লেখাটি লিখেছেন, মো. নাজমুল হাসান:
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে আরো ভালোভাবে বুঝতে হলে তাঁর পলিটিকাল আইডিওলজিটাকে বুঝতে হবে। তখন ব্লগের যুগ।
সামহোয়ারিন, সচলায়তন, মুক্তাঙ্গন প্রবল জনপ্রিয়। ওয়ান ইলাভেনের পরের সময়টার কথা বলছি। ব্লগে আমরা কমেন্টের শেষে পরিচিতিতে নিজেদের সম্পর্কে কয়েকটা লাইন লিখতাম। এখন আপনারা ফেসবুকে যেভাবে বায়ো লিখেন, অনেকটা সেভাবে।
মুক্তাঙ্গন ব্লগে অ্যানোনিমাস ব্লগার ‘অবিশ্রুত’-র লেখায় চোখ আটকে ছিল। খুব সুন্দর কয়েকটা লাইন ছিল উনার পরিচিতিতেঃ
"...সেইসব দিন স্মরণে যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাঁদের সাহসের অভাব ছিল তারপরও তাঁরা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তাঁরা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকে বিনয়-ভূষণে সজ্জিত করেছিলেন তাঁরা।
আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, কেউ নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাঁকে কী চোখে দেখে। কাঙালের কথা বাসি হলে, কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে রাখে"?
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ২০০৮ সালের অক্টোবরে উনার একটা লেখা ছিল মুক্তাঙ্গনে। সেখান থেকে কোট করিঃ
"...সেপ্টেম্বরে
(২০০৮) লন্ডনে এসেছিলেন বাংলাদেশের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধার ও
বাংলাদেশ দূরদর্শনের অন্যতম উপস্থাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি এসেছিলেন
ব্রিটেন ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশের আবহাওয়া
পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে। এরকম একটি নীতিনির্ধারণী বিষয়ে
নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে অনির্বাচিত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অহেতুক এই আগ্রহ অনেককেই কৌতূহলী ও বিস্মিত করেছিল। জোর আপত্তি ও
প্রতিবাদ উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু আবদুল্লাহ আবু সায়ীদদের গায়ের
চামড়া ভারি মোটা, সেসব প্রতিবাদ ও আপত্তি তাঁর ওই চামড়ায় কোনো তরঙ্গ তৈরি
করতে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসকেরই ভাঁড় খুঁজে পেতে দেরি বা
কষ্ট হয় না। ড.ফখরুদ্দীন সরকারেরও খুঁজে পেতে কষ্ট হয়নি। তাঁরা আবদুল্লাহ
আবু সায়ীদকে খুঁজে পেয়েছেন, যিনি জোট সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছেও খুব প্রিয় ছিলেন এবং প্রিয় কর্পোরেট মিডিয়াগুলোর কাছেও।
সন্দেহ নেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একটি প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়, তাঁর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শ্লোগান হলো ‘আলোকিত মানুষ চাই’। তিনি সেদিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র পরিচালনায় সংসদীয় গণতন্ত্র যে মোটেই কার্যকর নয়, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে'।
এর আগে সাপ্তাহিক ২০০০-এর গোলাম মোর্তাজার সঙ্গে তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়ে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, সেখানে তখনকার (চারদলীয় সরকারের) অরাজক পরিস্থিতির সাফাই গেয়েছিলেন। তিনি যা বলেছিলেন, তা অনেকটা এরকম, ‘একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক অবস্থায় এরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন লুটপাট হয়, দুর্নীতি হয়'।
