লেখক: Apu Nazrul
জাপানীরা ১৯৩৭ সালে নানকিং (এখন নানজিং) এ চাইনিজদের কচুকাটা করেছিলো। খুন
-ধর্ষণ মিলিয়ে এমন নৃশংসতা কমই দেখেছে বিশ্ব। The flowers of war নামে
একটি মর্মস্পর্শী মুভি আছে এই গণহত্যা নিয়ে। জাপানীরা এর আগে পরেও লাখে
লাখে মরেছে-মেরেছে। শেষতক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জব্দ জাপান বাধ্য হয়েই
রক্তের নেশা ছেড়ে জাতি গঠনে মনোযোগ দিয়েছিলো বলেই আজ তারা পৃথিবীর অন্যতম
সভ্য জাতিতে পরিণত হতে পেরেছে।
এক্ষেত্রে জাপানীরা চিরকৃতজ্ঞ কুষ্টিয়ায়
জন্ম নেয়া একজন বাঙালির কাছে। মিত্রপক্ষের চাপ সত্বেও ইন্টারন্যাশনাল
যুদ্ধাপরাধ টাইব্যুনালের 'টোকিও ট্রায়াল' ফেজে এই বাঙালি বিচারকের দৃঢ
অবস্থানের কারণেই জাপান অনেক কম ক্ষতিপূরণের উপরে বেঁচে গিয়েছিলো। যে বিচার
মিত্রপক্ষ ও অন্য বিচারকরা একপেশেভাবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন জাপানের উপর
তার বিপক্ষে নিরপেক্ষ রাধাবিনোদ অবস্থান না-নিলে এখন পর্যন্ত জাতি গঠনের
সুযোগই হয়তো আর পাওয়া হতো না জাপানের।
মিথ আছে পরবর্তীকালে স্বাক্ষাতে
জাপানী সম্রাট হিরোহিতো নিজে দাঁড়িয়ে সন্মান জামান ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে
বলেছিলেন, 'যতদিন জাপান থাকবে বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবেনা।
জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নি:স্বার্থ বন্ধু'।
মিথ হতে পারে কিন্তু এটি যে
শুধু কথার কথা ছিলোনা তার প্রমাণ আমরা এখনো দেখতে পাই। জাপান এখনো
বাংলাদেশের সবচে নি:স্বার্থ বন্ধু। এই ঘটনার প্রায় ৬৫ বছর পর ঢাকার গুলশানে
হোলি আর্টিসান হামলায় প্রাণ গেলো নয় জাপানিজ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের। জাপান
তখনও পাশে ছিলো বাংলাদেশের।
আর কুষ্টিয়ায় জন্ম নেয়া সেই
বাঙালি বিচারকের নাম এখনো জাপানী পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তাঁর নামে জাপানে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু মেমোরিয়াল ও মনুমেন্ট। এই বিস্মৃত বাঙালির নাম
বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল (১৮৮৬-১৯৬৭)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য ও হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক ছাড়াও জীবদ্দশায় অনেক বড় বড়
দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে তিনি কুষ্টিয়ায়
নিজ গ্রামের স্কুল ও রাজশাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে
ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে প্রভাষক ছিলেন। কিছুদিন ময়মনসিংহ কোর্টে আইন
ব্যবসাও করেছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই জাপানীদের এদেশের প্রতি
নি:স্বার্থ সহযোগী মনোভাব দেখে এর কারণ কি হতে পারে ভাবতাম। পরে কারণ জানার
পর ভদ্রলোককে নিয়ে লিখবো-লিখবো করেও লেখা হয়ে উঠছিলো না অনেকদিন। আজ
ভারমুক্ত হলাম। গুগল করলে আরো ডিটেইলস পাবেন। নেটফ্লিক্সে পাবেন টোকিও
ট্রায়াল নামের সিরিয়াল যেখানে রাধাবিনোদের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান
খান।
এই মেধাবী বাঙালিকে আমরা প্রায় কেউই মনে রাখিনি। বাঙালির
মেধাগত বীরত্বের এই চমৎকার অধ্যায়টা জানে খুব অল্প মানুষ! অথচ কত ঠুনকো
বিষয়ই না বাঙালি মানসে পায় সীমাহীন গুরুত্ব!
...
wikipedia: https://en.wikipedia.org/wiki/Radhabinod_Pal
banglapedia: http://en.banglapedia.org/index.php?title=Pal,_Justice_Radhabinod
1 comment:
So grateful to you for this unique and forgotten history!!
Post a Comment