Search

Friday, July 24, 2020

আপনাদের আবেগ এতো বেশি কেন, জনতা?

লেখক: Annando Kutum (লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)

"ফাহিম সালেহ নামের যে মার্কিন উদ্যোক্তাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি না বাংলাদেশে জন্মেছেন, না বাংলাদেশে বড় হয়েছেন, না বাংলাদেশে পড়ালেখা করেছেন, না বাংলাদেশে থাকেন, না বাংলাদেশে হত্যা হয়েছেন?

তিনি জন্মেছেন সৌদি আরবে, বড় হয়েছেন আমেরিকায়। ব্যাবসা বানিজ্যও করেছেন আমেরিকা কেন্দ্রিক। তিনি না বাংলাদেদেশি পাসপোর্ট হোল্ডার, না বাংলাদেশি নাগরিক? তাহলে তাকে বারংবার বাংলাদেশি উদ্যোক্তা বলা হচ্ছে কেন? তিনি কোন এঙ্গেল থেকেই বাংলাদেশি নন বরং বলুন বাঙ্গালী উদ্যোক্তা। তার নাগরিক পরিচয় আমেরিকান হলেও তার এথনিসিটি বাঙ্গালী। কারণ বাবা মা বাঙ্গালী।এর মধ্যে দেখলাম, কিছু কিছু অতিউৎসাহী জনতা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সমালোচনা করছে যে সরকার কেন প্রতিবাদ জানালেন না।

আরে ভাই, সরকার প্রতিবাদ জানাবে কোন গ্রাউন্ডে? আমেরিকান সিটিজেন, আরেকজন আমেরিকান দ্বারা, আমেরিকায় হত্যা হয়েছে৷ এখানে বাংলাদেশ সরকারের কি করার আছে? যদি বাঙ্গালী কোটায় প্রতিবাদ জানাতে হয় তাহলে তো পশ্চিমবাংলা সরকারকেও প্রতিবাদ জানাতে হবে, এমন কি ভারত সরকারকেও প্রতিবাদ জানাতে হবে। শুধু বাংলাদেশ একা জানালে হবে?
আমেরিকা নিরাপত্তার সূচকে বাংলাদেশ থেকে বহু উপরে অবস্থান করে। যান না, আমেরিকার দিকে আঙ্গুল তুলতে, আঙ্গুল ভেঙ্গে একবার পেছনে গুঁজে দেবেনে ৷ আমেরিকান নাগরিক অভিজিৎ রায় বাংলাদেশের বই মেলায় এসে হত্যা হয়েছিলো। আমেরিকা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সেই তদন্ত করতে বাংলাদেশে চলে এসে ছিল। ফাহিম সালেহ হত্যা হবার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে আমেরিকা। দ্যাট ইজ আমেরিকা ব্রো! দয়া করে ট্রাম্পের স্টুপিডিটি, কমেডি দিয়ে আমেরিকা বিচার করতে যাবেন  না। আমেরিকা আরও গভীরের বিষয়। ল এনফোর্সমেন্টে আমেরিকা কেউকে ছাড় দেয় না।
এই যে ট্রাম্প যখন ঘোষণা দিয়েছে যে, করোনার জন্য যদি জুমে ক্লাস নেয় বিশ্ববিদ্যালয়, তাহলে বিদেশি ছাত্রদের আমেরিকা ছাড়তে হবে। নিজ দেশে গিয়ে ক্লাস করুক। আমেরিকায় থাকতে হবে না। সাথে-সাথে আমেরিকার ১০ থেকে ১২ টা বিশ্ববিদ্যালয়, ফেসবুক, গুগল, মানবাধিকার সংস্থা এক যোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করে দিয়েছে। যাহ শালা, এবার কোর্টে চক্কর খা...!