বোধকরি তিনি অর্থনীতির পুঁজি সঞ্চয়নকালের সঙ্গে জোট সরকারের সেই সময়টিকে তুলনা করতে চেয়েছিলেন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যে চারদলীয় জোট সরকারের নীরব অনুরাগী সেটা বোঝা যায় যখন তিনি ওই মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। জনজীবনের নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে সেনাবাহিনীকে বিনাবিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তারপর সংসদে আইন করে এইসব হত্যার দায় থেকে সেনাবাহিনীকে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়'।
চারদলীয় জোট সরকারের হয়ে এত সুন্দর করে ক্লিনহার্ট খুনপর্বের সাফাই আর কোনো বুদ্ধিজীবী কি গাইতে পেরেছেন বাংলাদেশে? ইতিহাস খুঁজলে এরকম বিকৃত ও অসুস্থ জ্ঞানী মানুষ আরও অনেক পাওয়া যাবে। জীবদ্দশায় তাঁরা অনেক পুজা পেয়েছেন, ফুল পেয়েছেন, কিন্তু মৃত্যুর পর ইতিহাসে ঠাই পেলেও ঘৃণা ছাড়া আর কিছু পাননি। তাঁর সাহচর্য থেকে কোনো আলোকিত মানুষ বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। হয় সে মানুষটি হবে চিন্তার দিক থেকে বিকলাঙ্গ, না হয় অধঃপতিত।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মিশন এখানেই শেষ হয়নি। এরপর উনি নিউইয়র্কে গিয়ে বলেছেন, ‘সংখ্যালঘুদের জাতীয়তাবাদ হয় না। যেমন বাংলাদেশে হিন্দুরা, ভারতে মুসলমানরা, আমেরিকায় অন্যান্য সংখ্যালঘুরা'।
আসলে উনি কী বোঝাতে চান? জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা? সেটি কী কেবল সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? নাকি উনি জাতীয়তাবাদ অর্থে দেশপ্রেম বুঝাতে চাইছেন? মূলধারা বুঝাতে চাইছেন? তার মানে কি এই যে, বাংলাদেশের হিন্দুদের কোনও দেশপ্রেম নেই? চাকমাদের কোনো দেশপ্রেম নেই? বাংলাদেশের হিন্দুরা কিংবা ভারতের মুসলমানরা ওইসব দেশের মূলধারার অংশ হতে পারে না? ভারতের মুসলমানরা ভারতীয় দেশপ্রেমিক হতে পারে না?
বিস্মিত হতে হয়, ব্রিটেন-যুক্তরা ষ্ট্রের মতো দেশে এসে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদরা এসব ধারণা প্রচার করে যাচ্ছেন আর অনেকে তা মুগ্ধ হয়ে শুনছে..."।
লেখাটির মন্তব্যে জনাব সৈকত আচার্য বলেছিলেন, "…জোট সরকারের শাসনামলের মাঝামাঝি, আবু সাইয়িদ সাহেব একদিন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পেশাজীবীদের ডাকা এক সভায় বক্তৃতা করতে উঠে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরেই ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ইনিয়ে-বিনিয়ে বক্তৃতা করা শুরু করেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছি এই কারণে যে, তিনি প্রথমে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে বলার ভান করে বক্তৃতা শুরু করেছিলেন। এই কারণে প্রথমে অনেকেই ব্যাপারটি ধরতে পারেননি। যখন তিনিও মনে করা শুরু করলেন যে কেউ তো প্রতিবাদ করছে না, একেবারে সরাসরিই বলা শুরু করলেন। উপস্থিত পেশাজীবিদের মধ্যে সমস্বরে ‘দালাল-দালাল’ বলে রব উঠে গেল। তিনি হেসে বললেন, ঠিক আছে, আপনারা যখন পছন্দ করেছেন না, আমি ও বিষয়ে আর বলতে চাই না। আসলে মানে…আমি ঠিক ওভাবে বিষয়টি বলতে চাইনি…। অতপরঃ প্রতিবাদের মুখে বসে পড়তে হল তাঁকে। তাঁর মুখের হাসিটি মঞ্চের চেয়ারে বসার পরেও গেল না…"।
