লেখক:
"ইউনিভার্সিটি অভ শিকাগো প্রেস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
৫ জন শিক্ষকের পিএইচডির গবেষণা সন্দর্ভকে প্লেজারিজম বা কূম্ভীলকবৃত্তি বা
রচনাচুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক
ভাবে জানিয়েছে। তারা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, পত্রিকায় তা জানলাম।
এই ৫ জনের একজন সাংবাদিক সামিয়া রহমান। আমি এদের কাউকে দোষ দিই না। এটাই হওয়ার কথা ছিলো। যে দেশে বাটপারি,ইতরামি, নির্লজ্জতা
রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত বলে গণ্য হয়, সেখানে কে কষ্ট করে পড়ে গবেষনা
করবে।সেই দেশে এইভাবেই এ ওর লেখা মেরে দেবে, ডক্টরেট পাওয়ার জন্য হেন কোন
কাজ নেই করবে। একটু স্মরণে আনুন, এখানে মেডিকেল ভর্তির মতো গুরুতর ব্যাপারের
প্রশ্ন আউট হয়। এই একটিই উদাহরণ দিলাম।
এরা ঢাকা ভার্সিটিকে ওমরগনি এমইএস কলেজ বা পাহাড়তলী কলেজ বানিয়ে ফেলেছে। ব্যাপারটা এখানে খুলে না-বললে ক্লিয়ার হবে না। চট্টগ্রামে মেধাবী, মাঝারি মেধাবি
ছাত্র-ছাত্রীরা মোটামুটি চট্টগ্রাম কলেজ, মোহাসিন কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স
কলেজ, মহিলা কলেজ এগুলোতেই টিকে যায়। আর বাকি বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে এই
এমইএস কলেজ,পাহাড়তলী কলেজ নিয়ে নিতো। ওখানে সেই ৯০ এর দশকে পোলাপানের
পরীক্ষার সময় খোদ অভিভাবক, শিক্ষক সবাই পরীক্ষায় অংশ নিতো ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে। অভিভাবকেরা বা ছাত্র-ছাত্রীর ভাই-বোনেরা, প্রেমিক-প্রেমি কারা দোতালা-তিনতলার পরীক্ষার হল পাইপ দিয়ে বেয়ে উঠে জানালা দিয়ে নকল সাপ্লাই দিতো।
সেই আমলে এটাকে নীতি-নৈতিকতার কোনও সমস্যা হচ্ছে বলে আদৌ মনে করা হতো না। বরং
পরিবারের অভিভাবকেরা সবাই মিলে কেমন একটা পাশ দিলাম রে আব্বু-মামনি, এমনটাই ভেবে গর্বিত হতেন।
খুব একটা আনন্দের সময় ছিলো। সবাই
মিলে একটা ইংরেজী অংকের মাস্টার ভাড়া করে নিয়ে যেতো। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন
বিলি করার দুই মিনিটের মাথায় প্রশ্ন ভাড়াটে মাস্টারের হাতে এসে যেতো। সে
সমাধান দিয়ে দেবার সঙ্গে-সঙ্গে রিলে-রেসের মতো অভিভাবক, ভাই-বোন, প্রেমি ক-প্রেমিকারা
দৌড়ে পাইপ বেয়ে, অস্থায়ী মই বেয়ে এই জীয়নকাঠি পরীক্ষার্থীর হাতে দিয়ে
আসতো। সে তখন ভাবছিলো, সবার বাপ-ভাই কি তাড়াতাড়ি এসে সমাধান দিয়ে গেছে আর
আমাদের বালাদুল আমীনগুলা এখনো আসে নাই!
সবচেয়ে ভয়াবহ পরীক্ষার কেন্দ্রগুলা ছিলো রাউজান, পটিয়া রাহাত আলী স্কুল, কুমিল্লার চিওড়া স্কুল। অভিভাবকরা এসব স্কুলের প্রতি ভীষন দূর্বল ছিলেন।ওখানে ম্যাজিস্ট্রেটকে বেঁধে রাখা হতো। এসব ব্যাপারে ওখানের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাই একমত ছিল। এতো কষ্টের পরীক্ষা তো আর একজন উটকো লোক এসে বরবাদ করে দিতে পারে না।
তাও মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দ্দৌলার মতো কিছু মানুষ তখনো ছিলো। এরকম
একজন ম্যাজিস্ট্রেট একবার রাউজানে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকে এমন অরাজক পরিস্থিতি
দেখে সমানে এক্সপেল করা শুরু করলেন। অল্পক্ষণের মধ্যো শিক্ষক, ছাত্র-ছা ত্রী
আর অভিভাবকেরা সম্পুর্ন একমত হয়ে গেলেন যে ফুলের বাগানে এ কোন বান্দর এসে
উপস্থিত। সবাই মিলে ম্যাজিস্ট্রেটকে দৌড় লাগালেন। তা প্রায় হাজার খানেক সচেতন
নৈতিকতায় টইটম্বুর করা জনগণ।ম্যাজিস্ট্রেটের দেহরক্ষী পুলিশ প্রথমেই ভাগল। ম্যাজিস্ট্রেট অনেকক্ষণ জান-জীবন নিয়ে দৌড়ালেন। শেষে আর না-পেরে আল্লাহ-তায়ালার কাছে জীবন
ভিক্ষা চাইলেন। তাঁর দোয়া কবুল হলো। হঠাৎ তার নিকটেই একটা মসজিদ যেন মাটি
ফুড়ে দৃশ্যমান হলো। তিনি দৌড়ে গিয়ে দ্রুত নিয়ত করে ফরজ নামাজে দাঁড়িয়ে
গেলেন। উন্মুক্ত ধর্মপ্রাণ জনগন আর যাই করুক একজন মুসল্লীকে তো ধরে পেটাতে
পারে না। তাহলে পরকালে জবাব কী!
এভাবে ফরজ এরপর সুন্নত, সুন্নতের পর অবিরাম নফল নামাজ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব পড়ে গেলেন। যতক্ষণ না
জেলা পুলিশের রিজার্ভ বাহিনী গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করল। ততক্ষণে ছেলে-মেয়েরা
ভালোভাবে পরীক্ষা সমাপ্ত করেছে।সচেতন নৈতিকতা সম্পন্ন অভিভাবকদেরও তেমন রাগ আর তখন নাই।অভিভাবকেরাও বুঝলেন, মানুষ মাত্রই ভুল করে, কুল্লু নাফসি জায়াকাতুল মউত বা 'ম্যান ইজ মরটাল'।"
No comments:
Post a Comment