এ মানুষটা আমার কাছে জানতে চাইছিল 'অ্যালিস হাউস' কোনটা? অ্যালিস নামের কেউ এখানে থাকে তার আবার বাসাও আছে এমনটা অন্তত আমার জানা নেই তাই আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, 'অ্যালিসের বাসা তুমি কেন খুঁজছ'?
সে যেটা বলল, লোকজনেরা নাকি তাকে বলেছে অ্যালিসের বাসায় সাপের ডিম, ব্যাঙের ঠ্যাং রাজ্যের আবর্জনা আছে। অনুমতি থাকলে তার দেখার প্রবল ইচ্ছা।
এবার আমার বোঝার বাকী রইল না লোকজনেরা যার কথা বলেছে সেই চিড়িয়াখানার চিড়িয়া আমি ব্যতীত আর কেউ না। আলী এর কাছে হয়ে গেছে অ্যালিস এবং যথারীতি আলীর বাসা 'অ্যালিস হাউস'!
সে যেটা বলল, লোকজনেরা নাকি তাকে বলেছে অ্যালিসের বাসায় সাপের ডিম, ব্যাঙের ঠ্যাং রাজ্যের আবর্জনা আছে। অনুমতি থাকলে তার দেখার প্রবল ইচ্ছা।
এবার আমার বোঝার বাকী রইল না লোকজনেরা যার কথা বলেছে সেই চিড়িয়াখানার চিড়িয়া আমি ব্যতীত আর কেউ না। আলী এর কাছে হয়ে গেছে অ্যালিস এবং যথারীতি আলীর বাসা 'অ্যালিস হাউস'!
ইলিয়াস নামের এই মানুষটা সাইকেলে করে পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়েছে। সাইকেল নামের ওই জিনিসটায় কী নেই! ঘটিবাটি, চুলা, তাবু সবই আছে। ২৭টা দেশ ঘুরে সে বাংলাদেশে এসেছে এখান থেকে মায়ানমার হয়ে লাউস, কম্বোডিয়া হয়ে কোথায়-কোথায় যেন যাবে।
যে-সব দেশ এ ঘুরে এসেছে একেক করে যখন নাম বলা শুরু করল তখন আমার পক্ষে মনে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল অথচ এ এই দেশগুলো ঘুরে এসেছে। ভারতেই ছিল ঝাড়া দুই মাস। আমি বললাম, 'এক কাজ করো, দেশগুলোর নাম কাগজে লিখে দাও'।
দুই বছর ধরে এ বাড়ির বাইরে। ঘুরে-ঘুরে এর অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। এখন আরও দুই বছর ভ্রমণ করার প্রকাশ্য-গোপন ইচ্ছা এর আছে। ইলিয়াস এবং ইলিয়াসের নামের পরের অংশ বড়ই খটমটে তাই আগেভাগেই বলে নিয়েছি মনে রাখার সুবিধার্থে তোমাকে ইলিয়াস কাঞ্চন ওরফে ইলিয়াস ডাকব।
সেসময় এই মানুষটার তখন খুব তাড়া। সে মাত্রই আগরতলা বর্ডার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে এবং ভিসা সংক্রান্ত কি-এক জটিলতার কারণে খানিক পরই সাইকেলে করে ঢাকায় রওয়ানা হবে।
দুই বছর ধরে এ বাড়ির বাইরে। ঘুরে-ঘুরে এর অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। এখন আরও দুই বছর ভ্রমণ করার প্রকাশ্য-গোপন ইচ্ছা এর আছে। ইলিয়াস এবং ইলিয়াসের নামের পরের অংশ বড়ই খটমটে তাই আগেভাগেই বলে নিয়েছি মনে রাখার সুবিধার্থে তোমাকে ইলিয়াস কাঞ্চন ওরফে ইলিয়াস ডাকব।
সেসময় এই মানুষটার তখন খুব তাড়া। সে মাত্রই আগরতলা বর্ডার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে এবং ভিসা সংক্রান্ত কি-এক জটিলতার কারণে খানিক পরই সাইকেলে করে ঢাকায় রওয়ানা হবে।
এটা-সেটা করে-করে সময় গড়ায় কিন্তু মানুষটা যাওয়ার নামও নিচ্ছে না। কী কারণে জানি না তার নাকি খুব ভাল লাগছে। কথায়-কথায় আমি বলি, 'তুমি তো অনেক দেশ ঘুরেছ তোমার ঝুলিতে দুনিয়ার অভিজ্ঞতা, না'?
