Search

Sunday, August 2, 2020

"বৌন অভ মাই বৌন, ফ্লেশ অভ মাই ফ্লেশ!"

এই লেখাটা না-লিখতে পারলে সুখি হতাম কিন্তু আমি আমার লেখালেখির সময় পুরোপুরি কলমের নিয়ন্ত্রণে থাকি। আহ, কখনও আমি এড়িয়ে যেতে চাইলেও এই তিন টাকা দামের কলমের হাত থেকে আমার মুক্তি নেই। এই কারণে আমাকে কম যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়নি!
ডয়চে ভেলের কারণে আমি যে সম্মান পেয়েছিলাম তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি [] কিন্তু অন্য এই ডয়চে ভেলেই অন্য একজনের প্রতি অন্যায় করার কারণে আমি এই ডয়চে ভেলের বিরুদ্ধেই লিখেছিলাম। লেখার পূর্বে আমার কাছে কিন্তু মনে হয়েছিল নাহ, থাক, লেখার প্রয়োজন নেই কিন্তু ওই যে বললাম, ব্যাটা বজ্জাত কলম, আমাকে লিখতে বাধ্য করল []! যার কারণে আমি আর এদের গুড-বুকে থাকলাম না। তাতে আমার কী আসে যায়, ঘন্টা!

এমনিতে আমি আমার লেখায় আমার পরিবার-পরিজনের কথা সযতনে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। লিখলেও এখানে না। আমার একটা ব্যক্তিগত সাইট আছে, ওখানে। কারণ আমি হুমায়ূন আহমেদের মত বিখ্যাত মানুষ না যে প্রতি দমে বলব, আমার পরিবারের কথা। ভাবা যায়, একটা মানুষ কোন পর্যায়ের নির্বোধ হলে শ্বাসে-শ্বাসে বলে, আমার বউ পরীর মত সুন্দর-আমার বউ পরীর মত সুন্দর! পাঠক হিসাবে বিষয়টা আমার পছন্দ না-হওয়ারই কথা! ভারী অপছন্দের- এটা বাজে একটা উদাহরণ!

ইচ্ছা হলেই সব কাজ করা যায় না। আমি যেটা বারবার বলে আসছি আমাদের দেশে এমন মানুষের বড় আকাল যাদের দেখিয়ে আমরা বলতে পারব: বাপ, পারলে এর মত হইস।
যেমন কী উদাহরণ সৃষ্টি করে গেলেন একজন পাহাড়সম, এমাজউদ্দিন []? এখন তো আর তাঁর এগুলো শোধরাবার উপায় নাই। কেন তিনি এইসব করলেন? না-করলে কী হত? দেশে থাকলে ভিসি বিদেশে রাষ্ট্রদূত? কেবল এই লোভে এই প্রজন্মকে কী শিখিয়ে গেলেন?

কিন্তু এক্ষণ এখানে প্রয়োজন আছে বিধায় আমার পুত্রধনের কথা চলে আসছে। সম্ভবত, আবারও বলি, সম্ভবত, ও হচ্ছে এই দেশের প্রথম, সর্বকনিষ্ট ব্লগার। আমাকে এক সাক্ষাৎকারে যখন এটা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার ৬ বছরের ছেলে ব্লগিং করে এতে আপনার অনুভূতি কি...? []
 তো, এ ব্লগিং ছেড়ে দিল।

আমি নিজে একসময় প্রচুর স্কেচ করতাম। যখন এরশাদের আগুনকাল তখনও এরশাদকে নিয়ে স্কেচ করেছি যেটা এখন ভাবাটাও অকল্পনীয়! হয়তো ওখান থেকে ওর আগ্রহ জন্মেছিল কি-না জানি না। ও স্কেচ করা শুরু করল। তখন সম্ভবত ওর বয়স ৭/৮। শিশিরের স্কেচ দেখে-দেখে আঁকার চেষ্টা করছিল। নমুনা:
এই আঁকাআঁকিটাও ছেড়ে দিল। অস্থির!

