ছবি ঋণ: বাংলা ট্রিবিউন এবং...।
লেখক: Arju Ahmad |
"লোকদের
ঘরে-ঘরে গিয়ে লিখে দেওয়া হচ্ছে, 'মাদক ব্যবসায়ী'র বাড়ি। এই কাজটা করছে খোদ সরকারের আধা সামরিক একটি বাহিনী। কিসের ভিত্তিতে তারা মাদক ব্যবসায়ী বলে চিহ্নিত হলেন? কোনও আদালতের রায়ের ভিত্তিতে নয় বরং সেই বাহিনীর নিজেদের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে।
অর্থাৎ তারাই অভিযোগকারী এবং তারাই বিচারক। কী ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার- এ রাষ্ট্রে
বাদীই বিচারক হয়ে উঠছে! অথচ এই রাষ্ট্রের সংবিধান নাগরিককে এইরকম অবিচার
থেকে সুরক্ষা দেয়।
সংবিধান বলে উপযুক্ত আদালতের মাধ্যমে আত্মপক্ষ
সমর্থনের অবাধ সুযোগ দিয়েই কেবলমাত্র অভিযোগকারীকে যথাযথ প্রমাণের মধ্য
দিয়ে অপরাধী সাব্যস্ত করতে হবে। অধিকন্তু আদালতের মাধ্যমে যদিও
অপরাধ প্রমাণিত হয় তবুইও কারো বাড়িতে এই ধরনের বিজ্ঞাপন সাঁটানো যাবে না৷
এই যে, বাড়িতে গিয়ে লিখে দেওয়া 'মাদককারবারী' এটা তো কালেক্টিভ পানিশমেন্ট।
একটা বাড়িতে একজন ব্যক্তিই থাকে না। অভিযুক্তের নিরপরাধ সন্তান-সন্ততি,
বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী প্রত্যেককেই প্রকারন্তরে সামাজিক শাস্তির
মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। একঘরে করে রাখার মত।
আপনি চিন্তা করুন, সে
বাড়ির যে নিরপরাধ কিশোরটি স্কুলে খেলার মাঠে এই নিয়ে বুলিংয়ের শিকার হবে,
প্রহসনের মুখোমুখি হবে তার মানসিক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এ
দেশের কোনও মানুষই নিশ্চয়ই সরকারি সাইনবোর্ডে মাদককারবারী লেখা কারো বাড়িতে
বিয়ে করতে চাইবে না। ফলে সে বাড়ির অবিবাহিত ছেলে-মেয়েদের জীবন কোথায় গিয়ে
ঠেকবে? শুধু বিয়ে কেন, কোনও সামাজিক সম্পর্ক কিম্বা লেনদেনেই জড়াবে
না। একবার নিজেকে সেই স্থানে দাঁড় করিয়ে চিন্তা করুন। এটা তো ভয়াবহ জুলুম।
কোর'আন বলছে, ' وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ' কোনও ব্যক্তির অপরাধের দায় কেবলমাত্র তারই- অন্য কেউ এর দায় বহন করবে না। (৬ঃ১৬৪) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলছেন, 'কেউ তার পিতা বা ভাইয়ের অপরাধের জন্য কোনও শাস্তিভোগ করবে না'। (আন-নাসাঈ)
এটা তো ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি। এর বাইরে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, 'আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের অবিচ্ছেদ্য অধিকার'।
একই অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, 'আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা
যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির
হানি ঘটে'।
উপরন্তু এই সংবিধান 'লজ্জাজনক' শাস্তি থেকে নাগরিকদের
সুরক্ষা দেয়৷ কিন্তু এই ঘটনায় যেমন, 'আইনানুগ ব্যবহার' থেকে অভিযুক্তকে
বঞ্চিত করা হচ্ছে তেমনই 'সুনামে'রও হানি হচ্ছে। ফলত এই পুরো
প্রক্রিয়াটিই অসাংবিধানিক ও অমানবিক একইসাথে অনৈসলামিক। এটা অসমর্থনযোগ্য।
নাগরিক হিসেবে এই অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
এই সংস্কৃতি
সর্বত্র চালু হলে কাল কেউ হয়ত ফোন করে বলবে, বান্ডেল নিয়ে হাজির হতে। নইলে
পরশু এসে আপনার ঘরের সামনে লিখে দিয়ে যাবে, 'মাদক ব্যবসায়ী', 'চোরা
কারবারী', 'খুনী', 'ধর্ষক'-এর বাড়ি কিম্বা যা ইচ্ছে। সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম এখন শক্তিশালী একটা ব্যাপার৷ এখনই আওয়াজ তুলুন। এই নয়া
অবিচারের সংস্কৃতি রুখতে হবে। নইলে খোদা না করুন আমাদেরই কাউকে নতুন
সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হবে।"
No comments:
Post a Comment