তাঁর সন্তান হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে চলে এসেছে। সন্তানের জন্য তার বাবার হিমশীতল শরীরের চেয়েও অন্য রকমের এক বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। বাবাকে গোরস্থানে শুইয়ে দিয়ে এসে কিছু-একটা খুঁজতে গিয়ে বাবার ব্যক্তিগত কাগজপত্র থেকে একে একে বের হয়ে এলো…!
ওয়াল্লা, বাবা তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন?! কই, বাবা তো কখনও কোনও প্রসঙ্গেও এর উল্লেখ করেননি!
তিনি। তাঁর মৃত্যু হয় ৮৩ বছর বয়সে। এ বছরই, বিজয়ের মাসের মাত্র কিছু দিন পূর্বে। আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলেই তিনি ৪৭তম বিজয় দিবস দেখে যেতে পারতেন।
এই মানুষটারই সন্তানের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্র অন্যায় করেছিল, ঘোরতর অন্যায়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যে মানুষটা এই দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন রাষ্ট্রযন্ত্র যখন তাঁর নিরপরাধ সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তখনও তিনি অসহ্য কষ্ট সহ্য করেছেন কিন্তু নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা এই পরিচয় প্রকাশ করে কোনও সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেননি। এমনকি মৃত্যুর আগপর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে এক পয়সা সম্মানী-ভাতা গ্রহণ করা দূরে থাক কাউকে বলেননি পর্যন্ত! কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানা হবে না কখনও কারণ এই প্রশ্নের উত্তর যিনি দিতে পারতেন তিনি এখন অন্য ভুবনে। এই ভুবনের আনন্দবেদনায় এখন আর তাঁর কিছুই যায় আসে না। তবে এঁদের মতো মানুষ [১] কেন ঠিক ১৬ ডিসেম্বরেই ফাঁস দেন বেদানার জায়গাটা এখন খানিকটা বুঝি।
পরিতাপের সঙ্গে বলি এখন এই মানুষটাকে নিয়ে লিখে আমি একপ্রকারের অন্যায় করছি, জেনেশুনে। কারণ মানুষটা জীবিতবস্থায় কখনও চাননি তাঁর এই পরিচয় প্রকাশ করা হোক। এমনকি এখন তাঁর সন্তানও চান না তাঁর বাবার কোনও তথ্য আমি শেয়ার করি। কিন্তু আমি জ্ঞাতসারে এই অন্যায়টা করছি...।
যে দেশে শূন্য বয়সের মুক্তিযোদ্ধা, মার গর্ভে থেকেই যুদ্ধ করে এমনকি ১৯৭১ সালে যার বাবার বিয়েও হয়নি (একজন মুক্তিযোদ্ধার বাবার বিয়ে হয়েছে ১৯৭৮ সালে) এরা সবাই এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এতো বীর এই দেশ ধারণ করবে কেমন করে…!
সহায়ক সূত্র:
১. সুরুয মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_21.html