অথচ এই যে বাংলাদেশ সরকার করোনা নিয়ে একটার পর একটা ফাত্রামি করে যাচ্ছে, কই কোন বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ বা অন্য কোন বেসরকারী সংগঠন সরকারের নামে মামলা তো দূরের কথা আঙ্গুল তুলেছে? অন্যদিকে সরকারের পা চাটতে-চাটতে ফর্সা বানায় দিচ্ছে।
ফাহিম সালেহের হত্যাকারীকে আমেরিকা ৪৮ ঘন্টায় গ্রেফতার করেছে। অথচ ৪৮ হাজার ঘন্টা কেটে গেলো 'সাগর-রুনী' হত্যাকারীর টিকিটাও সরকার ধরতে পারল না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমি হত্যাকারীকে হাজির করব বলা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও ইহলোকের মায়া ছেড়ে চলে গেলেন, কিন্তু আজও সেই ২৪ ঘন্টা শেষ হল না।
তনু হত্যা, অভিজিৎ হত্যা হাজার-হাজার হত্যার কোন কূলকিনারা করতে না পারা দেশের জনতা অতি আবেগে আমেরিকাকে পররাষ্ট্রনীতি দেখায়! হাসব না কাদব? এনিওয়ে, আপনাদের আবেগ আমি বুঝি। এই আবেগই আপনাদের সম্বল তাও জানি। দয়া করে আবেগকে সহি জাগায় ব্যবহার করেন। কোন আইডিয়া রাখেন যে গত ৩ মাসে ঢাকার শহরে কতজন তরুণ উদ্যোক্তা আত্মহত্যা করেছে? কতজন তরুণ উদ্যোক্তা সর্বস্বান্ত হয়েছেন? আমার এলাকায় এমন ৫-৭ জনকে আমি চিনি যারা ইতমধ্যে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
কই, সরকারের নামে আপনারা মামলা করতে পেরেছেন এই ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব বৃদ্ধির অভিযোগে? না, পারেন নাই! এই ফালতু আবেগ ছাড়েন আপনারা। নিজেদের দিকে মনোযোগ দেন। নিজ দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের দিকে মনোযোগ দেন। নিজ দেশের পলিসির দিকে মনোযোগ দেন।

আয়মান সাদিক নামের একজন দেশীয় উদ্যোক্তা যখন একটু নামডাক করে ফেলল, অমনি শুরু হল 'আয়মান সাদিকের কল্লা চাই' আন্দোলন। আপনারা আছেন বিদেশি উদ্যোক্তা নিয়ে...ফাহিম সালেহ কোন মতেই বাংলাদেশী নয় বা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্টও করে না। ফাহিম সালেহ বাংলাদেশ সরকারকে ট্যাক্সও দেয় না। সে যতই বড় হোক আদতে সেটার সাথে বাংলাদেশের কোনই এক্টিভ সম্পর্ক নেই, বরং প্যাসিভ। তিনি বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করার ঠিকাদারিও নেন নাই কখনো!
তবে তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা৷ পজেটিভ মানুষ। বাঙ্গালী বা ননবাঙ্গালী যাই হোক, তার মত একজন তরুণের এমন অপমৃত্যু অবশ্যই আমাদের কষ্ট দেয়। কিন্তু দয়া করে সেই কষ্টকে দেশপ্রেমীয় শেপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কোন তরুণের মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। হোক সে আমিরিকান, সিরিয়ান বা পাকিস্তানি।"
-Annando Kutum

... 
লেখকের সঙ্গে খানিকটা যোগ করতে চাই। প্রত্যেকটা মৃত্যুই ক্টের, সেই কষ্টে আমরা কাঁদব কিন্তু ...অনেকে বলতে চাইছেন ফাহিম হয়তএকজন ইলন মাস্ক হতেন। হয়তো...।
কিন্তু এর পাশাপাশি মরা ই ভদ্রলোকের কথাটাও শুনতে চাই। আপনি আপনার মার জন্য, দেশ-মার জন্য কী করেছেন?:

 

No comments: