নেপালে আমাদের বিমান মুখ থুবড়ে পড়ল। চোখের নিমিষেই নরক! বিমানের চারপাশ জুড়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আমাদেরই কারও-না-কারও স্বজনের চামড়া চড়চড় করে পুড়ছে, শ্বাসনালি পুড়ছে। আমাদের চারপাশে হু হু করে বাতাস বয় কিন্তু এই মানুষগুলোর গোটা শরীর জুড়ে অন্য ভুবনের কষ্ট- তাঁরা এক ফোঁটা বাতাসের জন্য হাহাকার করছেন।
পরে
আমরা জেনেছি কারও-কারও শতভাগ চামড়া পুড়ে গোটা শরীর অঙ্গার হয়েছে। স্রেফ কয়লা! অতি প্রিয় মানুষটিকেও চেনার উপায় নেই! কারও শরীরের ৩০, ৫০, ৮০ ভাগ চামড়া পুড়ে গেছে।
আমরা জেনেছি কারও-কারও শতভাগ চামড়া পুড়ে গোটা শরীর অঙ্গার হয়েছে। স্রেফ কয়লা! অতি প্রিয় মানুষটিকেও চেনার উপায় নেই! কারও শরীরের ৩০, ৫০, ৮০ ভাগ চামড়া পুড়ে গেছে।
ওদিকে খুব কাছাকাছি সময়েই মিরপুর বস্তিতে আগুন ধরে হাজার-হাজার পরিবার নিঃস্ব হল। নোংরা ওয়াসার পানির সঙ্গে মিশে যায় তাঁদের চোখের জল।
ঠিক তখন, ঠিক তখনই, একজন, একজন ‘লেখুড়ে’ এই লেখাটা দিলেন হাসতে হাসতে, বিমল আনন্দের ইমোসহ।
লেখার মোদ্দা কথা হলো, এক রাজনৈতিক নেতার জামিন হওয়ার সম্ভাবনা দিয়েছে। এবং এই সম্ভাবনা হতে-না-হতেই এই প্রলয়কান্ড ঘটে গেছে। কোনও উপায়ে এই রাজনৈতিক নেতা মুক্ত হয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশের আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। ব্লা-ব্লা-ব্লা।
বাহ, কী চমৎকার ভাবনা, গ্রে মেটার-ইয়েলো মেটার জড়াজড়ি হওয়ার কুফল! শোনো কথা, সাধারণ একজন মানুষের কারণে নাকি আকাশ থেকে প্লেন ঝুলে পড়ে, আপনা-আপনি আগুন ধরে সব ছারখার হয়ে যায়। ‘লেখুড়ে’ মহোদয়ের ওই লেখায় আবার আল্লাহ-খোদার দোহাইও আছে! বাহ…! ভারী খোদাভক্ত মানুষ দেখছি।
কারও-কারও কাছে আলোচিত এই রাজনৈতিক নেতার অসংখ্য কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা করার মত রসদ থাকতেই পারে কেউ সেসব নিয়ে সমালোচনা করতেই পারেন সে ভিন্ন প্রসঙ্গ, কিন্তু…!
‘রসিকমানুষ’ টাইপের লোকজনেরা এটাকে রসিকতা বলার চেষ্টা করলে আমি বলব ওই সময়ের জন্য এটা অতি কদর্য রসিকতা। মূহ্যমান- শোকার্ত হাহাকারকরা একটা দেশের অক্সিজেন পাইপে পা রেখে আর যাই হোক রসিকতা করা চলে না। তারপরও ‘লেখুড়ে’ ‘রসিকমানুষ’ কেউ এটাকে রসিকতা বলে কস্তাকস্তি করলে আমি তাদের সঙ্গে কুস্তি লড়তে যাব না কেবল ‘তাজুরবার’ হাত ধরে বলব, আগুনে যখন চামড়া পোড়ে অনুভূতিটা কেমন লাগে কোনও প্রকারের কি কোনও ধারণা আছে, মহোদয়গণ? নাই?
