Search

Friday, November 22, 2019

রিউনিট ডোম

লেখক:  Murad Hai
"উনত্রিশটা কোরাল দ্বীপ ও পাঁচটা বাসযোগ্য ছোট বড় দ্বীপের সমন্বয়ে একটা দেশ যার নাম, 'মার্শাল আইল্যান্ডস'। লস এঞ্জেলেসের পাঁচ হাজার মাইল পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের এক কোনায় এর অবস্থান। ৭০ বর্গমাইলের এই দ্বীপের বাসিন্দার সংখ্যা এ বছরের হিসাব অনুযায়ী আটান্ন হাজার সাতশ' একানব্বই জন মাত্র।
চার যুগের বেশী সময় ধরে আমেরিকার করায়ত্ত থেকে ১৯৮৬ সালে দেশটা স্বায়ত্ব শাসন লাভ করে যদিও আমেরিকার সাহায্যের উপর এখনো পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে আছে দেশটা।

একটা বিশেষ কারণে এই দেশ নিয়ে লিখছি। তাই শুরুতে দেশটার পরিচিতি নিয়ে লিখতে হল নইলে দেখা যাবে আমার মত অনেকেই হয়ত এর আগে দেশটার কথা কখনো শুনে নাও থাকতে পারেন। এই পৃথিবীর ক্ষমতাধরদের দুইটা ব্যাপার আমার একদম অপছন্দের। তার প্রথমটা হল ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিয়ে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া। আমি মনে করি, জঘন্যতম অপরাধের শাস্তি হিসাবে অপরাধীকে প্রাণে না-মেরে চিরতরে লোক চক্ষুর অন্তরালে একাকী নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া যায়, যা এক সময় চালু ছিল। তবুও প্রাণ কেড়ে নেয়া সমর্থন করি না।
দ্বিতীয়ত, পারমাণবিক বোমা বানানো, পরীক্ষা করা এবং তার ব্যবহার কিংবা নিজের কাছে আছে বলে সেই দেমাগে অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের হুমকি ধমকি দেয়া একদম সমর্থন করি না।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকার জাপানে আণবিক বোমা ফেলা ছাড়া আর কোন চয়েস তাদের হাতে ছিল না। নইলে রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে কামাকাজি স্টাইলে বিমান হামলা করে পার্ল হারবারে আমেরিকার সব জাহাজ ধ্বংস করে দেয়ার পর আমেরিকার বাঁচার আর কোন পথ খোলা থাকত না। জাপানীরা আমেরিকার রাস্তায় ঘুঘু চরিয়ে ছাড়ত যদি সেই অশুভ বোমা ফেলে তাদেরকে না-ঠেকানো হত। তাই বলে কি আমি আমেরিকার এই ঘৃণ্য কর্মকে সমর্থন জানাচ্ছি ভাবছেন? এর উত্তরে আমি হ্যাঁ কিংবা না কোনটাই বলতে পারছি না। অন্যায় অবশ্যই তবে নিরুপায় হলে যে কেউ যে কোন বড় ভুল করে ফেলে। তাই বলে যুদ্ধ শেষেও বড়-বড় দেশগুলি আগের চেয়ে আরও অনেক বেশী শক্তিশালী বোমা বানানোর প্রতিযোগিতাকে কোনভাবে সমর্থন করতে পারছি না। তারচেয়ে আগের জমানার মত বাহুবলে যুদ্ধ করাই শ্রেয় মনে করি।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, নিজেদের আধিপত্য থাকায় মার্শাল আইল্যান্ড ছিল আমেরিকার আণবিক বোমা পরীক্ষা কেন্দ্র। তারা ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সেই দ্বীপে মোট সাতষট্টিটা আণবিক বোমার পরীক্ষমূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বোমার রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় দ্বীপের মারাত্বক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। আমেরিকা দাবী করে, তারা সেই দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত 'এনেওাটাক কোরাল দ্বীপ'-এর বিষাক্ত মাটি সরিয়ে নিয়েছে। যেখানে আমেরিকা শুধু পারমাণবিক বোমার পরীক্ষাই চালায় নাই, তারা সেখানে ডজনের উপর রাসায়নিক বোমার পরীক্ষাও চালিয়েছে। এছাড়া আমেরিকার নেভাদার টেস্টিং গ্রাউন্ড থেকে ১৩০ টনের বেশী বিষাক্ত মাটি সরিয়ে এনে এনেওয়াটাক কোরাল দ্বীপে নিজেদের বানানো গম্বুজের মত দেখতে নিশ্ছিদ্র এক বিশাল কংক্রিটের ডোমের ভিতর জমিয়েছে। এই ডোমটারই নাম হল রিউনিট ডোম

রিউনিট ডোমের সাইজ হল ৩.১ মিলিয়ন কিউবিক ফিট অথবা বলা যায় পঁয়ত্রিশটা অলিম্পিক স্টান্ডার্ড সুইমিং পুলের সমান। আমেরিকার সব তেজস্ক্রিয় আণবিক আবর্জনা খালাস করার গর্ত হল এই গম্বুজ। জমিয়ে রেখে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ভুলে গেছে অবহেলায়। অনেক বড় অন্যায় করেছে ক্ষমতাধর আমেরিকা। বড় অমানবিক কাজ করেছে।
ভয়ঙ্কর খবর হল, জানা গেছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় রিউনিট ডোমের নাকি কংক্রিট ফেটে লিক করা শুরু করেছে। দ্বীপের জীব জন্তু পশু পাখী জলজ প্রাণী নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে। মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। ক্যান্সার মহামারী আকার ধারণ করছে। মানুষ দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মার্শাল আইল্যান্ডের মানুষ আমেরিকার সাহায্য কামনা করছে। সাহায্য চেয়েছে। আমেরিকা সাহায্য দিতে অস্বীকার করেছে। বলছে গম্বুজটা সেই দ্বীপে- তারমানে এটা সেই দ্বীপের সম্পত্তি। আমেরিকার কি করার আছে! মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট হিলদা হেইন বলে, 'আমরা এটা চাই না। আমরা এই ডোম বানাই নাই। ডোমের ভিতরের আবর্জনা আমাদের না। এসবই তাদের। প্লিজ, তারা যেন এসব নিয়ে গিয়ে আমাদের মুক্তি দেয়'।

রিউনিট ডোম ছোট্ট গরীব মার্শাল আইল্যান্ডের চোখে পড়ার মত গম্বুজ সবচেয়ে বড় স্থাপনা যা আমেরিকার পারমানবিক শক্তির পরীক্ষাগার।আমেরিকার নিরাপত্তায় মার্শাল আইল্যান্ডের মানুষরা নিজেদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে। আর এখন কিনা আমেরিকা তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করছে।"

তথ্য সূত্র : লস এঞ্জেলেস টাইমস।

No comments: