Search

Tuesday, July 3, 2018

ফেরা, না-ফেরার দেশে।

প্রবাসীদের মধ্যে কেউ-কেউ নিজেদের নিয়ে একটা নিষ্ঠুর রসিকতা করেন, ‘দেশে ফিরার সময় প্লেনে বইসা আইবেন না ভিআইপি হয়া আইবেন’। ভিআইপি মানে শুয়ে-শুয়ে আসা। মানুষটা দেশে ফেরেন বটে কিন্তু না-ফেরার দেশে। কফিনবন্দি!

একবার হলো কি (এটা সত্য ঘটনা) গ্রামের দরিদ্র পরিবারের একজন প্রবাসে মারা গেছেন। এখন তাকে দেশে ফেরত আনতে গেলে বিস্তর খরচ। লাশটিকে শূন্য হাতে ফিরতে হয় কিন্তু
না-ফিরলে বেশ কিছু টাকা পাওয়া যায়। চুজ, হেলথ অর টোব্যাকো! সন্তানের লাশ না টাকা? মাটা অনেক ভেবে টাকা বেছে নিলেন।
আমরা নির্বোধ চোখে কেবল মার লোভটাকেই দেখলাম কিন্তু মাটার গড়াগড়িকরা কান্নাটা আর দেখব না! তাঁর যে আছে সোমত্ত মেয়ে, পরিবারের ক্ষিধার রাক্ষুসে আগুন।
ভিডিও ঋণ: সময় টিভি
সম্প্রতি যে ঘটনাটা ঘটল। এক এমপি সাহেবের বখা ছেলে গাড়ি চালাতে গিয়ে একজনকে মেরে ফেলল। রক্তের দাগ থেকেই যায়- ওখানে মগজের সঙ্গে লেপ্টে রইল অডির নাম্বারপ্লেট! সেই সূ্ত্র ধরে জানা গেল বিস্তারিত।

কেউ-কেউ এখনও বাস করেন কল্পনার স্বর্গে! অসমসাহসী একজন মানুষ মোটর সাইকেলে অডিকে তাড়া করে অবশেষে ধরেও ফেলেন। সমস্ত প্রমাণ এমপিপুত্র শাবাব চৌধুরির বিপক্ষে কিন্তু অসমসাহসী সেই মানুষটা সম্ভবত বিস্মৃত হয়েছিলেন এটা বাংলাদেশ! তাই একজন এমপিপুত্রের এহেন ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলা সম্ভব!

যাই হোক, আমাদের দেশ যারা চালান তাঁরা এটা মাথায় রাখলেই ভাল করবেন এমন একজন শাবাব চৌধুরি একাই পদ্মার একটা স্প্যান ফেলে দেন। আমাদের দেশে আইনের লোকদের বহুল প্রচলিত একটা কথা আছে কেউ অভিযোগ করেনি, করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে [১]

কী আজব, কোনও এতিমকে খুন করে ফেললে কী বিচার হবে না এই যুক্তিতে যে তার কোনও স্বজন নাই তার পক্ষে অভিযোগ করার জন্য! আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে আইন সেই অপরাধের অপরাধীকে ধরবে, দ্যাটস অল। এখানে কেউ অভিযোগ করল কি করল না তাতে কী আসে যায়!
আরেকটা চালু সমস্যা হচ্ছে ‘আপস’। এই আপসের নামে অধিকাংশ অপরাধী পার পেয়ে যায়। এই ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কেউ-কেউ এই কারণে ভুক্তভোগি পরিবারকে ধিক্কার দিয়েছেন। ওই যে লেখার শুরুতে বললাম বাস্তবতা। বাস্তবতার চেয়ে কঠিন আর কিছু নাই।
কিন্তু আপসসম্মতিই তো শেষ কথা না। কারণ কেউ এমন একটা আপস করল যে সে তার আত্মা বন্ধক রাখবে। এই আপসটা তার সম্মতিক্রমে হচ্ছে কিন্তু আইনসম্মত কিনা সেটাও তো দেখার বিষয়।

সচরাচর আমাদের মন্ত্রী মহোদয়গণ এমন অবোধ্য ভাষায় কথা বলেন যা আমাদের আর বোঝার যো থাকে না। কিন্তু আইনমন্ত্রী মহোদয় এই ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে বলেছেন, “যে ধারায় মামলা হয়েছে, তাতে মীমাংসার সুযোগ নেই। আমি যত দূর জেনেছি ও শুনেছি, মামলার পেনাল কোডের ধারা হচ্ছে ২৬৯ ও ৩০৪ পার্ট-২। এই দুটি ধারায় মামলা আপসযোগ্য নয়। বাদীপক্ষ একটি দরখাস্ত দিয়েছেন। যতই দরখাস্ত হোক না কেন, এই মামলার সম্পূর্ণ তদন্ত হবে। তদন্তের তথ্য অনুযায়ী পুলিশ প্রতিবেদন দেবে এবং আদালত সেটা বিচার করবে। (প্রথম আলো ২৬.০৬.২০১৮)”
আমি আইনমন্ত্রীকে আন্তরিক  ধন্যবাদ জানাই এই স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য।

আমি আশাবাদি মানুষ। আশায়-আশায় বুক বাঁধি এই এমপিপুত্রকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দেখব…।

সহায়ক সূত্র:
১. বেচারা এতিমদের গতি কীhttp://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_11.html

No comments: