"কেভিন কার্টার ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন বিখ্যাত ফটোসাংবাদিক । তিনি ১৯৯৩ সালে সুদান দুর্ভিক্ষের অসাধারণ কিছু ছবি তোলেন Vulture and Little Girl- তেমনই একটি ছবি।
ছবিতে ক্ষুধার্ত একটি মুমূর্ষ মৃত প্রায় বাচ্চার পাশে একটি শকুন অপেক্ষায় বসে আছে। অপেক্ষা চমৎকার একটি ভোজের। ১৯৯৪ সালে ছবিটি নিউইর্য়ক টাইমসে প্রকাশিত হলে তিনি এর জন্য পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কার পাবার তিন মাস পরেই তিনি সুইসাইড করেন মাত্র ৩৩ বছর বয়সে। পরে ওঁর ডাইরি থেকে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়, 'ওই দিন যখন আমি ক্যামেরায় এ দৃশ্যটা ধারণ করছিলাম তখন বার বার আমার নিজের সন্তানের মুখগুলি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। আর আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল'।
এর পর ডাইরির পাতা সাদা। ওই বাচ্চাটার কি হল? সে কি শকুনের খাবারে পরিণত হল? তিনি কেন সুইসাইড করলেন, সে দিনের ঘটনার তীব্র মানসিক যন্ত্রণা থেকেই কি তিনি এ পথ বেছে নিয়েছিলেন? কেউ জানে না এই সব প্রশ্নের উত্তর। সে সময় আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার ছবি দুঃস্বপ্ন হয়ে কার্টারকে তাড়া করত। যার হাত থেকে বাঁচতে কার্টার কোকেনের মত মাদক গ্রহণ করতেন।
অনেকে ক্ষুব্ধ তার উপর, কেন সেদিন তিনি বাচ্চাটাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাবার পরিবর্তে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকে কিছু ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। কেভিন কার্টারকে যে ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আমাকে তা দেননি। কেভিন কার্টারের সুইসাইডে কারো কোন লাভ হয়েছে বলে আমার জানা নাই। তিনি বেঁচে থাকলে এ রকম অনেক বাচ্চাকে শকুনের খাবার হওয়া থেকে বাঁচাতে পারতেন। বেঁচে থাকা অনেক সময় অনেকের কাছে অসহনীয়, অর্থহীন বলে মনে হয়। এরা জীবনের কোন মানে খুঁজে পান না।
আসলে জীবনের মানে জানতে হলে যেতে হবে মৃত্যু পথযাত্রী একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর কাছে। যার পৃথিবীটা হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ। প্রতি মুহূর্তে যার দু চোখে খেলা করে বেঁচে থাকার আকুতি। মনে হয় হায় জীবন এত ছোট কেন? মাতৃ গর্ভে একটি ভ্রূণ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে। এক সময় পূর্ণাঙ্গ মানব শিশু রূপে আত্নপ্রকাশ করে। চোখ পিটপিট করে শিশুটি অপার বিস্ময় নিয়ে তার চারপাশের সৃষ্টির সৌন্দর্যকে অবলোকন করে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ দান। ইচ্ছা করলেই আমি দু হাত বাড়িয়ে নিতে পারি বর্ষার প্রথম বৃষ্টির স্পর্শ। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে বর্ষার পানিতে ভাসাতে পারি কাগজের নৌকা। নিঃশ্বাসে নিতে পারি বাদলা দিনের প্রথম কদম ফুলের ঘ্রাণ। ইচ্ছে হলেই প্রিয়জনের হাত ধরে ক্লান্তিহীন ভাবে হাঁটা যায় অনেকটা পথ। মনে হয় হায় কী চমৎকার এ বেঁচে থাকা! আহা জীবন!
* ছবির বাচ্চাটি পরে কিভাবে রক্ষা পেয়েছিল জানা নাই। সে আরও কিছুদিন বেঁচে ছিল। নিয়ন কং নামের এ শিশুটি মারা যায় ২০০৭ সালে।"
No comments:
Post a Comment