লেখক: Nadia Islam
১৯৯৫ সালের ১১ জুলাইয়ের এক সকালে স্রেব্রেনিৎসার পতোচারি গ্রামের সকল পুরুষরে পিছমোড়া কইরা হাত বাইন্ধা এক লাইনে দাঁড় করায়ে গুলি কইরা হত্যা করা হয়। উনাদের কারো চোখ বাঁধা হয় না। উনাদের চোখ খোলা রাখা হইছিলো যেন উনারা নিজেদের হত্যাকারীরে চোখ দিয়া দেখতে পারেন, যেন বুঝতে পারেন কী অপরাধে উনাদের হত্যা করা হইতেছে! উনাদের হত্যা করা হইছে, কারণ উনাদের অপরাধ ছিলো, উনারা সবাই ধর্মীয় বিশ্বাসে মুসলিম ছিলেন।
৮ বছরের শিশু থিকা ৮০ বছরের বৃদ্ধ সহ প্রায় ২০,০০০ মুসলিম পুরুষরে মাত্র এক দিনে, ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাইয়ের এক সকালে পিছমোড়া কইরা হাত বাইন্ধা এক লাইনে দাঁড় করায়ে হত্যা করে মিলোসোভিচের সার্বিয়ান অর্থোডক্স আর্মি। শুধুমাত্র উনারা সবাই ধর্মীয় বিশ্বাসে মুসলিম ছিলেন বইলা!
এই বছরের ১১ জুলাই আমি স্রেব্রেনিৎসাতে গেছিলাম। স্রেব্রেনিৎসার ৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পতোচারি গ্রাম। গ্রীষ্মের সকালে পাহাড়ের ঢালে দাঁড়ায়ে আমি যেইদিকেই তাকাইলাম, সেইদিকেই দেখলাম হাজার হাজার কবরের হাজার হাজার সাদা পাথরের টুম্বস্টোন দেখা যায়।
সেই টুম্বস্টোনের নিচে লাশ নাই, কারণ গণহত্যা শেষে উনাদের লাশ বেয়নেট দিয়া খোঁচায়ে ক্ষতবিক্ষত কইরা দেওয়া হয়, কুকুর এবং শেয়ালদের খাওয়ার জন্য সেই লাশ ফালায়ে রাখা হয় পাহাড়ের ঢাল জুইড়। তাই টুম্বস্টোনের নিচে লাশ নাই একটাও। আমি দেখলাম, একটা টুম্বস্টোনের পাশে হেলান দিয়া একজন ভদ্রমহিলা বইসা বইসা একমনে সুরা ইয়াসিন পড়তেছেন। উনার চোখভর্তি পানি। আমি তাকায়ে দেখলাম টুম্বস্টোনের গায়ে তারিখ লেখা। ১৯৮০-১৯৯৫। ভদ্রমহিলা আমার দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকাইলেন। আমি কথা না বাড়ায়ে দ্রুত হাঁইটা গেলাম সামনে। দুপুরবেলা জানাজা নামাজ হইল।
এইরকম জানাজা নামাজ আমি এর আগে দেখি নাই। মুসলিম এবং দাড়ি টুপি হিজাবধারী থিকা শুরু কইরা অর্থোডক্স খ্রিশ্চান এবং ইহুদি ও শর্টস পরা, ট্যাটু করা সকল মানুষ একসাথে পাহাড়ের ঢালে বুকে হাত বাইন্ধা দাঁড়াইলেন। কেউ কইতে আসলেন না, মেয়েরা জানাজা নামাজ পড়তে পারবেন না, কেউ কইতে আসলেন না, মেয়েরা পুরুষদের আগে লাইনে দাঁড়াইতে পারবেন না, কেউ কইতে আসলেন না, ইহুদীরা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে সেজদা দিতে পারবেন না।
আমি শুনলাম, মৃত্যু উপতক্যার মাঝখানে পাহাড়ের দেয়ালে দেয়ালে ইমামের গলার স্বর প্রতিধ্বনিত হইতেছে, উনি বলতেছেন, “অন্যায়ভাবে হত্যা হওয়া পৃথিবীর সকল মানুষকে তুমি তোমার পাশে আসন দিও, আল্লাহ!”
আমি নিজের অজান্তে আমার অস্ত্বিত্বহীন ঈশ্বরের অস্তিত্বের বাসনায় হাত উঠাইলাম আকাশে! ভাবতে চাইলাম এই পৃথিবী ভালোবাসায় সৃষ্টি হওয়া পৃথিবী, ১৫ বছরের কিশোরের লাশহীন কবরের পাশে বইসা থাকা মায়েদের শূণ্যদৃষ্টির জন্য, পুরুষশূণ্য বিধবাদের গ্রামের জন্য, মর্টারে উইড়া যাওয়া কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের রক্তের দাগে আঁকা আজকের মৃতদের হিসাবের জন্য, ধর্ম আর রাজনীতি আর সীমানা আর ক্ষমতার যুদ্ধে কংকালসার জীবন্ত লাশের সারির জন্য নিশ্চই এই পৃথিবীর সৃষ্টি হয় নাই!
