একে আমি রাস্তায় পেয়েছিলাম ঠিক এই অবস্থায়:
সাগর নামের এই ছেলেটি তার জীবনের যে গল্প শোনায় তা কেবল হতভম্বই করে দেয় না ক্রমশ সরে যায় আমাদের শরীরের চকচকে কাপড় পাল্লা দিয়ে সরে পেটের পাতলা চামড়া। উম্মুক্ত হয়ে পড়ে একপেট আবর্জনা। সে দুর্ঘটনায় হারায় তার দুপা, একটা হাত।
দূর্ঘটনার পরই সাগরের বাবা-মা তাকে ফেলে দেয়। আমার জীবনে বিচিত্র-সব অভিজ্ঞতায় ঠাসা কিন্তু এমন অভিজ্ঞতার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! আমি শিখলাম, এখনও আমার শেখার ঢের বাকী!
সাগরের এখন অসম্ভব প্রয়োজন একটা হুইল-চেয়ারের। আমার হাতে একটা হুইল-চেয়ার ছিল যেটা ইংল্যান্ড থেকে পাঠিয়েছিলেন নাজমুল হুদা এবং তার বন্ধু তানভির হোসাইন। জরুরি অবস্থার জন্য আমি রেখে দিয়েছিলাম কিন্তু এটা সাগরকে দেয়ার চেয়ে জরুরি অবস্থা আর কী হতে পারে!
সাগরের এখন অসম্ভব প্রয়োজন একটা হুইল-চেয়ারের। আমার হাতে একটা হুইল-চেয়ার ছিল যেটা ইংল্যান্ড থেকে পাঠিয়েছিলেন নাজমুল হুদা এবং তার বন্ধু তানভির হোসাইন। জরুরি অবস্থার জন্য আমি রেখে দিয়েছিলাম কিন্তু এটা সাগরকে দেয়ার চেয়ে জরুরি অবস্থা আর কী হতে পারে!
চলাফেরায় ওর বড় কষ্ট! এক হাতে যে প্রকারে এ গরম পিচের রাস্তায় শরীরটাকে টেনে-টেনে নিয়ে যায় এটা কঠিন হৃদয়ের একজন মানুষেরও বুক থেকে পাক খেয়ে উঠবে তীব্র হাহাকার।
এর বাবা-মা একে ফেলে দিয়েছে জীবনের এই কুৎসিত দিক যেমন আছে তেমনি আছে আলোকিত এক দিকও। এর ভাই একে বুকে আগলে রেখেছেন। আমি তখন খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সাগরের ভাইকে এক নজর দেখার জন্য।
সাগরের ভাই 'ভাসানি' নামের এই পাতলা-দুবলা মানুষটার ছায়া ছড়িয়ে যায় চারদিক।
সাগর নিয়ে আমি খানিকটা ভয়ে-ভয়ে ছিলাম হুইল-চেয়ারে সাগর নিজে-নিজে উঠতে পারবে তো? কিন্তু কেবল একটা হাতের সাহায্যে সাগর যে ভঙ্গিতে হুইল-চেয়ারে উঠে এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
"জীবন নিয়ে একটা কথা আছে 'জীবনকে দেখতে হয় একজন মৃত্যুপথযাত্রি মানুষের চোখ দিয়ে' এটাকে খানিকটা বদলে বলা যেতে পারে, জীবনকে দেখতে হয় সাগরের চোখ দিয়ে...।"
No comments:
Post a Comment