গিটার বাজাবার শখ হল। আমার তখন টাকা-পয়সার একটু টানাটানি। অন-লাইনে যশোর না কোত্থেকে একটা গিটার আনালো। কিছু দিন টুং-টাং করল। গিটার শেখা ছেড়ে দিল। অস্থির, বড় অস্থির!এরপর ম্যাজিকের শখ হল। ম্যাজিক শেখে:
 

 
এই ম্যাজিকগুলো আহামরি কিছু না হয়তো কিন্তু অন্য-কেউ দেখালেও মুগ্ধ হতাম। কিন্তু আমি নিজে যেহেতু এই সব পারি না তাই অহেতুক মুগ্ধতা! ম্যাজিকটাও ছেড়ে দিয়েছে, সম্ভবত। অস্থির-অস্থির...।
ওর অস্থিরতার একটা উদাহরণ দেই:
স্কুলের একটা নাটক করল। পটভূমি ১৯৭১। এক জায়গায় ও মৃতমানুষের মত নিথর পড়ে থাকবে এ রকমটাই নাটকের স্ক্রিপ্টে ছিল। কিন্তু সময়ের আগেই ও ওঠে বসে রইল!

আমাদের পিতারা আমাদের জন্য তেমন সময় দিতে পারতেন না তবুও তাঁদের শিক্ষা এখনও মস্তিষ্কের খাঁজে-খাঁজে বসে আছে []। আমি আমার সন্তানকে যখনই সুযোগ পেয়েছি শেখাবার চেষ্টা করেছি। এটাও বলেছি, কখনও-কখনও প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসতে হয় [
আমি যখন অন-লাইনে শুরু করেছিলাম ২০০৫ সালের দিকে। তখন  দুয়েকটা জায়গা ছিল লেখার জন্য। তারও আবার অনেক কায়দা-কানুন ছিল। এখনকার মত এত সহজ ছিল না! একজন ব্লগারকে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হত।
পরে জাকারবার্গ 'ফেসবুক' নামের একটা টিকটিকি প্রসব করল। কালে-কালে সেটা একটা ডায়নোসর হয়ে উঠল। এরপর লেখার সুরটাই বদলে গেল। জুম্মা-জুম্মা সাত দিন হয় না অথচ ফেসবুকে একেকজন একেকটা স্টার হয়ে বসে থাকে। শ্লা, লাখ-লাখ ফলোয়ার একেজনের। দুনিয়ার হেন কোন বিষয় নেই যার জ্ঞান তার নাই! এদের তো আবদুন নূর তুষারের মত বেয়াদব না-হওয়ার কোনও কারণ নাই []। যে কেবল ভুলই করে না আবার বেয়াদবের মত বেয়াদববাজিও করে!

বা আমাদের নির্মলেন্দু গুণের মত মানুষ, যিনি এখনও শেখেননি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুম করে ইচ্ছা হলেই যা-কিছু বলে দেয়া যায় না, অসভ্যতা করা যায় না []।  কেন যায় না? 'ধুম মাচা দে', গানটা গাইলে আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে কোনও সমস্যা নাই কিন্তু আপনি গুরুগম্ভীর একটা অনুষ্ঠানে টেবিলে দাঁড়িয়ে গাওয়া শুরু করতে পারেন না। প্রত্যেকটার জায়গার কিছু নর্ম আছে যা আমাদেরকে মানতে হয়। পাবলিস প্লেসে আপনি খালি গায়ে বসে থাকতে পারেন না আবার রেস্টরুমে কোট-প্যান্ট না-খুললেও চলে না।

যাই হোক, ভুল করে ভুল স্বীকার করার মধ্যে কোন-প্রকার লজ্জা নাই। বরং লজ্জা হচ্ছে ভুল করে সেটা স্বীকার না করা। একজন মানুষ ভুল করতেই পারে। আমি কী ভুল করি না? করি। ক-দিন আগেও একজন আমার লেখার ভুল ধরিয়ে দিলেন। Mashroof Hossain-কে আমাদের দেশের অনেকে চেনেন 'সুপার-কপ' হিসাবে। এখন অবশ্য হাভার্ডে পড়ছেন। তো, এই মানুষটা আমার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পর আমি লজ্জিত হয়েছিলাম। যদিও তিনি এই মন্তব্যটা করেছিলেন আমার মেসেঞ্জারে কিন্তু আমার মনে হলো ওই পোস্টের সঙ্গে এই মন্তব্যটা থাকাটাই সমীচীন []। 
কেউ-কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে ক্রদ্ধ হন কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ হই। কারণ আমি মনে করি একজন জ্ঞানীর জ্ঞান হচ্ছে একটা সরলরেখা। সে মৃত্যুর আগ-পর্যন্ত শিখতেই থাকবে, শিখতেই থাকবে...। এটা কেবল এগুতেই থাকা- এখানে থামাথামির কোনও অবকাশ নাই। আর একজন নির্বোধ মনে করে আমি সব জেনে বসে আছি। তখন সে একটা বৃত্তের মধ্যে আটকা পড়ে। কেবল ঘুরপাক খায়। যে মানুষটা কয়েক হাজার বই পড়ে নিজেকে বিরাট পন্ডিত মনে করছে সে কেন বিস্মৃত হচ্ছে এই গ্রহের লাখ-লাখ বই সে এখনও পড়েনি।

এই বিরাট কাহিনী ফাঁদার পেছনের কথা হলো, কালে-কালে আমার সন্তান বড় হয়ে গেল। কলেজে ভর্তি হলো। তার নিজস্ব একটা ভুবন সৃষ্টি করল। এতে কোন সমস্যা নাই। আমি কখনও এটা চাইনি আমার সন্তান আমার মতই হবে। ভারী অকাজের একজন! বা কেবল রেসের ঘোড়ার মত রেজাল্টের পেছনে দৌড়াবে। শুধু চেয়েছি ভাল একজন মানুষ হোক। ভাল একাডেমিক সনদওয়ালা মানুষের চেয়ে 'একজন মানুষ' হওয়াটা জরুরি। যে মানুষটার প্রকৃতি এবং প্রকৃতির সন্তানদের প্রতি থাকবে প্রগাঢ় মমতা। 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে কী লেখে না-লেখে এই নিয়ে খবরদারি করাটা বাবাদের শোভনীয়, সমীচীন না, কিন্তু...। একটা কিন্তু থেকে যায়। আমি দুনিয়ার অসঙ্গতি নিয়ে লিখব কিন্তু আমার সন্তানের অসঙ্গতির বেলায় আকাশপানে তাকিয়ে থাকব তা তো হয় না। সে তো ভারী পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ হয়ে গেল! আমি তো পাইপ-মানুষ না [১০]। তাহলে পরের প্রজন্মের জন্য আমি কী রেখে গেলাম? কুৎসিত এক উদাহরণ! তাই তার স্থলে অন্য-কেউ হলেও আমার এই লেখার একটি  শব্দেরও কমতি হত না।
কারণ কেবল একজন মানুষই পরের প্রজন্মের জন্য কিছু-না-কিছু রেখে যায় বা অন্তত চেষ্টাটা করে। কেবল গরুর এই সমস্যা নেই সে হাজার বছর আগে যে ভাবে ঘাস খেত এখনও সেভাবেই ঘাস খায়।