মন্তব্যে আরেকজন লিখেছিলেন, “…আব্দুল্লাহ আবু সাইদ সেন্ট্রাল রোডে ফ্ল্যাট কেনার পর তার সামনের রাস্তাটা আরেকটু প্রশস্ত করার জন্য মেয়র খোকার কাছে ধর্ণা দিয়ে তদবির করেন। তদবির করাটা দোষের কি না, তার চেয়ে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো তিনি ব্যাপারটাকে উপস্থাপন করেন ঢাকা শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছ ন্নতা, জ্যাম কমানো, দূষণ প্রতিকার প্রভৃতি মোড়কে…”।
রাজনৈতিক ব্লক চেনা খুব জরুরি। কেয়ারটেকার আমলের মাইনাস টু ফর্মুলা বহুল আলোচিত। সেই ফর্মুলার উদ্ভাবক সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য, কিছু আমলা, ট্রান্সকম গ্রুপ, একজন নোবেলজয়ী ডক্টর এবং বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ, যেমন আবদুল্লাহ আবু সাইদ। গণজাগরণের দিনগুলোতে উনার সলিডারিটি ঘোষণা না করার ঘটনা, উপমহাদেশের উত্তর দিকের নারীদের উন্নত দেহসৌষ্ঠবের প্রশংসা (কাশ্মীর, পাকিস্তান), পাকিস্তানিদের সাথে আমাদের ইন্টার-রেসিয়াল মিক্সচারের মাধ্যমে সুগঠিত দেহ সমৃদ্ধ জাতি গঠনের আকাঙ্ক্ষা (যা একাত্তরের জেনোসাইডের অংশবিশেষের সুস্পষ্ট সমর্থন) সবই এক সূত্রে গাথা।
আজ এসি বাতাসে ধীরে ধীরে আপুদের শাড়ি খুলতে গিয়ে দখিনা বাতাসে একটানে উনার লুঙ্গী খুলে গেছে। এটাই জীবন। ধন্যবাদ ব্লগার অবিশ্রুত। জানি না আপনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন। কাঙালের কথা বাসি হলেও আমরা আপনাকে ভুলি নাই। হয়তো কোনো মোড়ে আপনি বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন, এক যুগ আগের কথা ভুলে গেছেন, কিন্তু আপনার কথাগুলো রয়ে গেছে অন্তর্জালের পৃষ্ঠায়, যা এতদিন পরেও বাস্তব।
তবে আবদুল্লাহ সায়ীদের শাড়ির দুটি অংশের সহমত জ্ঞাপন করা যায়। প্রথমত, ‘শাড়িতে শরীর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যেকোনো মেয়ের রূপে কমবেশি দীর্ঘাঙ্গি বিভ্রম দেখা দেবেই, ঠিক যে কারণে দীর্ঘ পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানি পুরুষদের শরীরে দীর্ঘদেহিতার বিভ্রম জাগায়। এতে সঠিক উচ্চতার তুলনায় তাদের কিছুটা বেশি দীর্ঘ লাগে'।
এই বিষয়টা আপনি ফ্যাশন ডিজাইনারদের সাথে কথা বললে বা ফ্যাশন ব্লগ পড়লে জানতে পারবেন। একটা কোট করিঃ wearing long skirt, wearing maxi dress the right way will actually make a short girl look taller.
দ্বিতীয় বিষয়টি ‘শরীর আর পোশাকের বিভাজনের অনুপাত সংক্রান্ত। কথাগুলো আগেও বলেছিলাম। শাড়ির আসল রহস্য কোমড়ে, উন্মুক্ত কটিদেশে যেখানে কোটি কোটি দৃষ্টিপাত, সেখানেই কোমড়ের জয়, শাড়ির জয়।
কিভাবে?
আসুন, শাড়ির ভেতরে ঢুকি। দাড়িয়াবান্ধা খেলার মতো শাড়িটা বান্ধা শিখি।
প্রথমে অবনত, পরিণত, আনত বা বিনত চন্দ্রজোড়াকে লাগাম দিয়ে কষে টেনে ধরে ঊর্ধ্ব গগনে উন্নত টানটান সূর্য হিসেবে আলোকিত করে কোনোমতে শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিন। এবার নিম্নদেশেও শাড়িখানা বারবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে টানটান করে বেঁধে কোমড়টাকে খোলামেলা করে ছেড়ে দিন। তাহলে কী দাঁড়ালো?