আমি চোখ তুইলা দেখলাম, বার্চ গাছের আড়ালে দাঁড়ায়ে পনেরো বছরের একজন কিশোর কী জানি এক আপেল না কীসে কামড় দিতে দিতে আমার দিকে তাকায়ে মুচকি মুচকি হাসতেছেন।
৮ বছরের শিশু থিকা ৮০ বছরের বৃদ্ধ সহ প্রায় ২০,০০০ মুসলিম পুরুষরে মাত্র এক দিনে, ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাইয়ের এক সকালে পিছমোড়া কইরা হাত বাইন্ধা এক লাইনে দাঁড় করায়ে হত্যা করে মিলোসোভিচের সার্বিয়ান অর্থোডক্স আর্মি। শুধুমাত্র উনারা সবাই ধর্মীয় বিশ্বাসে মুসলিম ছিলেন বইলা!
এই বছরের ১১ জুলাই আমি স্রেব্রেনিৎসাতে গেছিলাম। স্রেব্রেনিৎসার ৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পতোচারি গ্রাম। গ্রীষ্মের সকালে পাহাড়ের ঢালে দাঁড়ায়ে আমি যেইদিকেই তাকাইলাম, সেইদিকেই দেখলাম হাজার হাজার কবরের হাজার হাজার সাদা পাথরের টুম্বস্টোন দেখা যায়।
সেই টুম্বস্টোনের নিচে লাশ নাই, কারণ গণহত্যা শেষে উনাদের লাশ বেয়নেট দিয়া খোঁচায়ে ক্ষতবিক্ষত কইরা দেওয়া হয়, কুকুর এবং শেয়ালদের খাওয়ার জন্য সেই লাশ ফালায়ে রাখা হয় পাহাড়ের ঢাল জুইড়। তাই টুম্বস্টোনের নিচে লাশ নাই একটাও। আমি দেখলাম, একটা টুম্বস্টোনের পাশে হেলান দিয়া একজন ভদ্রমহিলা বইসা বইসা একমনে সুরা ইয়াসিন পড়তেছেন। উনার চোখভর্তি পানি। আমি তাকায়ে দেখলাম টুম্বস্টোনের গায়ে তারিখ লেখা। ১৯৮০-১৯৯৫। ভদ্রমহিলা আমার দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকাইলেন। আমি কথা না বাড়ায়ে দ্রুত হাঁইটা গেলাম সামনে। দুপুরবেলা জানাজা নামাজ হইল।
এইরকম জানাজা নামাজ আমি এর আগে দেখি নাই। মুসলিম এবং দাড়ি টুপি হিজাবধারী থিকা শুরু কইরা অর্থোডক্স খ্রিশ্চান এবং ইহুদি ও শর্টস পরা, ট্যাটু করা সকল মানুষ একসাথে পাহাড়ের ঢালে বুকে হাত বাইন্ধা দাঁড়াইলেন। কেউ কইতে আসলেন না, মেয়েরা জানাজা নামাজ পড়তে পারবেন না, কেউ কইতে আসলেন না, মেয়েরা পুরুষদের আগে লাইনে দাঁড়াইতে পারবেন না, কেউ কইতে আসলেন না, ইহুদীরা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে সেজদা দিতে পারবেন না।
আমি শুনলাম, মৃত্যু উপতক্যার মাঝখানে পাহাড়ের দেয়ালে দেয়ালে ইমামের গলার স্বর প্রতিধ্বনিত হইতেছে, উনি বলতেছেন, “অন্যায়ভাবে হত্যা হওয়া পৃথিবীর সকল মানুষকে তুমি তোমার পাশে আসন দিও, আল্লাহ!”
আমি নিজের অজান্তে আমার অস্ত্বিত্বহীন ঈশ্বরের অস্তিত্বের বাসনায় হাত উঠাইলাম আকাশে! ভাবতে চাইলাম এই পৃথিবী ভালোবাসায় সৃষ্টি হওয়া পৃথিবী, ১৫ বছরের কিশোরের লাশহীন কবরের পাশে বইসা থাকা মায়েদের শূণ্যদৃষ্টির জন্য, পুরুষশূণ্য বিধবাদের গ্রামের জন্য, মর্টারে উইড়া যাওয়া কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের রক্তের দাগে আঁকা আজকের মৃতদের হিসাবের জন্য, ধর্ম আর রাজনীতি আর সীমানা আর ক্ষমতার যুদ্ধে কংকালসার জীবন্ত লাশের সারির জন্য নিশ্চই এই পৃথিবীর সৃষ্টি হয় নাই!
আমি চোখ তুইলা দেখলাম, বার্চ গাছের আড়ালে দাঁড়ায়ে পনেরো বছরের একজন কিশোর কী জানি এক আপেল না কীসে কামড় দিতে দিতে আমার দিকে তাকায়ে মুচকি মুচকি হাসতেছেন।
No comments:
Post a Comment