এমনিতে 'ফেসবুক' নামের এই জায়গাটা আমার পছন্দ না। এটা একেবারেই আমার নিজস্ব মত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওরফে সামাজিকতার নামে লোকজন মারাত্মক অসামাজিক হচ্ছে! নিজের অজান্তেই ফাঁদে পা দিচ্ছে! পরিণত হচ্ছে একেকটা চলমান এডিক্টেট নামের দানবে। এফবিতে কেউ-কেউ আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে খুব ঝামেলা মনে-না হলে একসেপ্ট করে নিতাম। যদিও আমার পরিবারের কেউ আমার সঙ্গে যুক্ত না। বিচিত্র একটা জায়গা এটা, নিজের পোলা-শ্বশুড় সবাই এখানে ফ্রেন্ড হয়ে যায়!
অনুভূতিহীন দানবের নমুনা। এক লেখায় আমি যেটা লিখেছিলাম, (১১):
'আমার আম্মু অসুস্থ। ফ্রাস, তোমরা প্রে করবা'। পোলা কিন্তু মা বা বাপের ধারেকাছেও নাই। সে অন্যত্র বসে-দাঁড়িয়ে-শুয়ে লাইক, মন্তব্য গুনছে। ঝটপট উত্তর দিচ্ছে।
কোন লেখা-প্রসঙ্গে বুঝুক, না-বুঝুক একটা 'হা-হা' ইমো দিয়ে বসে থাকবে। তো, মাঝে-মাঝে ফেসবুকে চোখ বুলিয়ে যাই। এর এটাও বড় কারণ আমার লেখালেখির সূত্রের অনেক তথ্য এখানে পেয়ে যাই। যেভাবেই হোক ফেসবুকে আমার চোখে পড়ে আমার সন্তানের কিছু লেখা। খুব গুরুতর কিছু না, এই সব বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে শেয়ার করা চলে কিন্তু...! যেগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে জনসম্মুখে এই সমস্ত লেখা দেওয়া চলে না বা না-দেওয়াটাই সমীচীন। কারণ যেখানে তার পরিবারের গুরুজনেরা বা তার স্বজনেরা তার সঙ্গে যুক্ত।
তবে, সবিনয়ে এটাও বলি, যারা ওর সঙ্গে যুক্ত আছেন, আমার ভাই-স্বজন-বন্ধু আপনারা কেউ কখনও আমাকে এটা জানাননি এটাও এক ধরনের অপরাধ।

প্রত্যেকটা জায়গায় একটা লেয়ার কাজ করে, 'আ থিন লেয়ার'। মার পেট থেকে আমি বের হয়েছি বলেই তাঁর সামনে দুম করে নগ্ন হয়ে যেতে পারি না। আর আমরা বৈদেশি সাহেবদের মত টবের গাছ না, আমরা নারকেলগাছ- আমাদের শেকড় ছড়িয়ে থাকে বহূদূরে! প্রত্যেকটা জাতির নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি থাকবে। কেউ-কেউ এটাকে 'ট্যাবু' বলতেও পারেন। সো-কল্ড উন্নত কিছু দেশে টয়লেটের দরোজা থাকে না। তো? এখন আমরাও কী ঝাঁপিয়ে পড়ে এমন টয়লেট বানাবার জন্য চাঁদা তোলা শুরু করব।

যাই হোক, আমার সন্তান পূর্বের সমস্ত পোস্ট বা লেখা ডিলিট করেছে এবং সরি বলেছে। ইতিপূর্বে তার লেখার কোন অংশের কারণে কেউ আহত হয়ে থাকলে আমি নিজেও দুঃখ প্রকাশ করি।
এটা আমি তার আইডিতেও বিনীত ভাবে বলেছি:
       


সহায়ক সূত্র:
১. বেস্ট অভ দ্য ব্লগস: https://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_22.html
২. ডয়চে ভেলে: https://www.ali-mahmed.com/2013/07/deutsche-welle-dwde-brutal.html
৩. এমাজউদ্দিন: https://www.ali-mahmed.com/2020/07/blog-post_69.html
৩. গ্লোবাল ভয়েসেস: https://bn.globalvoices.org/2010/04/12/10325/ 
৪. পুত্রধনের আঁকাআঁকি: https://chobiblog.blogspot.com/2010/08/blog-post_05.html
৫. বাবা...: https://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_21.html 
৬  প্রতিবাদ: https://chobiblog.blogspot.com/search?q=%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
৭. তুষার...: https://www.ali-mahmed.com/2020/06/blog-post_16.html
৮. নির্মলেন্দু গুণ: https://www.ali-mahmed.com/2012/11/blog-post_28.html
৯. দানব বানাবার কারখানা: https://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_7757.html  
১০. পাইপ-মানুষ: https://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_19.html
১১. আমার শৈশব: https://www.ali-mahmed.com/2020/07/blog-post_7.html
 
...
আপডেট: ২০২৪
আমার সন্তান আরেকটা ঝামেলা করে বসল। ও ইন্টার করেছে সায়েন্স নিয়ে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স নিয়ে পড়তে চাইল না। পুরো পরিবার একদিকে আর ও অন্যদিকে! আমরা আকাশ থেকে পড়লাম বললে কমিয়ে বলা হয় একেবারে মহাকাশ থেকে পড়লাম! যাই হোক, বিবিএ-তে ভর্তি হলো।
পড়ার পাশাপাশি ওখানেও ম্যাজিক-ট্যাজিক দেখায়:
বছরখানেক পড়ার পর কর্পোরেট লাইফের কুফলতা নিয়ে বিরাট এক বাণী দিয়ে ইকোনমিক্স নিয়ে পড়া শুরু করল। 
আমার বলার খুব একটা সুযোগ রইল না কারণ তার দুর্দান্ত রেজাল্টের কারণে সে বিগত দুই বছর ফ্রি-তে পড়েছে! চড়া অংকের টিউশন ফি আমাকে দিতে হয়নি! আমার মত ছাপোষা মানুষের জন্য এ যে কত বড় রিলিফ!
ম্যাজিক-ট্যাজিকের দেখি ভালই বাজার! একাডেমি অ্যাওয়ার্ড নেওয়ার সময়ও পোলাপানরা চিৎকার করছিল, 'এই ম্যাজিশিয়ান...'!  

5 comments:

Kukku said...
This comment has been removed by the author.
Anonymous said...

আপনার সাথে একমত @রায়হান
সমির, হাওড়া

Unknown said...

একজন আদর্শ পিতার কর্তব্যের চিহ্ন রেখে গেলেন ভাইয়া। দুই একটি লেখা আমার নজরে ও যে আসে নাই তা না, এসেছিল ভাইয়া। আমার তখন উচিত ছিল সেটা আপনাকে জানানো। কিন্তু বলা হয় নি। এটা যে আমার ভুল হয়েছে সেটা স্বীকার করতে আমার কোন দ্বিধা নেই। ভবিষ্যতে এমনটি হবে না বলে আশা রাখছি। ইফতি অনেক প্রতিভাধর একটি ছেলে। আমি জানি সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। শুভ কামনা ইফতির জন্য।দোয়া রইল।

Abdul Haque's room said...

'অপরাধী'দের আত্মপক্ষ সমর্থন

যাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হলো, তাদের পক্ষ থেকে একটু সাফাই গাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।

যারা বর্তমান নিবন্ধের নিবন্ধিত অপরাধী, তারা যে উল্লেখিত বিষয়টা খুব বেশি আগে থেকে জানে এমন নয়। জুলাইয়ের গোড়ার দিকেই বিষয়টা গোচরে আসে - কারো কারো হয়তো কিছুটা আগেই এসেছিলো। কিন্তু তাদের কারো কোনো কথাই আমাদের স্নেহধন্য পুত্র আমলে নেয়নি।
এ ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে হুট করে নাক গলানোটা অবশ্যই চিন্তার বিষয় - এতে যেকোনো রকমের বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যার নমুনা 'অপরাধীদের' কেউ কেউ ইতোমধ্যেই প্রত্যক্ষও করে ফেলেছে।
অপরাধীদের মধ্যে যে দু'একজন বিষয়টা নিয়ে শাসন-অনুশাসনের যোগ্যতা রাখে এবং সংশ্লিষ্টতা আছে, তারা ইতোমধ্যেই এ নিবন্ধের মুখপাত্র কর্তৃক উপেক্ষিত হয়েছে।

এ ধরণের বিষয় গুলো মেসেজ দিয়ে বা টেলিফোনে ঠিক মীমাংসা করা যায় বলে মনে করি না। এর জন্য প্রয়োজন হয় চোখে চোখ রেখে কথা বলার বা শোনার। করোনার এ সময়ে বাকিদের এ সুবিধাটা ছিলো না।