ইলিয়াস মাথা নাড়লে আমি আবারও বলি, 'তুমি কি মার্বেল খেলতে পার'? শোনো কথা, এ নাকি মার্বেলই খেলতে পারে না! তাহলে কী অভিজ্ঞতা অর্জন করলা, বাহে! আমি একে মার্বেল খেলায় লাগিয়ে দেই। ওয়াল্লা, এ দেখি আমাদের বালকবেলার ভাষায় ভালই 'ফইট' করতে পারে দেখি!
আমি একটা বিষয় লক্ষ করেছি এর মধ্যে শেখার ক্ষমতা অসাধারণ। একবার দেখিয়ে দিলেই হয়। এ চমৎকার ফুঁ দিয়ে এই শঙ্খও বাজিয়ে ফেলল।
মহিষের এই শিঙ্গা আমি এক গাঁজাখোরের কাছ থেকে অনেক কায়দাকানুন করে শিখেছিলাম কিন্তু এটাই একে দেখিয়ে দেওয়ার পর এ দিব্যি বিকট ফুঁ দিয়ে দেখিয়ে দিল।
এই বাঁশিটায় অজস্র ছিদ্র। যার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম সেই ওস্তাদজি বাজিয়ে ছিলেন বেশ কিন্তু আমি কখনই এটা বাজানো রপ্ত করতে পারিনি কিন্তু অল্প সময়েই এ এটা বাজাবার কায়দা খানিকটা রপ্ত করে ফেলল!
ইলিয়াসের চোখের এই সানগ্লাসটা ১৯৪২ সালের। এটা যে ভদ্রলোকের, আমার নানাজান, তাঁর সঙ্গে ভালই যোগাযোগ ছিল আমার কিন্তু তিনি পরপারে পাড়ি জমাবার পর আর যোগাযোগ হয়নি! এই নিয়ে অবশ্য আমার খেদ নেই। থাকাটা মনে হয় না সমীচীন হত।
তো, এ সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে দিব্যি গোঁফ পাকাতে লাগল। এটা সম্ভবত ভারতে থাকাকালীন রপ্ত করেছে।
তির-ধনুক নিয়ে এর উল্লাস দেখার মত। খানিক পর-পর লাফাচ্ছে, 'আর্চারস...'। কেবল একে 'রণ-পা' নিয়ে হাঁটতে দেইনি কারণ ওল্টে পড়ে উনিশ-বিশ হয়ে গেলে এর বিশ্ব ভ্রমণ লাটে উঠবে।
দেখো কান্ড, সাথে করে আবার এ ক্লারিনেটও নিয়ে এসেছে। বাজায়ও ভাল, মধু-মধু!
আমরা, যাদের ভুঁড়ি দৃশ্যমান মানে পদ্মা সেতুর মত উঁকি দেয়-দেয় ভাব তারা 'বান-তুফানেও' নিয়ম করে ব্যাডমিন্টন খেলি। সেদিন বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা। আমাদের দেখাদেখি দিব্যি এও ঝাড়ু নিয়ে নেমে পড়ে।
কথা প্রসঙ্গে আমি জানতে চাইলাম, 'আচ্ছা ইলিয়াস, তুমি যে এত দেশ ঘুরলে এর মধ্যে কোন দেশ তোমার ভাল লেগেছে'।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভেবে-ভেবে এ যে উত্তরটা দিল আমি অনেকখানি অবাক হলাম। অন্তত আমি ভুলেও ইরানের নাম আশা করিনি। ইরানের লোকজনের মায়া, নরোম মন সব মিলিয়ে নাকি এর মনে দাগ কেটে আছে। আসলে লাইলিকে যেমন ছলিমুল্লার চোখ দিয়ে দেখলে হবে না দেখতে হবে মজনুর চোখ দিয়ে তেমনি ইরানকে আমেরিকার চোখ দিয়ে দেখলে হবে না দেখতে হবে ইলিয়াসের চোখ দিয়ে। কোন দেশের সরকারের পলিসি নিয়ে এর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই যেমনটা আমাদের দেশের বেলায়ও।
ওদের স্পেনিশ লেখক সারভান্তিসকে নিয়ে এর গর্বের শেষ নেই। সারভান্তিস আমারও অতি পছন্দের লেখক। তাঁর ডন কুইক্সোট এক অমর সৃষ্টি। ডন কুইক্সোট অভ লা মানচা। 'লা মানচা' নামের যে জায়গাটা সেটা ইলিয়াসের বাসা থেকে কাছেই। ডন কুইক্সোটকে নিয়ে আমার মজার কিছু লেখা আছে 'ডন কুইক্সেট অন দ্য ওয়ে' [১], একালের নাইট, একালের যুদ্ধাপরাধি [২] এটা জেনে এ খুব অবাক হয়। কেন হয় কে জানে!
আমার সাইটে ইংরাজিতে অল্প কিছু লেখা আছে যার অধিকাংশই সহৃদয় একজন মানুষ তিথি'র অনুবাদ করা। অপূর্ব তাঁর অনুবাদের হাত। mother elephant লেখাটা পড়ে এর মুগ্ধতার শেষ নেই।
স্পেনের কুখ্যাত ষাড়ের লড়াই ছাপিয়ে উঠে যেটা ওরাও আমাদের মত 'বেকুব- পটের গাছ না নারকেল গাছ', যার শেকড় ছড়িয়ে থাকে বহু দূর। এরাও বুড়া হাড় বুকে জাপটে ধরে রাখে। যেমন এর দাদা নেই, দাদি এখনও এদের পরিবারের সঙ্গেই থাকেন।
এ আমার এখানে দুই দিন ছিল। বিদায় বেলায় আমি একে সাবধান করে দেই। বৃষ্টিতে একদম সাইকেল চালাবে না কারণ আমরা আমাদের দেশের বড়-বড় সব গাছ কেটে ফেলেছি দুমদাম করে বজ্রপাতে লোকজন মারা যাচ্ছে। এবং হাইওয়েতে সাবধান, খুব সাবধান। ফি-রোজ দেদারসে লোকজন মারা যাচ্ছে।
যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ইলিয়াস চোখ নামিয়ে এমন কিছু কথা বলে যা এখানে আলোচনা করা খুব লজ্জার! আমি এটা বিলক্ষণ জানি বিদেশিদের আবেগ খুবই কম-নিয়ন্ত্রিত। এরা খুব গুছিয়ে ভানের কথা বলতে পারে কিন্তু এইসব কথায় এমন কিছু একটা ছিল বুকের ভেতর থেকে অজানা এক বেদনা পাক খেয়ে উঠে। কেবল মাত্র একজন ইলিয়াসই পারে এমন কথা বলতে। মরণ, অহেতুক চোখ ভিজে উঠে।
এরপর যখনই বৃষ্টি নামে তখনই মনে হয়, আহারে-আহারে, ছেলেটা কোথায়-না-কোথায় সাইকেলে ভিজছে...।
Adios, Elias Escribano.
সহায়ক সূত্র:
এই বাঁশিটায় অজস্র ছিদ্র। যার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম সেই ওস্তাদজি বাজিয়ে ছিলেন বেশ কিন্তু আমি কখনই এটা বাজানো রপ্ত করতে পারিনি কিন্তু অল্প সময়েই এ এটা বাজাবার কায়দা খানিকটা রপ্ত করে ফেলল!
ইলিয়াসের চোখের এই সানগ্লাসটা ১৯৪২ সালের। এটা যে ভদ্রলোকের, আমার নানাজান, তাঁর সঙ্গে ভালই যোগাযোগ ছিল আমার কিন্তু তিনি পরপারে পাড়ি জমাবার পর আর যোগাযোগ হয়নি! এই নিয়ে অবশ্য আমার খেদ নেই। থাকাটা মনে হয় না সমীচীন হত।
তো, এ সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে দিব্যি গোঁফ পাকাতে লাগল। এটা সম্ভবত ভারতে থাকাকালীন রপ্ত করেছে।
তির-ধনুক নিয়ে এর উল্লাস দেখার মত। খানিক পর-পর লাফাচ্ছে, 'আর্চারস...'। কেবল একে 'রণ-পা' নিয়ে হাঁটতে দেইনি কারণ ওল্টে পড়ে উনিশ-বিশ হয়ে গেলে এর বিশ্ব ভ্রমণ লাটে উঠবে।
দেখো কান্ড, সাথে করে আবার এ ক্লারিনেটও নিয়ে এসেছে। বাজায়ও ভাল, মধু-মধু!