নাউজুবিল্লাহ! আগে বলেন, কী দাঁড়ালো না? ছেলেবেলা অনুপাতের অঙ্ক কষেন নাই? উপরে বাড়িলো, মাঝে কমিলো, নিচে বাড়িলো, কী দাঁড়াইলো? আগে কী অনুপাত আছিলো আর এখন কী হইলো?
আগে যাহা ৩২-২৮-৩৪ আছিলো, এখন তা আপনার চোখে ৩৬-২৪-৩৬ এ রূপ লইয়াছে!
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, সারাদিন যারা জয়া আহসানের তারুণ্যোজ্বল ফিগারকে দেখে ফেসবুকে লালা আর বাথরুমে গালা ফেলতেন, মেয়েদের সুতি শাড়ি পরা ছবি স্টোরিতে পেলেই মেসেঞ্জারে ফুঁ আর সুড়সুড়ি দিয়ে তাকে জর্জেট শাড়ির মতো আলগোছে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করতেন, জামদানি শাড়ির মতো ট্রান্সপারেন্ট হয় কিনা দেখার জন্য জুম করতেন, সুযোগ পেয়ে তাঁরাও আজ দু’ ঘা কষে দিচ্ছেন বুড়ো বাবুটাকে! নিজের বেলায় লীলা আর উনার বেলা শালা?
এদিকে আপুরা উনার প্রতিবাদে গণহারে শাড়ি পরে ছবি আপলোড দিচ্ছেন। শুনেছেন যে উনি নাকি শাড়ি নিয়ে কী বলেছেন, ব্যস!
আরে ভাই, উনি কী লিখেছেন, সেইটা তো আগে পড়েন। উনি তো এটাই চেয়েছিলেন। এ আবার কেমন প্রতিবাদ? অর্ধেক পড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে চলবে?
লেখাটার রবীন্দ্রনাথ অংশটুকুকেই বা আমরা বাদ দিচ্ছি কেন? ‘ইংল্যান্ডের কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, 'এখানে রাস্তায় বেরোনোর বড় সুবিধা যে থেকে থেকেই সুন্দর মুখ দেখতে পাওয়া যায়।‘
অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ভারত উপমহাদেশের তুলনায় ইংল্যান্ডে সুন্দরীদের ঘনত্ব বেশি। তাঁদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের লিখিত আকর্ষণ ছিল। এই অংশটুকুকে এড়িয়ে গেলে হবে?
নাকি যেটুকু দরকার সেটুকু নেবেন, বাকিটা ছক্কা?

সামহোয়ারিন, সচলায়তন, মুক্তাঙ্গন প্রবল জনপ্রিয়। ওয়ান ইলাভেনের পরের সময়টার কথা বলছি। ব্লগে আমরা কমেন্টের শেষে পরিচিতিতে নিজেদের সম্পর্কে কয়েকটা লাইন লিখতাম। এখন আপনারা ফেসবুকে যেভাবে বায়ো লিখেন, অনেকটা সেভাবে।
মুক্তাঙ্গন ব্লগে অ্যানোনিমাস ব্লগার ‘অবিশ্রুত’-র লেখায় চোখ আটকে ছিল। খুব সুন্দর কয়েকটা লাইন ছিল উনার পরিচিতিতেঃ
"...সেইসব দিন স্মরণে যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাঁদের সাহসের অভাব ছিল তারপরও তাঁরা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তাঁরা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকে বিনয়-ভূষণে সজ্জিত করেছিলেন তাঁরা।
আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, কেউ নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাঁকে কী চোখে দেখে। কাঙালের কথা বাসি হলে, কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে রাখে"?
