চারদিক যখন আধারে ছেয়ে গেছে তখন আমাদেরকে থই থই আলো দেখাচ্ছেন প্রফেসর ডা. মো. রাশিদুল হাসান মহোদয়। তিনি এক অতি জরুরি ভিডিও বার্তায় আমাদেরকে জানাচ্ছেন, 'ভয় নাই উড়ে ভয় নাই,'।
তিনি দেশ করোনাশূন্য করে ফেলার দাওয়াই বাতলেছেন। কেমন করে? তিনি জানাচ্ছেন এই দেশের সবাইকে এখনই এই ওষুধগুলো খাইয়ে দিলে দেশ থেকে করোনা নানা-বাপ-চাচা বলে পালাবে।
ওষুধগুলো নিয়ে মন্তব্য করার কোন যোগ্যতা আমার নাই। এটা বিশেষজ্ঞদের কাজ। কিন্তু একগাদা না কেবল একটা করে ট্যাবলেটও যদি এই দেশের লোকজন গিলে ফেলে আর ওই ওষুধ কোম্পানি যদি চারআনা পয়সাও (যদিও এই পয়সা এখন আর চালু নাই) ফি-ট্যাবলেটে লাভ করে তাহলেও ওই কোম্পানির এনপি-নেট প্রফিট হবে ৪ কোটি টাকা। ইমাজিন!
ওষুধগুলো নিয়ে মন্তব্য করার কোন যোগ্যতা আমার নাই। এটা বিশেষজ্ঞদের কাজ। কিন্তু একগাদা না কেবল একটা করে ট্যাবলেটও যদি এই দেশের লোকজন গিলে ফেলে আর ওই ওষুধ কোম্পানি যদি চারআনা পয়সাও (যদিও এই পয়সা এখন আর চালু নাই) ফি-ট্যাবলেটে লাভ করে তাহলেও ওই কোম্পানির এনপি-নেট প্রফিট হবে ৪ কোটি টাকা। ইমাজিন!
পূর্বেই বলেছি ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে আমার বক্তব্য নেই, এটা বিশেষজ্ঞদের কাজ। একজন বিশেষজ্ঞ এইসব নিয়ে লিখেছিলেন। তাঁকে আমি কাতর অনুরোধ করেছিলাম তাঁর লেখাটা আমার সাইটে পাবলিশ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য। দিন যায়, রাত যায় সেই অনুমতি আর আসে না। যাই হোক, আমাদের মত যাদের 'ন্যাকাপড়া' কম তাদের আর গতি কী! ন্যাকাপড়া কম-ন্যাকাপড়া কম তাতে কী, আমরা আমরাই তো...।
তাই আসুন 'আমরা আমরাই তো' অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলি:
এই যে রাশিদুল হাসান স্যার-মহোদয় তিনি দেশের এইরকম একটা ক্রান্তিলগ্নে ক্রেন নিয়ে যেরকম ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এটা স্যালুট করার মত। কিন্তু...একটা কিন্তু থেকে যায়। ইনি যে ভিডিওটা করেছেন পেছনে কেবল বাতি লাগিয়েই বসে নেই ৩টা লোগেও আছে।
তো, আমরা যখন ওষুধ নিয়ে কথা বলতে পারব না পর্দায় দেখানো লোগে নিয়ে কথা বলা যাক:
১. Tweetup: এরা জাঁক করে, চালু ভাষায় বুক ফুলিয়ে ডাক্তার সাহেবের কর্মকান্ড প্রচার করে এমন করে:
আর Tweetup কী অসাধারণ কর্মকান্ডেই না জড়িত! এরা আমাদেরকে শেখাচ্ছেন ডিব্বার দুধের পুষ্টিগুণ। বাচ্চাদের সঠিক মেধা বিকাশ এবং বেড়ে উঠার জন্য ডাব্বার জিনিসগুলো হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার। মা তিন ফুট বাপ সাড়ে তিন ফুট আর শ্লা এই সব ডিব্বার খাবার খেলে বাচ্চা হবে ছয় ফুট!