আমরা, যাদের ভুঁড়ি দৃশ্যমান মানে পদ্মা সেতুর মত উঁকি দেয়-দেয় ভাব তারা 'বান-তুফানেও' নিয়ম করে ব্যাডমিন্টন খেলি। সেদিন বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা। আমাদের দেখাদেখি দিব্যি এও ঝাড়ু নিয়ে নেমে পড়ে।
কথা প্রসঙ্গে আমি জানতে চাইলাম, 'আচ্ছা ইলিয়াস, তুমি যে এত দেশ ঘুরলে এর মধ্যে কোন দেশ তোমার ভাল লেগেছে'।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভেবে-ভেবে এ যে উত্তরটা দিল আমি অনেকখানি অবাক হলাম। অন্তত আমি ভুলেও ইরানের নাম আশা করিনি। ইরানের লোকজনের মায়া, নরোম মন সব মিলিয়ে নাকি এর মনে দাগ কেটে আছে। আসলে লাইলিকে যেমন ছলিমুল্লার চোখ দিয়ে দেখলে হবে না দেখতে হবে মজনুর চোখ দিয়ে তেমনি ইরানকে আমেরিকার চোখ দিয়ে দেখলে হবে না দেখতে হবে ইলিয়াসের চোখ দিয়ে। কোন দেশের সরকারের পলিসি নিয়ে এর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই যেমনটা আমাদের দেশের বেলায়ও।
ওদের স্পেনিশ লেখক সারভান্তিসকে নিয়ে এর গর্বের শেষ নেই। সারভান্তিস আমারও অতি পছন্দের লেখক। তাঁর ডন কুইক্সোট এক অমর সৃষ্টি। ডন কুইক্সোট অভ লা মানচা। 'লা মানচা' নামের যে জায়গাটা সেটা ইলিয়াসের বাসা থেকে কাছেই। ডন কুইক্সোটকে নিয়ে আমার মজার কিছু লেখা আছে 'ডন কুইক্সেট অন দ্য ওয়ে' [১], একালের নাইট, একালের যুদ্ধাপরাধি [২] এটা জেনে এ খুব অবাক হয়। কেন হয় কে জানে!
আমার সাইটে ইংরাজিতে অল্প কিছু লেখা আছে যার অধিকাংশই সহৃদয় একজন মানুষ তিথি'র অনুবাদ করা। অপূর্ব তাঁর অনুবাদের হাত। mother elephant লেখাটা পড়ে এর মুগ্ধতার শেষ নেই।
স্পেনের কুখ্যাত ষাড়ের লড়াই ছাপিয়ে উঠে যেটা ওরাও আমাদের মত 'বেকুব- পটের গাছ না নারকেল গাছ', যার শেকড় ছড়িয়ে থাকে বহু দূর। এরাও বুড়া হাড় বুকে জাপটে ধরে রাখে। যেমন এর দাদা নেই, দাদি এখনও এদের পরিবারের সঙ্গেই থাকেন।
এ আমার এখানে দুই দিন ছিল। বিদায় বেলায় আমি একে সাবধান করে দেই। বৃষ্টিতে একদম সাইকেল চালাবে না কারণ আমরা আমাদের দেশের বড়-বড় সব গাছ কেটে ফেলেছি দুমদাম করে বজ্রপাতে লোকজন মারা যাচ্ছে। এবং হাইওয়েতে সাবধান, খুব সাবধান। ফি-রোজ দেদারসে লোকজন মারা যাচ্ছে।
যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ইলিয়াস চোখ নামিয়ে এমন কিছু কথা বলে যা এখানে আলোচনা করা খুব লজ্জার! আমি এটা বিলক্ষণ জানি বিদেশিদের আবেগ খুবই কম-নিয়ন্ত্রিত। এরা খুব গুছিয়ে ভানের কথা বলতে পারে কিন্তু এইসব কথায় এমন কিছু একটা ছিল বুকের ভেতর থেকে অজানা এক বেদনা পাক খেয়ে উঠে। কেবল মাত্র একজন ইলিয়াসই পারে এমন কথা বলতে। মরণ, অহেতুক চোখ ভিজে উঠে।
এরপর যখনই বৃষ্টি নামে তখনই মনে হয়, আহারে-আহারে, ছেলেটা কোথায়-না-কোথায় সাইকেলে ভিজছে...।
Adios, Elias Escribano.
সহায়ক সূত্র:
১. ডন কুইক্সোট অন দ্য ওয়ে: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_13.html
২. একালের নাইট, একালের যুদ্ধাপরাধি: http://www.ali-mahmed.com/2008/08/blog-post.html
৩. Mother Elephant: https://www.ali-mahmed.com/2010/05/mother-elephant.html
* ভিডিও ঋণ: www.india24live.com-এর সৌজন্যে
No comments:
Post a Comment