সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে লিখছেন, Nishom Sarkar
রফিক এই মুহুর্তে তার আম্মাকে নিয়ে হাসপাতালে। তার আম্মার পেপটিক আলসারের সমস্যা বিকট আকার ধারণ করেছে। গতকাল রাতে পেট ব্যাথা, বমি করে খুব খারাপ
অবস্থা। ভোর বেলায় সেহেরি করেই চলে এসেছে তাই হাসপাতালে।
-আম্মা বলেন।
- সারাটাদিন কি দেখস এই মোবাইলটাতে, তুই বল তো আমারে!
- আপনে বুঝবেন না আম্মা। কিছু খাবেন?
- অল্প কইরা ভাত আন।
- ভাত হাসপাতাল থেইকাই দিবো।
রফিকের আম্মা এবার কাতর হয়ে বলেন, তাইলে ইট্টু স্যুপ কইরা আন ।
রফিক মোবাইল পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বের হয় বাইরে। গতকালই সে একটা ভিডিও শেয়ার
দিয়েছে। ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর-এর নির্দেশে লালমাটিয়া এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে
যেনো সব খাবার দোকান, টং এর দোকান সব বন্ধ রাখা হয় দিনের বেলায়।
সেই ভিডিওটাই 'শাবাস, বাঘের বাচ্চা' লিখে শেয়ার দিয়েছিলো রফিক, ১৮০০লাইক আর দুশো কমেন্ট! দেখেই ভালো
লাগছে।
রাস্তায় এসে সে প্রকৃত অর্থেই বোকা** হয়ে গেলো! একটা খাবারের দোকানও খোলা নেই।
রিকশা নিয়ে পুরো এলাকা চক্কর দিলো, কোন দোকান খোলা নেই। সে হাসপাতালের
ক্যান্টিনে গেলো, ক্যান্টিন বন্ধ। ছোলা সিদ্ধ দিয়েছে, ইফতারীর জন্য। সে শুকনা
মুখে জিজ্ঞাসা করলো, 'ভাত কি হইছে? আমার আম্মা অসুস্থ, উনার একটু আগে আগে
খাওয়া দরকার'।
ক্যান্টিনের লোকটা হতাশ হয়ে বললো, 'বাবুর্চি চলে গেছে। বলছিলাম
অল্প-স্বল্প করে রান্না করতে। কিন্তু সে বললো, রোজা রেখে এই কাজ করতে পারবে না। আমিও
বেশী জোড়াজুড়ি করি নাই ভাই। ইয়ে, চিপস আছে, চিপস নিয়া যান।'
রফিকের গভীর শ্বাস ফেলে ভাবল, কয়েকটা নাস্তিকের বাচ্চা ফেসবুকে বারবার লিখছিলো, যারা অসুস্থ, যারা অমুসলিম
তারা কোথায় খাবে, তারা কিভাবে না খেয়ে থাকবে। তখন রফিক বাপ-মা তুলে গালিগালাজ করেছিল কিন্তু আজকে নিজে যে এই
ঝামেলায় পরবে, তা স্বপ্নেও ভাবেনি। রফিক তার কলেজ জীবনের এক হিন্দু বন্ধুকে
ফোন দেয়, কলেজ জীবনে এই বন্ধুকে ওরা 'আকাটা' বলে ক্ষেপাতো।
বন্ধু উল্লসিত, কি রে এতোদিন পরে হঠাৎ?
রফিক বিব্রত হয়ে বলল, একটা দরকারে ফোন দিলাম।
-বল।
-আম্মা অসুস্থ খুব।
-কস কী, খালাম্মা কই?
-হাসপাতালে। তোদের বাসা থেকে একটু ভাত দিতে পারবি?
বন্ধু হাসে, আকাটাদের ভাত খাবি? পাপ হবে না তো?
রফিক চুপ করে থাকে, আস্তে করে বলে, 'না। তুই একটা টিফিন বাক্সে ভর। আমি আসতেছি'।
(এটা শুধুই একটা গল্প। কিন্তু কোন হাসপাতালেই কী এরকম হওয়া সম্ভব না? বোঝানোর জন্য
লিখলাম যে অসুস্থ, নন-মুসলিমরাও মানুষ। জোর করে তাদেরকে না খাইয়ে রাখাটা কোন
ভাল কাজ হতে পারে না। আর ৩২নং ওয়ার্ডের ঘটনাটা সত্যি। সেখানে আসলেই দোকান বন্ধ
রাখবার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। ভিডিওটা কমেন্টে দিচ্ছি। আমি কেবল চিন্তা করি,
আমরা রোজা রাখি বেশ, হোটেল খাওয়ার দোকান খোলা থাকলে আমাদের সংযমের বারোটা বেজে
যায়! আর আমাদের আম্মারা যুগযুগ ধরে রোজা রেখে রান্নাঘরে একের পর এক রান্না করে
যান, উনাদের সংযমে কোন সমস্যা হয় না...।) Nishom Sarkar
No comments:
Post a Comment