোর সিদ্ধান্তের শেষ পরিণাম যে 'অকাল বিবাহ' এটা জানার জন্য মাথার চুল 'বিকল' করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে বলে তো আমার মনে হয় না। 

সহায়ক সূত্র: 
১. হরেক রকম জামা: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_09.html
২. তালেবানদের কী দোষ: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_24.html
৩. বেচারা এতিমদের উপায় কি: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_11.html

৪. বেচারা বোংগা: http://www.ali-mahmed.com/2016/11/blog-post.html 

Saturday, November 19, 2016

বেচারা 'বোংগা'!

সাঁওতালরা তাদের ভাষায় দেবতাকে বলে 'বোংগা'। বেচারা বোংগা, এঁরা এদেরকে কেবল তির চালাবার বর-ই দিয়েছেন আমাদের মত আধুনিক মারণাস্ত্র চালাতে, কারও বসতভিটায় আগুন লাগাতে শেখাননি।
দেখো দিকি কান্ড, সাঁওতালরা আবার নিজেদেরকে একলব্যের বংশধর বলে দাবী করে থাকেন। একলব্যকে তাদের আদিপুরুষ, এই বিশ্বাসে (একলব্য গুরুদক্ষিণায় নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি দান করেছিলেন বিধায়) সাঁওতালরা বৃদ্ধাঙ্গুলির ব্যবহার করেন না।
এমনিতে সাধু কানু, কানু মাঝি, মাতলা সাওতাল এঁদের নিয়ে গল্প করতে আমরা খুব পছন্দ করি কিন্তু তাঁদের সন্তানদেরকে একবিন্দু ছাড় দিতে আগ্রহ বোধ করি না।
ছবি ঋণ: বিবিসি, বাংলা
একটা সভ্য দেশে এভাবে শত-শত লোকজনকে উচ্ছেদ করা যায় আগুন লাগিয়ে দেয়া যায় এ কেবল অকল্পনীয়ই না, অভাবনীয়!
ওরে, কেউ দেখি কিসসু জানে না! ভাগ্যিস, দেশে সম্ভবত তখন শাহরিয়ার কবির ছিলেন না নইলে তিনি ঠিকই বের করে ফেলতেন যে এটায় একাত্তরের মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাত আছে। সম্প্রতী নাসিরনগরের ঘটনায় তিনি এটা আবিষ্কার করেছেন যদিও মিডিয়া বলছিল এটা পরিষ্কার দৃশ্যমান যে এখানে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটা ঘটেছে। তখন তিনি পাঞ্জাবীর পকেট থেকে কামানের গোলাটা ছুড়ে দেন এই বলে, "আওয়ামী লীগে ঢুকে (জামায়াত) নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে"।

যাই হোক, আমাদের মত সাঁওতালদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লোকজন কোথায়? যেমন শিল্পসচিব মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “৬ নভেম্বর চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়েছিলেন পাশের একখন্ড জমিতে আখের বীজ কাটতে, উচ্ছেদ অভিযানে নয়। কিন্তু অবৈধ দখলদারেরা তাতে বাধা দেন। তির-ধনুক নিয়ে তারা আক্রমণ করেন”।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত সরকার বলেন, ”ঘরে আগুন লুটপাটের ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। কারা আগুন দিয়েছে আমরা জানি না”।
এই হচ্ছে আমাদের বেতনভুক্ত কর্মচারীদের কথার নমুনা। নমুনা এমনটা হবেই-বা না কেন কারণ এদের কখনই বেতন বন্ধ হবে না প্রকারান্তরে চাকরি যাবে না! এই দেশে এর তেমন চল নাই।

যে জমি নিয়ে এই হুজ্জত সেই জমি প্রসঙ্গে জমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ”১৯৪৮ সালের অধিগ্রহণ আইন অনুসারে যে চুক্তি হয় তাতে বলা হয়েছে, জমিতে আখ ছাড়া অন্য ফসলের চাষ হলে প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত দিতে হবে”।
এমনিতে অধ্যাপক বারাকাতের সংশয় যথার্থ বলে আমি মনে করি। অধিগ্রহনের সময় তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল এমন তথ্য তিনি এখনো কোনো কাগজে পাননি। আমার ধারণা ভুল হতে পারে কিন্তু পূর্বে এঁদের ক্ষতিপূরণ না-পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
সে প্রসঙ্গ থাকুক। এর সঙ্গে খানিকটা তথ্য যোগ করি। সর্বশেষ যে আইনটি অধিগ্রহণের, এখানেও ব্যত্যয় হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল অধ্যাদেশ, ১৯৮২ (১৯৮২ সালের ২নং অধ্যাদেশ)তাতে বলা হয়েছে, ধারা ১৭ (অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির ব্যবহার):
১. এ অধ্যায়ের অধীন অধিগ্রহণকৃত কোনো সম্পত্তি, যে উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তা ভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত ব্যবহার করা যাবে না। 
২. যদি কোনো প্রত্যাশী সংস্থা (যাদের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে) অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি উপধারা (১) এর বিধান উপেক্ষা করে ব্যবহার করেন অথবা যে উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করেন তাহলে তিনি জেলা প্রশাসকের নিকট তার নির্দেশে উক্ত সম্পত্তি সমর্পণ করতে দায়ী থাকবেন। 

আমি পূর্বের কোনো-এক লেখায় লিখেছিলাম দেশ হচ্ছে মা, রাষ্ট্র পিতা। একজন পিতা তার সব সন্তানের বেলায়ই সমান মমতা বোধ করবেন, এটা না-হওয়াটাই অসমীচীন, অন্যায়। পাশের রাষ্ট্র ভারত নিয়ে আমরা বিস্তর রসিকতা করি। এদের এতো শতাংশ লোকজনের টাট্টিখানা নেই এতো শতাংশ লোকজন খোলা আকাশের নীচে হাগে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্ত এঁদের রাষ্ট্র নামের পিতা তাঁর সন্তানদের বেলায় কোনো প্রকারের ছাড় দেয় না। উদাহরণ দেই?
আগরতলা-আখাউড়া ১৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্যে ১০ কিলোমিটারের জন্য বাংলাদেশ নষ্ট করছে তার সন্তানদের বসতভিটা, ফসলি জমি, পানির আধার, পূর্বপুরুষের পুরনো হাড়! অন্যদিকে ভারত তার অংশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ কিলোমিটারই করছে আকাশে- উড়ালরেল!

আপডেট:
* আজ মিডিয়ায় এটা পড়ছি, "ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, 'আমি সাঁওতালদের উচ্ছেদ চাই'। তাঁর কন্ঠে আইযুব খানের কন্ঠস্বর শুনছি। এটা সাম্প্রদায়িক দম্ভোক্তি।" (প্রথম আলো ২০ নভেম্বর ২০১৬, পৃষ্ঠা: ২)