অাহা, এর জন্য নেপাল বা মিরপুরে ‘ভরমন’ করার প্রয়োজন নাই মাত্র ১০ সেকেন্ড নিজের চামড়ায় একটা জ্বলন্ত সিগারেট ঠেসে ধরলেই হবে? ইয়ে কেমন লাগছে- অনুভূতিটা কেমন? মজা, না?
এই ব্লগস্ফিয়ারে বিশেষ করে ‘ফেসবুক’ নামের এই লেখালেখির জায়গাটা একেবারেই ভিন্ন। এখানে অনেকে যা-খুশি লিখে দেশ উদ্ধার করেন এবং কেউ-কেউ অল্প সময়েই একেকটা স্টার বনে যান। এদের জাঁক করার নমুনা শুনলে আকাশের স্টার গড়িয়ে পড়বে- চলমান একেকটা স্টার যে। আমরা পুরনো পাপী যারা তারা এইসব খানিকটা উদাসীন দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করি। যাক, বঙ্গালের লেখার জায়গা নেই যে-কোনও প্রকারে লিখছে যখন, আহা লিখুক না। লিখছে তো…।
তো, এদের নিয়ে শব্দের অপচয় করাটা আমার কাছে মস্ত বেওকুফি- এখানে শব্দকৃপণতা না করে উপায় নেই।
কিন্তু এই ‘লেখুড়ে’ মহোদয়ের বেলায় এই কৃপণতা খাটে না। যতটুকু জানি এই মানুষটা বৈদেশে লেখাপড়া করেছেন। সো কল্ড উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার প্রয়াস করেছেন। এবং পূর্বেও বিভিন্ন ব্লগস্ফিয়ারে লিখেছেন।
তো, তার ওই লেখাটা (স্ক্রিণশট:১) পড়ার পর কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। আবার সহৃদয় কেউ-কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইডি কী হ্যাক হলো রে?
না, ভুল। তারও পূর্বে বিভিন্ন সময়ে লেখুড়ে মহোদয় যে সমস্ত লেখা লিখেছেন ওখান থেকে একটা উদাহরণ দেই।
এর সারমর্ম হলো ডায়াপার পরার সময় থেকেই বেদম শখ ডায়াপারের পকেটে(!) কোন এক বিচিত্র উপায়ে নিউক্লিয়ার বোমা পেয়ে গেলে তিনি পাকিস্তানের একটি শহরকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতেন।
এ সত্য, পাকিস্তানি আর্মি নামের চলমান দানবদের কোনও প্রকারেই যোদ্ধা বলা চলে না। অন্তত আমি পাকিস্তানি আর্মিকে যোদ্ধা বলে স্বীকার করি না, এরা ছিল একেকটা সাইকোপ্যাথ, দানব! আফসোস, এদের সহযোগীদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গেলেও এদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি! আফসোস, মর্মান্তিক আফসোস! আজ এদের অনেকেই জীবিত নেই- অধিকাংশই বয়সের ভারে ন্যুব্জ, অনেকেই মরে ভূত।
সবই সত্য কিন্তু এই মানুষটা এখন, এই সময়ে এসে ঠান্ডা মাথায় একটি শহরের ৩০ লক্ষ যুবা, শিশু, মহিলা যাদের অধিকাংশই ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্মায়নি তাদের সবাইকে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন। এমন একটা ভাবনা একজন মানুষের হয় কেমন করে! এ যে মানবের খোলস খুলে দানবে রূপান্তরিত হওয়ার চেষ্টা মাত্র। এ যেন দানবের জয় মানবের পরাজয়!
যে-কারও দেশপ্রেম থাকাটা খুব জরুরি। দেশপ্রেম হচ্ছে একটা মা’র মত। কিন্তু তীব্র মমতায় মাকে এতটা জোরে আঁকড়ে ধরা চলে না যেন দমবন্ধ হয়ে মা’র মৃত্যু হয়…।
No comments:
Post a Comment