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ২০০৮ সালের অক্টোবরে উনার একটা লেখা ছিল মুক্তাঙ্গনে। সেখান থেকে কোট করিঃ
"...সেপ্টেম্বরে
সন্দেহ নেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একটি প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়, তাঁর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শ্লোগান হলো ‘আলোকিত মানুষ চাই’। তিনি সেদিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র পরিচালনায় সংসদীয় গণতন্ত্র যে মোটেই কার্যকর নয়, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে'।
এর আগে সাপ্তাহিক ২০০০-এর গোলাম মোর্তাজার সঙ্গে তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়ে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, সেখানে তখনকার (চারদলীয় সরকারের) অরাজক পরিস্থিতির সাফাই গেয়েছিলেন। তিনি যা বলেছিলেন, তা অনেকটা এরকম, ‘একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক অবস্থায় এরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন লুটপাট হয়, দুর্নীতি হয়'।
বোধকরি তিনি অর্থনীতির পুঁজি সঞ্চয়নকালের সঙ্গে জোট সরকারের সেই সময়টিকে তুলনা করতে চেয়েছিলেন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যে চারদলীয় জোট সরকারের নীরব অনুরাগী সেটা বোঝা যায় যখন তিনি ওই মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। জনজীবনের নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে সেনাবাহিনীকে বিনাবিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তারপর সংসদে আইন করে এইসব হত্যার দায় থেকে সেনাবাহিনীকে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়'।
চারদলীয় জোট সরকারের হয়ে এত সুন্দর করে ক্লিনহার্ট খুনপর্বের সাফাই আর কোনো বুদ্ধিজীবী কি গাইতে পেরেছেন বাংলাদেশে? ইতিহাস খুঁজলে এরকম বিকৃত ও অসুস্থ জ্ঞানী মানুষ আরও অনেক পাওয়া যাবে। জীবদ্দশায় তাঁরা অনেক পুজা পেয়েছেন, ফুল পেয়েছেন, কিন্তু মৃত্যুর পর ইতিহাসে ঠাই পেলেও ঘৃণা ছাড়া আর কিছু পাননি। তাঁর সাহচর্য থেকে কোনো আলোকিত মানুষ বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। হয় সে মানুষটি হবে চিন্তার দিক থেকে বিকলাঙ্গ, না হয় অধঃপতিত।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মিশন এখানেই শেষ হয়নি। এরপর উনি নিউইয়র্কে গিয়ে বলেছেন, ‘সংখ্যালঘুদের জাতীয়তাবাদ হয় না। যেমন বাংলাদেশে হিন্দুরা, ভারতে মুসলমানরা, আমেরিকায় অন্যান্য সংখ্যালঘুরা'।
আসলে উনি কী বোঝাতে চান? জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা? সেটি কী কেবল সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? নাকি উনি জাতীয়তাবাদ অর্থে দেশপ্রেম বুঝাতে চাইছেন? মূলধারা বুঝাতে চাইছেন? তার মানে কি এই যে, বাংলাদেশের হিন্দুদের কোনও দেশপ্রেম নেই? চাকমাদের কোনো দেশপ্রেম নেই? বাংলাদেশের হিন্দুরা কিংবা ভারতের মুসলমানরা ওইসব দেশের মূলধারার অংশ হতে পারে না? ভারতের মুসলমানরা ভারতীয় দেশপ্রেমিক হতে পারে না?
