লেখক: হাসান শান্তনু
"(বিতর্কিত বইটির ব্যাখ্যাটা আর লিখতে পারেননি তিনি)
কথিত বইটা না থাকলেও ড. এমাজউদ্দীন আহমদের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কিছুই হতো না। ওই বই প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগেই তিনি শিক্ষাবিদ, গবেষক, পর্যালোচক হিসেবে শুধু দেশেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রখ্যাত।
‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ নামের ওই বই তিনি এবং আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী সাবেক উপাচার্য ও এক সাংবাদিকের সম্পাদনায় প্রকাশিত। ২০০৯ সালে বইটি বাজারে আসার পরই নকলের অভিযোগ উঠে। রোকেয়া কবীর ও মুজিব মেহেদীর ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ বইটি থেকে লেখা চুরির প্রমাণও মেলে।
ইংরেজি পত্রিকা ‘ডেইলি স্টার’ দুটি বই মিলিয়ে দেখতে পায়, চৌর্যবৃত্তিকারীরা মূল গবেষণামূলক কাজটি শুধু নকলই করেননি, মূল বইটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কিছু অংশও সুবিধামতো ফেলে দিয়েছেন (সূত্র: টু ফরমার ভিসি’স ইন প্লেজিয়ারিজম ডিবেট, দ্য ডেইলি স্টার, ১১.০২.২০০৯ খ্রি.)।
ইংরেজি পত্রিকা ‘ডেইলি স্টার’ দুটি বই মিলিয়ে দেখতে পায়, চৌর্যবৃত্তিকারীরা মূল গবেষণামূলক কাজটি শুধু নকলই করেননি, মূল বইটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কিছু অংশও সুবিধামতো ফেলে দিয়েছেন (সূত্র: টু ফরমার ভিসি’স ইন প্লেজিয়ারিজম ডিবেট, দ্য ডেইলি স্টার, ১১.০২.২০০৯ খ্রি.)।
নকল বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ২৬ মার্চের বদলে ২৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর বদলে শেখ মুজিব, নারী শব্দের পরিবর্তে মহিলা লেখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের মতো ওই বইয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কথা বাদ পড়েছে।
রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কী লেখা হয়েছে, সেসবের চেয়ে বড় বিতর্ক ছিলো অন্যের বই থেকে চুরির বিষয়টি। পেশাগত কারণে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ স্যারের সামনে যাওয়ার সুযোগ অনেকবারই হয়েছে। তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছি, জন্মদিন উদযাপনের প্রতিবেদন লিখেছি। তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলাম: ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ বইটির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটা আপনার মতো প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে খুবই বেমানান। গত শতাব্দিতেই আপনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রাজনীতি নিয়ে যেসব বই লিখেছেন, সেগুলো শুধু চলতি শতাব্দিই নয়, আরো অনেককাল জুড়ে পাঠ্যবই থাকবে। বিংশ শতাব্দির রাজনীতি গবেষণার জন্য আপনার বইগুলো খুঁজবেন অনাগত কালের গবেষকরাও। বিতর্কিত বইটি থেকে আপনার নাম প্রত্যাহার করে নিন।
ড. এমাজউদ্দীন জানিয়েছিলেন, ‘বইটিতে যে নকল, চুরি করা লেখা আছে, তা প্রকাশিত হওয়ার আগে জানতাম না। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে একটা কলাম লিখবো'।
কথাটা কয়েকবারই বলেছিলেন। সেই কলাম তাঁর লেখা হয়নি। আর কখনো লিখতেও পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য আজ শুক্রবার (১৭.০৭.২০) না-ফেরার দেশে চলে গেছেন, চিরকালের জন্য।
তাঁর মতো একাডেমিক ব্যক্তিত্বের নাম ব্যবহার করে বাকি দুজনের কেউ বিতর্কিত বইটিতে চুরির কাজটা করেছিলেন কী না, এমন প্রশ্ন বইটা পড়েই মনে উঁকি দিয়েছিলো।
ড. এমাজউদ্দীন নিজে একটা রাজনৈতিক মেরুতে অবস্থান করলেও অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ছিলো। ছিলেন খুব পরমতসহিষ্ণু। তিনি বেঁচে থাকাকালে সমালোচনা করে লিখেছি, তবু তাঁর স্নেহবঞ্চিত হইনি। চিরবিদায়ের দিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা। আত্মার, পারলৌকিক শান্তি কামনা।"
... ... ....
লেখক হাসান শান্তনুর লেখার সূত্র ধরে বলতে চাই, ড. এমাজউদ্দিনের মত মানুষরা হচ্ছেন পাহাড়সম। একটা পাহাড় কেবল বাবাই দেখেন না তার সন্তানকেও বলে যান: বাপ, বড় হলে ওই পাহাড়টা দেখে আসিস। ওটার কাছে গেলে তুই বুঝবি আমরা কত ক্ষুদ্র।
এই ভূমিকার অবতারণা এই কারণে ড. এমাজউদ্দিন, অপনার মত মানুষদেরকে যখন আমরা এই সমস্ত প্রহসনে দেখি তখন বড় কষ্ট হয়।
আপনার কাজ বুঝি এই সব বই লেখা? আপনি তো অমর নন সে দেখাই যাচ্ছে! তা এই প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছেন? বুঝলেন, পাহাড়কে মাথা নীচু করে দেখতে ভাল লাগে না। আমাদের দেশে বড় একটা সমস্যা এটাই পাহাড়গুলোসব টিলা হয়ে যাচ্ছে...আফসোস, বড়ই আফসোস...!
এই ভূমিকার অবতারণা এই কারণে ড. এমাজউদ্দিন, অপনার মত মানুষদেরকে যখন আমরা এই সমস্ত প্রহসনে দেখি তখন বড় কষ্ট হয়।
আপনার কাজ বুঝি এই সব বই লেখা? আপনি তো অমর নন সে দেখাই যাচ্ছে! তা এই প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছেন? বুঝলেন, পাহাড়কে মাথা নীচু করে দেখতে ভাল লাগে না। আমাদের দেশে বড় একটা সমস্যা এটাই পাহাড়গুলোসব টিলা হয়ে যাচ্ছে...আফসোস, বড়ই আফসোস...!
No comments:
Post a Comment