২. Ingenious pulmo-fit: ইনি এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। এই প্রতিষ্ঠানে জন্য তিনি যে পোজ দিয়েছেন এটা নায়কোচিত- নায়ক নায়ক। 'লাইক আ চিয়ারমেন সাব'।
৩. incepta: এখানে হচ্ছে আসল খেলাটা। এই 'পোরফেসর' সাহেব উনার এই ভিডিওবার্তায় যে ওষুধগুলো খেতে বলেছেন তার মধ্যে আছে এই কোম্পানির ওষুধও:
এই ভিডিও ক্লিপে তিনি যেসব ওষুধের কথা বলেছেন তার মধ্যে Eskayef কোম্পানির ওষুধও আছে। এটা সত্য ওনার সাদা কাপড়ের মত সাদা চোখে দেখলে এখানে কোন সমস্যা মনে হবে না কারণ এসকেএফের লোগো এখানে নাই। কিন্তু অন্যত্র তিনি এসকেএফের ছাতা-ছায়াতলে অজস্র ভিডিও করেছেন এবং হর্স-মাউথের মত মুখ খুলে রেখেছিলেন।
Eskayef নামের ওষুধ কোম্পানির Rivarox--এর কথা বলা হয়েছে:
এখানে এসে দুষ্ট পোলাপানদের ভাষায় বলতে হবে, 'খেলা হপে, এইবার খেলা হপে'। 'পোরফেসর' সাহেব Remdesivir-এর কথা বলেছেন। এই ওষুধ দেশে মাত্র ২টা কোম্পানি তৈরি করে। Remivir নামে এসকেএফ আর Bemsivir নামে বেক্সিমকো। কিন্তু আপনিই চাইলেই বেক্সিমকোর ওষুধ কিনতে পারবেন না, 'নট ফ সেল'। সরকারের সঙ্গে এদের সম্ভবত অন্য হিসাব-কিতাব আছে।
তো, উপায়? উপায় আবার কী, এসকেএফের Remivir আছে না। দাম? হেহেহে, মাত্র ৫৫০০ টাকা!
আমাদের দেশে অসংখ্য তরুণ ডাক্তার আছেন। যারা শেওলাপড়া ডর্মে থাকেন যাওয়ার সময় ফ্রিতে অ্যাজমা নিয়ে যান। এলেবেলে হোটেলের খাবার খেয়ে বোনাস পেটের অসুখটাও।
বর্হিবিভাগে ১০০ প্লাস উপর রোগি দেখেন। অনেক বিয়ে-শাদিতে যেতে পারেন না দামি উপহার কিনতে পারবেন না বলে। এঁরা অনেক সময় রোগির কষ্ট দেখে কাঁদেন। শীর্ণ হাতগুলোর অপরিষ্কার নখগুলো আঁকড়ে ধরে যখন রোগি নামের মানুষটার হাহাকার, আব্বা-আব্বা। তখন অক্ষমতায় চট করে অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নেন।
শেষের এই কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে, আমার সঙ্গে বিভিন্ন ডাক্তারদের বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে। এদের কেউ-কেউ আমাকে বলেছেন, বুড়া-বুড়া প্রফেসররা তাদেরকে এফসিপিএস পরীক্ষায় বছরের-পর-বছর আটকে রাখেন। কেন আটকে রাখেন তখন না-বুঝলেও এখন খানিকটা বোঝার চেষ্টা করি...।
2 comments:
আহ,কেমন গুছিয়ে লিখেছেন একদম বুকে গিয়ে লাগে। তরুন ডাক্তারদের কথা আপনার মত সবাই যদি বুঝত।
শেষের কথাটা বেশিই হাচা - এইডা জনম জনম যাবৎ এই দেশে চলতে আছে। বিশেষ-অজ্ঞদের জ্বালায় বিশেষজ্ঞ তৈরি বহু তিক্ততার‼
Post a Comment