বিস্মিত হতে হয়, ব্রিটেন-যুক্তরা
লেখাটির মন্তব্যে জনাব সৈকত আচার্য বলেছিলেন, "…জোট সরকারের শাসনামলের মাঝামাঝি, আবু সাইয়িদ সাহেব একদিন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পেশাজীবীদের ডাকা এক সভায় বক্তৃতা করতে উঠে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরেই ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ইনিয়ে-বিনিয়ে বক্তৃতা করা শুরু করেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছি এই কারণে যে, তিনি প্রথমে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে বলার ভান করে বক্তৃতা শুরু করেছিলেন। এই কারণে প্রথমে অনেকেই ব্যাপারটি ধরতে পারেননি। যখন তিনিও মনে করা শুরু করলেন যে কেউ তো প্রতিবাদ করছে না, একেবারে সরাসরিই বলা শুরু করলেন। উপস্থিত পেশাজীবিদের মধ্যে সমস্বরে ‘দালাল-দালাল’ বলে রব উঠে গেল। তিনি হেসে বললেন, ঠিক আছে, আপনারা যখন পছন্দ করেছেন না, আমি ও বিষয়ে আর বলতে চাই না। আসলে মানে…আমি ঠিক ওভাবে বিষয়টি বলতে চাইনি…। অতপরঃ প্রতিবাদের মুখে বসে পড়তে হল তাঁকে। তাঁর মুখের হাসিটি মঞ্চের চেয়ারে বসার পরেও গেল না…"।
মন্তব্যে আরেকজন লিখেছিলেন, “…আব্দুল্লাহ আবু সাইদ সেন্ট্রাল রোডে ফ্ল্যাট কেনার পর তার সামনের রাস্তাটা আরেকটু প্রশস্ত করার জন্য মেয়র খোকার কাছে ধর্ণা দিয়ে তদবির করেন। তদবির করাটা দোষের কি না, তার চেয়ে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো তিনি ব্যাপারটাকে উপস্থাপন করেন ঢাকা শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছ
রাজনৈতিক ব্লক চেনা খুব জরুরি। কেয়ারটেকার আমলের মাইনাস টু ফর্মুলা বহুল আলোচিত। সেই ফর্মুলার উদ্ভাবক সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য, কিছু আমলা, ট্রান্সকম গ্রুপ, একজন নোবেলজয়ী ডক্টর এবং বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ, যেমন আবদুল্লাহ আবু সাইদ। গণজাগরণের দিনগুলোতে উনার সলিডারিটি ঘোষণা না করার ঘটনা, উপমহাদেশের উত্তর দিকের নারীদের উন্নত দেহসৌষ্ঠবের প্রশংসা (কাশ্মীর, পাকিস্তান), পাকিস্তানিদের সাথে আমাদের ইন্টার-রেসিয়াল মিক্সচারের মাধ্যমে সুগঠিত দেহ সমৃদ্ধ জাতি গঠনের আকাঙ্ক্ষা (যা একাত্তরের জেনোসাইডের অংশবিশেষের সুস্পষ্ট সমর্থন) সবই এক সূত্রে গাথা।
আজ এসি বাতাসে ধীরে ধীরে আপুদের শাড়ি খুলতে গিয়ে দখিনা বাতাসে একটানে উনার লুঙ্গী খুলে গেছে। এটাই জীবন। ধন্যবাদ ব্লগার অবিশ্রুত। জানি না আপনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন। কাঙালের কথা বাসি হলেও আমরা আপনাকে ভুলি নাই। হয়তো কোনো মোড়ে আপনি বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন, এক যুগ আগের কথা ভুলে গেছেন, কিন্তু আপনার কথাগুলো রয়ে গেছে অন্তর্জালের পৃষ্ঠায়, যা এতদিন পরেও বাস্তব।
তবে আবদুল্লাহ সায়ীদের শাড়ির দুটি অংশের সহমত জ্ঞাপন করা যায়। প্রথমত, ‘শাড়িতে শরীর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যেকোনো মেয়ের রূপে কমবেশি দীর্ঘাঙ্গি বিভ্রম দেখা দেবেই, ঠিক যে কারণে দীর্ঘ পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানি পুরুষদের শরীরে দীর্ঘদেহিতার বিভ্রম জাগায়। এতে সঠিক উচ্চতার তুলনায় তাদের কিছুটা বেশি দীর্ঘ লাগে'।
এই বিষয়টা আপনি ফ্যাশন ডিজাইনারদের সাথে কথা বললে বা ফ্যাশন ব্লগ পড়লে জানতে পারবেন। একটা কোট করিঃ wearing long skirt, wearing maxi dress the right way will actually make a short girl look taller.
