লেখক: Mahmud Rayhan
"ওটিতে বসে আছি। আমাদের ওটি-ব্রাদার এসে বলছে, 'স্যার আমার এক আত্মীয় ইন্ডিয়া যাবে ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ওর ব্যাথাই কমতেছে না। আপনি কোন একটা ঔষধ লিখে দেন যেন আর চার পাঁচটা দিন একটু সহ্য করতে পারে'।
"ওটিতে বসে আছি। আমাদের ওটি-ব্রাদার এসে বলছে, 'স্যার আমার এক আত্মীয় ইন্ডিয়া যাবে ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ওর ব্যাথাই কমতেছে না। আপনি কোন একটা ঔষধ লিখে দেন যেন আর চার পাঁচটা দিন একটু সহ্য করতে পারে'।
আমিও একটু উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম, 'কী এমন ব্যথা যে ইন্ডিয়া যাওয়া লাগবে'?
পরে সে ভাইবারে সব রিপোর্ট আর কাগজপত্র পাঠাল আমাকে৷ এই রোগীর একটা ম্যালিগন্যান্সি ,
এডভান্স কেস৷ তবে তার চেয়েও বড় সমস্যা হল তীব্র পেটে ব্যথা। এজন্য তার
বাংলাদেশের মোটামুটি-সব এই বিষয় ও আশেপাশের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দেখানো সারা।
কেমোথেরাপিতে খুব একটা লাভ হবে না, তবে ব্যথাটা কমালে তার আসল উপসর্গ ই
চলে যায়...। শেষমেষ বাংলাদেশের এই বিষয়ের পিতৃপ্রতীম একজন তাকে বলেছেন
ভারতে গিয়ে নাকি এটা ব্লক (আসলে সিলিয়াক প্লেক্সাস ব্লক) করে আনা যায়। তাই
ধারকর্জ করে ভারত যাবার প্রস্তুতি।
নিজে সার্জারির ট্রেইনি হওয়ার সুবাদে কিছু মানুষকে অন্তত চিনি যারা তুলনামূলক তরুণ হলেও সব খবর রাখেন। আমার সেই স্যারের কাছ থেকেই জানলাম বাংলাদেশের একটা ইনস্টিটিউট-এ এই প্রসিডিওর নিয়মিতই হচ্ছে এবং খরচ একদম ই হাতের নাগালে! এই কথাটা ওটি-ব্রাদারকে জানালে সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তার আত্মীয় নাকি এই টাকা জোগাড়ের জন্য দুধের গরু, চাষের জমি সব বিক্রি করেছে।
পরে সে ভাইবারে সব রিপোর্ট আর কাগজপত্র পাঠাল আমাকে৷ এই রোগীর একটা ম্যালিগন্যান্সি
নিজে সার্জারির ট্রেইনি হওয়ার সুবাদে কিছু মানুষকে অন্তত চিনি যারা তুলনামূলক তরুণ হলেও সব খবর রাখেন। আমার সেই স্যারের কাছ থেকেই জানলাম বাংলাদেশের একটা ইনস্টিটিউট-এ এই প্রসিডিওর নিয়মিতই হচ্ছে এবং খরচ একদম ই হাতের নাগালে! এই কথাটা ওটি-ব্রাদারকে জানালে সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তার আত্মীয় নাকি এই টাকা জোগাড়ের জন্য দুধের গরু, চাষের জমি সব বিক্রি করেছে।
পরের রোগী এখনো আমাদের হাসপাতালে ভর্তি। তার সমস্যা ৩ বছর ধরে মাঝে-মাঝেই
পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয় আর ডায়াবেটিস একদমই কন্ট্রোলে থাকে না। রোগী মহিলা
আর তিনি দুইজন স্মার্ট 'ইয়ো-ইয়ো' টাইপের ছেলের জননী। ম্যালা দিন ধরেই বিভিন্ন ডাক্তার
দেখাচ্ছেন আর বিভিন্ন ঔষধ খাচ্ছেন কিন্তু যেই লাউ সেই কদু!