বর্তমান চিহ্নিত অপরাধীগণ পিতা-পুত্রকে সোহরাব-রুস্তমের ভূমিকায় অভিনয় করাতে চাননি। আর এজন্যই এবং পিতার অসুস্থতার কথা বিবেচনায় রেখে তারা একটু সময় নিয়ে কাজে নামে।

এ ধরণের বিব্রতকর অবস্থায় পিতা-পুত্রকে বা পিতৃ-মাতৃতুল্য কাউকে পুত্রসম কারো সাথে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়াটা কোনো বিবেচনার কাজ নয় মোটেই। ছেলে পাড়ার অন্য ছেলেদের সাথে মোড়ের দোকানে বিড়ি টানছে দেখে কোনো অভিভাবকেরই উচিৎ বা মানানসই কাজ হবে না তাৎক্ষণিকভাবে ওখানে গিয়ে ছেলেকে শাসন করা। ছেলে উপযুক্ত হলে বিয়ে করবে, বাসর করবে। আর বাসর ঘরে কী হয় তা নিশ্চয়ই পিতার অজানা নয়! তাই বলে ছেলের যেমন উচিৎ হবে না পিতার সম্মুখেই বাসর ঘরের কাজ শুরু করে দেয়া, পিতারও উচিৎ হবে না বাসর ঘরে গিয়ে কী করতে হবে তা ছেলেকে ডেকে বুঝিয়ে দেয়া।
বর্তমান অপরাধীদের সমস্যা ছিলো এটাই। পুত্রের সাথে এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো কৌশলে এড়িয়ে তাকে শোধরানোর জন্য এমন একজনকে খুঁজতে একটু সময় নেয়, যাকে দিয়ে পরোক্ষভাবে তাকে বোঝানো যায়। আর সে মোতাবেক কাজের সফলতায় পুত্র ফিরতেও শুরু করেছিলো। কিন্তু ইতোমধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে সোহরাব-রুস্তম মুখোমুখি হয়েই পড়েন - যা এই অপরাধীদের কামনায় ছিলো না!

এখানে মজার ব্যাপারটা হলো, পিতামাতা পুত্রের গতিবিধি খেয়াল রাখেনি বা রাখতে পারেনি। দিনে দিনে পুত্র যে প্রধান সড়ক থেকে কখন চোরাগলিতে ঢুকে গেছে তারা বুঝতেই পারেনি! তো এ দায় কার? অবশ্যই বর্তমান চিহ্নিত অপরাধীদের, যারা পুত্র অপরাধ করে ফেলার পর তা দেখেছে! এ দায় কিন্তু পুত্রের পিতামাতার উপর মোটেই বর্তায় না!!

পরিশেষে স্বস্তির কথা এই - সোহরাব-রুস্তমের সম্মুখসমর অতি অল্পেই পরিসমাপ্তি লাভ করেছে।

পুনশ্চঃ নিবন্ধকার তার সুবিশাল নিবন্ধের সারাংশে যা বোঝাতে চেয়েছেন, বা আমি যা বুঝেছি, যারা পুত্রের অপকর্ম দেখে পিতাকে অবহিত করেনি, তারাই অপরাধী। কিন্তু নিবন্ধে সন্তান বিগড়ে যাওয়া বা বিপথে চলে যাওয়ার পিছনে পিতামাতার কোনো দুর্বলতা, দায় বা ভূমিকা আছে, এমন উল্লেখ দেখা যায় না। "যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই" ব্যাপারটা কি এমন কিছু দায়বদ্ধতার মাঝে ছিলো⁉

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

‘আননোন’ ওরফে অজানা-অজ্ঞাত ওরফে অন্ধকার-এর সঙ্গে কথা বলে আমি আরাম পাই না, বলিও না, উত্তরও দেই না। কারণ মুখোশের পেছনে মানুষটার সম্বন্ধে কিছুই জানি না, তাই। কিন্তু তাহলে এখন কেন উত্তর দিচ্ছি? এটা পরে বলছি...।