দ্বিতীয় বিষয়টি ‘শরীর আর পোশাকের বিভাজনের অনুপাত সংক্রান্ত। কথাগুলো আগেও বলেছিলাম। শাড়ির আসল রহস্য কোমড়ে, উন্মুক্ত কটিদেশে যেখানে কোটি কোটি দৃষ্টিপাত, সেখানেই কোমড়ের জয়, শাড়ির জয়।
কিভাবে?
আসুন, শাড়ির ভেতরে ঢুকি। দাড়িয়াবান্ধা খেলার মতো শাড়িটা বান্ধা শিখি।
প্রথমে অবনত, পরিণত, আনত বা বিনত চন্দ্রজোড়াকে লাগাম দিয়ে কষে টেনে ধরে ঊর্ধ্ব গগনে উন্নত টানটান সূর্য হিসেবে আলোকিত করে কোনোমতে শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিন। এবার নিম্নদেশেও শাড়িখানা বারবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে টানটান করে বেঁধে কোমড়টাকে খোলামেলা করে ছেড়ে দিন। তাহলে কী দাঁড়ালো?
নাউজুবিল্লাহ! আগে বলেন, কী দাঁড়ালো না? ছেলেবেলা অনুপাতের অঙ্ক কষেন নাই? উপরে বাড়িলো, মাঝে কমিলো, নিচে বাড়িলো, কী দাঁড়াইলো? আগে কী অনুপাত আছিলো আর এখন কী হইলো?
আগে যাহা ৩২-২৮-৩৪ আছিলো, এখন তা আপনার চোখে ৩৬-২৪-৩৬ এ রূপ লইয়াছে!
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, সারাদিন যারা জয়া আহসানের তারুণ্যোজ্বল ফিগারকে দেখে ফেসবুকে লালা আর বাথরুমে গালা ফেলতেন, মেয়েদের সুতি শাড়ি পরা ছবি স্টোরিতে পেলেই মেসেঞ্জারে ফুঁ আর সুড়সুড়ি দিয়ে তাকে জর্জেট শাড়ির মতো আলগোছে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করতেন, জামদানি শাড়ির মতো ট্রান্সপারেন্ট হয় কিনা দেখার জন্য জুম করতেন, সুযোগ পেয়ে তাঁরাও আজ দু’ ঘা কষে দিচ্ছেন বুড়ো বাবুটাকে! নিজের বেলায় লীলা আর উনার বেলা শালা?
এদিকে আপুরা উনার প্রতিবাদে গণহারে শাড়ি পরে ছবি আপলোড দিচ্ছেন। শুনেছেন যে উনি নাকি শাড়ি নিয়ে কী বলেছেন, ব্যস!
আরে ভাই, উনি কী লিখেছেন, সেইটা তো আগে পড়েন। উনি তো এটাই চেয়েছিলেন। এ আবার কেমন প্রতিবাদ? অর্ধেক পড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে চলবে?
লেখাটার রবীন্দ্রনাথ অংশটুকুকেই বা আমরা বাদ দিচ্ছি কেন? ‘ইংল্যান্ডের কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, 'এখানে রাস্তায় বেরোনোর বড় সুবিধা যে থেকে থেকেই সুন্দর মুখ দেখতে পাওয়া যায়।‘
অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ভারত উপমহাদেশের তুলনায় ইংল্যান্ডে সুন্দরীদের ঘনত্ব বেশি। তাঁদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের লিখিত আকর্ষণ ছিল। এই অংশটুকুকে এড়িয়ে গেলে হবে?
নাকি যেটুকু দরকার সেটুকু নেবেন, বাকিটা ছক্কা?
সহায়ক সূত্র:
১. শাড়ী, প্রথম আলো: https://www.prothomalo.com/onnoalo/article/1611837/%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF
No comments:
Post a Comment