(আগের আল্ট্রাসাউন্ডগু লোর
মধ্যে দুইটাতে পেলাম তারা অগ্নাশয়ে পাথর সন্দেহ করছেন। রোগীর আসল রোগও
তাই। এই পাথরে অগ্নাশয়ের মুখ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখনই ব্যথা আর প্রদাহ।
সেইসাথে ডায়াবেটিস ফ্রি)।
রোগীর দুই পুত্রকে রুমে এনে জিজ্ঞেস করলাম, 'তোমরা দুই ভাই থাকতে তোমাদের মায়ের এই রোগ নিয়ে এখনো ঘুরছে কেন? অপারেশন
করলেই তো উন্নতি হবার কথা'৷
দুই ভাই আমাকে যা জানালো তার সারমর্ম হল, তারা গুগল-টুগল ঘেঁটে দেখেছে বাংলাদেশে এইরকম অপারেশন খুব একটা হয় না তাই তারাও আগামী মাসে মায়ের জন্য ইন্ডিয়াতে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছে। মাঝখানে হঠাৎ ব্যথা বেড়ে যাওয়াতে বিপদে পড়ে হাসপাতালে এসেছে।
তারা এও বলল যে ইন্ডিয়ানরা কতটা আন্তরিক৷ তাদের নক করার পরপরই নাকি হাসপাতাল থেকে ওরাই যোগাযোগ করেছে, ভিসা-টিসার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে, মায় হোটেলও যে পাবে সেই ব্যবস্থাও করে রাখবে।
গতকাল সারাদিন দৌড়াদৌড়ি এর পর রাত ১২ টার কি জন্য যেন টিভি এর সামনে বসেছি। রাত ১২ টায় সংবাদপত্রের শিরোনাম নিয়ে একটা অনুষ্ঠান হয়। তাতে কোন একটা পত্রিকার একটা লীড নিউজ ছিল, বছরে ৪০০ কোটি ডলার ভারতে যাচ্ছে চিকিৎসা খাতে... [১]। ৪০০ কোটি ডলার আসলে কত টাকা? ব্যাংক রেট ধরলেও ৩৬ হাজার কোটি টাকা ! এই টাকায় একটা পদ্মা সেতু হয়ে যায়।
দুই ভাই আমাকে যা জানালো তার সারমর্ম হল, তারা গুগল-টুগল ঘেঁটে দেখেছে বাংলাদেশে এইরকম অপারেশন খুব একটা হয় না তাই তারাও আগামী মাসে মায়ের জন্য ইন্ডিয়াতে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছে। মাঝখানে হঠাৎ ব্যথা বেড়ে যাওয়াতে বিপদে পড়ে হাসপাতালে এসেছে।
তারা এও বলল যে ইন্ডিয়ানরা কতটা আন্তরিক৷ তাদের নক করার পরপরই নাকি হাসপাতাল থেকে ওরাই যোগাযোগ করেছে, ভিসা-টিসার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে, মায় হোটেলও যে পাবে সেই ব্যবস্থাও করে রাখবে।
গতকাল সারাদিন দৌড়াদৌড়ি এর পর রাত ১২ টার কি জন্য যেন টিভি এর সামনে বসেছি। রাত ১২ টায় সংবাদপত্রের শিরোনাম নিয়ে একটা অনুষ্ঠান হয়। তাতে কোন একটা পত্রিকার একটা লীড নিউজ ছিল, বছরে ৪০০ কোটি ডলার ভারতে যাচ্ছে চিকিৎসা খাতে... [১]। ৪০০ কোটি ডলার আসলে কত টাকা? ব্যাংক রেট ধরলেও ৩৬ হাজার কোটি টাকা ! এই টাকায় একটা পদ্মা সেতু হয়ে যায়।
এটাতো গেল খালি মেডিকেল ভিসায় যারা গেছেন তাদের প্রদর্শিত অর্থ। আপনি শিওর
থাকেন টুরিস্ট ভিসায় গেছেন তার দেড় গুণ। আর অপ্রদর্শিত ভাবে গেছে তারো
দ্বিগুন অর্থ! কত টাকা হল তাহলে? আপনি ভাবতে থাকুন...সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বাদ ই দিলাম।
ভারত (সব সেন্টার না), সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড আমাদের থেকে
জ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে আছে এটা অনস্বীকার্য৷ কিন্তু নিজে
ডাক্তার হয়ে জানি যেসব চিকিৎসা নিতে মানুষ বিদেশে যায় তার ৮০% দেশেই হয়,
দেশেই করা সম্ভব। কিন্তু ওই যে আমাদের কূপমন্ডূকতা।
আমাদের ১০০ রোগি
দেখার সময় আছে কিন্তু ১০০০ রোগীর ফাইন্ডিংস নিয়ে একটা জার্নাল লেখার
সময় নেই। আমাদের বড় স্যারেরা বড়-বড় অপারেশন করেন অবলীলায় কিন্তু সেটা
মানুষকে জানাতে, সেটা নিয়ে দুই কলম লিখতে চান না। এভাবে হয় না,
এভাবে হবে না। এখন এই যুগে টিকে থাকতে হলে কাজ করতে হবে, জানাতেও হবে।
আরেকটা সমস্যা হল তথ্যের বড় অভাব৷ আমরা মানি বা না-মানি সারা দুনিয়া চলে
এসেছে অনলাইনে। এখন কেউ ফোন দিয়ে বা পাতা উল্টিয়ে খোঁজার চাইতে গুগল করে
নিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
বাংলাদেশের কয়টা সেন্টারের ওয়েবসাইটে আপনি কাংখিত তথ্য পাবেন? প্রথম রোগীর
ক্ষেত্রে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে, স্যার নিজেই জানতেন কিনা এই কাজ
বাংলাদেশেও করা যায়!
আরেকটা জিনিস হল রেফারাল। একজন সব কাজ পারবেন
না এটাই স্বাভাবিক আর সব সেন্টারে সব ফ্যাসিলিটি থাকবে না এটাই বাস্তবতা।
তাই রোগীর ভালর জন্য অন্য কারো কাছে রেফার করে দেয়াটাতে আমি কোন লজ্জা
দেখি না, বরং রোগীর ভাল চাওয়াটাতেই ভাল ডাক্তারের পরিচয়।"
সূত্র:
3 comments:
যে দেশের প্রেসিডেন্ট সাধা্রন চেকাপের জন্য বিদেশ যায় সেই দেশের কাছ থেকে আর কি আশা করা যায়?
স্বাস্থ ব্যবসায় কলকাতার ৮০ % টাকা আসে বাংলাদেশ থেকে| দক্ষিণ ভারতে এতটা শতাংশ হবে না তো ভালোই টাকা আসে বাংলাদেশী| দক্ষিণ ভারতীয় দোকানগুলো অবশ্য সৎ| আপনাকে ১০০ টাকার সেবা দিলেও আপনাকে দুই দিক বুঝিয়ে বলবে আর কলকাতায় অবশ্য জানাবে ওই সেবা না নিলে আপনার মারা যাওয়ার চান্স ৮০% বেড়ে যাবে|
-- জাকিরইয়া - হায়দ্রাবাদ
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য @জাকিরইয়া, হায়দ্রাবাদ
Post a Comment