কখনও-কখনও কিছু ঘটনা সময়কে আটকে ফেলে! সময় থেমে যায় না এ সত্য কিন্তু কেবল গভীর বেদনা পাক খেয়ে উঠে আহা, ওই সময়টাকে যদি মুছে ফেলা যেত। এমনই একটা ঘটনা ঘটে গেল।
এটা মাস্তুল ফাউন্ডেশনের [১] একটা লেখার স্ক্রিণশট। এঁরা বিভিন্ন জনহিতকর কাজ করে থাকেন।
ঢাকার একটা অভিজাত হাসপাতালে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ তথ্য নতুন কিছু না। তাঁর সাত লক্ষ টাকা বিল হয়েছে এও নতুন না কিন্তু খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে এই টাকার অংকে বিস্তর ছলচাতুরি আছে। সে প্রসঙ্গ পরে...।
এই হাসপাতাল সাত লক্ষ টাকা বিল করেছে কিন্তু এই মৃতদেহটিকে নগ্ন অবস্থায় মাস্তুল ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে! ওদেরকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, 'আপনারা ১০০ টাকা দিয়ে একটা কাপড় কিনে ঢেকে দিতে পারলেন না'?
তাদের উত্তর, 'আমাদের সিস্টেমে নাই'।
গিন্সবার্গের-এর কথা 'Go Fuck Yourself With Your Atom Bomb' থেকে ধার করে বলতেই হয়, 'Go Fuck Yourself With Your f... system. মাস্তুল ফাউন্ডেশন যদিও এখানে হাসপাতালের নাম শেয়ার করেনি কিন্তু মাস্তুল ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই হাসপাতালটার নাম।
পেটের চামড়া সরে গেলে যেমন সব আবর্জনা উম্মুক্ত হয়ে পড়ে তেমনি এই করোনাকালে এই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার পাতলা চামড়াটা সরে গেছে। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। সমস্ত দেশ গুময়!
আমাদের দেশের এমপি মহোদয়গণ একেকজন আইনপ্রণেতা। এরাই আইন-কানুন তৈরি করেন। দেশের চার-চাকা গোল হয়ে বনবন করে ঘোরে এদের আইনে।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এটা একজন এমপি ওরফে আইনপ্রণেতার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের উপর আমরা চোখ বন্ধ করে ভরসা করব কারণ, কারণ এটা যেহেতু এইজন আইনপ্রণেতার এখানে আইনের ব্যতয় হওয়ার সুযোগ নেই।
আচ্ছা, এই যে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালকে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত ৮ লাখ টাকা জারমানা করেছিল! কেন করেছিল? কারণ ওদের ল্যাবের অধিকাংশ 'রিএজেন্ট'-এর মেয়াদ ছিল না। এ এক ভয়ংকর সংবাদ!
কারণ একজন ডাক্তার রোগির চিকিৎসা করবেন ল্যাব টেস্টের উপর ভিক্তি করে। রিএজেন্ট ঠিক না-থাকলে কখনও-ই সঠিক চিকিৎসা হবে না। ভুল চিকিৎসায় রোগির মৃত্যুও হতে পারে। তখন আমরা ডাক্তার পিটিয়ে হাতের সুখ মেটাবার চেষ্টা করব। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাক্তারের কিছুই করার থাকে না, থাকে প্রতিষ্ঠানের। যাই হোক, এমন একটা অপরাধের জন্য ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা খুবই অপ্রতুল।
আনোয়ার খান হাসপাতালকে সরকার কোভিড-১৯ রোগিদের জন্য 'ডেডিকেটেড হাসপাতাল' হিসাবে ঘোষণা দেয়। রোগির এখানে বিনে পয়সায় চিকিৎসা হবে। এই ভরসায় ভর্তি হয়ে 'আমি বন্দি কারাগারে'।
কী সর্বনাশ বিলের জন্য রোগি আটকে রেখেছে। আমাদের অবশ্য রোগির জন্য বিনে পয়সার পরামর্শ তাঁর পরিবারের লোকজনকে এখানে হাসপাতালে নিয়ে আসা। এরপর সুখে-শান্তিতে বসবাস! কিন্তু, 'তা হবার লয়'।
পরিবারের সবাই এখানে না-আবার থেকে যায় এই ভয়ে কিনা কে জানে রোগিকে 'ট্যাকাটুকা' ফেরত দিয়ে বিদেয় করা হয়।
মানুষ গলা কাটাটা রপ্ত কেবল পশু কেটেই করে না এভাবেও করে! সেসব না-হয় হলো কিন্তু মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে এসেছি। একজন মানুষ যখন লাশ হয়ে যান তখন তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে চলে যান। কোনও প্রকারেই তাঁর বিন্দুমাত্র অসম্মান করা চলে না। সেটা হিটলারের লাশ হোক আর গোলাম আজমের।
কথিত আছে, নিষ্ঠুর আইয়ুব খান একবার তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে যাচ্ছিলেন। পেছনে পেছনে একটি বেসরকারী লাশবাহী গাড়ি আসছিল কিন্তু আইয়ুব খানের গাড়িকে অতিক্রম করার সাহস পাচ্ছিল না। আইয়ুব খান বিষয়টি লক্ষ করলেন এবং খোঁজ নিয়ে যখন জানলেন এই গাড়িতে লাশ আছে, তখন তিনি নিজের গাড়ি থামালেন, লাশবাহী গাড়িকে আগে যেতে বললেন এবং স্যালুট করলেন। [২]
একজন মৃত মানুষের প্রতি সম্মান, শেষ সম্মান! এই সম্মান না-জানালে ওই মৃত মানুষের কিছুই যায় আসে না কিন্তু জীবিত মানুষগুলো নগ্ন হয়ে পড়ে!
জানি না এখনো নিয়মটা চালু আছে কিনা (এটা একজন ডাক্তারের মুখ থেকে শোনা) মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের যখন ব্যবচ্ছেদ শেখানো হয় তখন মেয়েদেরকে হাতের অলংকার খুলে যেতে নির্দেশ দিতেন অধ্যাপকরা। কারণ ওই, মৃতদেহের প্রতি সম্মান। [৩]
2 comments:
ধিক্কার শুয়োরদের!
জংগলের আইন জুতাপেটা। চৌকিদারের নিচে চাকরি নাই আর জুতার নিচে মাইর নাই।
Post a Comment