আপনার শ্লেষভরা মন্তব্যের লাইন-বাই-লাইন ব্যাখ্যা আমি দিতে পারতাম কিন্তু সেটা হবে ‘শব্দের অপচয়’! তবুও রয়েসয়ে খানিকটা শব্দের অপচয় করা যাক। আমার লেখার যে-অংশ নিয়ে আপনার গাত্রোদাহ সেটা আপনি ভাল করেই পড়েছেন আশা করি। আমি যেটা লিখেছিলাম:
“...তবে, সবিনয়ে এটাও বলি, যারা ওর সঙ্গে যুক্ত আছেন, আমার স্বজন-বন্ধু আপনারা কেউ কখনও আমাকে এটা জানাননি এটাও এক ধরনের অপরাধ। ...।”
যেহেতু ওখানে লেখা আছে, আমার স্বজন, বন্ধু। এর অর্থ হচ্ছে আপনি আমার স্বজন বা বন্ধুদের কেউ একজন। কারণ এরা ব্যতীত অন্যরা, ছলিমুদ্দিন-কলিমুদ্দিন কেউ এর আওতায় থাকছেন না।
যাই হোক, ওই বাক্যে এটা বলা নাই যে এটা কোন আইনের বইয়ের কোন ধারার অপরাধ। বলা হয়েছে, ‘এক ধরনের অপরাধ’। কী ধরনের অপরাধ? এক ধরনের ভালবাসার-মমতার অপরাধ। কেমন করে?

আমি আমার স্বজন এবং বন্ধুদেরকে আমার পরিবারের একজন এবং শরীরের একটা অংশ বলে মনে করি। আমার আত্মীয়, বন্ধুরা তারা ততটুকুই অধিকার রাখেন যতটুকু আমি বাবা হিসাবে রাখি। তাই একজন বাবার এই বেদনামিশ্রিত বাক্য বোঝা বা আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা, ‘এক কিতাবে দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান খোঁজা’ মানুষের পক্ষে কদাপি সম্ভব না।

বিষাদের সঙ্গে বলি, হায় জীবন! যে জীবনে আমার স্বজন-বন্ধুদের একজন যার একটা মুখোশের প্রয়োজন হয় আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য; আই বেট, তিনি কোন প্রকারেই আমার স্বজন, বন্ধু হতে পারেন না। আর বাই এনি চান্স, এমন মুখোশধারী-কেউ সত্যিই আমার বন্ধু-স্বজন হয়ে থাকলে আজ আমি সেই সম্পর্ক অস্বীকার করি। কারণ এমন মুখোশধারী স্বজন-বন্ধুর হাতে আমার পরিবার নিরাপদ না। তার পক্ষে আমার পরিবারের যে-কোনও প্রকারের ক্ষতিই সম্ভব। আমরা যে মমতার, সম্পর্কের, আস্থার একটা ‘থিন লেয়ার’ মেনে চলি তার বেলায় সেটা প্রযোজ্য না।

পরিশেষে: স্বজন-বন্ধুর ছালে আপনি মি. মুখোশধারী, আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে ভার্চুয়াল এই ভুবন বা বাস্তবেও আপনি আমার কাছ থেকে দূরে থাকবেন। অন্তত একটা ট্রাকের দূরত্ব বজায় রাখবেন কারণ আমার ট্রাক-ফোবিয়া আছে! এতেই সুখ- জগতের সবাই সুখি হোক।

আর লেখার শুরুতে যে কথাটা বলেছিলাম যে উত্তরটা পরে দিচ্ছি... এখন উত্তরটা দিয়ে শেষ করি। আফসোস, আপনি যে মুখোশ পরে আছেন ওটা মেয়াদহীন বিধায় আপনার চেহারাটা স্পষ্ট। হে মুখোশধারী মানুষ, আপনি এই গ্রহের সবচেয়ে সুদশর্ন মানুষ হলেও আমার চোখে অতি কদর্য, কুৎসিত!
এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমার আলাপচারিতার এখানেই সমাপ্তি। এখানে আর কোন প্রকার মন্তব্য করবেন না দয়া করে। ধন্যবাদ।